আমার ক্যাডেট কলেজের স্বর্ণালি দিনগুলি- (এক)

১৯৭২ এর মাঝা-মাঝি । ক্যাডেট কলেজে অবশেষে ঢুকার চিঠি এল। আমার ছোট বেলার শঙ্কা ভয়ে রুপ নিল। আমি যখন বেশ ছোট তখন থেকেই বেশি দুষ্টামি করলে বাবা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবেন, এই ভয় দেখাতেন। একটু বড় হয়ে যখন বুঝতে শিখেছি তখন মনে মনে বলতাম, পাগল ! ভর্তি হওয়া – না হওয়া… তো আমার হাতে । ভর্তি পরীক্ষায় কিছু না লিখলেই হল ! ভেবে রেখেছিলাম যেভাবেই হোক “ফেল” আমাকে করতেই হবে । কিন্তু পরীক্ষা হল এ গিয়ে সব তাল গোল পাকিয়ে গেল।সব পারা উত্তর কি ভাবে না দিয়ে আসি ? আচ্ছা লিখিত পরীক্ষা না হয় পাশ হলাম । Viva তে ডাব্বা মারলেই হবে।
Viva Board এ এক মহা বিড়ম্বনা । বিশাল অর্ধ চন্দ্রাকৃতি টেবিলের ওপাশ থেকে কাঁচা পাকা চুলওাআলা সামরিক বাহিনীর অফিসাররা আমাকে ঘিরে বসে সবাই এক সাথে প্রশ্ন শুরু করলেন । usually আমি লাজুক এবং চুপচাপ ধরনের কিন্তু মেজাজ বিগড়ে গেলে অন্য কথা। এদের ধমক আর bad attitude এ অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে অনুরোধ করলাম একে একে প্রশ্ন করার জন্য। একদম সাদা চুল বয়স্ক অফিসার টা (পরে জেনেছি উনি জেনারেল মঞ্জুর ,জি ও সি চিটাগাং ছিলেন) হেসে বল্লেন : বলোতো এই পানির গ্লাসটা মাটিতে ফেল্ললে কয় টুকরা হয়ে ভাংবে ? মনে মনে ভাবলাম, লোকটা পাগল নাকি ? এটা আবার প্রশ্ন হল ? প্রশ্নর কি ছিরি।। আমি তিরিক্ষ মেজাজে ই উত্তর দিলাম : স্যার এটা ঠিক নাই, এই মোটা কার্পেটে গ্লাসটা পরলে নাও ভাংতে পারে । উনি হেসে আর কিছু বললেন না । সাথের থাকা অফিসার গুলি দুই একটা Translation জিগ্যেস করলেন which was easy for me. কিন্তু একটা পারিনি। বাক্য টা এখনো মনে আছে ” সিঁড়ির সোপান গুলি পার হতে হতে আর মাত্র দু চারটা যখন বাকি, স্বাধীনতার সোনালী সূর্য যখন দ্বার প্রান্তে… তখনই একটা গুলি এসে… ইত্যাদি … ইত্যাদি।।আসলে এতো কঠিন বাংলাটাই বুঝিনি।
যাহোক দেখা গেল , এ্টাতেও পাশ। কি বিপদ ! শেষ পর্যন্ত চিঠি এল। ছোট বেলার শঙ্কা ভয়ে রুপ নিল। (চলবে)

২,০০৯ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “আমার ক্যাডেট কলেজের স্বর্ণালি দিনগুলি- (এক)”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।