শীতকালটা কেমন যেন,
দ্রুত সন্ধ্যা নামে,
কুয়াশা ঢাকা অন্ধকার শহরে,
মৃদু আলোর টঙ দোকানে চায়ের কাপের ধোয়া এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি করে।
রাত বাড়লেই নিস্তব্ধ নগরীতে টহল পুলিশের গাড়িগুলো জায়গায় জায়গায় দাড়িয়ে থাকে,
মাঝে মাঝে নাইট গার্ডের দু একটা বাশির শব্দ।
এই পোষাকধারী লোকদের সাথে আমার প্রিয় আরেকটা প্রাণীর মিল আছে,
হ্যা,কুকুরের কথাই বলছি।
আমার মানুষের চেয়ে কুকুর বেশী প্রিয়,
কুকুরেরা বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
যা বলছিলাম,
শীতকাল,
এই ঋতুটাকে বিভিন্ন স্তরের লোকেদের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করব আজ,
হঠাত এই ইচ্ছা জাগ্রত হয়ার কারণ হল,
সেদিন রাতে,
সাইকেল চালিয়ে ফেরার পথে এই হাড় কাপানো শীতে এক মহিলাকে ফুটপথে বসে কাদতে দেখলাম,
সবার মত আমিও ব্যাস্ত,
সাইকেলের প্যাডেল থামালাম না,
কিন্তু কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর কেন যেন মনে হল,
ফেরত যাই,
কথা বলি।
পেছনে আসলাম,
বললাম “কি হইছে খালা আপনার?”
বলল “কিছু না।“
বললাম “বাসা কথায়? “
বলল “এখানে।“
কথা বাড়ালাম না আর,
ঐ যে বললাম,
মানুষ খুব বিপদজনক প্রাণী,
বিশ্বাস ঘাতকতা করে।
তাই এই শহরে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না।
চলে এলাম ওখান থেকে,
কিন্ত এই শীতে,
সে ওখানে কি করবে ভেবে খারাপ লাগছিল,
হয়ত জামাইয়ের সাথে ঝগড়া হইছে,
হয়ত জামাই মেরে বের করে দিছে,
আবার হয়ত সেই অভিমান করে বের হয়ে গেছে।
ভেবে দেখলাম শীতকাল না হলে এতগুলো কথা ভাবতাম না।
শীত কোথায় কেমন?
নরম বিছানায় কম্ববলের নিচে সংগীনির সাথে শীতকাল এক রকম,
আবার বাচ্চার কান্নায় মায়ের নির্ঘুম দীর্ঘ রাতের শীতকাল আরেক রকম।
ট্রেনের করিডোরে হতদরিদ্র পরিবারের ঠান্ডায় বসে থাকাও একই শীতকালের অবদান,
শীতে সারারাত জেগে বাড়ির মানুষের সাথে দেখা করতে যাবে তারা,
ভাড়া নেই তাদের কাছে,
পুলিশ হাতকড়ার ভয় দেখালে লুংগিতে গোজা টাকা বের করে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করে,
পাশেই থাকে টয়লেট,
টয়লেয়েটের গন্ধ,
মানুষ যাওয়া আসার পথে বিরক্ত হয়,
পায়ে লাগে।
ওখানে হয়ত কোন হতদরিদ্র জামাই তার স্ত্রীকে ভর্ৎসনা থেকে রক্ষার সাধ্যমত চেষ্টা করে।
ছেলের কাছে বাবা তার অসহয়াত্ত্ব প্রকাশ পেতে দেয় না,
চেষ্টা করে বলার,
দেখে যাইতে পারেন না?
শীতকালে বিবাহ হয় বেশী,
মৃত্যুও হয় তুলনামূলক বেশী।
সেই মৃত বাড়ির মাতাম শীতে মিলিয়ে যায়,
সকালের খেজুরের রস,
ভাপা পিঠা যেমন আছে,
তেমনি আছে মৃতের গোসুল,
কবরখোড়ার সব আয়োজনও।
বিয়ে বাড়ির বাদ্য সানাই,খাদ্য,
ঝকমকে আলো,দামি পোষাকের শীতেই রাস্তায় অনাহারে ভোগা মানুষ থাকে,
কুয়াশা সব ঢেকে দেয়।
ঘন নিশ্বাসের ফল স্বরূপ জন্ম নেয় নতুন শিশু,
নতুন প্রাণ,
নতুন স্বপ্ন,
নতুন হাসি,কান্না,সম্ভবনা,
নতুন একজন শীত অবলোকনকারী,
শুরু হয় নতুন এক মৃত্যুর অপেক্ষা…..