হ্যলো তুই কোথায় ? রাত সাড়ে এগারটা শীতের রাত, আর কোথায় আবার চাট গাঁর বাসায়, লেপের নিচে! তুই কালকেই ঢাকায় চলে আয়, জরুরি দরকার!
জরুরি দরকার যে কি, তা মোটামোটি আমার জানা হয়েই গেছে। নিশ্চয়ই ধানমন্ডির ‘কড়াই গোশত’ এর ইলিশ সস অথবা গুলশান ২ এর ‘খাজানার’ মাটন দম বিরিয়ানী বা উত্তরার ‘একুশে রেস্তোরার’ গ্রীল চিকেন বা ধানমন্ডির-বনানীর ‘স্টার’ হোটেলের কাচ্চি এবং কাবাব। নিদেন পক্ষে, মৌচাকের ‘স্বাদ’ রেস্তোরার ভাতের সাথে ৩৬ রকমের ভর্তা ।নিশ্চয়ই কোন একটা নতুন খাবার দোকানর আবিষ্কার করা গেছে, বা অন্য কোন ভুত ঘাড়ে সাওয়ার হয়েছে, যেটার ‘ফিনান্সার’ কিছুতেই পিতৃদেবকে রাজী করানো যাচ্ছেনা অথবা অন্য উসিলারো শেষতো নেই ওর।
ফোন করে যখন আসতে বলেছে, তার মানে একদিন আগে অথবা পরে আসতেই হবে। কার ঘাড়ে কয়টা মাথা যে হুকুম অমান্য করে? আফটার অল কাজিন, বয়স যাই হোক !
ওর আর আমার বাবা ও কাজিন ছিলেন বয়সে বিস্তর ফারাক।তার উপর চাচার শেষ বয়সের ওই একমাত্র সন্তান। যদিও আমার সাথে বয়সে মাত্র ‘ত্রিশ বছরের’ তফাৎ, কিন্তু কথায় দুই কাঠি সরস ! ঘণ্টা খানেকের আড্ডায় অন্তত দশবার বলতে ভুলেনা যে তার এক্ষণ যথেষ্ট বয়স হয়েছে, বিশ বছর, এ লেভেল শেষ।
“তা তুই এখন এত কিপটা হয়ে গেলে কিভাবে চলবে, ‘নান্দোস’ এ নতুন মেন্যু, ‘মুভ এন্ড পিকে’ নতুন ফ্লেভার এসেছে, তুই না থাকলে তো চারিদিক অন্ধকার! পকেটতো আমার সবসময় রেস কোর্সের মাঠ, কেন তোকে ঐ চাটগায়ে পরে থাকতে হয়? ঢাকায় কি কেও ব্যবসা-পাতি করে না? গেঁয়ো ভুত একটা!”
প্রশ্নগুলি আসে মেশিনগানের গুলির ঝাঁকের মত।উত্তরে শুধু স্মিত হাসি ঠোটে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। উত্তর এদিক সেদিক হলেই উনি গাল ফুলাবেন, হাপুশ নয়নে কাঁদতে বসবেন। সে আরেক জ্বালা ।প্রচুর তেল-পানির সাথে একগাদা ‘মানি’র ও শ্রাদ্ধ হবে তখন, রাজকুমারির মান ভাঙাতে।
যে রাতে ও হোল, ঐদিনই চাচা প্রথম সামনা সামনি সিগারেট খাওয়ার অনুমতি দিলেন। কি ঝড় বয়ে যাচ্ছিল ওর মনে একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন। অনেক ঘণ্টা লেবার পাইনে চাচী, কিন্তু কোন খবরই নেই। বাচ্চার হার্ট বিট নাকি ক্রমেই দুর্বল হয়ে আসছে। অনেক রাত, চাচা আর না পারতে বলেই ফেললো ‘ সিগারেট আছে তোর কাছে? আমি নিঃশব্দে প্যেকেট বাড়িয়ে দিলাম। লাগলে গাড়িতে আরো আছে। নিশব্দে মাথা ঝাঁকালেন। নিজে একটা ধরিয়ে, আমার দিকেও একটা বাড়িয়ে দিলেন।
হাতের উপর নেচে খেলে কখন যে বড় হতে লাগল আমার রাজকুমারী, খেয়ালও রইল না। “প্রিয়াঙ্কা” বলে কখনো ডেকেছি বলে মনে পরেনা। ও আমার ‘রাজকুমারীই’ তো!
পুঁটি মাছ চিনিস্ ?-না,
চ্যপা শুঁটকীচিনিস্?-না,
ডালের বড়ি চিনিস্?-না।
কি চিনিস্ ঘোড়ার ডিম? এই প্রজন্মের ছোড়া ছুড়ি তোরা মেক্সিক্যন খাবার যত ভাল চিনিস, বাঙালি খাবার ততটা চিনিসই না।
ভাপা পিঠা চিনি,পাটি সাপটা পিঠা চিনি,ছাতুর নাড়ু চিনি,… তোর মুণ্ডু চিনি! ব্যস কথা আর বাড়তে না দিয়ে ‘সিজ ফায়ারের’ সংকেত দিলাম।
OK, চল Sports Zone যেয়ে Bowling করে আসি! সাথে আমার বান্ধবীরা ও যাচ্ছে।তুই ‘মাইক্যেল’ ! হায় আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো !! একগাদা কিচির মিচীরের সাথে ‘মানি ব্যগ’ আর ‘বন্ধু শ্রেণীর মুরব্বি’ হিসাবে আমাকেই নির্বাচিত করা হয়েছে ! না বলার প্রশ্নই আসে না।নিশ্চয়ই অনেকদিন আগে থেকে ঠিক করা। হাজারটা টেলিফোন কলে জীবনটা যখন ওষ্ঠাগত, তখন হাজিরা দেই রাজকুমারীর দরবারে।
আর সব প্রশ্নের উত্তর তখন একটাই ” তথাস্তু “! ভালবাসার কাছে এ ভিন্ন আর কিই বা আছে জবাব ???
(চলবে)
আপনার পক্ষেই সম্ভব আজিজ ভাই এমন একেবারে ভিন্নস্বাদের ফ্লেভার দেয়া প্রতিটা পোস্টে।
বেশ মুচমুচে লাগলো লেখাটা।
সাথে ঢাকাই রেস্টুরেন্ট আর শুটকির কথা পড়ে জিভে জল।
ভাই নুপুর, আমই সত্যি দুঃখিত দেশীয় খাবারের গন্ধ বিদেশে তোমার নাকে পৌঁছে দেয়ার জন্যে। অনেকদিন থেকে ভাবছিলাম uncontroversial একটা নিটোল ভালবাসার কাহিনী লিখব।শুরুটা মুচমুচে মানে ভাল না খারাপ লাগলো বোলো!
Smile n live, help let others do!
:clap:
~x(
Smile n live, help let others do!
সব কিচিরমিচিরদের এইরকম একটা ম্যানিব্যাগওয়ালা কাজিন থাকুক এবং তারা মনের সুখে ঢাকার সব রেস্টুরেন্টে খেতে থাকুক এই দোয়া করছি। বেশ মজার লেখা।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
"রজোকিনী দাসি, পুলকিত রাশি, সারা বছর বাইল বড়শী , সুখনা পুকুরে"...।।
ভালবাসার সুখনা পুকুরেও ছিপ ফেললে মাছ মেলে বোন !!!
Smile n live, help let others do!
স্নেহ বরাবরই নিম্নগামী হয়, কি আর করবেন? মানিব্যাগ গড়ের মাঠ হোক। ইস, আমাদের জন্যও যদি আজিজ ভাইয়ের মানিব্যাগের ওজন কিঞ্চিৎ কমতো। :-B
"মাত্র ত্রিশ বছর" সব সময়ই এই ডাইলগ শুনতে শুনতে কান ঝালা পালা! আমার মানিব্যগ ইদানিং 'পলিথিনের' পুরুত্ব ধারন করে আছে।পরীক্ষা প্রার্থনিয়।
Smile n live, help let others do!
বস তার মানে বুইঝা গেছি...।। পলিথিনের পুরুত্বের ঐ ব্যাগে শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ডটাই বিদ্যমান। তাতেই চলবে......।। 😀
আহা, খাবার জায়গাগুলো তো সব কমন পড়ে গেল সাথে লোভ ও লেগে গেল, কিন্তু এখন কবে ঢাকায় যাব, আর কবে... 🙁
😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
@ আহসান :thumbup: (সম্পাদিত)
:boss:
Smile n live, help let others do!
মানিব্যগ 'ওজন শুন্যতায়' ভুগছে।পাঠিয়ে দেব পার্সেল করে?
Smile n live, help let others do!
আসিতেছি......
উপভোগ্য ...অপেক্ষা পরের পর্বের...
মেহেদী সাহেব, দ্বিতীয় পর্ব বাহির হইয়াছে!
ইস্ আমাদের সময় 'সেবা প্রকাশিনীর' বইএর জন্যে কি ধর্না দিতাম প্রতিদিন দোকান গুলিতে!!
Smile n live, help let others do!