প্রত্যুত্তরের পঙক্তিমালা ও কিছু পূর্বকথন
আমার ফেসবুক পেজে বা অন্য কোথাও, যেমন সিসিবিতে কারো লেখা পড়েই দু-পাঁচ লাইন কবিতার অবয়বে মন্তব্য জুড়ে দেয়া দীর্ঘদিনের অভ্যাস। পড়বার সময় মনটা বেশী বিক্ষিপ্ত না থাকলে আর পড়ে ভালো লাগার অনুপ্রাস মনের মধ্যে কিছুমাত্র ঘটলে এ নিয়মের অন্যথা ঘটেছে খুব কম। সিসিবিতে কারো কারো কাছ থেকে প্রাণিত প্রতিমন্তব্যও জুটতো। যেমন নূপুর ও সাবিনা, সাইদুর ভাই কিংবা খায়রুল ভাইয়ের কাছ থেকে। টিটো, আসাদ ভাই, মোস্তফা; এমন আরো অনেকেই আছে সে তালিকায়। এমনটা হতো সিসিবি ছাড়াও ফেসবুকে বা ‘রোদ্দুর’ গ্রুপে কিংবা অমন আরো আরো কোথাও। সবার নাম এখানে দেয়া না গেলেও এমনটা নয় যে, আমার মনের মধ্যে তাদের কারো নাম অনুচ্চারিত আছে।
এ প্রসঙ্গে অনেকের কাছ থেকে প্রশংসা যেমন পেয়েছি, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উদ্দিপ্ত প্রত্যুত্তর পেলেও কারো কারো স্থবিরতাও লক্ষ্য করেছি। সিসিবিতে টিটো মোস্তাফিজ একবার প্রস্তাব রাখলো মন্তব্যগুলোর একটা কম্পাইলেশন করবার। আমার মতোন আলসে লোকের জন্যে তা অতি দুরস্ত এক কাজ। তবু মাথা থেকে বিষয়টা উবে গেলো না। বেশ কিছুদিন পর প্রায়ই মন্তব্যগুলোকে নিজ টাইমলাইনে ‘ওনলি মি’ অপশানে জমিয়ে রাখতে শুরু করলাম ‘প্রত্যুত্তরের পঙক্তিমালা’ শিরনামে। কখনো যেমন ভুলে যেতাম আবার বেশীরভাগ সময় মন্তব্যগুলো টুকে রাখবার কথা মনে থাকতো। সময়কালটা অবশ্য খুব একটা দীর্ঘ নয়, সামান্য ক’মাস মাত্র।
তবু ইতিমধ্যে যেটুকু কপি করে রেখেছি তাতে শতাধিক মন্তব্য জমা হয়ে গেছে। এ থেকে একদিন মনে হলো এগুলোকে ব্যক্তিগত সীমানায় আঁটকে না রেখে সংকলন কিংবা গ্রন্থবদ্ধও করা যেতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই হাতের কাছের এক ডজন কে একবার দিলাম পাঠিয়ে ছাপার হরফে (তা ওটা মুদ্রিত কি অন্তর্জাল নির্ভর যে প্রকাশনাই হোক) দেখবো বলে।
কবে কখন কার লেখায় মন্তব্য তা নথিবদ্ধ না থাকাতে এবং সার্বজনীনতার সুযোগ দেবার তাগিদে স্মৃতিসূত্রগুলো ইচ্ছে-অনিচ্ছার যৌগিকতায় উহ্যই থাকলো।
যে এক ডজনের কথা বলছিলাম, তা আছে নীচে ও লিঙ্কে। উপরের কথাগুলোর আঙ্গিকে ক্ষুদে পঙক্তিমালাগুলোকে নিয়ে সবার মতামত পেলে প্রাণিত হবো।
~ এক ~
পুরোনো চিন্তার মোড়ক খুলতেই
ঝপ করে বেরোয়
নি:শব্দ কথোপকথনের শব্দমালা
কাজল ধোয়া জলে
গড়িয়ে নামে বৃষ্টিমাখা স্মৃতির হল্লা
জল ছুঁয়ে যায় তোকে না আমাকে
লেখা থাকে না জলের গায়ে
~ দুই ~
জোনাকির পিছু ছুটি
ধ্যানবিন্দুতে মাখি দ্যুতি
নির্জনতায় গানের পিঠে
রোজ করতল ছুঁয়ে থাকি
~ তিন ~
অদৃশ্য অভিমান
পায়ে পায়ে দাঁড়ায় এসে
লম্বমান পর্বত সমান,
গুল্মের মতোন ছড়ানো
ঘুমের দেশে
আশ্চর্য পালকের বেশে,
নিদ্রালু সময়ের শরীর
শুকনো কাদার মতোন
ল্যাপ্টে রাখে সম্ভাবনার মমি
আর কিছু ক্লান্তির ক্লেদ।
~ চার ~
দরজা খোলা ছিল, জানালাও।
সুখের পাখিরা
এসে তাই থাকেনি একটাও।
~ পাঁচ ~
ঋজু অনড় আরাধ্য নশ্বর –
কার লাগি যে থাকে কার
সাজানো বাতিঘর !
জানে বুঝি কেবলই ঈশ্বর !
~ ছয় ~
সাময়িক
নাব্যতা বোঝার,
অমায়িক
আগ্রাসী ওষ্ঠ রোখার –
প্রয়াসে স্নায়বিক
দাহ্য বুক জুড়ে ছাই একাকার
~ সাত ~
রোদের সংগে ছায়ার ছিলো
অনন্য এক মিতালী
জানলা গলে ঘরে এলেই
ঘটতো যতো হেয়ালী
~ আট ~
সেকি !
শুধুই কি বাষ্প অনুতাপ !
বুকের তোরংগ জুড়ে সব
রাগ-রাগিনীর আবেগ মাখা
অনুভূতির জমা আলাপ।
~ নয় ~
শৈশবের মেঘগুলো
হাওয়ায় উড়িয়ে ধূলো
আজো ডেকে আনে
অতীত এলোমেলো
~ দশ ~
আঙুলে আঙুল নেই
কথারাও হারিয়েছে খেই
চোখের ‘পরে চোখ রাখতেই
বুকের ভিতর দ্রিমিক ধেই ধেই
~ এগারো ~
সামান্য আগুন তবু
সামাল নাহয় পারে দিতে লোকে।
দাবানল সামলাবে কে !
~ বারো ~
মাথায় মেঘের সীমানা
শরীরে মেদ
বেড়েছে, তাই খেদ!
বয়সের সাথে বেড়েছে
রঙের প্রলেপ।
দেখেছো কি সেই
প্রবল প্রভেদ!
http://www.newsbangladesh.com/details/33242
ভালো উদ্যোগ। এক ডজনের মধ্যে অনেকগুলোই আগে পড়েছি বলে মনে হলো। সূত্র থাকলে মিলিয়ে নেয়া সহজ হতো।
খায়রুল ভাই সিসিবির মন্তব্যগুলো কম্পাইল করা হয়ে ওঠেনি। এগুলো সাম্প্রতিক ফেসবুক মন্তব্য থেকে। হয়তো ওখানে পড়ে থাকতে পারেন।
মোস্তাফিজ টিটো এ আইডিয়াটার কৃতিত্বের পূর্ণ ভাগীদার।