[আগের আধ্যায় – অজানা যাত্রা – ভিন্ন জানালা দিয়ে দেখা-২]
চরণ দ্বীপে আমরা আশ্রয় নিলাম মিলের এ্যাসিস্টান্ট লেবার অফিসার রহমান সাহেবের বাড়ীতে। যে বিষয়টি আমার বেশী চোখে পড়ল সেটি হচ্ছে, গ্রামের সাধারণ মানুষের সহজে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করা দেখে। আমি আগে কখনো গ্রামে বাস করিনি, এমনকি গ্রামের মানুষদের নিয়ে কখনো বেশী চিন্তাও করিনি। এদেরকে দেখে এবং জানতে পেরে নতুন করে শ্রদ্ধা জাগলো গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের প্রতি।
একই সীমানার মধ্যে পাশাপাশি দু’টো বাড়ীতে রহমান ও তার বড় ভাই থাকতেন। আমরা তার বড় ভাইয়ের অতিথী হয়ে গেলাম। তিনি আমাদেরকে সাদরে গ্রহন করলেন, তবে জানালেন যে যেহেতু তাদের আর্থিক অবস্থা সীমিত, তাই তার পক্ষে সম্ভব হবে না আমাদেরকে খাবার দেওয়া। আমাদের খাবার ব্যবস্থা আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। তিনি জানতেন যে আমরা মাটিতে শুতে অভ্যস্ত নই, তাই তাদের খাট আমাদেরকে ব্যবহার করতে দিয়ে নিজেরা ঘরের মাটিতে বিছানা করে নিলেন। আমি অভিভুত হয়ে গেলাম তাদের এই আতিথীয়তায়। ঘর সংলগ্ন ঘেরা বারান্দার এক পাশে আমাদের বিছানা স্থাপন করা হলো। এমনকি আমাদেরকে কিছুটা প্রাইভেসি দেবার জন্যে বিছানার পাশে একটা পর্দাও ঝুলিয়ে দিলেন। আমরা এই প্রত্বন্ত গ্রামের জীবনে অভ্যস্ত হতে থাকলাম।
মাসের শেষ, নতুন মাস শুরু হয়েছে, কিন্তু আমাদের কাছে তখন ১০০ টাকাও ছিল না। আমার কাছে যা ছিল সবটা পিংকুর হাতে তুলে দিলাম। সে আমাদের বাটলার-কাম-বাবুর্চী আলী আকবরকে কিছু টাকা দিয়ে ওখানকার বাজারে পাঠাল কিছু চাল, ডাল ও ডিম কিনে আনতে। তারপর তাকে বলল পাশের ক্ষেত থেকে কিছু শাক তুলে আনতে। আমি অনুভব করলাম এই আদেশটা আলী আকবরের খুব পছন্দ হচ্ছে না। সে আমার সাথে আমার চা বাগানের চাকরীর সময় থেকে আছে। তখনকার হিসাবে সে ভালই মাইনে পেতো। খাওয়া, থাকা বাদেও ৭০ টাকা মাইনে পেতো। একজন সদ্য পাশ প্রকৌশলীর সরকারী চাকুরীতে মাইনে ছিল ৩৭৫ টাকা। আমি বেতন পেতাম ১২৫০ টাকা। তখন এক ডলারের সমতুল্য ছিল ৩ টাকা ৭৫ পয়সা। সাড়ে তিন টাকায় এক গ্যালন পেট্রল কেনা যেতো। তবে আমার হাত তখন একে বারে খালি।
আমি যখন চা বাগানে ম্যানেজারের চাকরী করেছি তখন ক্যাডেট কলেজের অভ্যাস অনুযায়ী কাঁটা-চামচ ব্যবহার করতাম খাবার সময়। কালুরঘাটেও তেমনি সাহেবী অভ্যাসটা রেখেছিলাম। তাই কালুরঘাট ছাড়ার আগের মুহূর্তে যখন আলী আকবর কিছু কাটা-চামচ ও ন্যাপকিন এনে পিংকুকে সুটকেসে রাখার অনুরোধ জানাল তখন তাকে দোষ দিতে পারিনি। তবে সাহেব থেকে গ্রামের মানুষে পরিবর্তীত হতে বাধ্য হলাম অবস্থার পরিবর্তনে। দেখা গেল আমার পরনের একটি ফুল-প্যান্ট ছাড়া আর কোন প্যান্ট বা পাজামা আনা হয়নি। তাই বাধ্য হলাম তার কাছ থেকে দু’টো লুঙ্গি ধার করে তাই পড়তে। আমি আগে কখনো লুঙ্গি পড়িনি। একটু সময় লাগলো অভ্যস্ত হতে। পরে ভাল লাগতে শুরু করলো এবং ভাবলাম, এতদিন কেন এত আরামের পোষাক থেকে দূরে ছিলাম।
আমি ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় সাতার কাটতে যেয়ে প্রায় ডুবে যাচ্ছিলাম একবার। এর পর কিছুটা সাতার শিখলেও একটু দূরে যেতে হলে বা পুকুর গভীর হলে ভয় পেতাম। তাই বাড়ীর কাছের একটা ছোট পুকুরে বালতি আর মগ নিয়ে যেয়ে গোসলের কাজ সাড়তাম। অন্য দিকে ভাল সাতার কাটতে পারতো পিংকু, ফলে বড় দিঘীতে যেয়ে অনেকক্ষন ধরে আরাম করে সাতার কেটে গোসল করতে পারতো সে শাড়ী পড়েই। আমার একটু হিংসা হতো তাই একদিন সাহস করে নেমে পড়লাম সেই দিঘীতে। যেহেতু অভ্যাস ছিল না, কিছুক্ষনের মধ্যেই হাপিয়ে উঠলাম আমি। বাড়ীতে ফেরার পড়েও অনেকক্ষণ ধরে হাপাতে লাগলাম। সে আদেশ দিল আমি যেন আর কখনো বড় দিঘীতে না যাই। লক্ষী ছেলের মত তার আদেশ মেনে চললাম বাকী দিনগুলি।
এর মধ্যে রহমান সাহেব তার বাড়ীতে আমাদের সন্মানে চট্টগ্রামের রীতি অনুসারে মেজবানের দাওয়াত দিলেন। দস্তরখানে বসে অনেক কিছু রান্না সহকারে দুপুরের খাবার খেলাম সেদিন। অনেক দিন পরে মাংস খাবার সুযোগ পেলাম। একটু হয়ত বেশীই খেয়ে ফেলেছিলাম সেদিন।
এক দিন রহমান সাহেব আমাকে বললেন তার সাথে স্থানীয় বাজারে যেতে। আমার হিসাবে বৈশাখের প্রথম দিন সেদিন। আনুমান করলাম হয়তো গ্রামের বাজারে নববর্ষের কোন মেলা দেখাতে নিচ্ছেন। কয়েক মাইল দূরে ছিল বাজারটি, তবে আমি রাজী হলাম যেহেতু আমিও চেয়েছিলাম গ্রামের বাজার কেমন তা দেখতে এবং সত্যিই যদি মেলা হয় তাহলে পিংকুকে খুশী করতে কম পয়সায় যদি কিছু ঊপহার কিনতে পারি তবে মন্দ হবে না। বাজারে যেয়ে রাস্তার ধারের একটা চায়ের দোকানে বসলাম আমরা। রহমান সাহেব আমাকে গ্রামের অনেক লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারা চাটগায়ের ভাষায় কথা বললো আমার সাথে যা বুঝতে তেমন অসুবিধা হল না। আমি বাংলা ও স্থানীয় ভাষা মিশিয়ে কথা বললাম তাদের সাথে। পরে রহমান সাহেব আমাকে জানালেন আমাকে বাজারে আনার কারণ হচ্ছে গ্রামে একটা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে, অনেক টাকার বিনিময়ে নাকি রহমান সাহেব এক বিহারী দম্পতীকে তার বাড়ীতে আশ্রয় দিয়েছেন। গুজবটা যে সত্যি নয়, সেটা আমাকে অন্যদের সাথে কথা বলতে দিয়ে ভ্রান্ত প্রমান করালেন তিনি। আমার তখন অনেক লম্বা চুল এবং আমি দেখতে রোগা ও লম্বা, অনেকটা বিহারীদের মত । পিংকুও অন্য বাঙ্গালী মেয়েদের চাইতে অনেক ফরসা, সুন্দরী এবং ছোট করে চুল কাটা, ফলে গুজব ছড়াতে দেরী হয়নি। রহমান সাহেবের ভয় ছিল, এই গুজবের ফলে সত্যতা যাচায় না করেই, অতি উৎসাহী কোন লোক যেন আবার তার বাড়ীতে আক্রমন করে না বসে। আমি রহমান সাহেবের সমস্যা বুঝলাম এবং তখনি বাজারের সেলুনে বসে আমার চুল কাটিয়ে ফেললাম।
১৯৭১-এর এপ্রিলের মাঝামাঝি তখন। আমাদের মিল ত্যাগের পর দুই সপ্তাহের বেশী পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে পাকি আর্মি এসে মিল ও তার আশে পাশের এলাকা দখল করে নিয়েছে। আমি রহমান সাহেব ও অন্যদের কাছ থেকে মিলের পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে যা শুনলাম তা রীতিমত ভয়ংকর। আমি ঘটনা সম্পর্কে যেটুকু শুনলাম তা ছিল সেকেন্ড হ্যান্ড, থার্ড হ্যান্ড বা ফোর্থ হ্যান্ড মুখে শোনা। ফলে প্রত্যোটি ঘটনা যে হুবহু সত্য তা আমি হলফ করে বলতে পারবো না। তা ছাড়াও অনেক সময় ঘটনা বাড়িয়ে বলা মানুষের স্বভাব। অন্য দিকে, মিল ত্যাগের আগে আমরা নিজেদের চোখে যা দেখে এসেছি তাতে এই ঘটনা গুলি সন্দেহ করার কোন বিশেষ কারণ দেখলাম না।
যে দিন আমরা মিল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি সেদিন ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকেরা সব কোয়াটার্স খুঁজে খুঁজে সব পুরুষ সদস্যদেরকে বের করে এনে গুলি করে হত্যা করে। এমনকি হাকিম সাহেবের প্রতিবন্ধী ছেলেকেও তার মায়ের হাত থেকে ছিনিয়ে টেনে বের করে আনে। তার বোন তার ভাইয়ের বদলে তাকে নিতে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের সব কাকুতি মিনতি বিফলে যায়। মা এবং বোনের চোখের সামনেই এই প্রতিবন্ধী ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে, যেহেতু নিজে থেকে হাটতে পারছিলো না ছেলেটি।
মিলে এক পাঞ্জাবী টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ার, আমি সেখানে যোগ দেবার আগে থেকেই কাজ করছিল। সে ছিল ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ার। সে যখন জানলো যে ইসকি ইস্পাহানী নিজে পছন্দ করে আমাকে নিয়োগ দিয়েছে, তখন ব্যাপারটা খুব একটা পছন্দ হল না তার। সে ভাবলো যেহেতু আমি একজন গ্রাজুয়েট ইন্জিনিয়ার, আমি হয়তো তার স্থান দখল করতে এসেছি। সবার সামনে সে আমার সাথে ভদ্র ব্যবহার করতো, তবে আমি অনুভব করতাম আমাকে যেন খুব একটা সহজে নিতে পারছে না সে। তার অনেক দিনের অভিজ্ঞতার জন্যে সে আমার থেকে অনেক কিছু বেশী জানতো এবং মাঝে মাঝে সেটা আমাকে বোঝাতে চাইতো – যা আমার পছন্দ হত না। আমার বিয়ে হবার কিছুদিন পরেই সেও বিয়ে করল এবং তার নতুন বউয়ের আগমনে বড় একটা পার্টি দিল। আমাদের অফিসার্স কলোনীতে একটা বড় ক্লাব রুম বা রিক্রিয়েশন সেন্টার ছিল টেনিস কোর্টের পাশে। সেখানেই আয়োজন হল রিসেপশনের। অন্যান্য অফিসারদের সাথে আমি ও পিংকুও যোগ দিলাম এবং অনেক ভাল খাবার উদরস্ত করলাম।
প্রথমে মিলিটারীরা তাকে বা তার স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছিল না। দূ’দিন পরে দেখা গেল তারা দু’জন মিলের বড় ওভারহেড পানির ট্যাংকের উপরে উঠে লুকিয়ে আছে। যখন মিলিটারীরা তাদেরকে খুঁজে পেল, তখন নতুন বউ তার স্বামীকে আঁকড়ে ধরে ছিল এবং কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না। জোর করে ছিনিয়ে আনলো তারা স্বামীকে।
মিল থেকে যখন সব অবাঙ্গালী পুরুষদেরকে নির্মূল করা শেষ, তখন মিলিটারীরা সব মহিলা ও শিশুদেরকে এনে ক্লাব ঘরে ঢোকালো। পরে পাকি আর্মি মিল দখল করতে আসার ঠিক এক দিন আগে, এই সব মহিলা ও শিশুদেরকে ওই ক্লাব ঘরেই গুলি করে হত্যা করা হয়। এক চাক্ষুস সাক্ষীর বর্ণনা অনুসারে ক্লাব ঘরের দেওয়ালে স্থানে স্থানে দুই ইঞ্চির উপর রক্তের দাগ ছিল। সর্বমোট শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয় সেখানে।
আমি সেই পাঞ্জাবী সদ্য বিবাহীত মেয়েটার কথা ভাবলাম। যে তার বাবা-মা ও পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিল নতুন ঘর বাঁধার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে। কি ভাবে তার সব স্বপ্ন ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেল। কি ভাবছিল সে যখন মিলিটারীরা তার স্বামীকে তার বাধন থেকে ছিনিয়ে নিল? এখানে সম্ভবত কাউকেই চিনতো না সে এবং সম্ভবত কেউই এগিয়ে আসেনি তাকে সামান্যতম সান্তনাটুকু দিতে। পিংকুর বয়েসী ছিল মেয়েটি। পিংকু কি করতো? যদি কাহিনী অন্য রকম হয়ে পিংকুর ভাগ্য ওই মেয়েটির মত হত? আমি যদিও ওই পাঞ্জাবী ইন্জিনিয়ারকে বেশী পছন্দ করিনি আগে, কিন্তু তার এমন পরিনতি তো কখনো কামনা করিনি।
বাজার থেকে বাড়ী ফেরার পথে ঠিক করলাম, যা আজ জানলাম সেটা আর পিংকুকে বলবো না। ভাগ্যিস আজ যে নববর্ষ সেটা তাকে আগে থেকে জানাইনি। এরকম নববর্ষ যেন জীবনে আর কখনো না আসে।
😀
😀 😀
শুভ নববর্ষ ভাইয়া।
ধন্যবাদ, তোমাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ আনোয়ার, তোমাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
আমিও আশা করি এমন নববর্ষ যেন কারও জীবনে কখনো না আসে।
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তো পাক হানাদার নয়-আর তারা তো পাকবাহিনীর মত এথনিক ক্লিনজিঙ্গের মিশন নিয়েও নামেনি।আমি বুঝতে পারছিনা এ ধরণের বর্বর হত্যাকাণ্ড তারা কি কারণে ঘটালো।যুদ্ধের দোহাই দিয়ে বর্বরতাকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায়না।একাত্তরের বীরগাঁথা নিয়ে আমি যেমন গর্ব করি-কালিমালিপ্ত এই ভয়াবহ ঘটনার জন্যে আমি ঠিক একই রকমের লজ্জা অনুভব করছি।একাত্তরের রাজাকারদের মত এরাও আমার দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধী-এদের কৃত কাজ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।আগে নিজামী,গোআ টাইপের মূল রাজাকারদের বিচার হোক,দেশদ্রোহীরা সমূলে উৎপাটিত হোক-তারপর আমাদের বিজয়গাথাকে কালিমালিপ্ত করা এসব পশুদের বিচার চাইবো আমি।
পুনশ্চ-ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বলতে পুরো রেজিমেন্টকে বোঝাচ্ছিনা-শুধুমাত্র যারা নারী,শিশু ও নিরীহ অবাঙ্গালিদের হত্যা করেছে তাদের কথা বলছি।নিরপরাধ মানুষকে হত্যা যে করে-যুদ্ধে যত বীরত্বই দেখাক,আমার দৃষ্টিতে সে কাপুরুষ এবং ঘৃণার যোগ্য।আমি আশা করি ভবিষ্যতে এই পশুদের বিচারের মাধ্যমে ইস্ট মেঙ্গল রেজিমেন্ট একদিন কালিমামুক্ত হবে।
এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার - তখনকার বেঙ্গল রেজিমেন্ট হোক, বা পাঞ্জাব রেজিমেন্ট হোক - এরা সবাই মূলতঃ পাকিস্তান আর্মির ট্রেনিং প্রাপ্ত। মুক্তি যোদ্ধা হতে গেলে যে মানষিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যরা এসেছিল, সে সুযোগ এদের তখনও আসেনি। এরা ঊপরের আদেশ পালন করছিল মাত্র।
আমাদের ওয়ান অফ দা ফাইনেস্ট রেজিমেন্টের কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ঠিক পাক আর্মির মতই নিরীহ নারী-শিশুদের হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন-ভাবতেই লজ্জা-ঘৃণায় মাথা নত হয়ে যায়।
ভাইয়া,সে সময়ে ওই নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের কমান্ডে কে কে ছিল এটা কি আমরা কোনভাবে জানতে পারিনা?মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে এইসব পশুদেরকেও চিনে রাখা দরকার।
মাসরুফ,
আমি জানি তুমি বুদ্ধিমান ও রিসোর্সফুল - তোমার পক্ষে এটা বের করা কষ্টকর হবে না। আমার স্ত্রীর ছোট বোনের স্বামীও পরে এখানে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। সেও একজন ফৌজিয়ান। আমি আগেই বলেছি জীবনে অনেক কিছু আছে যা শুধু সাদা-কালতে বিচার করা যায় না।
ভাইয়া ঠিক বলেছেন।বের করাটা খুব একটা সমস্যা হবার কথা না।মুশকিল হচ্ছে,দেশদ্রোহী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার খুব তাড়াতাড়ি হওয়া দরকার।যত তাড়াতাড়ি তা হবে-তত তাড়াতাড়ি আমরা এই "দেশপ্রেমিক" যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করতে পারব এবং সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে পারব-আমরা পাকিস্তানের মত বর্বরতার সমর্থক অন্ধ তথাকথিত দেশপ্রেমিক নই-নিজ দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ অন্যায় করলে সেই অন্যায়ের বিচার করার মত মানসিক দৃপ্ততা আমাদের রয়েছে।
আরেকটা কথা দেরিতে বলায় অত্যন্ত লজ্জাবোধ করছি-অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এই লেখাটির জন্যে।মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও লজ্জা উভয় বিষয় আমাদের মত নতুন প্রজন্মের মানুষদের জানা দরকার।কষ্ট করে হলেও ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই দয়া করে লিখে যাবেন প্লিজ!
মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমাদের উপমহাদেশের মানুষজনের মধ্যে স্বভাবজাত একটা বৈশিষ্ঠ আছে আর তা হলো সুযোগ পেলে বর্বরতার চরম রূপ প্রদর্শন করা। আমরা বাঙ্গালী/বাংলাদেশীরাও এর ব্যতিক্রম না। আপাত দৃষ্টিতে ভদ্রতার লেবাস ধরে থাকা এই আমি/আমরা অনুকূল পরিবেশ পেলে কিরুপ আচরন করবো অথবা আমাদের চিন্তা ভাবনা কত বিকৃত হতে পারে/ নিচে নেমে যেতে পারে তা হয়তো আমরা কেউই জানি না। সেই ধরনের পরিস্থিতিতে না পড়লে আমি নিজেও কনফিডেন্টলি বলতে পারবো না আমি কি করবো।
অঃটঃ আসলে কথা গুলো আগে কখনো চিন্তা করিনি। হঠাৎ করেই মনে হল তাই লিখে ফেললাম। পরে হয়তো নিজেই এর বিপক্ষে চলে যাব।
২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের ইবিআরসি-তে [ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার] প্রায় এক হাজার মানুষকে হত্যা করে ২০ (নাকি ২২?) বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা। এদের মধ্যে নিরস্ত্র অফিসার, সৈনিক, তাদের স্ত্রী, সন্তান ও পরিচারকেরা ছিলো। ইবিআরসি থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অফিসাররা মেজর জিয়াকে কখনো মন থেকে ক্ষমা করতে পারেনি, কারণ ৮ম ইস্ট বেঙ্গলে জিয়া ছিলেন সর্বোচ্চ পদমর্যাদার বাঙালি অফিসার, এবং ইবিআরসির বাঙালি অফিসার-সৈনিকের প্রাণ রক্ষার কোনো চেষ্টামাত্র না করে তিনি ৮ম ইস্ট বেঙ্গলের বাঙালি অফিসার-সেনাদের নিয়ে কালুরঘাট ব্রিজের অপরপ্রান্তে চলে যান। তথ্যসূত্র, মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের "লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে"। মেজর রফিকের মতে, তখন যদি জিয়া ইবিআরসি থেকে ২০ (নাকি ২২?) বালুচ রেজিমেন্টের সেনাদের বের হতেও বাধা দিতে পারতেন, পাকিদের হাতে চট্টগ্রামের চটজলদি পতন হতো না, কারণ ইপিআরের সেনাদের নিয়ে তিনি বিপুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। চট্টগ্রামের বাকি অংশ থেকে শহরের দিকে আগুয়ান ইপিআর জওয়ানদেরও জিয়া অকারণে কালুরঘাটে আটকে রেখেছিলেন, শহরে ঢুকে মেজর রফিকের মূল বাহিনীর সাথে যোগ দিতে দেননি।
আমার ধারণা, আপনি যে অবাঙালি হত্যার ঘটনা বর্ণনা করলেন, সেটি সত্যই ঘটে থাকলে ইবিআরসির কোনো সারভাইভার অফিসার বা জেসিওর তত্ত্বাবধানে ঘটে থাকতে পারে। আর যেহেতু এই ঘটনা লোকমুখে শোনা, তাই প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ সংগ্রহ জরুরি।
ইতিহাস বিজয়ীরা লেখে বলে নিজেদের অনেক কালোদাগও চুনকাম করে ফেলে। অনেক কিছু জানতে পারছি। :boss: :boss: :boss:
শুভ নববর্ষ সাইফুদ্দাহার ভাই।
ঐ
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
যুদ্ধের ধর্মই হয়তো এমন, ন্যয়-অন্যায় খুব বেশি বিবেচনায় আসেনা প্রথম দিকে। আর জাতীয়তাবাদের ধারণাও কখনোই প্রশ্নের অতীত নয়, নিজ জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব ও রাজনৈতিক আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে যা যা প্রয়োজন সবই করতে অনুপ্রানিত করে, তখন অমানবিক হতে দ্বিধা হয় না।
মূলধারার ইতিহাস হলো বিজয়ীর বীরত্ব গাঁথা এবং আংশিক। তাই এই ধরনের বয়ান ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে। তাতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রোমান্টিক অতীতকথন থেকে সাধারণ মানুষের ইতিহাসে পরিনত হবে। লিখতে থাকুন।
শুভ নববর্ষ।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
তোমাদের এই মানষিক ম্যাচুইরিটি আমাকে মুগ্ধ ক'রে। দেশপ্রেম ক্ষুন্ন না করেও যে সত্যের পক্ষে মাথা ঊচু ক'রে দাঁড়ান যায়, তা নতুন করে তোমাদের থেকে শিখছি।
ভাই,আপনি ও আপনার পরিবারের সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।আশা করি নতুন বছরের শুরুটা ভালো হবে।আমাদের জন্যেও দোয়া করবেন। :party:
নববর্ষ'৭১ আপনার চোখ দিয়ে দেখতে পেলাম।ধন্যবাদ ভাই,ইতিহাস স্পষ্টরূপে তুলে ধরার জন্য।
ধন্যবাদ আছিব, তোমাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
শুভ নববর্ষ
ভাইয়া আপনি ও আপনার পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা
ভাইয়া আপনার সবগুলো লেখাই আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি।
৭১ কে একটু নতুন ভাবে জানতে পারি আপনার লেখায়।
ধন্যবাদ আনন্দ, তোমাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল।
ভাইয়া আপনার এই লেখাটা ঠিক আামার বাবার মুখে শোনা গল্পের মতো। আমার বাবাও আপনার মতই যশোরের এক জুট মিলে চাকরি করতেন। আর জুট মিল ছিল পাকিস্তানী সেনাদের দখলে। বাঙ্গালীরা মিল ছেড়ে চলে যেতে চাইলেও পাকিস্তানী সেনারা কঠোর নজরদারী করত ও মিল চালু রাখার জন্য চাপ দিত।অনেক বাঙ্গালী পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চাইলেও ধরা পড়ত পাকিস্তানী সেনাদের হাতে। বিহারীরাও মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে নিরপরাধ বাংগালীদের ধরিয়ে দিত। পাকিস্তানী সেনারা তাদের ধরে সারি সারি করে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলত। আপনার লেখা পড়ে আমি ঠিক বাবার মুখে শোনা সেই কাহিনী ফিরে পাচ্ছি।
এই সিরিজটা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। চমৎকার লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মান্নান,
আমার বাড়ী যশোরে, শহরতলীর ঘোপে। তোমার বাবা কোন মিলে চাকরী করতেন? কি নাম?
হানাদার পাকি বাহিনীর বর্বরতার সাথে সাম্প্রতিক পৃথিবীর ইতিহাসে মিল খুঁজে পাওয়া যায় এমন ঘটনা খুব কমই আছে। তবে মানবতা বিরোধী অন্যায় কখনো সমর্থন করা যায় না।
ভাইয়া তাহলে আপনি আমার দেশি লোক :clap:
আমার আব্বা মুক্তিযুদ্ধের সময় ' যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ (জেজেআই) তে কর্মরত ছিলেন। এটা নওয়াপাড়া তে অবস্থিত।
সাইফ ভাই, মুগ্ধ হয়ে পড়ছি আপনার লেখা। ঝরঝরে ভাষা আর সজীব বর্ণনায় ৪০ বছরের পুরনো ইতিহাস আমাদের কাছে একেবাবে নতুনের মতো ধরা দিচ্ছে। আপনার এই ধারাবাহিকের বড় শক্তি নিজের অভিজ্ঞতা।
আগের মতোই আবার বলি, ইতিহাস যদিও সবসময় বিজয়ীদের পক্ষে লেখা হয়, তারপরও সেখানে জয়ীদের অন্যায়গুলো প্রকাশ পাওয়া জরুরি। আর আজ স্বাধীনতার ৪০ বছর পর যদি আমরা সত্য প্রকাশের সৎসাহস না দেখাই তাহলে আর কবে সেটা পারবো? এইসব অন্যায়ের জন্য যদি আমাদের সেসময়ের নেতৃত্ব ক্ষমা চাননি, স্বীকারও করেননি। যুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ বলেও আমরা বেসামরিক মানুষ, নারী-শিশু-প্রতিবন্ধী হত্যার পক্ষে দাঁড়াতে পারবো না, যেমন পারি না বাঙালি নিধনে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় তাবেদারদের অপরাধ।
তবে একটা বিষয় পরিস্কার, আমাদের পক্ষের অপরাধ তাদের মতো পূর্বপরিকল্পিত নয়। আমরা পাকিস্তানিদের মতো কোনো জাতি-গোষ্ঠি, সম্প্রদায় নিধনের মিশন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আপনাকে আবারো কৃতজ্ঞতা, আমাদের অজানা অনেক সত্যের মুখোমুখি আপনি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু,
অসংখ্য ধন্যবাদ তোমার এই মন্তবের জন্যে। আজ পর্যন্ত যতগুলি সরকার গঠন হয়েছে বাংলাদেশে - সব ক্যাবিনেটে আমার পরিচিত কেঊ না কেঊ ছিল। ফলে অনেক কিছু দেখেছি, জেনেছি। সব সত্য প্রকাশ করা শুরু করলে সবার কাছে অপ্রিয় হতে হবে।
আমার নিজের কোন ছোট ভাই নেই, তাই তোমরা যখন ভাইয়া বা ভাই বলে ডাক খুব ভাল লাগে - এটুকু হারাতে চাই না। তাই ভাবছি আর এক বা দুই পর্ব লিখে শেষ করবো।
সাইফ ভাই, হ্যা, সব সত্য সবসময় প্রকাশ করা যায় না। বাংলাদেশেও আমাদের এই এক যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে। করে যাবো। একপেশে যাতে না হই সে চেষ্টা করি সবসময়। নিজের কাছে ছোট হওয়া যাবে না কোনোমতেই। অনেক ক্ষেত্রে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
আশা করি, কোথাও না কোথাও সব লিখে যাবেন নিজের কাছে সৎ থেকে। আজ না হোক কাল প্রকাশ করবেন। ভালো থাকবেন।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
শুভ নববর্ষ ভাইয়া আপনাকে ও সিসিবির সবাইকে।
আপনার লেখাগুলো পড়ি কিন্তু মন্তব্য করার মত ভাষা হারিয়ে ফেলি। যুদ্ধে যখন জয়/পরাজয়টাই মুখ্য হয়ে উঠে তখন মানবিকতা, নৈতিকতা সেগুলো দুর্বলতা হিসেবে ধরা দেয়। বরং মানুষ যত হিংস্র, অমানবিক হয়ে উঠে, ভাবে জয় তার সুনিশ্চিত। তাই সব যুদ্ধেই যেই দেশই জিতুক পরাজয় ঘটে আসলে মানবিকতার। তারপরেও মনে হয় মানুষের এই টিকে থাকার সংগ্রাম সহসাই শেষ হবার নয়, কিংবা আদৌ শেষ হবে কিনা সন্দেহ, যার নমুনা দেখি ইরাক, আফগানিস্তান এর মত যুদ্ধে। পৃথিবীতে আসলে যে পরিমান সম্পদ বর্তমান তার তুলনায় চাহিদার পরিমান এত বেশি যে সবাইকে নিয়ে টিকে থাকা এক প্রকার অসম্ভব। জৈব জ্বালানী, সুপেয় পানি, খাদ্য সকল ক্ষেত্রেই মানুষের চাহিদার তুলনায় সম্পদ সীমিত। আমার মতে এটাই মানুষে মানুষে সংঘর্ষের মূল কারণ। উপায় উৎপাদন বাড়ানো, কিন্তু মূল সম্পদই সীমিত। তাই আসল উপায় হল চাহিদা কমানো বা জনসংখ্যার বৃদ্ধি রোধ করা। তাহলেই কেবল যুদ্ধ বন্ধ হবে। না হলে এ রকম অমানবিকতা চলতেই থাকবে।
মোস্তফা,
"বরং মানুষ যত হিংস্র, অমানবিক হয়ে উঠে, ভাবে জয় তার সুনিশ্চিত।" - যদিও এই ভাবনাটা ত্রুটিপূর্ণ। পাকি বাহিনীর হিংস্রতা ও বর্বরতার কারণে শান্তি প্রিয় বাংলার মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিলো এবং তারাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিল।
বিপদেই প্রকৃত ভালোমানুষ খুজে পাওয়া যায়, আমার মায়ের কাছেও প্রচুর গল্প শুনেছি, কত অপরিচিত লোক কত অজানা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
ভাবছি মুক্তিযুদ্ধ অনেক মানুষকে কাছেও টেনে এনেছে, অনেক বৃত্ত ভেংগে দিয়েছে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ,
ঠিকই বলেছো - "বিপদেই প্রকৃত ভালোমানুষ খুজে পাওয়া যায়"।
এছাড়াও আমার এই অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে বাংলার মাটিকে ভালবাসতে শিখিয়েছে।
বরাবরের মতই অসাধারন :hatsoff:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ধন্যবাদ আহমদ তোমার এই প্রশাংসার জন্যে।
স্মৃতিচারণ সবসময়ই ভালো লাগে তবে আপনাদের মতো যারা অনেক সিনিয়র তাঁদের স্মৃতিচারণ আরো বেশি ভালো লাগে। কারণ বোনাস হিসেবে অনেক অজানা তথ্য জানা যায়।
ধন্যবাদ শহীদুল। তবে মুশকিল হলো যে - সত্য অনেক সময় অপ্রিয় শোনায় অনেকের কাছে।
সিরিজটা পড়তে বেশ ভাল লাগে। :hatsoff:
ভাইয়া, শহীদলিপি আপনি যেভাবে তৈরী করেছেন তা লিখে ফেলুন প্লিজ।
আমরা এটা প্রচার করবো। এটা আপনার প্রাপ্য।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আমিও এরকম একটা অনুরোধ করতেই এই পোস্টে এসেছিলাম, ভাইয়া ইতিহাসটা জানতে চাই।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷