একজনের শূন্যস্থান কখনোই আরেকজনকে দিয়ে পূরণ করা যায়না। সেই শূন্যস্থানটি যত ক্ষুদ্র কিংবা তুচ্ছই হোক।
শৈশবের চার আনা দিয়ে কেনা ঝাল চকলেটের শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেনি বড়বেলার দামি কিটক্যাট কিংবা ক্যাডবেরি সিল্ক। স্কুল থেকে ফেরার পথে নোংরা ইউনিফর্ম পরা জেলেপাড়ার গরিব ছেলেটার নানান গল্প ফিরিয়ে দিতে পারেনি কেউ। বন্ধুত্ব কবেই ফুরিয়েছে। বেইমান মস্তিষ্ক ঝাপসা করে দিয়েছে তার চেহারাটাও। তবু তার হলদেটে সাদা শার্টের প্রতি তীব্র আকর্ষণ একবিন্দু কমলো না আজও।
কিংবা স্কুলের সেই ফ্রক পরা মেয়েটার কথাই বলি, যাকে আমরা ‘পাগলী’ বলে ডাকতাম তার দুর্দান্ত চঞ্চলতার জন্য। তার মত কোঁকড়া চুলের মেয়ে হয়তো আজও দেখি। তার চেয়েও জাঁদরেল মেয়ের সাথে ভাগাভাগি করি ক্লাসরুম। উচ্ছল মেয়ের কথা কল্পনা করতে গিয়ে তবুও এই পাগলীর ভেংচি কাটা মুখের স্মৃতিই ভেসে ওঠে চোখের সামনে। দশ বছরে মরিচা পড়েছে নিউরনে নিউরনে।
কৈশোরের সঙ্গীরা সহজে হারায় না। কারণটা খুব স্বাভাবিক। এই বয়সেই ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। যা কিছু ব্যক্তিত্বের সাথে যায়, তার প্রায় সবকিছুই চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলে। প্রকাশিত কিংবা অপ্রকাশিত। পরিণত কিংবা ছেলেমানুষি। তাইতো আঠারো-কুড়ি লাইনের বর্ণনায় পাওয়া বনলতা সেনের বিকল্প নারীচরিত্র খুঁজতে বাকি জীবন পেরিয়ে যায়। প্রাইভেট কারের এসির বাতাসে হয়তো বুকখোলা শার্টের ঘাম শুকোয়, কিন্তু শুকোয় না বাবার সাইকেল নিয়ে অলস দুপুরে পুরোটা মহল্লা আরেকটিবার চক্কর দেয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। অভিজাত রেস্তোরাঁয় কড়া এটিকেট মেনে খেতে বসে মন পোঁড়ে মায়ের হাতে ডলে দেয়া একটুখানি পোঁড়া মরিচের জন্য। উন্মাতাল কনসার্টে হাজারো মানুষের ভিড়ে মন কাঁদে এককালে পাশের বেঞ্চে বসা ছেলেটার অংক কষতে কষতে গুনগুণ করে গাওয়া সেই এক লাইনের জন্য~ মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন……
দূরের পথে লম্বা বাস জার্নিতে চিরকালীন সঙ্গী হাফ লিটারের পানির বোতল, প্যান্টের পকেটে গোটা চারেক সাদা মেনটোস চকলেট আর ব্যাগের ছোট পকেটে নীলরঙা ইনহেলার। রাতের জার্নিতে খুব করে চাই চাঁদটাকে। শুক্লপক্ষ কিংবা কৃষ্ণপক্ষ। ডানে কিংবা বাঁয়ে। পাশের সিটে নিজের আপন কেউ সঙ্গ দেয় খুব কম ক্ষেত্রেই। যদিও পাশে থাকে, তবু আমার হাফ লিটার পানির বোতল, মেনটোস চকলেট কিংবা নীলজামা ইনহেলারের জায়গা কেউ কেড়ে নিতে পারেনা। কিছু শূন্যস্থান কখনোই পূরণ হবার নয়। স্ত্রীর মমতার সাথে প্রেমিকার প্রশ্রয়ের তুলনা চলে না।
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
চমৎকার ... :clap:
ভালো থাকা অনেক সহজ।
ধন্যবাদ, সাদাত ভাই 😀
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
দিনলিপি ভালো লাগছে।
'পোড়া' বানানে চন্দ্রবিন্দু নেই।
দ্রষ্টব্যঃ আমি এখন থেকে সিসিবির বাংলা বানান থেকে অপ্রয়োজনীয় চন্দ্রবিন্দু ঝেঁটিয়ে বিদায় করার মিশনে নামলাম।
খুব ভালো উদ্যোগ, নূপুর দা। আমার তো সব বানানেই চন্দ্রবিন্দু দিতে ইচ্ছা করে। আপনার কাছ থেকে কিছু শিখতে পারলে খুব উপকার হয় 🙂
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
চমৎকার। খুব ভালো হয়েছে। :boss: :boss: :boss: :boss:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ধন্যবাদ মাহমুদুল ভাই 😀
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
খুব সুন্দর লেখা। তোমার চার আনার শেষ সাক্ষী আর আমরা এক আনার।
"স্ত্রীর মমতার সাথে প্রেমিকার প্রশ্রয়ের তুলনা চলে না।" - এতো বুঝলে কী করে?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আপা, আন্দাজে একটা ঢিল ছুঁড়েছি, লেগেছে কিনা বলেন 😛 (সম্পাদিত)
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
বাহ্ চারাগাছ পাওলোনিয়ার মত বেড়ে উঠছে :dreamy:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
সবই আপনাদের দোয়া ;;) ;;)
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
:clap:
ফেসবুকে আগে পড়েছিলাম মনে হচ্ছে।
ভাল ছিল বন্ধু।
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
হ্যাঁ দোস্ত, পুরনো লেখা। তোর নতুন কিছু দেখিনা কেন?
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
তাই কি? :-/
ভাল লেগেছে, বিশেষ করে শেষের অংশটুকু... :thumbup:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
কৈশোরের সঙ্গীরা বলতে আসলে আমি ক্যাডেট কলেজের ফ্রেন্ডদের দিকে ইঙ্গিত করেছি। হ্যান ত্যান ঝামেলা করে প্রেমিকাও ভেগে যায়। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরা মরার আগ পর্যন্ত জোঁকের মত লেগে থাকে :(( :((
যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা
ভাল লাগলো, চারাগাছ আস্তে আস্তে মহিরহুতে পরিনত হোক :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷