তাঁর মানব সেবামুলক কর্মকান্ডের জন্য সেই ছেলেবেলা থেকেই মাদার তেরেসার প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। তাঁকে শান্তিতে নোবেল দেয়া হয়েছিল। তাবৎ নোবেল লরিয়েটদের মাঝে এই “শান্তি” শাখায় বিজয়ীদের প্রায় সবার এই অর্জনের আড়ালে আমি রাজনীতির রঙ্গলীলার রসালো উপস্থিতি দেখতে পাই। এঁদের মাঝে মাদার তেরেসা ছিলেন বিরল ব্যতিক্রম। তাঁকে নিয়ে অনেকের অনেক আপত্তি থাকতে পারে, তাঁকে ও তাঁর সংগঠনের কাজকর্ম ঘিরে কিছু কিছু বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু তাঁর এই নোবেল প্রাপ্তির পেছনে কোন ভন্ডামী বা রাজনৈতিক নোংরামী ছিল না। কোন ধানাই পানাই এর পথে না হেঁটে, কোন প্রকার সস্তা খ্যাতিলাভের তোয়াক্কা না করে, মানবের সেবাতেই তিনি তাঁর সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছিলেন।
সেই মাদার তেরেসার ভাবমুর্তিতে খ্রিষ্টান পুরুতেরা আজ ময়লা আবর্জনা মাখিয়ে দিলেন! সেইন্টহুড প্রদানের পাশাপাশি তাঁরা তাঁকে রীতিমত একজন ধন্মন্তরি ওঝা বানিয়ে দিলেন, ওঝাত্ব দান করলেন। ভ্যাটিকানের প্রদত্ত সার্টিফিকেট অনুসারে, তিনি নাকি তুকতাক ঝাড়ফুঁক দিয়েই ক্যান্সার কিংবা ব্রেইন টিউমারের মত দুরারোগ্য ব্যাধি সারিয়ে ফেলতে সক্ষম ছিলেন!
ভ্যাটিক্যানের পোপ সাহেব বিবর্তনবাদকে সত্য বলে গ্রহন করেছেন। তিনি LGBT-র ব্যাপারেও ক্যাথলিক চার্চের দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক উদারতা এনেছেন। আমি আশা করেছিলাম তাঁরা হয়তো ক্রমান্বয়ে এইসব আজগুবি অযৌক্তিক বিশ্বাসের চর্চা থেকেও বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তা না করে তাঁরা উল্টোপথে হাঁটার আরেকটা বাজে নজীর স্থাপন করলেন।
শান্তিতে নোবেল পাবার জন্য তাঁকে কোন ফন্দি ফিকিরের আশ্রয় নিতে হয়নি। ঠিক তেমনিভাবে তাঁকে সেইন্টহুড দেবার জন্যেও এইসব ওঝাগিরি, ঝাড়ফুঁক টানার কোন প্রয়োজন ছিল না। তাঁর সারাজীবনের সেবামূলক কর্মকান্ডই যথেষ্ট ছিল। প্রবীর ঘোষ এই মিরাকলকে অসত্য দাবী করে বলেছেন যে, এসব অসত্য মিরাকলের দোহাই দিয়ে তাঁকে সেইন্টহুড দেবার মাধ্যমে বরং তাঁর সুপ্রতিষ্ঠিত ভাবমুর্তিকে অপমান করা হয়েছে।
এইতো গত ১৭ তারিখে ছিল আরজ আলী মাতুব্বরের জন্মদিন। আর সেই দিনেই কিনা মাদার তেরেসাকে এভাবে ওঝা বানিয়ে দেয়ার সংবাদটা জানতে পারলাম!
মাদার তেরেসা কে নোবেল দেয়ার পিছনে উদ্দেশ্য থাকা অস্বাভাবিক নয়।
তার অবদান রয়েছে এটা সত্য।
তেমনি বিতর্ক ও কম নেই।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
শেষ প্যারাতে যা বলেছ, এরকম অনেক কিছু ঘটছে হর হামেশা।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল