গানের ব্যাপারে নিজেকে আমি সর্বভুক বলেই দাবি করি.. তবুও কেউ যখন ফেভারিট আর্টিস্ট বা ব্যান্ড এর ব্যাপারে তখন আমি চোখ বন্ধ করে বলে দেই Pink Floyd এর কথা। পিঙ্ক ফ্লয়েড ইজ পিঙ্ক ফ্লয়েড। পিঙ্ক ফ্লয়েড এর নাম প্রথম শুনি পত্র পত্রিকায় আমাদের দেশের বিভিন্ন ব্যান্ড এর ইন্টারভিউএ । তখন আমি স্কুলে পড়ি আরকি। সাংবাদিকরা যখন আমাদের দেশের বিভিন্ন আর্টিস্ট দের জিজ্ঞেস করে যে দেশের বাইরে তাদের ফেভারিট ব্যান্ড কি তখন সবাই কয়েকটা ব্যান্ড এর নাম বলে.. আমি খেয়াল করে দেখি যে মোটামুটি সবার লিস্টেই পিঙ্ক ফ্লয়েড নামের এই ব্যান্ড এর নাম থাকে। কিউরিসিটি তখন থেকেই। এরপর ২০০৮/৯ এর দিকে যখন গ্রামীন ফোন ৩৫০ টাকার ১ গিগা ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতো, তখন আমি ওয়াপট্রিকস নামের এক সেলফোন সাইট থেকে পিঙ্ক ফ্লয়েড এর গান ডাউনলোড করে শোনা শুরু করি.. সত্যি কথা বলতে কি বেশ কয়েকটা গান ভালো লাগলেও বেশির ভাগ গানই আমার কাছে এক ধাচের , কেমন জানি মরা মরা লাগে। প্রাথমিক গল্প এই পর্যন্ত।
পিঙ্ক ফ্লয়েড বিষয়ক আগ্রহে পিরিয়ড পরে যায় এরপরে। একাডেমিক আর পেশাগত কারনে ২০১২ পর্যন্ত খুব অকুপাইড ছিলাম। ২০১২ তে দেশের বাইরে আসার পর হাতে যখন কিছু সময় পেলাম, তখন আমি আবার আমার পুরোনো সব ইন্টারেস্ট গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। পিঙ্ক ফ্লয়েড শোনা শুরু করলাম আবার। আমার এক সিনিয়র ভাই আমাকে বললেন যে এদের গান শুনতে হয় এলবাম টু এলবাম বেসিস এ। হালকা কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ করে.. সুতরাং এইবার আর আগের মতন ভুল করলাম না.. সেই থেকে শুরু। পুরোপুরি মজে গেলাম।এরপর থেকেই আমি পিঙ্ক ফ্লয়েড নিয়ে অবসেসড..
পিঙ্ক ফ্লয়েড এর প্রত্যেকটা এলবাম ই একেকটা মাস্টারপিস.. একটার চেয়ে আরেকটা বেটার। এদের মাঝে The Wall আর The Dark Side of the Moon কে আমি সবকিছুর চেয়ে এগিয়ে রাখি।পার্সোনালি, আমি মিউজিকাল সাইড বিবেচনা করে এই দুটো কে সর্বকালের অন্যতম সেরা এলবাম হিসেবেই মানি। ওকে, এনাফ প্যাচাল পারলাম। না, আমি আসলে ভুল করে গান নিয়ে পোস্ট করতে আসিনি। যে জন্য পোস্ট করতে আসা তা হলো একটা মুভি। নামPink Floyd – The Wall.. এটা একটা রক অপেরা। মুভিটা মূলত পিঙ্ক নামের একজন রক আর্টিস্ট কে নিয়ে যিনি নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতার কারনে সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।বলতে গেলে চারপাশের সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করতে সে একধরনের Wall তৈরি করে ফেলে।ডায়লগ বলতে গেলে নেই ই মুভিতে। মুভি সামনে এগিয়ে চলা মূলত ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজা দা ওয়াল এলবাম এর সব ট্র্যাক গুলোর মাধ্যমে। মুভির চিত্রনাট্য পিঙ্ক ফ্লয়েড এর ভোকালিস্ট আর বেজিস্ট Roger Waters এর লেখা। রজার ওয়াটার্স এর ব্যাপারে আর কি বলবো? জিনিয়াস এর চেয়েও উপরে যদি কিছু থেকে থাকে , তাহলে সেটাকে নির্দ্বিধায় রজার ওয়াটারস এর নামের আগে বিশেষণ হিসেবে বসিয়ে দেওয়া যায়..
মুভিটা মেটাফোরে ভর্তি। সাধারণত আমরা মিউজিক্যাল বলতে যা বুঝি এই মুভি সেরকম না। এখানে একদম জীবনের শুরু থেকে পিঙ্ক এর নানা ঘটনা দেখানো হয়.. রজার ওয়াটার্স ওয়াইড রেঞ্জের টপিক মুভিতে নিয়ে এসেছেন। পলিটিক্স, যুদ্ধ-বিগ্রহ, শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে নানা বিষয় এসেছে মুভিতে। এনাদার ব্রিকস অন দা ওয়াল গানের ভিজুয়ালায়জেশনে দেখানো স্কুলের সিন গুলো আমার মাথায় অনেকদিন ঘুরপাক খাচ্ছিল।১৫ মিনিটের একটা মাইন্ডব্লোয়িং এনিমেশন সিন আছে মুভিতে। আমি একটু কনফিউশনে ছিলাম যে এটা নিয়ে কোনো পোস্ট দিব কিনা। আমার ধারণা অনেকেরই এই মুভি পছন্দ হবেনা।অনেকের কাছেই মুভিটাকে খুব ডিপ্রেসিং লাগতে পারে। ন্যারেশন স্টাইল টাও অদ্ভুত লাগতে পারে। কেন পছন্দ নাও হতে বা কাদের এই মুভি ভালো লাগতে পারে এই বিষয়ে রজার এবার্ট এর একটা কোট দিলাম ,”The best audience for this film would be one familiar with filmmaking techniques, alert to directorial styles, and familiar with Roger Waters and Pink Floyd. I can’t imagine a “rock fan” enjoying it very much on first viewing, although I know it has developed a cult following.”ডোন্ট গেট মি রং, রজার এবার্ট সাহেব এই মুভিকে ৪/৪ স্টার ই দিয়েছেন।
বটমলাইন হলো একটু এফোর্ট দিয়ে মুভিটা দেখা লাগবে। মেটাফোর গুলো ধরতে পারলেই আসল বিউটি টা বোঝা যাবে। “দা ওয়াল এর গানগুলো আগেকখনো শোনা হয়নি অথবা শোনা থাকলেও লিরিক ঠিক মতন খেয়াল করা হয়নি” এই গোত্রের লোক যদি আপনি হয়ে থাকেন তাহলে আমি রিকমেন্ড করবো সাবটাইটেল দিয়ে দেখতে। গানের লিরিক আর পর্দার দৃশ্যের মাঝে খুব সুক্ষ অনেক সম্পর্ক আছে..সেগুলা ফিল করা জরুরি। হাতে সময় আছে এবং চ্যালেঞ্জিং কিছু দেখার জন্য খুজছেন, এরকম যদি হয় সিচুএসন , তাহলে বসে পড়ুন এই মুভি দেখতে। আর হ্যা, অবশ্যই দেখার সময় একটু বেশি ভলিউম দিয়ে কানে হেডফোন লাগাবেন।
ওয়েলকাম টু ম্যাজেস্টিক ওয়ার্ল্ড অফ Pink Floyd !
১৪ টি মন্তব্য : “পিঙ্ক ফ্লয়েড এর দেয়াল : একখানা মুভি”
মন্তব্য করুন
এক সময় আমাদের কাউকে কাউকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছিলো যেনো ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে হলে গান শোনার অমন সুবিধা বা বন্দোবস্ত সেভাবে ছিলো না ... আর আড্ডাবাজির (এই কবিতা, এই রাজনীতি, এই লাগাম ছাড়া বন্ধুদের ভীড়, বয়স-স্থান-কাল পাত্রের হিসেব ছাড়া) পরে আর সময় কোথায় ...
কিন্তু মাঝে মধ্যেই ম্যুভি দেখা আর গান শোনা, মিউজিক ভিডিও দেখার একটা অনিয়মিত আড্ডাবাজি চলতো এর পাশাপাশি ...
হলে (মুহসিন হল) ম্যুভি প্রিফেক্টের মতোই ছিলাম বলতে গেলে ... ৮৫র মাঝামাঝি থেকে টানা তিন বছর হলে সবাই যতো ম্যুভি দেখেছে তার অধিকাংশই ছিলো আমার ব্যবস্থাপনায় ...
দ্য ওয়াল শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে কেমন যেনো বুঁদ হয়ে যাওয়া ...
আপনার কাছ থেকে মুভি বিষয়ে কিছু লেখা আশা করছি কিন্তু 🙂
লেট ইউথ রেস্ট এসাইড ।
লুক হাউ দিজ হ্যাগার্ডস ক্র্যাক নাটস আউট অফ অডিয়েন্স হেডস এট দেয়ার লেট রিইউনাটেড শোজ ...
https://www.youtube.com/watch?v=xVQTKSWULu8
(সম্পাদিত) (সম্পাদিত)
বারবার দেখি ! দিস ইজ মিউজিক !
This 28 May 2015 morning, Roger Waters and Nick Mason unveiled this
commemorative plaque which has been installed onto the front of the
University of Westminster (formerly known as the Regent Street Polytechnic)
in London. It was whilst studying there that Roger, Nick and Richard Wright met,
later leading to the forming of Pink Floyd.
(সম্পাদিত)
আঃ, পিঙ্ক ফ্লয়েড
অনেকদিন পর নাফিস!
আসলেই বেশ কিছুদিন পর নূপুর দা 🙂
মুভি দেখার বাতিক টাতিক যাদের খুব বেশী নেই, এই লেখার গুনে তারাও জেঁকে বসতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
অনেক ধন্যবাদ :hatsoff:
প্রথমবার দেখি ৮৮ -এ। তখন ভিডিও ক্যাসেট ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। প্রিন্ট হয় খুব খারাপ।
রেইন বো এর কবির ভাই জোগাড় করে দিলেন। দেখলাম।
নিজের পারসেপশনের জগতে একটা বড় পরিবর্তন ঘটে গেলো।
সেই পরিবর্তনটা জীবনের ট্র্যাক ভিন্ন খাতে নিয়ে গেলো।
নাফিস কে ধন্যবাদ। লেখাটার জন্য। :thumbup: :thumbup:
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার
অনেক ধন্যবাদ অরূপদা !
আচ্ছা, জীবনের ভিন্ন ট্র্যাকটার ব্যাপারে কি কিছু বলা যাবে? আমি একটু কিউরিয়াস!
"আমি একটু কিউরিয়াস!"
- আমিও! 🙂 🙂
প্রিয় গানের দলকে নিয়ে পোষ্ট। সিনেমাটা এখনো দেখা হয়নি। জমিয়ে রাখা আছে। একটু সময়- একটু স্থিতিশীল হয়ে দেখতে বসবো- এই অপেক্ষায় আছি।
আফসোস একটা থেকে যাবে সবসময়- পিঙ্ক ফ্লয়েডকে সামনাসামনি পারফর্ম করতে দেখার সুযোগ সম্ভবত আর কখনোই হবে না।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
এইটা আমারও এক আফসোস ভাই। তেমন কোন ট্যুর হওয়ার সম্ভাবনাও নাই। জার্নি, টোটো সহ অনেকেই ইদানিং ট্যুর করতেছে। মাঝখানে তো লেড জেপলিন এর ব্যাপারে কানাঘুষা শোনা যাচ্ছিল। জিমি প্ল্যান্টস মানা করে দিল। পিঙ্ক ফ্লয়েড এর তেমন কোন চান্স দেখিনা 🙁