সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজছে মানুষ, গাছপালা, ব্যালকনি, রাস্তা, সবকিছু। এই অঝোর বৃষ্টিতে, মন খারাপ করা স্যাঁতস্যাতে সকালে বারান্ধায় দাঁড়ালাম। বৃষ্টির একটু স্পর্শ পাওয়ার জন্যে। বৃষ্টি দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে গেলাম। দূর পাহাড়ে রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ শুনছিলাম অনেকক্ষন। হঠাৎ চমকে উঠলাম অনেক পরিচিত ভেজা হাওয়ার স্পর্শে। মন চলে গেল সেই সব দিনগুলিতে। অনেক দিনের পরিচিত সেই দিনগুলিতে। বৃষ্টিকে উপভোগ করার দিনে, বৃষ্টিকে ভালোবাসার দিনে। পুরনো সাদাকালো সিনেমার মত ভেসে আসছে সেই বরিশাল ক্যাডেট কলেজ, শরিয়ত উল্লাহ হাউস, ডাইনিং হল, একাডেমি ব্লক, হাসপাতাল , সব , সবকিছু। বৃষ্টির সাথে আমার ভালোবাসা শুরু তখন থেকে।
কেন জানি আমার প্রথম থেকেই বৃষ্টিকে খুব মিস করতাম। একলা এক কিশোরের কাছে বৃষ্টি ছিল ‘কাল বেলা’র মাধবি লতার মত। বৈশাখ এর দুপুরের রোদে প্রচন্ড তৃষ্ণায় এক গ্লাস ঠান্ডা জল। কলেজের নিষ্ঠূরতার মাঝে বৃষ্টি ছিল আমার একান্ত ভলোলাগা। শরিয়ত উল্লাহ হাউস এর বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে আমি চলে যেতাম কখনও সমরেশ এর স্বর্গছোঁয়া চা বাগানে। আবার কখনও ‘সাতকাহন’ এর মাঠ এর মাঝখানের চাপা গাছটার কাছে । কিংবা ‘উত্তরাধিকার’ এর অনির কাছে । যে কিনা খালি পায়ে তাদের চা বাগানে বসে বৃষ্টি দেখত । আসামের পাহাড় থেকে ভেসে আসা মেঘ দেখত।
অনেক বিকালে কিংবা পিটি এক্সকিউজ হওয়া সকালে সবাই যখন ঘুমে আমি তখন বৃষ্টি দেখতাম । একা একা বৃষ্টিতে ঘুরতাম কমন রুমের পাশে, হাউস অফিসের সামনে কিংবা ৩৪ নম্বর রুমের সামনে। বৃষ্টির মাঝে কিছু সময়ের জন্যে হারিয়ে যেতাম দূর অজানায়। মাঝে মাঝে বৃষ্টির পানিতে নৌকা ভাসাতাম। ক্লাশ ১২ এ হাউস গার্ডেনে একটা গোলাপ ফুলের গাছ লাগিয়ে ছিলাম। বড় আদরের গাছ। বাসা থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম গাছটা। মাঝে মাঝে গভীর রাতে বৃষ্টি নামলে আমি ১ নম্বর রুমে সামনের সিঁড়িতে বসে বৃষ্টি দেখতাম। রাতের বৃষ্টি। কখনও অঝোরে বৃষ্টি কখনও বা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। মাঝে মাঝে অঝোরে বৃষ্টি তে কাঁদতাম। নিঃসঙ্গ রাতে নিঃশব্দ কান্না। বৃষ্টির যে ঠান্ডা হাওয়ার পরশ পেতাম, তার সাথে তুলনা চলে, প্রচন্ড জ্বরের সময় মায়ের হাতের জল-পট্টির সাথে। অনেক দিন এরকম ভালবাসার স্পর্শ পাইনা আমি।
মালয়শিয়াতে সারা বছরেই বৃষ্টি হয়। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকালে ৪-৫ টার সময় বৃষ্টি হয় । এই নিয়ম করা বৃষ্টিতে সবাই বিরক্ত। কোন ভালবাসা নেই এর সাথে। নেই ব্যাঙের ডাক, ঝিঝি পোকার ডাক। তবুও আমি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টিকে খুঁজি। তার স্পর্শ পেতে চাই । তাকে আমি খুঁজি আমার বাসার বারান্দায়, সুইমিং পুলে, কিংবা আমাদের হিল পাক এর পাহাড়ে পাহাড়ে। তবুও তাকে পাইনা। হয়তো বৃষ্টি আসে ঠিক, কিন্তু তাকে অনুভব করার, তার স্পর্শ পাবার মত আমার মনটা মরে গেছে অনেক দিন আগে, আমার নিজের অজান্তে।
২৭ টি মন্তব্য : “বৃষ্টির সাথে ভালোবাসা …”
মন্তব্য করুন
ভাল লাগলো। এখন তো শরিয়তুল্লাহ্ হাউজের রুম নম্বর শুরু শরিয়তুল্লাহ্ ১০১ থেকে, শের-ই-বাংলা হাউজে ২০১ থেকে আর সোহ্রাওয়ার্দী তে ৩০১ থেকে, যতটুকু আমি জানি। আমাদের সময় ১ নম্বর রুম শরিয়তুল্লাহ্ থেকে শুরু হয়ে ক্রমানুসারে সোহ্রাওয়ার্দী তে গিয়ে শেষ হয়েছিল। শের-ই-বাংলায় ক্লাস সেভেনে আমার প্রথম রুম নম্বর ছিল ৪১, ঠিক হাউজ মাস্টার রুমের সামনের রুমটা।
টেস্ট কমেন্ট...
মেহেদী তোর লেখার হাত ভাল আমি আগেও বলেছি। এই লেখাটা পড়ে আরেকবার স্বীকার করলাম।
শফি ভাই, আমাদের সময়েও ১০১,২০১,৩০১ দিয়া রূম নম্বর শুরু ছিল,কিন্তু আমাদের ক্লাস মেটরা কে কোন হাউসে মুখস্ত ছিল বলে সবাই শুধু রূম নম্বরের লাস্ট দুই ডিজিট বলতাম। মেহেদী সে হিসাবেই রূম নম্বর গুলো উল্লেখ করেছে আমার মনে হয়।
আপনি কি ৪১ নম্বর রূম বলতে বর্তমান ২০৭ নম্বর রূমের কথা বলছেন? কারণ আমরা থাকাকালীন সময় তিন তিন বার হাউস মাষ্টার রুম চেঞ্জ হয়েছিল।
হাউজের সামনের সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই ডানের প্রথম রুমটা ছিল হাউজ মাস্টার রুম। আর সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই মুখোমুখি রুমটাই ছিল ৪১ নম্বর রুম।
"মাঝে মাঝে অঝোরে বৃষ্টি তে কাঁদতাম"
ভাবীসাব ভাল আছে তো? 😉
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
" হয়তো বৃষ্টি আসে ঠিক, কিন্তু তাকে অনুভব করার, তার স্পর্শ পাবার মত আমার মনটা মরে গেছে অনেক দিন আগে, আমার নিজের অজান্তে।"
হায় হায়, কন কি? এত তাড়াতাড়ি? বৃষ্টিকে মিস্কোরি। কিন্তু বৃষ্টি হলে এখনো ভাল লাগে। বিশেষ করে যদি সকালে উঠে দেখি...
কেন??????মইরা গেছে কেন????
ওওওওওওওও..............................বুঝবার পারছি।
ভাল লাগলো।
মনে পড়ে-
লাইটস্ আউট। হয়তো রাত ১১টা। হাউস মাস্টারের রুম বন্ধ করার শব্দ শোনা যায়। ক্লাস ১২-এর কয়েকজন রুম-১ এর সামনে বাগানে নামার সিড়িতে বসে সেদিনের আড্ডা জমাচ্ছে। আর রুম নম্বর ৭-এ চলছে রুম লীডার-এর কড়া শাসনের খেলা। প্রায়ই চলত এরকম। পরের বছরই রুম লীডার উঠতে-বসতে টীজের ধারালো নখে ক্ষত-বিক্ষত। পরে বেশ রিলেশন হয়ে গিয়েছিল।
শফি তুই তো ৭-এর উপরই ছিলি সানজারির সাথে। শেরেবাংলা হাউজে সেই বাঘের টাইলসটা কি আছে?
মাসুদ ভাই,
সালাম নিন।
শেরে বাংলা হাউসের বাঘের টাইলসটা আছে এখনো কিন্তু সময়ের নখরের আঘাতে অনেকটাই ক্ষতবিক্ষত।
একটা ছবি আপলোড করার চেষ্টা করছি টাইলসসহ শেরে বাংলা হাউসের ঐ দেয়ালটার (১৭/২/২০০৬ এ তোলা ছবিটা শাহীনের ১৫/৭৩৬ সৌজন্যে পাোয়া)।
Life is Mad.
হ্যা আমি ছিলাম ৪১ নম্বর রুমে। সান্জারি ছিল আমার ক্লাস সেভেনের রুমমেট। আমি, সানজারি, আলম, আজাদ ক্লাস সেভেনে থাকতে কতবার যে পালায় বাড়ি চলে আসার প্ল্যান করসি তার ঠিক নাই। =))
মাসুদ ভাই,
নিচের ডাউনলোড লিংকে ছবিটা আছে।
আশা করি টাইলসটা ছবি তোলার সময় থেকে এখন খুব বেশি বদলে যায়নি।
http://rapidshare.com/files/128660962/SBH__tiger.JPG.html
Life is Mad.
ধন্যবাদ হাসমত। ছবি দেখলাম। অনেকটাই আগের মতো আছে।
You are welcome Masud vi.
It's my pleasure that I could share the photo.
Good luck viah.
Life is Mad.
মেহেদী তুই কি এখনো আগের মত মোটু আছিস না শুকিয়েছিস............দারুন লিখেছিস বাডী...।।
vai ... ager moto achi ...thanks
মিছা কথা। ও "জাম্বু" রে ফলো করে। আর ২/৪ মাসের মধ্যে জাম্বুও ওর কাছে ফেইল মারবে।
oi kutta .. australia jaiya mair dimu
সাব্বির আসোস কেমন ।bd ফেরত আসবি কবে............।
সিরাজ ভাই দেশ থেকে আসলাম মাত্র ৫ মাস হইল। ২০০৯ এর শেষের দিকে যাব নেক্সট বার। আপনার খবর কি?
খবর খারাপ।লাইবেরিয়াতে আছি...।।
সুন্দর বর্ণনা...বিষ্টি হলে কেন জানি সুমনের এপিটাফটা খুব মনে পরে,মজার ব্যাপার হলো কলেজে গানটা শুনলেই মার কথা মনে পড়ত আমার, বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হত এই তো আম্মু আছে আশেপাশেই...
"বৃষ্টির যে ঠান্ডা হাওয়ার পরশ পেতাম, তার সাথে তুলনা চলে, প্রচন্ড জ্বরের সময় মায়ের হাতের জল-পট্টির সাথে। অনেক দিন এরকম ভালবাসার স্পর্শ পাইনা আমি।."..
দারুণ লাগলো পড়ে।
টেস্ট
mehedi..tor lekhar haat sotti bhalo...ami ar arif arif(kalamot) ek sathe to rlekha porlamm...much touchy....
ore baba kalamot ....
ভাই মারাত্মক ফিলিংস দিয়ে লিখসেন...। অসাধারণ লাগল...। বৃষ্টির কথা মনে হলে আমার খালি ঘুমের স্মৃতির কথাই
মনে পড়ে...। আবারও, ভাই আসলেই অনেক ভাল লাগল। আমি কখনই এভাবে কল্পনা করি নাই...।
"বৃষ্টির কথা মনে হলে আমার খালি ঘুমের স্মৃতির কথাই
মনে পড়ে…।"
=)) =)) =))