আহসান কবীর

নাম আহসান কবীর। ১ম ব্যাচ। প্রথম কলেজ কালচারাল প্রিফেক্ট। উনার সাথে পরিচ্য ২০০০ সালের রিউনিয়ন এ। আস্তে আস্তে কথা বলেন, অনেক জোকস জানেন আর অনেক বেশী চাপা মারেন। ক্যাডেট কলেজে আমরা এর আগে এমন চিজ দেখি নাই। জমে গেল আড্ডা। রিউনিয়নের আগের রাতে সারারাত আড্ডা দিচ্ছি একাডেমী ব্লকে। পরে কলেজের বাইরে অনেক দেখা হয়েছে…কথা হয়েছে… আড্ডা সব…একসাথে চাকরীও করেছি…কিন্তু ওনার জোকস আর চাপা এখনও আগের মতো মজা লাগে। আসলেই লোকটা অনেক বেশী চাপা মারে। নীচের ঘটনাগুলো উনার কাছ থেকে শোনা। তাই চাপা না সত্যি উনি জানেন।

নুরুজ্জামান মোল্লা স্যার…ফার্স্ট ক্লাস…আমার নাম নুরুজ্জামান মোল্লা। সাথে সাথে আহসান কবীর, “আমি একটি ছড়া বলব” এবং এরি সাথে মোল্লা স্যার তার মারামারি জীবনের ওপেনিং করলেন। ওই ব্যাটিং উনি বুড়া হবার আগ পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন। ২২ বছর পর আমরা যখন ইলেভেন এ তখন একদিন রেস্ট টাইমে আমাদের ক্লাসের সবাইকে জুতা দিয়ে পিটাইছিলেন। কারণ আমরা খাকি ড্রেস পরেছিলাম, রেস্ট টাইমে। আমি যদিও মাইর খাইনাই…অবস্থা খারাপ দেখে বেড কাভারের নীচে ঢুকে ঘুম দিয়েছিলাম। উনি রুমে এসে ভাবছেন আমি ঘুমাচ্ছি। কিন্তু আমার রুমমেট নাইম তখন দুই লকারের মাঝে ড্রেস চেঞ্জ করছে…সে তখন পুরা জন্মদিনের পোষাকে। কিন্তু তাও মোল্লা স্যারের হাত থেকে নিস্তার পায় নাই…

আমরা মোল্লাকে নিয়া একটা স্লোগান দিতাম। “মোল্লার কল্লা দেয় নাই আল্লা।” তো এই লোক নিজের ছেলেকেও রেহাই দিতো না (বড় ছেলে নোমান এখন অস্ট্রেলিয়ায়…)। একদিন নোমানকে মারছেন উনি…নোমান নিজেকে বাঁচাতে দুই তলার কার্ণিশে গিয়ে দাঁড়াইছে। আর বলছে…সামনে আসলে লাফ দিমু। তখন মোল্লা স্যার আবেগঘন ভাবে ডেকে নীচে নামিয়ে আনলেন। তারপর এমন মার দিলেন যে ওর হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল…

কবির ভাই একদিন হাউসে লাইটস অফের আগে লুঙ্গি পড়ে ঘুরছেন। তখন এক ব্যাচেলর ম্যাডাম (vey new and cute) বললেন, “লুঙ্গি পড়ে ঘুরছে কে? কবির ভাই সোজা রুমে। ম্যাডামও রুমে ঢোকার জন্য দরজায় ধাক্কা দিলেন। কবির ভাই লুংগি খুলে “আসেন ম্যাডাম…আসেন…”

শবেবরাতের রাত…ঐ ম্যাডাম তখনও একা থাকেন। কবির ভাই সোজা ম্যাডামের বাসায় হাজির। বললেন, “মার কথা মনে পড়ছে, তাই আপনার কাছে আসলাম” ম্যাডেম সাথে সাথে ভিপি স্যারকে দেকে আনলেন। ভিপি বললেন, “কবির তাড়াতাড়ি হাউসে যা। তোরে আমি আউট করে দিব”

কবির ভাই যদিও ওই বার বেঁচে গেছিলেন…পরে ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়ে নেভীতে জয়েন করেন…কয়েকদিন পর ওনার প্রেমিকা ওনাকে ছ্যাঁক দিয়ে আমেরিকা চলে যায়। তার কিছুদিন পর ওনার চাকরি চলে যায়। কবির ভাই দুঃখে মাথা ন্যাড়া করে ফেলেন…এখনও ন্যাড়া মাথায় আছেন। এই কবির ভাই অনেক দিন ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছিলেন সংবাদ পত্রিকায়। প্রথম আলোর আলপিনের প্রতিষ্ঠাতা… আমার দেশ এর ভীমরুল এর প্রতিষ্ঠাতা…সিএসবি নিউজ এ চাকরি করেছেন। মাঝখানে খবর পেলাম উনি খুব অসুস্থ…

কবির ভাই ভালো থাকবেন… ড্রিংক্স করাটা একটু কমাবেন। না হইলে তো মারা যাবেন। জীবনে দুইটা জিনিস মনে হয় আর দেখে যেতে পারবোনা…কবির ভাইয়ের মাথায় চুল আর ওনার বিয়ে।

ডিসক্লেইমারঃ কবির ভাইয়ের কাছ থেকে ক্ষমাপ্রার্থী…মজা করার জন্য লিখেছি…কস্ট পেলে ছ্যারি…

১,২৩৭ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “আহসান কবীর”

  1. মেহেদি, তুই বরাবরই ভাল লেখক আমি স্বীকার করি। লেখাটা খুব প্রাণবন্ত হয়েছে। লেখায় প্রাণ দিতে গিয়ে জাতে নকল ঘটনার আড়াঁলে আসল চাপা না পড়ে যায় খেয়াল রাখিস।

    জবাব দিন
  2. আহসান কবির ভাই সত্যিকারের গল্পবাজ+আড্ডাবাজ মানুষ। ওনার সাথে আড্ডা মারতে মোটেও বোরিং লাগেনা। BEXCA-র প্রতিটা REUNION - এ তার অবদান আছে। লাস্ট REUNION - এ তার সাথে অনেক্ষন আড্ডা দিছি। FACEBOOK - এ PHOTO আছে কেউ চাইলে দেখতে পারও। লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।
    http://www.facebook.com/photo.php?pid=2689343&id=876435712

    জবাব দিন
  3. কাহিনী তো অসমাপ্ত!!!"কবির ভাই সোজা রুমে। ম্যাডামও রুমে ঢোকার জন্য দরজায় ধাক্কা দিলেন। কবির ভাই লুংগি খুলে “আসেন ম্যাডাম…আসেন…” ম্যাডাম কি আইছিল?? 😆
    বহুত মজা পেলুম...

    জবাব দিন
  4. আমার যদ্দূর মনে পড়ে, আহসান কবির ভাই কবিতাও লিখছেন একসময়। উনার একটা কাব্যগ্রন্থ আছে -- "কষ্টে কষ্টে কষ্টি পাথর"; উনি এখনও কবিতা লিখেন কিনা জানিনা।

    আহসান কবির ভাই এর সাথে পরিচয় ১৯৯২-১৯৯৩ সালে আমি যখন ক্যাডেট কোচিং করি। উনি আমাদের General Knowledge পরাতেন। মোল্লা স্যারের গল্পটা উনি সব জায়গাতেই করেন -- সেসময় করছিলেন।

    যদিও মূল লেখার প্রায় এক বছর পর আমার এই কমেন্ট, আশা করি তিনি এখন ভালো আছেন -- সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অনেক ছোটবেলায় অল্প দিনের পরিচয়ে মনে এখনো দাগ কেঁটে আছেন।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।