“ আমি চোর নই,
টোকাই? তাও না।
কিন্তু আমি চুরি করি
রাস্তার ছ্যাঁচড়া ছেলেদের মত দু-পয়সার বাতাসা নয়,
লজেন্স-টফি ও নয়।
কিন্তু তবুও আমি চুরি করি
অন্যদের মত পেটের দায়ে নয়; নিজের দায়ে।
আর কেনই করবনা বল?
প্রতিদিন লাইব্রেরীতে পদার্থবিজ্ঞানের ঐ বিশ্রী বইটা এমন ভাবে পড়তি
আর দুনিয়ার সবটুকু বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকতি অর দিকে
আবার কি যত্ন করেই না পাতা ওল্টাতি!
দেখলেই হিংসে হত।
আর আমি অপদার্থের মত তোর পদার্থের প্রতি ভালবাসার সাক্ষ্য দিতাম।
তাই এক শুক্রবারে দিলাম নিজের হাতের খেলা দেখিয়ে,
এখন সেই বিশ্রী বইটা আমার টেবিলের ওপরেই থাকে
কি আছে এই জন্তুটার মাঝে? কেন এর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতি?
ভাবলাম তোর জন্মদিনে তোকে এটাই গিফট করব,
কিন্তু কোথায় কি?
বেয়াদব লাইব্রেরীয়ানটা দিল সব গুবলেট পাকিয়ে,
কে বলেছিল ওকে বইটা পরের সপ্তাহেই নিয়ে আসতে?
আর তুই ও এমন আজব –
এই ছ’দিনে নিজের বার্থডেটা ট্রান্সফার করতে পারলি না?
খুব রাগ রেগেছিল সেদিন।
শিরিনের কথা শুনে কেন তুই চুল খোঁপা করা শুরু করলি?
ইচ্ছে করছিল দেই পাজী শিরিনটার চুল কেটে।
তোর মাথায় কি একফোটাও বুদ্ধি নেই?
মেঘকে কেউ আড়াল করে রাখে?
তাহলে বৃষ্টি ঝরবে কি করে?
তোর মেঘের মত চুল যখন খুলে রাখতি তখন তোকে দারুন লাগত
আমি তোকে মনে মনে ডাকতাম ‘মেঘবতী’
সেই মেঘকে দুর্যোগ থেকে দূর করতেই ২য় বার ন্যুজ হলাম
উপায় না দেখে চুরিতেই ফিরে এলাম,
আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিলাম তোর চুলের কাটা।
তোর চুলের কাটাই যে আমার জীবনে কাটা হয়ে ছিল
সেটা কিভাবে বোঝাই তোকে বল।
কালের পরিক্রমায় যেই তোর আর আমার মাঝে এসেছে-
তাকেই সরিয়ে দিয়েছি চরম নিষ্ঠুরতায়-
তোর পায়ে বেঁধে যাওয়া ভাঙ্গা কাচেঁর টুকরো,
রং মিস্ত্রীদের মত কানে গোঁজা সেই পেন্সিল,
তোর চোখ দুটোকে আড়াল করে রাখা সেই চশমা,
এমন কি তোর ওয়াকম্যানের ব্যাটারীও,
বাদ যায়নি তোর খাটের পাশের জানালার কাঁচও।
আমকে পাগল ভাবছিস? না’কি ছ্যাঁচড়া বখাটে?
যাই ভাবতে চাস ভাব।
কিন্তু জানিস সব কিছুকে সরাতে পারলেও-
পারিনি নিজের মুখের কুলুপটাকে সরাতে।
ম্যাগাজিন থেকে কেটে রাখা তোর ছবিতে রোজ প্রাক্টিস করে আসতাম,
কিন্তু সামনে এসে আর বলতেই পারিনি ,
ভাবি বলব,’সব কষ্টকে আজীবন এভাবেই সরিয়ে রাখব তোর কাছ থেকে
তবু ই থাকবি আমার সাথে?’
বলতে চাই কিন্তু পারিনা। “
রং ওঠা খামটা আরেকবার দেখলাম,
রোজই ভাবি অচল-পুরোন স্টাম্পটা বদলাব
কিন্তু সময়ই পাচ্ছিনা।
খুব সুন্দর অজুহাত, তাই না?
তোকে লেখা এই চিঠিটা আবার পড়লাম,
ওকে শার্টের পকেটে নিয়ে বের হলাম।
হাটছি আর হাটছি…
পৌছে গেলাম ডাকবাক্সের সামনে,
পোস্ট অফিসের দারোয়ান আমায় দেখে শুকনো হাসি দিল
চিঠিটা বের করলাম
এই পোস্ট করব বলে……
কিন্তু নাহ! পারলাম না –
আজও পারলাম না।
গত সাতটা বছর ধরে শুধুই চেয়েছি চিঠিটা পোস্ট করব বলে
কিন্তু পারিনি।
আবার ফিরে চললাম,
আজ পারিনি তো কি হয়েছে ?
কাল পারব , নিশ্চয় পারব।।
………………………………………………………………..