~ নাম জানা নেই এমন অসুখ ~

প্রিয় ফুল, প্রিয় রং, প্রিয় পাখী, প্রিয় নদী
ওসব কিছুই আমার নেই।

কখনো কোনো এক সময়ে
শীতের সকাল ভালো লাগতো,
বৃষ্টির দাপুটে ঝম ঝম ভালো লাগতো,
খরতপ্ত দুপুরের আলস্যও,
আর ছিলো মধ্যরাতের নির্জনতা।

শীতের পিঠা খেতে গেলে এখন শুধু ভূখা মানুষের কথা মনে হয়,
বৃষ্টি এলে খোলা আকাশের নীচে থাকা উদ্বাস্তুর কথা মনে হয়,
রোদের তেজে নিস্তেজ হয়ে নুয়ে আসা শ্রমিকের কথা মনে হয়,
মধ্যরাতে শরীর বেচা মচ্ছবের রমনীকূলের কথা মনে হয়।

কেনো এসব মানসিক বৈকল্য !
কেনো এমন উল্টা সিধা মনে হওয়া !
কেনো এমন বিরস বদন জীবন বাওয়া !
মনের ভেতর মুক্তো সেঁচা ডুবুরী
দিয়ে হলো না তা জানতে চাওয়া !

অথচ এই আমারই
দীর্ঘ চুলের স্নানের শেষে গড়িয়ে পড়া জলের ধারা বিমোহিতের মন্ত্র দিতো।
আঁচলখানার পেখম মেলে নীলাম্বরীর ত্রস্ত যাওয়া বুকের ভেতর কাঁপন দিতো।

এই আমারই
সন্ধ্যা হলে তারার সাথে কথা বুনবার সংগী পেতে মন চাইতো।
কফির কাপে মুখোমুখি বিকেল দেখার স্বপ্ন ভীষণ দোলা দিতো।
উদ্যানের ওই সবুজ ঘাসে আংগুল বোনা সখ্যতাতে খুব বেড়াতে,
দীঘির জলে কথার ভীড়ে গাছের ছায়া জলের বুকে ভেংগে যাওয়া দেখতে পেতে,
যুগল মনের সখ্যতাতে চাঁদের সাথে খুনসুটিতে মেতে থাকতে,
ভীষণ রকম মন চাইতো।
এই আমারই। এই আমারই।

এখন কেমন বিরস লাগে সখ্যতাকে, সন্দেহময় আঁধার রঙা ছায়ার মতো,
অবিশ্বাসের গন্ধ মাখা, না চাওয়ারই অন্য রকম অবাক করা বিষয় লাগে।

মানুষ মানেই ভুল মানেতে, ভুল গানেতে মাতোয়ারা, অথর্ব খুব ক্লীব লাগে।
এসব আমার কেমনতরো মনের অসুখ জানার লাগি নাহি কোনো ইচ্ছা জাগে।

মানুষকে আজ ভীষণ রকম ইতর লাগে ।
আমার কি আজ এমন অসুখ ভালো লাগে !

[ ১৯ মে ২০১৫ ~ সকাল ]

১,৫৮৫ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “~ নাম জানা নেই এমন অসুখ ~”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "আমার কি আজ এমন অসুখ ভালো লাগে !"
    জটিল সমস্যা।
    এইটা কি মিডল এইজ ক্রাইসিসের কোন একটা ভ্যারাইটি?
    কি জানি, হতেও পারে!!!


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    সামাজিক সব বৈকল্যের সাথে এতো বেশী সহজ সাবলীল মেনে নেয়ার প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আমরা বেঁচে আছি, যেনো এই সব বৈকল্য আর এমন বৈরীতার মাঝে বেঁচে থাকার যে অনাকাংখিত অসুস্থ্য জীবন তাকে যেনো এক রকম ভালোই লাগে আমার । নইলে এমন বৈরীতায়ও অমন নির্বিকার থাকি কি করে !

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    :boss: :boss:

    একবার মনেহলো মহাদেব সাহা পড়ছি, আরেকবার হুমায়ুন আজাদ!

    অসাধারণ, ভাইয়া!

    'মানুষ মানেই ভুল মানেতে, ভুল গানেতে মাতোয়ারা, অথর্ব খুব ক্লীব লাগে।
    এসব আমার কেমনতরো মনের অসুখ জানার লাগি নাহি কোনো ইচ্ছা জাগে'

    জবাব দিন
  4. সাইদুল (৭৬-৮২)

    তুমি মানুষের ভালো গুলোকে দেখতে পাওনা?
    কয়েকদিন দিন যাবৎ দেখছি খুব রেগে আছো। লেখা গুলো এত ভালো হচ্ছে যে মনে হয় আমিও প্রভাবিত হয়ে পড়বো। যা আমি একেবারেই চাইনা। কষ্ট নিয়ে লিখতে চাই না।


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      সাইদুল ভাই । আমার লেখায় মনে হয় প্রেম ও আনন্দই বেশী আসে ।
      মাঝে মাঝে দেশ ও রাজনীতি এসে ঢুকে পড়ে । ব্যাস ! এইটুকুনই ।
      তাই এক সময় মনে হতো পদ্যের ইমদাদুল হক মিলন হয়ে উঠবো নাকি আবার !
      তবে প্রেম মানেই তো বিরহ, অভিমান, মান, ভুল বোঝাবুঝি । জীবন মানেই হাড়ি-কুড়িতে ঠোকাঠুকি !
      তাহলে ওগুলোকেওতো সাচ্ছ্বন্দ্যে উঠে আসতে দিতে হবে ...
      যেই থেকে অমন ভাবনা ঢুকে পড়লো মনের ভেতর ... সেই থেকে ...

      আচ্ছা এর পর কবিতা কিছু দেবো নিরেট আনন্দ হাসি ময় ।

      জবাব দিন
  5. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    কবিতার শুরুতে মোটেও বুঝা যায়নি যে শেষের দিকে কথাগুলো এতটা ভারী হয়ে আসবে। এমনকি এখানে এসেও নয়-
    "দীর্ঘ চুলের স্নানের শেষে গড়িয়ে পড়া জলের ধারা বিমোহিতের মন্ত্র দিতো।
    আঁচলখানার পেখম মেলে নীলাম্বরীর ত্রস্ত যাওয়া বুকের ভেতর কাঁপন দিতো।"
    আর শেষের কথাগুলোর তো একটা ছোঁয়াচে প্রভাব আছেই বটে! -
    "মানুষকে আজ ভীষণ রকম ইতর লাগে ।
    আমার কি আজ এমন অসুখ ভালো লাগে !" - তাই তো!

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      শুরু হলো এই বলে যে, আমার এখন কিছুই নেই ভালো লাগার ।
      প্রিয় ফুল, প্রিয় রং, প্রিয় পাখী, প্রিয় নদী ... ওসব কিছুই আমার আজ নেই ।
      অথচ এই আমারই কতো অগুনতি কিছু ছিলো ভালো লাগার,
      অথচ অবিশ্বাস, মেকিত্ব আর সন্দেহের দোলাচলে ক্লিবের মতোন মানুষগুলোর যন্ত্রণায় কিচ্ছুটি আর ভালো না লাগার
      কথাগুলো সেই সব ভালো লাগার বিস্তৃত অতীত ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে শেষ ছয় লাইনে।
      আপন মনস্তত্ত্ব যেমন ভয়ানক ঝাঁকুনিতে বিপর্যস্ত হয়েছে ...
      তেমনি অকস্মাত ভালো থেকে খারাপ লাগার মাঝে পতিত হবার মতোন হঠাত পতনের একটা প্রয়াস এখানে ছিলো ।
      আপনি একেবারে যথার্থ ইঙ্গিত করেছেন খায়রুল ভাই ।
      অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যে ঋদ্ধ করবার জন্য ।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।