~ প্যালেস্টাইনী যীশু এবং গাজায় সন্ত্রাসবাদের নার্সারী ~

“The only way to deal with an unfree world is to become so absolutely free that your very existence is an act of rebellion” – Albert Camus.

নীল চোখ, সোনালী চুল আর সাদা চামড়ার যীশুর যে প্রতিকৃতি আজ ইউরোপ আমেরিকার গীর্জায় গীর্জায় বা ঘরে ঘরে দৃশ্যমান তাতে নিশ্চিত ভাবেই তাঁকে আমরা দেখি একজন সৌম্য শ্বেতাংগের অবয়বে। যীশুকে এভাবেই তাঁদের নিজ জাতিস্বত্ত্বার সাথে মিশিয়ে একান্ত নিজের করে নিয়েছে আমেরিকান আর ইউরোপিয়ানরা। এতে ইতিহাসের শেকড় কোথায় ছিন্ন বা বিচ্ছিন্ন হলো তা তাদের বিবেচ্য বিষয়ের তালিকায় নেই। সেই একই সূত্র ধরে বাইবেলের ইংরেজী সংস্করণই আজ যেনো তার আদি ও মূল সংস্করণ। এভাবে ধর্মকে নিজস্ব লেবাসে সাজিয়ে নেয়া বা পরিচিতি দেয়ার পেছনে ধর্মের প্রতি নিখাদ প্রেমই কি শুধু কারণ ! নাকি আরব ও প্যালেস্টাইনী যীশুর পরিচয় মুছে দেবার কোন গোপন এজেন্ডা এখানে কাজ করেছে! যীশুর সত্যিকারের শিকড় পরিচয় মুছে দেবার মাধ্যমে তাকে নিষ্কলুষ রাখবার যে প্রয়াস, তার কারণ একজন সাধারণ আরব ও প্যালেস্টাইনীর পরিচয়-অস্তিত্বকে বৈষম্য ও সন্দেহের মোড়কে পুরে ঘৃণা-অবজ্ঞার পরিচিতিতে প্রতিষ্ঠিত বা সংজ্ঞায়িত করবার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-প্রচেষ্টার আগে নিজের গা বাঁচিয়ে নেয়া !

এই প্রচেষ্টার পেছনে অবশ্য নিরেট অর্থে ধর্মের কোনো হাত নেই,হাত নেই সাদামাটা একজন ধার্মিকেরও। এটা কেবলি পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী, বিশেষত: ইঙ্গ-মার্কিন প্রশাসন যন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী নীল নকশার এক প্রক্রিয়া ও তার ফসল। আমেরিকার টুইন টাওয়ার আক্রমণের ঘটনার পর মার্কিন এবং আপামর পশ্চিমা জনসাধারণের কাছে এমন ম্যানুফ্যাকচার্ড সত্যের বিশ্বাসযোগ্যতা আর গ্রহণযোগ্যতা আরো বহুগুণ বেড়েছে।

মুসলমানদের ইসা (নবী ঈসা আ:) বা খৃষ্টানদের যীশুর জন্ম আদি প্যালেস্টাইনে। প্যালেস্টাইনের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া জর্ডান নদীর জলসিঞ্চনে জন দ্য ব্যাপ্টিস্টের হাতে হয়েছে যীশুর ধর্মযাত্রার পরিশুদ্ধি, ব্যাপ্টিজম। অথচ আজকের দিনে ক’জন মার্কিনী একজন প্যালেস্টাইনী আরব হিসেবে যীশুকে মানে এবং জানে তা নিশ্চয়ই এক অতি জটিল প্রশ্ন।

সৃষ্টির আদি থেকে শাসকের হাতিয়ার কিংবা বর্ম হিসেবে ধর্ম ব্যবহৃত হয়েছে পৌন:পৌণিকেরও অধিক বার। কিন্তু একজন শ্বেতাংগ পশ্চিমা যীশুর পরিচিতি প্রতিষ্ঠার ভেতর বোধ করি লুক্কায়িত এর চেয়েও অনেক বেশী গভীর কোনো মর্ম। তাই খুব সংগত কারণেই এই প্রক্রিয়া শুরুর পাশাপাশি প্যালেস্টাইনে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপরীতে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় একটা সময়ে এসে খৃষ্টানদের জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়াটা অনেক প্রশ্নের ইংগিতবহ। আজ প্যালেস্টাইনের কথা ভাবতেই বিশ্বের প্রতিটা মানুষের চোখে ভেসে উঠবে ইহুদী-মুসলিম সংঘাতের ছবি। রকেট লাঞ্চার কাঁধে জেহাদী মুসলিম, আত্মঘাতী মানব বোমার মিছিল, অস্থির অরাজক সন্ত্রাসী এক ভূখন্ডের মানচিত্র। যদিও মানবতাবাদীদের চোখে এমন দৃশ্যের পাশাপাশি প্যালেস্টাইন মানে হলো পাখি শিকারের চেয়ে নির্বিচারে শিশু-নারী-বৃদ্ধ হত্যা কিংবা বেসামরিক নিরীহ মানুষের বিভীষিকাময় বিকৃত লাশের মিছিলে আঁকা এক ভয়াবহ জনবসতির ছবি।

হিব্রু বাইবেলে ২৮৬ বার উচ্চারিত ’পেলিস্টিম’ অর্থাৎ প্যালেস্টাইনে খৃষ্টপূর্ব দ্বাদশ শতকে ছিল প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষের বসবাস। ব্যাবিলনীয়, ফিনিশীয়, পার্সিয়ান, রোমান, বাইজেনটাইন, রাশিদুন, আরব, মামলুক, অটোমান, সিরীয়, ইয়েমেনী, মিশরীয় – কারা শাসন করেনি এ ভূখন্ড। চার হাজার বছরের অতীত জুড়ে একের পর এক দখলদার আর শাসকের পালাবদলের মঞ্চ ছিলো বর্তমান প্যালেস্টাইন ও ইজরায়েল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) জের ধরে অটোমান শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ১৯১৮ সালে দখল নেয় বৃটিশরা। ২৪ এপ্রিল ১৯২০ এর ম্যান্ডেট ফর প্যালেস্টাইনের সুবাদে ১,২০,৪৬৬ বর্গমাইল ভূখন্ড নিয়ে প্যালেস্টাইন পাকাপোক্ত ভাবে পরিণত হয় এক বৃটিশ উপনিবেশে। জর্ডান নদীর গতিপথ ধরে সীমানা টেনে পূর্ব পাড়ের প্যালেস্টাইন অর্থাৎ ট্রান্স জর্ডান অংশকে ১৯২২ সালে বলা হলো আরব প্যালেস্টাইন (পূর্ব প্যালেস্টাইন) আর পশ্চিম পাড়ের ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত অংশকে বলা হলো ইহুদী প্যালেস্টাইন (পশ্চিম প্যালেস্টাইন)। সেই সাথে ইহুদী প্যালেস্টাইনের দক্ষিণ প্রান্তে মিশরের সীমান্ত ঘেঁষে এক চিলতে ভূখন্ড গাজা (গাজা স্ট্রীপ) ঘোষিত হয়েছিলো আরব প্যালেস্টাইনের অংশ হিসেবে। [ বৃটিশ কর্তৃক ভারত,পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের ভূখন্ড ভাগ করবার এক প্রতিচ্ছবি বলেই যেনো মনে হয় এটাকে। ]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) পরে পরেই ১৯৪৬ সালে সেই আরব প্যালেস্টাইন এক নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হলো। সেই আরব প্যালেস্টাইনই হলো আজকে মধ্যপ্রাচ্যের সর্বাধিক মার্কিন স্নেহধন্য রাষ্ট্র জর্ডান। অপর দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে গোটা ইউরোপ জুড়ে চলছিল ইহুদী হটাবার তুমুল জোয়ার। যার শুরু হয়েছিলো ১৯৩৩ সালে ইহুদী এজেন্সি এবং নাজীদেও মধ্যে সম্পাদিত ”হাভারা চুক্তি”-এর মধ্য দিয়ে। এ চুক্তিতে পঞ্চাশ হাজার ইহুদীকে ইউরোপ থেকে প্যালেস্টাইনে অভিপ্রায়নের (মাইগ্রেট করাবার) সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিতর্কিত এবং অগ্রহণযোগ্য এ চুক্তির হোতা জিওনিস্ট শ্রমিক নেতা হাইম আরলোসোরোফ সে বছরই তেল আবিবে আততায়ীর হাতে নিহত হন। কিন্তু এ চুক্তির সূত্র ধরে ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে পৌনে দু’লক্ষ ইহুদীর অভিপ্রায়ন ঘটে প্যালেস্টাইনে। যদিও ইউরোপের ইহুদী-নাজী সংঘাতের ফলশ্রুতিতে ১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ এই সময়কালে হাভারা চুক্তির আগেই ইহুদীরা সব জড়ো হতে শুরু করেছিল পশ্চিম প্যালেস্টাইনে এসে। এই সময়টুকুতে প্যালেস্টাইনে অভিপ্রায়নকারী ইহুদীদের সংখ্যা ছিল প্রায় পঁচাত্তর হাজার। এসবের ভেতর দিয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালীন পুরোটা সময় জুড়ে পশ্চিম প্যালেস্টাইনে ইহুদীরা সংখ্যা ও শক্তিতে ক্রমাগতভাবে বেড়েছে।

ইহুদী অভিপ্রায়ন এবং নাজী প্রপাগান্ডার জের ধরে ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে জোরালো আরব বিক্ষোভ-বিদ্রোহের ফলে ১৯৩৬-৩৭ সালে বৃটিশরা ‘পীল কমিশন’ নামে এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। যার মাধ্যমে ইউরোপ থেকে আসা সাড়ে চার লক্ষ ইহুদীর জন্য একচ্ছত্র এক জনপদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গালিলি এবং পশ্চিম তীর থেকে দু’লক্ষ আরবকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। শ্বেতপত্রে আরো বলা হয় প্যালেস্টাইনের বাকী অংশ থেকে যাবে আরবদের। বলা হয় পরবর্তী দশ বছরের মধ্যে প্যালেস্টাইন হবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র যা যৌথভাবে শাসিত হবে আরব ও ইহুদীদের দ্বারা। বলা হয় যে, ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ এই সময়কালে প্রতি বছর আরো পঁচাত্তর হাজার করে ইহুদী প্যালেস্টাইনে অভিপ্রায়ন করবে। কিন্তু প্যালেস্টাইনের পঁচানব্বুই শতাংশ এলাকা জুড়ে ইহুদীদের জমি কেনার কোনো অধিকার থাকবে না। ফলত ইহুদী বা আরব কেউই এই শ্বেতপত্র মানেনি।

এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে কেবল পোল্যান্ড থেকেই সোয়া লক্ষ এবং রোমানিয়া, হাঙ্গেরী, চেকোস্লাভাকিয়া ও যুগোস্লাভিয়া থেকে আরো সোয়া লক্ষ ইহুদী প্যালেস্টাইনে অনুপ্রবেশ করে। ইহুদী এজেন্সীর সুদূরপ্রসারী কুটকৌশল চিস্তা থেকে ইহুদীরা বৃটিশদের পাশে এসে মিত্রশক্তির সংগে যুদ্ধে যোগ দেবার প্রস্তাব রাখলে বৃটিশ সেনাবাহিনী এবং সাধারণ মানুষের বিরোধিতার বিপরীতে চার্চিল তা অনুমোদন করেন। একে একে প্রায় পনেরো লক্ষ ইহুদী মিত্রশক্তির নিয়মিত বাহিনীর সাথে যুদ্ধে যোগ দেয়। প্যালেস্টাইনী আরবরা বৃটিশদের পক্ষে যুদ্ধে নামতে অতোটা উৎসাহী ছিল না। তাই নিস্পৃহ আরবদের বিপরীতে মিত্রশক্তির সাথে যুদ্ধে যোগ দিয়ে ছোট ছোট সশস্ত্র ইহুদী সংগঠনের বিপরীতে তৈরী হতে থাকে বিশাল এক প্রশিক্ষিত ইহুদী সেনাবাহিনী। শুরুতে অনিচ্ছুক বৃটিশ সেনাবাহিনীর অধীনে গড়ে ওঠে এমনকি পৃথক ইহুদী সেনা বৃগেড।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতেই দুর্বল বৃটিশ শক্তি যখন এক দিকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে থাকে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ভেতর দিয়ে অন্য দিকে দ্রুত আরো সুসংগঠিত ও সংঘবদ্ধ হতে থাকে ইহুদী সেনা শক্তি। ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পেশকৃত প্রস্তবের প্রেক্ষিতে নভেম্বরে জাতিসংঘে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বৃটিশ ম্যন্ডেটের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে প্যালেস্টাইনে হবে একটি স্বাধীন আরব রাষ্ট্র, একটি স্বাধীন ইহুদী রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের প্রশাসনে জেরুজালেম হবে একটি আন্তর্জাতিক শহর। আরো বলা হয় বৃটিশ সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে চলে যাবার দু’মাসের ভেতর এবং পহেলা অক্টোবর ১৯৪৮ এর মধ্যে এ স্বাধীন রাষ্ট্রদ্বয় প্রতিষ্ঠার বাস্তবায়ন হবে। এই ঘোষণায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই উল্লসিত ইহুদী এবং ক্ষুদ্ধ প্যালেস্টাইনীদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে বিরোধ ও সংঘর্ষ ছড়িযে পড়ে। ফলাফল ছিলো খুবই ভয়াবহ। বিশ লক্ষ মানুষের আবাস প্যালেস্টাইনে সপ্তাহে গড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো একশ আর আহত দু’শ। প্রায় এক লক্ষ আরব হাইফা,জাফা এবং জেরুজালেম ছেড়ে যেতে বাধ্য হলো। অথচ তন্দ্রাচ্ছ্বন্ন আরব লীগ তখনো ভাবছিল ‘আরব লিবারেশন আর্মি’ এ সংকট মোকাবেলায় সক্ষম। বিপরীতে প্রত্যেক ইহুদীর জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হলো।

উৎখাতকৃত আরবরা অস্তিত্বের এই সংগামে যখন আরব প্যালেস্টাইনের ট্রান্সজর্ডান রাজতন্ত্রের বাদশাহ আবদুল্লাহ আর আরব লীগের দিকে তাকিয়ে ছিল, তখন বাদশাহ আবদুল্লাহ আসলে সমগ্র আরব প্যলেস্টাইনে তার দখল মজবুত করার চেষ্টায় মশগুল ছিল। ১৪ মে ১৯৪৮ একদিকে যখন শেষ বৃটিশ সেনাদল প্যালেস্টাইন ত্যাগ করলো তখনই অন্যদিকে স্বাধীন রাষ্ট্র ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিল ইহুদীরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিন সংগে সংগেই স্বীকৃতি দেয় এই ঘোষণাকে। আরব রাষ্ট্রগুলো ইতোমধ্যে তাদের মজবুত কিন্তু অপ্রস্তুত সম্মিলিত সামরিক শক্তি নিয়েও ইহুদীদের সু-সংগঠিত বাহিনীর সাথে পেরে ওঠেনি। বিপরীতে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চেকোস্লাভাকিয়া ইহুদীদেরকে ভারী ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রের যোগান দিয়ে তাদের সামরিক শক্তিকে আরো মজবুত করে।

Palestine 20Map

আরব ইজরায়েল যুদ্ধে গোটা পশ্চিম প্যালেস্টাইন চলে যায় ইহুদীদের দখলে। কেবল মাত্র সিরিয়া ও লেবানন এক চিলতে করে দু’টি জায়গায় তাদের দখল রাখতে পারে। আর পশ্চিম তীরে বৃটিশরা চলে যাবার আগে যেখানে জর্ডান সেনাবাহিনীকে বসিয়ে রেখে গিয়েছিল ওইটুকুন থাকে আরবদের দখলে। আর অন্যদিকে গাজা স্ট্রীপের দখল নেয় মিশর। পরবর্তীতে ইজরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পর বৃটেন তড়িঘড়ি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। ১১ মে ১৯৪৯ এ জাতিসংঘও ইজরায়েলকে তার সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে নথিভূক্ত করে। দেখে শুনে মনে হয় সব কিছুই যেনো একটা পরিকল্পিত ছক ধরে ঘটে গেছে একের পর এক।

আজ তাই বিবিসির পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রচারের সত্য উন্মোচনে খুব বেশী অবাক হবার মতোন বোধ করি কিছুই নাই। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার মঈন আলীর ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ ‘সেভ গাজা’ রিস্ট ব্যান্ড পরে খেলতে নামায় আইসিসির কোড অব কনডাক্ট ভঙ্গের আহাজারিও অবাক হবার মতোন আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। অগণিত নিরপরাধ শিশু-নারী-বৃদ্ধের নির্মম হত্যাযজ্ঞে মানবাধিকারের গ্লোবাল সোল এজেন্ট আমেরিকার বোধহীন নীরব ভূমিকা ! সেটাও আসলে অবাক করার মতোন আকস্মিক ও বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।

প্যালেস্টাইন আজ অবরুদ্ধ মানচিত্রের পোট্রেট। গাজা নির্বিবাদ মানুষ হত্যার অবাধ ও উন্মুক্ত মঞ্চ। গাজা এবং ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর হাজার বছর ধরেই ছিলো মধ্যপ্রাচ্য ও প্রাচীন মেসোপোটেমীয় সভ্যতায় দুর্বৃত্ত আর দখলদারের পুন: পুন: অনুপ্রবেশের খোলা জানালা। সেই অর্থে প্যলেস্টাইনে বা গাজায় নিরবচ্ছিন্ন শান্তি কখনোই বিরাজমান ছিল না। আলেকজান্ডার যখন গাজা দখল করে তখন নারী ও শিশু ছাড়া কোনো পূর্ণবয়ষ্ক পুরুষ বলতে গেলে বেঁচে ছিল না। নারী ও শিশুদের দাস করে নিয়ে যাবার পর আশেপাশের বেদুইনরা এসে বসতি গড়ে ওখানে। গত কয়েক দশক ধরে আলেকজান্ডারের ধ্বংসলীলাকে অমানবিক ভয়াবহতায় ম্লান করবার প্রতিযোগিতায় মত্ত যেনো ইজরায়েলীরা। দীর্ঘমেয়াদী পশ্চিমা চক্রান্তের ফলাফল হিসেবে বহুবিধ জাতি ধর্ম বর্ণের সহাবস্থানের বিপরীতে মুসলমান ও ইহুদীদের দখলদারিত্বের নির্মম সংঘাতের এক রঙ্গমঞ্চ আজ প্যালেস্টাইন ও গাজা। আধিপত্যবাদের ফায়দা আজ ধর্মযুদ্ধের পোষাকে ঢেকে তৈরী করেছে সন্ত্রাসবাদের এক নার্সারী যেখানে নিত্যদিন বলি হচ্ছে মানবতা। ঘৃণ্য কুটকৌশলের সূত্র মেপে আজ নির্বিচারে বোমা পড়ে স্কুলে, হাসপাতালে, মসজিদে কিন্তু গীর্জায় পড়ে না। রাষ্ট্রযন্ত্র এখানে আসলে ধর্মকে ভূলুণ্ঠিত করেছে নির্দ্বিধায়। ধার্মিককে নয়। তাই গাজায় বসবাসরত খৃষ্টানরা আজ গীর্জা খুলে দিয়েছে মুসলমানদের জন্য। গৃহহীন মুসলমানকে আশ্রয় দেবার পাশাপাশি গীর্জায় নামাজ পড়বার ব্যবস্থাও করেছে। এটুকুতে তবু টিকে আছে মানবতা ও সভ্যতার জয়। কারণ বিচ্ছিন্ন এই সাধারণ মানুষগুলো রঙ্গমঞ্চের মধ্যে থেকে প্রদীপের নীচের অন্ধকারটুকু অবলোকন করতে পেরেছে।

যীশুর জন্ম যেহেতু প্যালেস্টাইনে। খৃষ্টধর্মের গভীর শিকড় তাই প্রোথিত এখানে। আবার দজলা-ফোরাতের (টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস) কারবালার রক্তবন্যার ইতিহাস ছুঁয়ে এটা মুসলিমদেরও ধর্মীয় গুরুত্বের একটা স্থান। মহানবী মুহম্মদ (স:)-এর প্রপিতামহের জন্মস্থান গাজা। আরো অনেক ধর্মের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনও এখানে পাওয়া গেছে। তাহলে গোটা পৃথিবী যেখানে দরোজা বন্ধ করেছে ইহুদীদের জন্য সেই ইহুদীদের পুনর্বাসনে জাতিসংঘ কি করে প্যালেস্টাইনের জায়গা বরাদ্দ দিয়ে ইহুদীদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় ! কারণ এই জাতিসংঘে তারাই এ প্রস্তাব উত্থাপন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যারা (কিংবা যাদের ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্ররা) তাদের দেশ ও ভূখন্ড থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করতে বা সরিয়ে দিতে চাইছিল।

প্রতিশ্রুত ভূখন্ড বা প্রমিজড ল্যান্ডের কথা যদি বলা হয় তাহলে প্রশ্ন আসে এই একই ভূখন্ডে তো ঈসা আ: (জেসাস), মূসা আ:(মোজেস), ইউসুফ আ: (জোসেফ), ইব্রাহীম আ: (আব্রাহাম) এবং আরো অনেক নবী-সাধু-সন্ত-ধর্মপ্রবক্তার জন্ম হয়েছিলো। কিন্তু ঈশ্বর আজ কেবলমাত্র ইহুদীদের জন্যই বিরাজ করছেন আর অন্য কারো জন্য নয় ! প্রমিজড ল্যান্ডের অংকে এমন সত্য যারা মানে তারাই আজ ইজরায়েলের বর্বরতায় নির্বিকার থাকতে পারে, থাকে, এমনকি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

সমুদ্রের আধিপত্য আর মেসোপোটেমীয় সভ্যতার সোনা আহরণের (ফায়দা লুটার) হাতছানি যে নব্য ঔপনিবেশিকতায় (নিও কলোনিয়ালিজমে) ঠেলে দিয়েছে ভূমধ্য সাগরের পূর্ব তীরের প্যালেস্টাইনকে তার কারণ শুধু ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আর ইহুদী আধিপত্যবাদের প্রসার প্রচেষ্টা নয়। বরং এটা ছাড়িয়ে আরো বড় কিছু। এক সময়ে ইসলামী ঐক্যবোধের চেতনায় ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধে সক্রিয় আরব রাষ্ট্রগুলো আজ সব অদৃশ্য আফিমে বংশবদ হয়ে নীরব নিস্তেজ নিষ্ক্রিয় নির্বোধের ভূমিকায় মার মার কাট কাট অভিনয় প্রতিভার শ্রেষ্ঠ পুতুল হবার প্রতিযোগিতায় মত্ত। তাই সময়ের সৌভাগ্য ঘোটকে সওয়ার আরব প্যলেস্টাইনের ভূখন্ডে ১৯৪৬ এ জন্ম নেয়া জর্ডান আজ মার্কিন সোহাগধন্য দেশ হবার কল্যাণে রক্তের রং কেমন তা বেমালুম ভুলে গেছে। আরব বিশ্বের মোড়ল দেশ সৌদি আরব যাদুর কাঠি না হেলালে বোঝে না নিরীহ নারী-শিশুর অবাধ হত্যা ন্যাক্কারজনক, ঘৃণ্য, অমানবিক, অক্ষমার্হ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধ। আফিমে বুঁদ হওয়া স্বাভাবিক বোধলুপ্ত মাদকাসক্তের মতোন অন্যে বুঝিয়ে বলে না দিলে ভাইয়ের লাশের পাশে বসে খিলখিলিয়ে হাসবার নির্মমতা প্রকাশে তুমুল পারঙ্গমতা দেখাতে তৎপর। ইরাক যুদ্ধবিধ্বস্ত আমেরিকার মদদপুষ্ট সরকার নিয়ে মানবতা ও প্রতিবাদের চোখ-কান-মুখ-ঠোঁট সেলাই করে বসে আছে। আর জুলাইয়ের ২০১৪ এর শেষ সপ্তাহে জাতিসংঘের নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্যারেল বোমার ব্যবহার এবং দেড় সহস্রাধিক মৃতের তালিকা সিরিয়ার সবচেয়ে রক্তাক্ত সপ্তাহের একটি ইতিহাস তৈরী করেছে। মিশরে সামাজিক বিপ্লব আর গণজাগরণের নামে শাসকের পালা বদল হয়েছে আর বিপরীতে মানবতা আদপে জুতসই ভাবে বাক্সবন্দী হয়েছে। এগুলো সবই প্যালেস্টাইনের সীমানা ঘিরে আরব রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে ভৌগলিক-রাজনৈতিক দাবা খেলার অংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত পাল্টেছিলো শাসক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লীগ অব নেশনসের বদান্যতায় হলো উপনিবেশ। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হলো নব্য ঔপনিবেশবাদের ভাসমান কয়েদখানা।

গাজায় খাদ্য, ঔষধ, পানি, জ্বালানী – জীবন ধারনের অত্যাবশ্যকীয় সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ ইজরায়েলের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে কিংবা যেদিক দিয়েই গাজায় যেতে আগ্রহী হোক না কেন ইজরায়েলের খবরদারী পার হয়েই যেতে হয় এসব সব কিছুকে। ইজরায়েলের ভূখন্ড না মাড়িয়ে গাজায় পৌছানো সম্ভব নয়। আর এই যাতায়াত তাই সম্পূর্ণভাবে ইজরায়েলের ইচ্ছা নির্ভর। গাজার আকাশ এবং সমুদ্রের কর্তৃত্বও ইজরায়েলের হাতে। ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের এক ছোট্ট ভূখন্ড,লম্বায় ৪১ কিলোমিটার আর প্রস্থে কোথাও ৬ কোথাও ১২ কিলোমিটার মাত্র। বিংশ শতকের শুরুতে ছিলো অটোমান স্ম্রাজ্যেরও অংশ। ১৯১৮ সালে গ্রেট বৃটেনের কাছে আত্মসমর্পণের পর ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৭ পর্যন্ত মিশরের কর্তৃত্বাধীন। ১৯৬৭ সালে ৬ দিনের যুদ্ধে মিশরের কাছ থেকে দখল করে নেবার পর ১৯৯৪ পর্যন্ত ইজরায়েলের অধীনে। ১৯৯৩ এর অসলো সমঝোতা (অসলো একর্ড) অনুযায়ী গাজা প্যলেস্টাইনী শাসনাধীন হবার ঘোষণা হলেও ইজরায়েল শেষ পর্যন্ত তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাস্তব পদক্ষেপ নেয় ২০০৫ সালে। পরাশক্তিরা সিদ্ধান্ত দেয় আর ইজরায়েল সেসব চুক্তি-সমঝোতা-সিদ্ধান্তের ডিক্রি দুমড়ে মুচড়ে পকেটে পুরে দিব্যে ঘুরে বেড়ায়। এতে বিশ্ব এতটুকু থমকে যায় না, বিচলিত হয় না। তাই একজন ইহুদী সেনার হদিস না মেলার উছিলায় এক সপ্তাহ ধরে নতুন কোনো কামান-মর্টার-রকেটের টার্গেট প্র্যাকটিস করে অনায়াসে ইজরায়েল। পৃথিবী তাকিয়ে দেখে। বিব্রত হয় না।

এক মঞ্চে নাটক হয় তাই ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে পিএলও ইজরায়েল দ্বিতীয় শান্তি চুক্তির (সেপ্টেম্বর ১৯৯৫) আর অন্য মঞ্চে চলে কাঁটা তারের বেড়া আর সীমানা বেষ্টনী নির্মাণের কর্মযজ্ঞ (১৯৯৪-১৯৯৬)। গাজাকে বৃহৎ এক কারাগারে পরিণত করার এই চেষ্টার প্রতিবাদে ২০০০ সালে ইজরায়েল বিরোধী দ্বিতীয় বিদ্রোহের সময় বিক্ষুদ্ধ গাজাবাসী অনেক জায়গায় এই সীমানা বেষ্টনী উপড়ে ফেলে। ডিসেম্বর ২০০০ থেকে জুন ২০০১ এর মধ্যে ইজরায়েল তার সীমানা জুড়ে বেষ্টনীটি পুন:নির্মাণ করে। ২০০৪ সালে মিশর গাজার সংগে তার ১১ কিলোমিটার সীমান্ত জুড়ে নিজ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বেষ্টনী নির্মাণ শুরু করলে গাজা একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত হবার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আকাশ আর সমুদ্রসীমা তো রইলোই ইজরায়েলের দখলে, গাজায় যেতে আসতে চাইলে কেবল ইজরায়েলের মর্জি মেনেই ঘটবে তা। অসলো চুক্তি অনুযায়ী গাজার নিজস্ব বিমান বন্দর থাকতে পারবে, যদিও আকাশসীমার কর্তৃত্ব অন্যের। একমাত্র বিমানবন্দরটি নির্মাণ পরবর্তীতে ইজরাইরী বোমায় অচল হলে আর মেরামত ও সচল হয়নি।

বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চিৎকারে কনডোলেৎসা রাইসের প্রচেষ্টায় মিসরের সাথে সীমান্তের রাফা ক্রসিং-এ প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অথরিটি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যৌথ নিয়ন্ত্রণে গাজায় আগমণ-প্রত্যাগমণের ব্যবস্থা চালু হয়। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি যে এতেও ইজরায়েলী নজরদারির বিষয়টি জুড়ে দেয়া হয়। পুরো বিষয়টা নি:সন্দেহে এমনটাই দাঁড়ালো যে, বিশ্ব জুড়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চেঁচামেচিতে ইজরায়েলের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবার ক্ষীণতম সম্ভাবনাটুকু আঁচ করতে পেরে আমেরিকা গাজাবাসীর চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ছুটে এসেছে। কারণ মানবাধিকারের সোল এজেন্সিটা কেবল আমেরিকার। আর তাই বিশ্ববাসীর চোখে প্যালেস্টাইনের স্বার্বভৌমত্ব ও চলাচলের অধিকার আদায়ের অভূতপূর্ব কসরত ও সাফল্যের ঠুলি পরিয়ে বাস্তবে তা ইজরায়েলী পর্যবেক্ষণের আতসকাঁচের নীচে ফেলে তাদের দখলদারিত্ব বজায় রাখলো। গাজা যথারীতি এক বিশাল কারাগারের অস্তিত্বে পুন:র্বহাল থাকলো।

গুয়ানতানামোর কারাগারে যারা কাটিয়েছে জীবনের অনেকগুলো সোনালী বছর তাঁদের ক’জনকে যদি প্যালেস্টাইনের জীবনের স্বাদ দেয়া যেতো ক’বছরের জন্য – ওরা হয়তো ভালো বলতে পারতো কোনটা কোন মাপের কারাগার। মন চাইলেই পছন্দ মতোন বোমা ফাটিয়ে নারী-শিশু-বৃদ্ধদের হত্যা করবে গোনাগুনতি ছাড়া, এমন নির্মমতার অনুমোদন ও নজির সম্ভবত গাজা ছাড়া আর কোথাও অত সহজে মিলবে না।

তাহলে একটা প্রশ্ন প্রকট হয়ে থেকেই যাচ্ছে যে, এতোটা অবরুদ্ধ এই গাজায় খাবার-ঔষধ-জ্বালানী-পানির প্রবেশ যখন ইজরায়েলের মর্জি নির্ভর সেখানে মর্টার মেশিনগান কি করে ঢুকে পড়ছে অবলীলায় ! এটা না হলে ওই গোনাগুনতি মর্টার শেলের বিপরীতে টন মেপে বোমা ফেলার ছুতাও তবে পেতো না ইজরায়েল। বিষয়টা এমন যে গাজা ছেড়ে চাইলে হুট করে পালিয়েও যেতে পারবে না গাজাবাসীরা। এই সব কিছুর কারণ কেউ না কেউ প্যালেস্টাইন ও গাজায় এই সন্ত্রাসবাদকে জিইয়ে রাখতে চাইছে। কেউ না কেউ, যার ইচ্ছেই বাস্তবতা, গাজাকে আসলে এক রকম সন্ত্রাসবাদের নার্সারী হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। অথবা বলা যেতে পারে গাজা যেনো হাতের নিশানা মজবুত করবার উন্মক্ত এক ফায়ারিং রেঞ্জ।

UNSchool_DestrMoInterior

সর্বশেষ বিপত্তি সম্ভবত এই ছিল যে,২০০৬ এর নির্বাচনের ফলে ক্ষমতায় আসা বিতর্কিত হামাস তাদের প্রতিপক্ষকে পাশে নিয়ে ২০১৪ এর জুলাই মাসের গাজার নির্বাচন কেন্দ্রিক নতুন সরকারকে একটি সম্প্রীতির সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। এমনটা হলে তো অনেক সমস্যার ল্যাঠা চুকে যেতো। তাই সত্যিকার অর্থে অমনটা হোক আদৌ তা কেউ চায় না।

বরঞ্চ বিশ্ববাসীর চোখের সামনে প্রতি দিন নির্মম শিশু হত্যার নির্বিকার প্রতিরোধহীন ঘটনা ঘটিয়ে, বিভৎস লাশের ছবি প্রতি দিন পত্রিকার পাতায় পাতায় ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মানবিক মূল্যবোধের শেষকৃত্য সমাপনের পথে খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে চাইছে এসবের নিয়ন্ত্রক অদৃশ্য পরাশক্তি। ওদের ভেতর হয়তো আরো ভয়াবহ কিছুর জন্য বিশ্ববাসীকে তৈরী করবার কোনো তাগিদ আছে। অবশ্য এই সব কিছুর বিপরীতে একটা কথা খুব সত্যি যে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ এবং পরবর্তী প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি, চেতনা ও বোধের যে পরিবর্তন ঘটছে তাতে মুখে তালা লাগিয়ে, চোখে ঠুলি পরিয়ে খুব বেশী দিন আর পার করা যাবে না। খোদ ইজরায়েলেই আজ প্রণিধানযোগ্য ব্লগার প্রশ্ন তুলেছে ( হোয়েন জেনোসাইড ইজ পারমিসেবল ? – ইওচানন গর্ডন ) এক পক্ষে ষাট জন আর অন্য পক্ষে ষোলশ জন – এমন বিসদৃশ্যময় যুদ্ধমৃতের সংখ্যার বিপরীতে ইজরায়েলের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনিপুণ দায়িত্ব পালনের উছিলায় এমন গণহত্যা অনুমোদনযোগ্য কিনা ! চাপের মুখে সেই ব্লগ অপসারিত হয়েছে এবং ব্লগারকে ক্ষমা চাইতে হয়েছে এটা সত্যি। পাশাপাশি এটাও সত্যি, পরবর্তী প্রজন্মের ভেতর যে বোধের শিকড় জন্ম নিতে শুরু করেছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে সভ্যতার সংগে হঠকারী স্বার্থান্বেষী মহলের করা সব শঠতাকে অবলীলায় চিহ্নিত করে, যথাশীঘ্র প্রতিকারের ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে তারা খুব অনায়াসে।

রচনাকাল ~ ০৫ আগস্ট ২০১৪
‘নিভৃত নিসর্গ’ উত্তরা,ঢাকা।

১,১৩৯ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “~ প্যালেস্টাইনী যীশু এবং গাজায় সন্ত্রাসবাদের নার্সারী ~”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    পুরোটা একবারে পড়তে পারলামনা।পড়তেপড়তে ভাবতে হচ্ছে।
    কত বছর দিল্লিতে ভারতীয় এক বুদ্ধিজীবি (স্বামী পার্থ সারথি)'র সাথে অনাকাংখিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম।
    ওদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের চেয়ে অনেক আলাদা।
    কঠিন এই বষয়টি নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। পুরো পড়া হলে আবার লিখবো


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    ‘নিভৃত নিসর্গে’ বসে লেখা তোমার এ নিবন্ধে মন্তব্যের খরা চোখে পড়ার মত।
    লেখাটিতে তোমার অন্তরের নৈ্সর্গিক প্রভা মূর্ত হয়েছে। যে শ্রম ও অনুভূতি এ লেখার জন্ম দিয়েছে তাকে শ্রদ্ধা ও সাধুবাদ জানাই।
    একেবারে শেষের বাক্যটিতে ব্যক্ত আশাবাদটাকে আমার কেন জানি হালফিল অবস্থাদৃষ্টে এখনো দুরাশাই মনে হয়।
    শেষের দিক থেকে ৮ম অনুচ্ছেদের ৭ম লাইনের ২য় শব্দটা বোধহয় 'ক্ষমার্হ্য' এর বদলে 'অক্ষমার্হ্য' হবে (অর্থাৎ "যাদুর কাঠি না হেলালে বোঝে না নিরীহ নারী-শিশুর অবাধ হত্যা ন্যাক্কারজনক, ঘৃণ্য, অমানবিক, ক্ষমার্হ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধ" এ বাক্যাংশটিতে)। একটু দেখে নিও।

    জবাব দিন
  3. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    খায়রুল আহসান ভাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ দীর্ঘ লেখাটি পড়বার জন্য আর বিশেষত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
    একেবারে যথার্থ বলেছেন। বিষয়টা চোখেই পড়েনি। অক্ষমার্হ্য-ই হবে শব্দটা। আন্তরিক ধন্যবাদ এটা ধরিয়ে দেবার জন্য।
    আর আপনি একেবারে ঠিকই বলেছেন। অনেকটা শ্রম ও সময় এই লেখার তথ্য সঠিকতা নিশ্চিত করতে গিয়ে আমাকে করতে হয়েছিলো।
    এখানে পোস্ট দেয়াটাকে সার্থক মনে হলো আপনার মন্তব্যে।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।