৬ বছর বা ২০০৩ দিন – ১৬তম পর্ব

তিন টান পাস, যারা ক্যাডেট কলেজে স্মোকার ছিল তারা এই সূত্র সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। কারণ সীমিততার কারণে আমরা স্মোকাররা একটা সিগারেট ৩-৪ জন ভাগ করে খেতাম(“পান করতাম”)। সিগারেট নিয়ে সবারই অনেক স্মৃতি আছে। আমার মনে যে স্মৃ্তি সবচেয়ে বেশি দাগ কেটে রেখেছে এই পর্বের বিষয়বস্তু সে স্মৃতি।

২০০৩ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী, আমাদের কলেজ পিকনিকের স্পট ঠিক করা হয়েছিল ভিন্নজগত। প্রত্যেক ক্লাসের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা তখন সবে মাত্র ক্লাস টেনে উঠেছি। তো প্রথম ব্যাচে ক্লাস এইট, নাইন এবং টেন তিনটি বাসে করে চলে এল। তার প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর এস,এস,সি, পরিক্ষার্থী, ইলেভেন এবং টুয়েলভ।

তো পিকনিকে সবাই যেমনটি আনন্দ করে ঠিক তেমন আমরাও বেশ মজা করলাম। যারা ভিন্নজগত সম্বন্ধে জানেন না তাদের জন্য বলছি ওই জায়গাটি ছিল উন্নয়নশীল একটি থিম পার্ক। বেশ কিছু রাইডে চড়ার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। দুপুরের খাবার-দাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বেশ উৎফুল্ল মনে সন্ধ্যার দিকে আমরা কলেজে ফিরে এলাম। তখনও জানিনা আমার কপালে কি দুঃখ ছিল!

“ট্রাডিশন”, নামের টার্মটির সাথে সব ক্যাডেটদেরই পরিচয় আছে। আমাদেরও ছিল। যেমন অল্টারনেটিভ সিনিয়ররা আমাদের একরকম রাম-ধোলাই দেবে যখন আমরা নয়া ক্লাস টেনে উঠছি। এবং এর কারণ হচ্ছে পিকনিকে স্মোকিং করা এবং পিকনিক থেকে সিগারেট কলেজে আনা।

তো একরকম র‍্যান্ডমভাবেই বোধহয়( অথবা আমার কপালে ছিল ) আমাকেই ভিকটিম করা হয়েছিল। পিকনিকের প্রায় সপ্তাহখানিক পর শুক্রবারে লাঞ্চের পর অকস্মাৎ আমাকে জানানো হল ক্লাস ইলেভেন আমাকে ইন্টারমিডিয়েট ব্লকের ৩২৭ নং রুমে তলব করছে। তো আশেপাশ থেকে “তর আইজ়ক্যা খবর আছে” টাইপের মন্তব্য শুনতে পারলাম। আমি জানতাম কোন মেজর ফল্ট করি নাই, কিন্তু এইভাবে তলব করার তাৎপর্য ভাল ঠেকল না। বুঝতে পারলাম শনি আমার আশে-পাশে ঘোরাফেরা করছে।

এসে পড়লাম জায়গামত। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হল,”তুমি পিকনিকে স্মোকিং করছ?”
আমি বললাম, “না।”
জিজ্ঞাসাঃ “কে কে করছে?”
উত্তরঃ “আমি বলতে পারব না।”
জিজ্ঞাসাঃ” তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি তো পিকনিকে গিয়ে স্মোকিং করেছ আমরা সেখানে যাবার আগে।”
উত্তরঃ “না ভাইয়া, সত্যি বলছি আমি স্মোকিং করি নাই।”
আমাকে টোপ দেয়া হল।জিজ্ঞাসাঃ”কিন্তু তোমার ক্লাসমেইট যে বলল তুমি স্মোকিং করেছ?”
উত্তরঃ”কে বলছে ভাইয়া?”
আদেশঃ “হ্যান্ডসডাউন হও”
এরপর আমার উপর দিয়ে লকারস্টিক আর লোহার পাইপের বেশ একটা পাঙ্গানি চলল। আর থেকে থকে একই প্রশ্ন বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা হচ্ছিল। কিন্তু কোন ফল হচ্ছিল না বলে আমাকে শাস্তি একটু ভিন্নভাবে দেয়া হল। আমাকে ফ্রন্টরোল করিয়ে করিয়ে মাইর চলতে থাকল। আমি বেশ কিছুক্ষণ যুক্তি দেখিয়েও বেশি সুবিধা করতে পারলাম না। এরপর আমি শেষ অস্ত্র হিসেবে বললাম,”আমি যদি স্মোকিং করি তাহলে আব্বা-আম্মা আমাকে মাইরা ফেলব।” কিন্তু তাতে যেন আরও মাইরের পরিমাণ বেড়ে গেল।

না থাকতে পেরে বলে ফেললাম ক্লাসের সবাই স্মোকিং করছে।বলেই বুঝলাম কত বড় ভুল করে ফেলছি। আমাকে পরে অন্য হাউসে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে এক পলশা মাইর খাইলাম এবং আমাকে বলতে হল সবাই স্মোকিং করছে। এরপর তিন হাউসেই আমাদের ক্লাসের সবাইকে ভাইরা পাঙ্ঙ্গা্নি দিল। এবং সবার সাথে আমি আরো একচোট মাইর হজম করলাম।

এখন বলি আমি আসলেই সেইবার পিকনিকে গিয়ে স্মোকিং করি নাই বা পিকনিক থেকে সিগারেট কলেজে নিয়ে আসি নাই। যখন দেখলাম শুধু শুধু একাই মাইর খাইতেছি, তখন মনে হয়রছিল একা একা মাইর না খেয়ে সবাইকে নিয়েই খাই। “ট্রাডিশন” জনিত কারণে আমরা এভাবেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দোষ করে বা না করেও মাইর বা পাঙ্গানি খেতাম যা মাঝে মাঝে সহ্যসীমার বাইরে চলে যেত……………………………( চলতে থাকবে )

১,৩৯৫ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “৬ বছর বা ২০০৩ দিন – ১৬তম পর্ব”

  1. কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

    😀
    হ ভাই, ঠিকই কইছেন।
    আমাগোর সময় কেমনে কেমনে যেন এই ট্রেডিশনটা পাল্টাইয়্যা ক্লাস নাইনের লাইগ্যা হইয়্যা গেল। (আমরা তখন নাইনে)
    আমরা যখন সবাই মাইর খাইতাছি (তৌহিদ আর রোকন অস্বাভাবিক মাইর খাইছিল) তখন আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়ররা (ট্রেডিশন অনু্যায়ী যাদের প্রাপ্য ছিল) জামাত কইর‌্যা আল্লাহ-খোদারে ডাকতেছিল আর আমাদের একজন বের হওয়্যা মাত্র তারা ভিতরের ডিটেইলস শুনতে ছিল, মানে কি কি অস্ত্র, কে কে আজকে ফর্মে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি...
    আসলে আমাগোর এক ব্যাচ সিনিয়রেরা (এদের মধ্যে মশিউর ভাই, শাফি ভাই'কে আপনারা চেনেন) ভাবতেছিল আমাগোর পরে তাগোর টার্ন। :grr: :grr:


    যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
    জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
    - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

    জবাব দিন
  2. কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

    সিগারেট নিয়া একটা মজার কথা মনে পড়ে গেল,
    আমারা তখন ক্লাস টুয়েল্ভে, ইন্টার পরীক্ষা চলতেছে। একদিন পরীক্ষা দিয়া এসে দেখি আমাদের এ্যাডজুটেন্ট স্যার তার বাহিনী নিয়া পুরা কলেজ সার্চ করতেছে, আমাদেরকে বাইরে দাড় করায়। একজন তেলবাজ স্টাফ ২ প্যাকেট সিগারেটও পাইলো খুজে আমাদের ড্রাই রুম থেকে, সে খুশিতে লাফাইতে লাফাইতে এ্যাডুর কাছে আইস্যা বল্ল "স্যার পাইছি!!!"

    স্যার তখন আমাদের দিকে তাকায় বল্ল, "ঠিক আছে শুধু ম্যাচটা নিয়া আসো, সিগারেট ওরা চাবায় চাবায় খাক !!"

    এইটা শুনে স্টাফের চেহেরা যা হইছিল না!! :grr: :grr: :grr:


    যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
    জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
    - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।