এই তো মাত্র বছর তিনেক আগের ঘটনা। তখন ক্রিকেটে বাংলা-বয়েজ এর শনির দশা চলছিল। ৫ মার্চ ২০১৪, এশিয়া কাপের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছেও নাস্তানাবুদ হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ২২ বলে ৪১ রানের এক লড়াকু ইনিংস খেলে আমাদের সবার নয়নের মণি হয়ে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান নামের অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল এক চৌকস খেলোয়াড়। বাংলা-ক্রিকেটের ভক্ত সমর্থকদের গভীর হতাশার মাঝে সে যেন এক হঠাৎ আলোর ঝলকানি। এই ছেলেটা আগামী দিনে আমাদের ক্রিকেটের একটা বড় নক্ষত্র হয়ে উঠবে এমনটা ভেবে ভেবে আমরা সবাই কমবেশি উচ্ছ্বসিত। সেই উচ্ছ্বাসের জোয়ারে অতি-উদ্বেলিত হয়ে আমাদের এক ঠোঙ্গা-পড়া বড়ভাই দুম করে কাঁপা কাঁপা গলায় ফেসবুকে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস ফেঁদে বসলেন – “জিয়াউর রহমানেরা সব সময়েই লড়াকু হয়…. ” ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাও রক্ষে, ছেলেটার নামের আগে “শহীদ” বসায় নাই। কেউ একজন সেই বড়ভাইকে বলল, এইটা কিসের সাথে কি মেশাইলেন! বড়ভাই ধমক দিলেন, ক্যান! পাকিস্তান টিমরে সাপোর্ট করলে তোমরা যখন গালিগালাজ কর তখন কিছু হয় না? – আবারও কিসের সাথে কি? বুঝলাম এরকম ধুন্ধুমার টাইপের ছাগলজিক এর উত্তরে কাউন্টার-লজিক দিয়ে কোন লাভ নাই। একটু কৌতূহল নিয়ে সামাজিক মিডিয়াতে চোখ বুলিয়ে দেখি, এই বড়ভাইয়ের মত করে কথাবার্তা বলা বেশুমার আদমের সেখানে আনাগোনা।
একজন ব্রিটিশ হিসাবে ২০১৫ এর গোড়ার দিকে সাংঘাতিক রকমের লজ্জ্বার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। সে সময়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েব সাইটে বাংলাদেশে ভ্রমনেচ্ছুদের জন্য একটি সতর্কবার্তা দেখানো হচ্ছিল। সেটি ছিল বিএনপি আহূত ১৫ জানুয়ারির হরতালকে নিয়ে। কিন্তু এই বিএনপি নামটিকে পূর্ণ রূপে লিখতে গিয়েই গোলটা বাধলো। যেহেতু বিএনপি নামে ব্রিটেনেও একটি রাজনৈতিক দল আছে, তাই তাঁদের ওয়েব সাইটে “বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি” না লিখে “ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি” লিখে ফেলল। আর সাথে সাথেই ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা সেটিকে স্যাট্যায়ার করে খবর ছাপিয়ে দিল। অবশ্য পররাষ্ট্র দপ্তর খুব তাড়াতাড়িই তাঁদের এই ভুলটি শুধরে নিয়েছিল কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্টের অনলাইন ভার্সানে সেই ভুলের স্ক্রীনশট এখনও দিব্যি দেখা যাচ্ছে।
ব্রিটিশ হিসেবে একটু লজ্জা অনুভব করলেও বাঙালী হিসেবে কিন্তু আমি একটা বিরাট পরিতৃপ্তি পেয়েছিলাম। বিদেশী বন্ধুদের সামনে অন্তত এযাত্রা একটু মুখরক্ষা করা যাবে। হাজার হোক, মানীর মান উপরওয়ালা রাখেন। ব্রিটেনের সরকারি দপ্তর যদি নাম নিয়ে এমনতর তালগোল পাকাতে পারে তাহলে আমাদের মাননীয় ম্যাডাম ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা আর কি এমন গর্হিত কাজ করল? সেই সময়ে বেশ কিছুদিন ধরে তাঁরা “অমিত সাহার ফোন এসেছিল” বলে কিঞ্চিৎ অমিতাচার করেছিলেন মাত্র। হয়ত অমিত নামে অন্য কারোর ফোন কলের সাথে তালগোল পাকিয়ে তাঁরা এমনটি করে ফেলেছিলেন। তো এখন আমি বেশ বুক ফুলিয়ে বলতে পারছি ব্রিটিশরা করলে দোষ নেই আর বাঙ্গালীরা করলেই দোষ!
এই বিএনপির প্রসঙ্গ যখন এলই তখন আরও কিছু কথা বলা যেতে পারে। দুই দেশের এই দুই দলের নামের মিলটা হয় নেহাত কাকতালীয় অথবা এক্ষেত্রে ব্রিটিশরা বাঙ্গালীদেরকে নকল করেছে। বাংলাদেশের বিএনপি সম্পর্কে তো আমরা সবাই কম বেশী জানি, ব্রিটিশ বিএনপি সম্পর্কে হয়তো অনেকেই তেমন একটা ওয়াকিবহাল নন। এটিও একটি জাতীয়তাবাদী দল। অন্তত, তাঁরা নিজেরা এমনটিই দাবী করেন। যথারীতি এখানেও, “ব্রিটিশ জাতীয়তাবাদ” এর কোন পরিষ্কার সংজ্ঞা দিতে তাঁরা বরাবরই অপারগ। এশিয়া, আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা সংখ্যালঘু অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন এরকম কিছু মূর্খ-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজনকে উপজীব্য করেই তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়। সেটা ভাঙিয়ে তাঁরা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে গোটা দুয়েক আসনও বাগিয়ে ফেলেছিলেন একসময় । অবশ্য মনে রাখতে হবে, সারা দেশ জুড়ে মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতের ভিত্তিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দলগুলোর মাঝে আসন বন্টন হয়। বাংলাদেশে এই নিয়ম অনুসরণ করা হলে জামাত ইসলামিরা কারো লেজুড় না ধরেই সংসদে গোটা দশেক আসন পেয়ে যেত, কিংবা ইনু, মেনন, কামাল সাহেবরা ও নিজগুনেই বছর বছর সংসদে যেতে পারতেন। মূলধারার ব্রিটিশ সমাজে এই “তীক্ষ্ণ জাতীয়তাবাদী” দলটির গ্রহণ যোগ্যতা রীতিমত শূন্যের কোঠায়। ব্রিটেনের মত বাক স্বাধীনতার দেশেও এমন নজির আছে যে, পাবলিক প্লেসে বক্তব্য বিবৃতি দিতে গিয়ে এই দলটির নেতৃবৃন্দ জনগণের তাড়া খেয়ে পালিয়েছেন। তাঁদের নেতা নিক ক্লেগ কে বিবিসির টকশোতে এনে নাস্তানাবুদ করে হাসির পাত্র বানানো হয়েছিল। এমনকি উপস্থিত দর্শকদের একজন তো তাঁকে “ডিক ক্লেগ” বলে ডেকে বসেছিল!
যাহোক, পুরোনো দিনের গল্প অনেক হল। আজকে (১৮/০৭/২০১৭) ফেবু থেকে এই স্ক্রিনশট খানা নিলাম। কিছুটা কৌতূহল বোধ করছি।
যদ্দুর শুনেছি, উনি লন্ডনে বেকার জীবন যাপনে লিপ্ত আছেন। তাছাড়া ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জির গল্প তো সবাই জানি। দেশের কত মানুষ যেখানে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে সেখানে ওনার মত একজন নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক জননেতা এরকম বিলাসী গাড়িতে ততোধিক বিলাসী রেজিস্ট্রেশন প্লেট লাগিয়ে ঘোরাঘুরি করবেন, তা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। গাড়িটি নিশ্চয়ই ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির কাছ থেকে একদিনের জন্য ধার করে এনেছেন!
(অন্তত: যারা ওনাকে এটি উপহার দিয়েছেন তারা এটা বলে বিলিতি ইনকাম-ট্যাক্স ওয়ালাদেরকে সামাল দিতে পারবেন)
😉
1/07/2017
MK