মোটা মানুষের গল্প

প্রথম বার তাদের দেখা বিটিভির পর্দায়। খুব ছোটবেলায় কোন এক সংবাদ ভিত্তিক অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে হঠাৎ দেখি সত্যিকার অর্থেই টিভি স্ক্রীনের পুরোটা জুড়ে দুটো মোটা মানুষ। পরস্পরের দিকে বেশ ভয়ংকর দৃষ্টিতে সামনের দিকে ঝুকে পড়ে এক অদ্ভুত ভঙ্গিমায় একে অপরকে মাপা দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু খুবই ছোট নেংটি পড়ে থাকায় কেন যেন পুরো দৃশ্যটাতেই একটা হাসির ব্যাপার ছড়ানো। আমি তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। আর ভাবছিলাম এই মোটা মানুষগুলো এত মোটা কেন? এত মানুষের সামনে এত ছোট নেংটি পড়ে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের কি একটু লজ্জাও লাগছেনা?

বড় হয়ে জানলাম ছোটবেলায় যে নেংটি পড়া মানুষগুলোর লজ্জা নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম তারা আসলে তাদের দেশে, তাদের সংস্কৃতিতে অনেক অনেক সম্মানের পাত্র। কারণ তাদের দেশের এক এতিহ্যবাহী এবং অত্যন্ত সম্মানজনক এক খেলার খেলুড়ে তারা। সেই খেলাটির নাম সুমো। আর এই মোটা মানুষগুলোকে গোটা পৃথিবীর মানুষ জানে সুমো কুস্তিগীর হিসেবে।

অনেকদিন পর কিছুদিন আগে তাদের সাথে আবার দেখা হলো। আগের বার দেখেছিলাম সাদা কালো ন্যাশনাল টিভিতে। এইবার সনি ট্রিনিট্রন এর রঙিন চোখে। আগের বার বিটিভিতে । আর এইবার ন্যাটজিওর একটা ডকুমেন্টারি শো তে। কিছুটা ভিন্নধর্মী এবং অনেকখানি অজানা থেকে যাওয়া এই সুমো কুস্তিগীরদের নিয়ে জানা হলো অনেক কিছুই। ছোটবেলার মোটামানুষগুলো বড় বেলাতেও যেমন আগের চে একটুও শুকিয়ে যায়নি তেমনি আমার আগ্রহেরও কমতি ছিলনা এতদিন পরও। তাই ডকুমেন্টারীটা গোগ্রাসেই গিললাম। উপরি হিসেবে জানা হলো অনেক অজানা এবং মজার তথ্য ।

তো সুমো কুস্তির শুরু থেকেই শুরু করা যাক। প্রাচীন জাপানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের এক ধরণের ধর্মীয় নৃত্য প্রচলিত ছিল যেখানে ধারণা করা হতো একজন মানুষ কোন স্বর্গীয় আত্মার সাথে এক বিশেষ ধরণের নাচে অংশগ্রহণ করবে।এটিকে জাপানী সংস্কৃতিতে সেই সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ আচার হিসেবেই গণ্য করা হতো। সে লক্ষ্যে প্রত্যেক প্রদেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের নিয়ে এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। তারা যুদ্ধ করতো কিছু বিশেষ কায়দা এবং নিয়ম কানুন অনুসরণ করে এবং এ প্রতিযোগিতাকে অভিহিত করা হতো “সুমাই পার্টি” নামে। আর এখান থেকেই বিবর্তিত হয়ে বর্তমান সময়ের সুমো কুস্তির উদ্ভব। এই খেলার নিয়মও বদলেছে সময় থেকে সময়ে, এক রাজার শাসনামল থেকে আরেক রাজার শাসনামলে। তবে বর্তমানে প্রচলিত পেশাদারী সুমো প্রতিযোগিতার শুরু হয়েছিল সেই ১৬৮৪ সালে।

আমরা সবাই কমবেশি নাদুস নুদুস সুমো কুস্তিগীরদের সাথেই কেবল পরিচিত। সুমো কুস্তির নিয়মকানুন বা কিভাবেই বা খেলা হয় সে ব্যাপারে জানাশোনা আছে খুব কম লোকেরই। কাজেই এই ফাঁকে সেটাও একটু জেনে নেয়া যাক।

যে রিং এর ভেতরে সুমো কুস্তি খেলা হয় তাকে জাপানী ভাষায় বলে দোহাইও (dohyo)। এর ব্যাস হচ্ছে ৪.৫৫ মিটার এবং আয়তনে ১৬.২৬ মিটার। এই রিং টি তৈরী করা হয় কাঁদা ও বালির মিশ্রণে তৈরি প্ল্যাটফর্মের উপর ধানের খড় বিছিয়ে। প্রত্যেকটি সুমো টুর্নামেন্টের শুরুতে নতুন করে এরকম রিং বা দোহাইও তৈরি করা হয়ে থাকে। কখনো দোহাইও দেখার সুযোগ হলে দেখবেন রিং এর মাঝামাঝি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে সমান্তরালে দুটো দাগ টানা রয়েছে। এ দুটো দাগ টানা হয়ে থাকে প্রতিযোগী দুজনের প্রতিযোগিতার শুরুতে নিজেদের অবস্থানে দাঁড়ানোর জায়গা চিহ্নিত করার জন্য।

খেলার মঞ্চ তাহলে প্রস্তুত। তো এবার জানা যাক মোটা মানুষগুলো কিভাবে এই খেলাটি খেলে এবং জিততে হলে তাদের ঠিক কি করতে হয়। এই খেলায় জেতা যায় দুইভাবে:
১। প্রতিপক্ষকে নির্দিষ্ট রিং এর বাইরে ছুড়ে ফেলতে হবে।
২। প্রতিপক্ষের পায়ের নিচের অংশটুকু ছাড়া দেহের অন্য যে কোন অংশ ভূমি স্পর্শ করাতে হবে।

কোন কারণে দুজন প্রতিপক্ষের কেউই যদি উপরোক্ত দু নিয়মে একে অপরকে কুপোকাৎ করতে না পারেন সেসব দুর্লভ ক্ষেত্রের জন্য রয়েছে আরো কিছু নিয়ম। তবে বেশিরভাগ সময়ই সেগুলো ব্যবহার করার দরকার পড়েনা। কারণ বেশির ভাগ সুমো প্রতিযোগিতারই ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যায় খুব দ্রুত। সাধারণত একেকটি খেলার ব্যপ্তিকাল কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ কয়েক মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

খেলার নিয়মকানুন তো জানা হলো। এবার তাহলে খেলা শুরু করা যায়, তাইনা? কিন্তু না.. এখনি নয়.. ধীরে। কারণ খেলা শুরুর আগে আপনাকে অনুসরণ করতে হবে কিছু নির্দিষ্ট আচার অনুষ্ঠান এবং নিয়ম কানুন।

খেলার দিন বিকেল বেলাতেই কুস্তিগীররা স্টেডিয়ামে পৌঁছে যায় এবং ড্রেসিং রুমে প্রবেশ করে। সেখানে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুটো রুম থাকে যেন দুজন প্রতিযোগী খেলা শুরুর আগে একে অপরের সামনাসামনি না হয়। সুমো কুস্তিগীরদের ভেতরে রয়েছে আবার ছয়টি ভাগ। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুমো কুস্তিগীরদের সাধারণত সেকিটোরি(sekitori) এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ের কুস্তিগীরদের বলা হয় রিকিশি (rikishi)। স্টেডিয়ামে প্রবেশের পর প্রতিযোগিদের কিছু নির্দিষ্ট আচার অনুষ্ঠান পালন করতে হয়। প্রথমে সমস্ত প্রতিযোগীদেরকে সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ রাংক অনুসারে একে একে দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং তারা রিং এর চারপাশে দর্শকদের দিকে মুখ ফিরে দাঁড়িয়ে একটি বৃত্ত তৈরি করে। এভাবে যখন সর্বোচ্চ রাংকধারী প্রতিযোগির পরিচয়পর্বও শেষ হয়ে যায় তখন সবাই উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে অন্তর্মুখী বৃত্ত তৈরি করে। তারপর পালন করা হয় আরো কিছু আচার অনুষ্ঠান। সবশেষে প্রতিযোগীরা আবার ড্রেসিং রুমে ফেরত যায়। তারা আবার ফেরত আসে যার যার প্রতিযোগিতা শুরু হবার ঠিক দুই রাউন্ড পূর্বে। এছাড়াও রয়েছে হাবিজাবি আরো নানা নিয়ম।

মজার ব্যাপার হচ্ছে বক্সিং এর মতো সুমো কুস্তিতে ওজনভিত্তিক কোন বিভাজন নেই। কাজেই আমার মত ৪৯ কেজি প্রতিযোগীর বিপরীতে যদি মাস্ফ্যু ভাইয়ের মত খাপো খাপো ক্যাটেগরির প্রতিযোগী পড়ে যায় তাহলে মোটেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই, যদি খেলাটার নাম হয় সুমো। এবং অনেকসময় হয়ও ঠিক সেরকমটিই।

নিয়মকানুনের কথা অনেক হলো। এবার আসা যাক সেইসব নাদুস নুদুস ঝুটি বাঁধা মোটামানুষগুলোর ভিন্নধর্মী নিয়মাবদ্ধ জীবনযাপনের কথায়।

সুমো কুস্তিগীরদের জীবনও ক্যাডেট কলেজ গুলোর মতো কঠিন নিয়মের বেড়াজালে বাঁধা। এবং এই নিয়মকানুনগুলোর নির্ধারক হচ্ছে জাপানী সুমো এসোশিয়েশন। সুমো কুস্তিগীরদের বাধ্যতামূলকভাবে বসবাস করতে হয় তাদের জন্য তৈরি করা আবাসলায়ে যাকে জাপানী ভাষায় বলা হয় হেয়া (Heya)। সমস্ত সুমো কুস্তিগীরদের সুমো জীবন থেকে অবসর নেবার পূর্ব পর্যন্ত বাস করতে হয় সেখানেই। নবীন সুমোদের রিক্রুট করা হয় সাধারণত পনের ষোল বছর বয়েসীদের ভেতর থেকে। সুমোজীবনে প্রবেশের শুরু থেকেই তাদেরকে সামুরাইদের অনুকরণে চুল বড় করতে হয় যাতে পরবর্তীতে উচু করে নির্দিষ্ট কায়দায় মাথায় ঝুটি বাঁধা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে সুমোদের মধ্যেও কঠিন সিনিয়রিটি জুনিয়রিটি মেনে চলা হয়। যেমন কোন পাবলিক প্লেসে গেলে সুমোদেরকে পরতে হয় বিশেষ ধরণের পোষাক যাতে জনসম্মুখে তাদের সহজেই আলাদা করা যায়। আবার কে কি ধরণের পোষাক পড়বে সেটা নির্ধারিত হয় কুস্তিগীরটির রাংকের ওপর। রিকিশি অর্থাৎ সর্বনিম্ন পর্যায়ের সুমোদের পড়তে হয় সূতীর তৈরী পাতলা একধরণের রোব। এমনকি মাঘ মাসের শীতও পার করতে হবে সেই পাতলা কাপড় পড়েই, কিন্তু নিয়মের নো নড়ন চড়ন। আবার তাদের পড়ার জুতোও হতে হবে কাঠের তৈরী বিশেধ ধরণের চটি যেটা পড়ে হাঁটলে খট খট করে শব্দ হবে। অনেকটা আমাদের দেশের খড়মের মত। তবে যত সিনিয়র হওয়া যায় এই ধরণের নিয়ম কানুনগুলোও আস্তে আস্তে শিথিল হতে থাকে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুমোরা তাই সিল্কের তৈরি রোব বাছাই করতে পারে নিজেদের পছন্দ মত।

একইভাবে সিনিয়রটি জুনিয়রিটির নিয়ম অনুসরণ করা হয় দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে। সেই অনুসারে জুনিয়র সুমোদের উঠতে হয় সবার আগে, প্রায় ভোর পাঁচটার দিকে। অন্যদিকে সেকিটোরিরা ঘুম থেকে ওঠে সাতটার দিকে। সেকিটোরিরা যখন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত তখন রিকিশিদের সময় যায় খাবার তৈরি, গৃহকর্ম সহ নানান রকম ফাইফরমাশ খাটতে খাটতে। রিকিশিদের কেউ কেউ আবার সেকিটোরিদের তোয়ালে বহন করে দাঁড়িয়ে থাকে একপাশে যখন তারা কুস্তি চর্চায় ব্যস্ত থাকে। সিনিয়রটি জুনিয়রটির একই নিয়ম অনুসরণ করা হয় গোসল করা কিংবা খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও।

রিকিশিদের সাধারণত সকালের নাশতা খাওয়ার অনুমতি নেই। তাদেরকে খেতে হয় একেবারে দুপুর বেলায়, যেটি বিশেষভাবে তৈরি এক ধরণের লাঞ্চ। এই লাঞ্চ তৈরি হয় মাছ, মাংস এবং নানারকম শাকসবজির সমন্বয়ে। দুপুরবেলায় ভরপেট খাওয়ার পর রিকিশিরা বাঙ্গালিদের মত ভাতঘুমে শামিল হয়। এই ঘুম তাদেরকে মোটা থেকে দিন দিন মোটাতর হতে সাহায্য করে। বিকেল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর রিকিশিদের আবার গৃহকর্মে ব্যস্ত হয়ে যেতে হয়। আর ওদিকে সেকিটোরিরা তাদের ফ্যান ক্লাবে নানারকম কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকে আর হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যার দিকে হয়তো সেকিটোরিরা আবার তাদের স্পন্সর এর সাথে বাইরে বেরোয়। কিন্তু রিকিশিদের তখনো ঘরের বাইরে বেরুবার নিয়ম নেই। অথবা তারা তখন কোন সেকিটোরির ফাইফরমাশ খাটতে ব্যস্ত থাকে।
একেকজন সেকিটোরির জন্য আবার কয়েকজন রিকিশি ভৃত্য হিসেবে নিয়োজিত থাকে। ন্যাটজিওর ডকুফিল্মটি মূলত যে ইনোকাজুরা বা সুমো চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে তৈরী তাতে দেখা যায় সেই সুমো কুস্তিগীরের সেবা পরিচর্যার দায়িত্বে সাতজন রিকিশি এবং কেবলমাত্র তার চুলের পরিচর্যার জন্য দুজন রিকিশি নিয়োজিত। সাথে অন্যান্য আজাইরা কাজের জন্য আরো কিছু রিকিশি তো আছেই। সেকিটোরিরা চাইলে নিজস্বরুমে থাকতে এবং ঘুমাতে পারে। কিন্তু পোড়াকপালী রিকিশিদের সেই সুযোগ নেই। তাদেরকে থাকতে হয় গণরুমে একসাথে।

সবমিলিয়ে জুনিয়র সুমো কুস্তিগীরদের জন্য জীবন মোটেও সুখকর বলা যাবেনা। এমনকি তাদেরকে আরো শক্ত এবং কঠিন মানসিকতার অধিকারী করে তুলতে সিনিয়র সুমোকর্তৃক নানা রকম নিয়মাবদ্ধ শাস্তিও ভোগ করতে হয়। তবে ২০০৭ সালে অতিরিক্ত শাস্তির দরুণ এক জুনিয়র সুমোর মৃত্যুর পর মিডিয়াতে শাস্তির ব্যাপারগুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং সমালোচিত হয়। ফলে বর্তমানে শারীরিক শাস্তির চর্চা আগের চে বেশ কমে এসেছে।

এতো গেল সুমো কুস্তিগীরদের ঘরের খবর। ঘরের বাইরে সুমোকুস্তিগীরদের কিন্তু দারুণ কদর। সুমো চ্যাম্পিয়ন, যাদেরকে জাপানীতে ইয়োকোজুনা বলা হয়, তারা রীতিমত স্টারের সম্মান ভোগ করে। তাদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বিলাসবহুল লিমোজিন, টুর্নামেন্টে গেলে সবচে দামী হোটেলে থাকার ব্যবস্থাসহ সকল রকম সুযোগ সুবিধা। সুমো চ্যাম্পিয়নদেরকে তাদের সংস্কৃতিতে অত্যন্ত শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখা হয়। তবে আশংকার কথা হচ্ছে দিন দিন সুমো কুস্তিগীরদের সংখ্যা দিন দিন কমেই চলেছে। সাধারণ জাপানীদের গড় বয়সের চেয়ে সুমো কুস্তিগীরদের বয়স অন্তত বিশ বছর কম হওয়া এই সংখ্যা হ্রাসের পিছনে অন্যতম প্রধাণ ভূমিকা পালন করছে।

এবার শেষবেলায় এসে প্রশ্ন জাগতে পারে নিজেদের জীবনকালকে আরো সীমিত গন্ডি আর সময়ের ভেতর আবদ্ধ করে এইসব সুমোরা বিনিময়ে কি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সম্মান আর শ্রদ্ধা সে তো রয়েছেই, পাশাপাশি এই মোটা মানুষগুলোর জন্য রয়েছে বেশ মোটা অংকের বেতনও! উইকিপিডিয়া বলছে বেতনের অংক একেবারে কমও নয়। সর্বনিম্ন পর্যায়ের সুমোদের বেতন ৯০০০ ইউ এস ডলার থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুমোদের জন্য রয়েছে মাসিক ২৪,৫০০ ইউ এস ডলারের বেতন ভাতা। পাশাপাশি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুবাদেও তারা বিভিন্ন অংকের টাকা পেয়ে থাকে। আর যদি কোনক্রমে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়া যায় তাহলে কপালে জুটতে পারে সর্বোচ্চ এক কোটি জাপানী ইয়েন।

সবকিছুর হিসেব নিকেশ শেষে একথা বলা যায়ই যে সুমো কুস্তিগীররা শুধু তাদের বাড়াবাড়ি রকমের স্বাস্থ্যের জন্যই কেবল ব্যতিক্রমধর্মী এবং চমকপ্রদ নয় বরং তাদের পুরো জীবনটাই ঘিরে আছে শতবছরের লালিত ঐতিহ্য আর ভিন্নধর্মী আভিজাত্যের মোড়কে, নয় কি?

[ ছবিসূত্র: উইকিপিডিয়া; পাশাপাশি বেশ কিছু তথ্যের জন্যও উইকিপিডিয়ার শরণাপন্ন হয়েছি ]

৪৭ টি মন্তব্য : “মোটা মানুষের গল্প”

  1. রকিব (০১-০৭)
    আমার মত ৪৯ কেজি প্রতিযোগির বিপরীতে যদি মাস্ফ্যু ভাইয়ের মত খাপো খাপো ক্যাটেগরির প্রতিযোগি পড়ে যায় তাহলে মোটেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই, যদি খেলাটার নাম হয় সুমো।

    জীবনের মায়া এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলে কি চলবে ভাইয়া 😕


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    অনেকগুলা বানান ভুল চোখে পড়ছে। কিন্তু এখন শুধরে দিতে পারছিনা বলে দু:খিত। পরে সময় করে করে দিব।

    নেটের অবস্থা এত খারাপ, এত খারাপ, এতই খারাপ 🙁


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. দিহান আহসান

    জিহাদ ভাইয়া, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছিলাম।
    ওদের শরীরটা এমন হয় কিভাবে? নাকি আগে থেকেই এমন? ভাত ঘুম এর জন্য মোটা থেকে মোটাতর হলে ও প্রশ্ন থেকে যায়। তারা যখন হেয়া'তে প্রবেশ করে তখন তাদের ওজন কত থাকে?
    তারা কি শুধু সেই বিশেষ ধরনের লাঞ্চ'ই খায়? আর কোন খাবার খায়না?
    অনেক প্রশ্ন করে ফেললাম ... 😕

    জবাব দিন
    • জিহাদ (৯৯-০৫)

      না। ওদের শরীর আগে থেকেই এমন থাকেনা। থাকলেও এত বেশি থাকেনা। হেয়া তে প্রবেশের পর থেকে নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। বিশেষ খাবার যেটার কথা হলো যতদূর জানি মূলত সেটাই এতো বেশি মোটা হবার পিছে রহস্য। পাশাপাশি কোন সময়ে সেটা খাচ্ছে সেটাও এখানে মুখ্য। রাতের বেলাতেও এরা প্রচুর পরিমাণে খায় যতদূর জানি। :-B


      সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

      জবাব দিন
  4. দিহান আহসান

    ধন্যবাদ জিহাদ ভাইয়া। আমারো ছোট থেকে এদের উপর খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু আলসেমি'র কারনে নেটে সার্চ করে পড়া হয়নি। তোমার আর সিসিবি'র কল্যাণে সম্ভব হল।
    আবারো অনেক ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  5. আন্দালিব (৯৬-০২)

    সুমো কুস্তিগীরদের সম্বন্ধে কিছুই জানতাম না! তোমার মতই খালি টিভিতে দেখেই খালাস। আজকে অনেক কিছু জানলাম। খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারটা আন্দাজ করা যায়। এরকম কঠোর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে কাউকে যেমন পেটা শরীরের ফিট ক্যাডেটে রূপান্তর করা যায়, তেমনি রিকিশি সুমো'তেও বদলে ফেলা যায়। (মাসরুপ খাপো খাপো করে শেষে না একদিন এমন হয়ে যায়! =)) )

    খুব চমৎকার পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ জিহাদ। :clap:

    জবাব দিন
    • জিহাদ (৯৯-০৫)

      আসলে ঠিক তাও না। আবার হ্যা ও। অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম সুমোদের নিয়ে পোস্ট দিবো। কিন্তু আলসেমির জন্যে হয়ে উঠছিল না। এক্ষেত্রে এহসান ভাইয়ের পোস্টটা ব্যাপক টনিক হিসেবে কাজ করসে । 😀


      সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

      জবাব দিন
  6. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    কাজেই আমার মত ৪৯ কেজি প্রতিযোগীর বিপরীতে যদি মাস্ফ্যু ভাইয়ের মত খাপো খাপো ক্যাটেগরির প্রতিযোগী পড়ে যায় তাহলে মোটেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই, যদি খেলাটার নাম হয় সুমো

    আমি এই ব্যাপারে দিহান ভাবীর কাছে বিচার চাই (প্রিন্সি,এডু আর মডু ইনাদেরকেও এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত মনে হইতেছে দেইখা উনাদের আর টানলাম না :(( ) ইদানীং ব্লগে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হইছে বেশ জোরেশোরে x-( ।একে তো সামি aka রায়হান আমার ব্যান চাইয়া জোরেশোরে জনসংযোগ করতেছে আর ওইদিকে জিহাদ আমাকে পেটুক পরিচয়ে পরিচিত কইরা আমার ইমেজের ১২টা বাজানোর চেষ্টায় লিপ্ত x-(

    আমি চারদলীয় জোটের প্রতিনিধিকারী এই নির্লজ্জ্ব অপচেষ্টার তীব্র পরতিবাদ জানাই x-( x-( x-(

    অফ টপিক- আমার ওজন ৮৯ কেজি,জিহাদের চেয়ে মাত্র ৪০ কেজি বেশি :shy: :shy: :shy:

    জবাব দিন
  7. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    সুমোদের ব্যাপারে পড়েছিলাম(সম্ভবত বিচিত্রায়)-এদেরকে বিয়ে করার জন্য নাকি জাপানের টপ মডেলরা মুখিয়ে থাকে।টপ জাপানী মডেল স্ত্রী সহ পাহাড়সম এক সুমোর যুগলবন্দী ছবি দেখে আমার মাথায় বিচিত্র একটা প্রশ্ন এসেছিল(প্রশ্নটা ঠিক শালীন নয় :shy: )...আমার প্রশ্নের উত্তরে সাবেক ডর্মলিডার ৩২ ব্যাচের মেহেদী ভাই বলেছিলেন-"আরে পাগলা,চাপা পড়ব ক্যান?কতরকম "সুইটেবল পজিশন" আছে তুই জানস????

    ক্লাস নাইনের পিচ্চি আমি আর পজিশন সংক্রান্ত কথা বাড়াইনাই 😕 😕

    জবাব দিন
  8. মহিব (৯৯-০৫)

    বেশ গোছানো লেখা।
    লেকচার দেয়ার মত স্টাইলটা ভালো লাগলো লেখা।

    একসময় জানতাম সুমো একজন মানুষের নাম- যে কুস্তি করে।

    আচ্ছা- মেয়েরা সুমো হয় না? মানে- কোন মেয়ে সুমো কুস্তিগীরকে তো দেখলাম না!

    জবাব দিন
  9. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    ভাল হইছে :thumbup: :thumbup:
    চমৎকার লেখা :clap: :clap: :clap:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  10. শেখ আলীমুজ্জামান (১৯৭০-৭৬)

    চমৎকার লেখা। সুমো কুস্তিগীর সম্পর্কে আরো তিনটি তথ্যঃ
    ১) বর্তমানে সুমো শুধু জাপান নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বর্তমানে যে দুজন গ্রান্ড চ্যাম্পিয়ন (য়োকোজুনা) আছেন, তাঁরা দুজনেই মঙ্গোলিয়ার অধিবাসী।
    ২) সুমো কুস্তিগীরদের অতিভোজনে সমস্যাও আছে। সক্রিয় সুমো থেকে অবসর নেওয়ার পরে অনেকেই ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগে ভোগেন।
    ৩) সুমো কুস্তির রিং এ মেয়েদের ওঠা নিষিদ্ধ।

    জবাব দিন
  11. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    কত অজানারে........... ;;;

    অফটপিক : দুইন্ন্যাতে আরো কতো বিষয় আছে, মহাসাগরের তলদেশ, গ্লেসিয়ার, নীল তিমি, স্টার ফিশ, রেসাস বানর,লাভ বার্ড, আল্পস পর্বত ইত্যাদি ইত্যাদি!! জিহাদের মতো অন্যরা আগাইয়া আসলে আমরা আরো কতো বিষয়ে জানতে পারি!! 😀 (মাইন্ড খাইও না, এইটা :just: খোঁচা)।

    তা জিহাদ, তোমার আর মাস্ফ্যুর ফাইটটা দেখনের লাইগ্যা রাত জাইগ্যা বইয়া আছি :no: :no: :no:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  12. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দারুন লাগল :hatsoff: :hatsoff: এই রকম আরী নতুন নতুন বিষয় নিয়ে লিখ...

    তা জিহাদ, তোমার আর মাস্ফ্যুর ফাইটটা দেখনের লাইগ্যা রাত জাইগ্যা বইয়া আছি

    :thumbup: :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।