ডেসপিকেবল মি!

এই দুনিয়ায় যত জাতি আছে, তন্মধ্যে ক্যাডেট জাতি সর্বাপেক্ষা নিষ্পাপ (হাসেন কেন? ঠিকই তো বললাম)। তবে, সব কিছুরই কিন্ত আছে। কিন্ত থাকবে না কেন বলুন, চাঁদ ও সূর্যের গায়ে যদি কলঙ্ক থাকতে পারে, তবে ক্যাডেটের চরিত্রে দুই-একটা কিন্ত থাকলে কোন সমস্যা নেই। যা বলছিলাম, এই নিষ্পাপ একঘেয়ে জীবনে অফুরন্ত আনন্দ নিয়ে আসে কিছু নিয়ম বহির্ভূত কর্ম। বলা নিষ্প্রয়োজন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলো কারোর না কারোর বিরক্তির কারণ হত। তেমন কিছু মজার স্মৃতি নিয়েই লেখাটি সাজালাম।
ডিসক্লেইমারঃ নিজে প্রয়োগ করতে গিয়ে গণপিটুনি খেলে লেখক দায়ী থাকবে না।
১। এক টার্মএন্ডের রাতে আমাদের এক বন্ধু মহা সমারোহে ঘুমাচ্ছিল। কোন এক কারণে সেটা আমাদের সহ্য হল না। আমরা চার-পাঁচ জন মিলে তার বেডটা আস্তে করে উঠিয়ে বাথরুমে নিয়ে গেলাম। কিন্ত কুম্ভকর্ণের ঘুম তারপরও ভাঙে না। তারপর রঙ-তুলির আঁচড়ে মুখে একটা শৈল্পিক আল্পনা তৈরি করা হল। কিন্ত তারপরও তার ঘুম ভাঙে না। অগত্যা তাকে বাথরুমে রেখে চলে এলাম। এরপরের কাহিনী তেমন কিছু না। ভোর চারটার দিকে একটা আর্তচিৎকার এবং পরে আমরাই উদ্ধারকর্মী হয়ে তাকে উদ্ধার করে আনি।
২। এবারের ঘটনা একটু গোপন। আমাদের ক্লাসের জনৈক ক্যাডেট এক জুনিয়রকে বলল, ক্যান্টিনে যা পাওয়া যায় তা এনে বালিশের নিচে রেখে যেতে। দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন ক্যান্টিনে আইসক্রিম ছাড়া আর কিছু ছিল না। বাধ্য জুনিয়রও আদেশ মোতাবেক আইসক্রিম এনে পূর্বনির্ধারিত স্থানে রেখে গেল। এর ঘণ্টাখানেক পর আমি একটা বই খুজতে গিয়ে ওর বালিশের নিচে বায়ুরোধী প্যাকেটে গলে যাওয়া আইসক্রিমের অবশিষ্টাংশ আবিষ্কার করি। প্রথমে ভাবলাম ওকে ডাক দিয়ে ব্যাপারটা দেখাই, কিন্ত পরে ভাবলাম একটু মজাই যদি না করি তাহলে কিসের ক্যাডেট। মজা করার জন্য আরো কয়েকজন জুটে গেল। সবাই মিলে বালিশের উপর কিছুক্ষণ লাফ-ঝাপ করলাম। একসময় গলিত আইসক্রিমের পুরোটাই বেরিয়ে বালিশ এবং বিছানার মাঝে লেপ্টে গেল। আমরাও যার যার মত কাজে চলে গেলাম। সে ভাবল হয়ত আইসক্রিম গলে এমনিতেই বেরিয়ে গেছে।
৩। কাউকে ঘুমের ভেতর শাস্তি দেয়ার একটি কার্যকর উপায় হল ঠোটের উপরে ও নিচে ভিকস (VICKS) কিংবা মুভ (MOOV) লাগিয়ে দেয়া। প্রথমবার যখন পরীক্ষামূলকভাবে একজনের উপর প্রয়োগ করলাম, ফলাফল ছিল দেখার মত। পানি দেয়, পাউডার লাগায় কোন কাজই হয় না। শেষে সবাইকে অবাক করে দিয়ে হাউস গার্ডেনে নেমে মুখে মাটি ঘষতে শুরু করল। নিঃসন্দেহে একটি বিনোদনমূলক শাস্তি।
৪। বিরক্ত করার আরেকটি সর্বজনীন মাধ্যম হচ্ছে প্যান্টের পকেট কেটে দেয়া। ভুক্তভুগী যখন ব্যাপারটা প্রথম আবিষ্কার করবে, চেহারার এক্সপ্রেশন হবে দেখার মত।
৫। এবারেরটা আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা নীতিবিরুদ্ধ। একদিন কোন এক কাজে সাইবার ক্যাফেতে গিয়েছিলাম। কাজের ফাঁকে ফেসবুকে লগইন করতে গিয়ে দেখি কোন এক আহাম্মক গোত্রীয় ব্যক্তি লগআউট না করে চলে গেছে। ভাবলাম ব্যাটাকে একটা শিক্ষা দেয়া উচিত। বেশী কিছু করলাম না শুধু রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ‘সিঙ্গেল’ থেকে ‘ইন এন ওপেন রিলেশনশিপ’ করে দিলাম। সাথে সাথেই অনলাইনে থাকা ঐ ব্যক্তির বন্ধুরা বিভিন্ন রকম স্মাইলি, কংগ্র্যাটস বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন সংবলিত বিভিন্ন প্রকার কমেন্ট করা শুরু করল। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি নিজেও কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি লগআউট করে বের হয়ে গেলাম। পরে অবশ্য মনে হয়েছিল কাজটা ঠিক হয় নি। কিন্ত কি আর করা, ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। নীতিবাক্যের প্রথম অংশ না মানতে পারলেও অন্তত শেষ অংশটুকু মানি। তাই আর বেশী ভাবি না।

১,৫৫৭ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “ডেসপিকেবল মি!”

  1. নাফিস (২০০৪-১০)

    ১ম কাহিনী আমরাও করেছিলাম। জনৈক ঘুমকাতুরে ক্লাসমেট ব্যাপক নাক ডাকতো ঘুমের মাঝে। একদিন রাতে আমরা সবাই ওর বেদ সহ ওকে তুলে নিয়ে দোতলার পোর্চে রেখে এসেছিলাম। এরপরের কাহিনী আর নাই বা বলি :khekz:
    লেখা ভালো হইছে।

    জবাব দিন
  2. টিটো মোস্তাফিজ

    কি মনে করায় দিলি মুয়াজ 😉
    ক্লাশ টুয়েলভে একরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি ফিচলে কয়েক জন আমার বেডের চারদিকে। আমার সপ্রশ্ন দৃষ্টির জবাবে কেলাতে কেলাতে বলছে বেডশীটে তরল ওটা কী ?
    -তিয়ারা গাম ফেলে দাবী করছে ওটার মালিক নাকি আমি x-( 😡 ~x(
    কি লজ্জা :shy: বলতো :-/ (সম্পাদিত)


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।