পহেলা বৈশাখ। এক হালি ইলিশের দাম ৩২ হাজার টাকা। মোট ওজন ৪ কেজি। প্রতি কেজির দাম ৮ হাজার টাকা। ঐকিক নিয়মে ২০ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে আড়াই কেজি ইলিশ মাছ। পরজন্মে আমি আড়াই কেজির এক রুপালি ইলিশ হবো।
রোজার ঈদ। সুপার মার্কেটের চোখ ধাঁধানো একটি শাড়ির দাম ৩ লাখ টাকা। ইমপোর্টেড ফ্রম ইন্ডিয়া। শাড়ির আঁচল সোনালি, পাড় কালো। বারো হাত বহর। প্রতি হাত বহরের দাম ২৫ হাজার টাকা। পরজন্মে আমি পৌনে এক হাত লম্বা ইন্ডিয়ান শাড়ি হবো। ইমপোর্টেড।
কুরবানির ঈদ। গাবতলীর হাটে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা কালো রঙের ষাঁড়ের দাম ৫ লাখ টাকা। ওজন প্রায় পাঁচশো কেজি। প্রতি কেজি মাংসের দাম ১ হাজার টাকা। ঐকিক নিয়মে ২০ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে ২০ কেজি মাংস। পরজন্মে আমি ২০ কেজি ওজনের এক হাঁড় জিরজিরে বাছুর হবো।
দলীয় নেত্রীর জন্মদিন। প্রধান কার্যালয়ে দৈত্যাকার আকৃতির কেক কাটবেন তিনি। কেকের ওজন ৮০ পাউন্ড। দাম ৩০ হাজার টাকা। প্রতি পাউন্ড কেকের দাম ৩৭৫ টাকা। ঐকিক নিয়মে ২০ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে সোয়া ৫৩ কেজির একটি কেক। আমার নিজের ওজন ৫৩ কেজি। পরজন্মে আমি না হয় ৫৩ কেজির কেকই হবো।
টেন্ডার পাইয়ে দেবার উপহার হিসেবে পাওয়া মন্ত্রীর লেক্সাস গাড়িটির দাম ১০ কোটি টাকা। গাড়ির উইন্ডশিল্ডের দাম কম করে হলেও ১ লাখ টাকা। একেকটা সিটের দাম কম করে হলেও ২০ হাজার টাকা। প্রতি ইঞ্চি রঙের দাম হয়তো ২ হাজার টাকা। পরজন্মে আমি না হয় মন্ত্রীর গাড়ির পাপোশ হবো।
কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়া একটা মানুষের দাফন-কাফনের খরচ ২০ হাজার টাকা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই ২০ হাজার টাকা আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আলাদা ভাবে জমা থাকবে। যদি কোনোদিন সরকারি/বিরোধীদলীয় নেতা-পাতিনেতা কিংবা আমলা-কামলাদের ডেকে আনা অপঘাতে আমার মৃত্যু হয়, তাহলে যেন এই ২০ হাজার টাকা দিয়েই আমাকে কবরে শুইয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। মুখের উপর একদলা থুঁতু মারার মতন আমার পরিবারের হাতে ওরা যেন ২০ হাজার টাকা গুঁজে দিতে না পারে। আমার জীবনের দাম ২০ হাজার টাকা নয়। শেষ বিচারের দিন আমি আমার জীবনের দামের হিসাব সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে জেনে নিবো। ওরা যেন আমার জীবনকে অর্থের দাঁড়িপাল্লায় মাপতে না পারে।
আসলে বর্তমান বাংলাদেশে আমাদের লাশের কোন দামই নেই......মাঝে মাঝে মনে হয় নিজের দাম ঠিক করতে গেলে কোন দিন না আবার টাকারই অপমান করে বসি.........
:bash: :brick: :(( :-/
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল