১.
শাহ এ এম এস কিবরিয়া তখন অর্থমন্ত্রী। সেবারই প্রথম ঢাকায় অনুষ্ঠিত হল দাতাগোষ্ঠীর বৈঠক। এর আগে এসব বৈঠক হতো প্যারিসে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল না। বিএনপি সংসদ বয়কট করছে। প্রায়ই হরতাল হচ্ছে। বলা যায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল।
সেবার বৈঠকটা হলো হোটেল সোনারগাঁও-এ। আমরা সারাদিন লবিতে বসে থাকতাম সংবাদের আশায়। দুপুর থেকেই গুঞ্জন শুনছিলাম যে দাতাদেশগুলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটা যৌথ বিবৃতি দিতে পারে। বিষয়বস্তু হবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল না হলে সাহায্য তারা দেবে না।
তিনদিনের বৈঠক। নিয়ম ছিল প্রতিদিন বৈঠক শেষে সারাদিনের আলোচনা নিয়ে ব্রিফিং করবেন সে সময়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ড. মশিউর রহমান।
দ্বিতীয় দিন, ড. মশিউর রহমান ব্রিফিং করছেন। আমার পাশে দাঁড়ানো বিবিসির ঢাকা অফিসে সে সময়ের রিপোর্টার ফ্রান্সিস নামের এক মেয়ে। ব্রিফিং-এর মাঝ পথে ফ্রান্সিস প্রশ্ন করে বসলো দাতারা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো যৌথ বিবৃতি দিয়েছে কীনা? মশিউর রহমান অস্বীকার করলেন। কিছুপরে ফ্রান্সিস আবারো প্রশ্ন করলো। এবারেও মশিউর রহমান বললেন যে, রাজনীতি নিয়ে কোনো কথাই হয়নি। কিছুক্ষন পরে আবারো ফ্রান্সিসের একই প্রশ্ন। এবারো ড. মশিউরের অস্বীকার। এরকম ৫ বা ৬ বার হলো। প্রতিবারই অস্বীকার। সপ্তম বারের মতো একই ঘটনা ঘটলে ফ্রান্সিস আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। ব্যাগ খুলে একটা কাগজ বের করে ড. মশিউরকে দেখিয়ে বললো রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যদি আলোচনাই না হবে তাহলে এটা কী?
ড. মশিউর বিব্রত এক চেহাড়া নিয়ে আস্তে করে চলে গেলেন। আর আমরা দৌঁড়ালাম ফান্সিসের পিছনে। বিবৃতি ফটোকপি করবে। সেবার এটাই ছিল লিড স্টোরি।
সেই ড. মশিউর রহমান এখন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ে উপদেষ্টা। :dreamy:
২. গেছি অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিতে। সচিবালয়ে তাঁর রুমে। আমি আর আমাদের ফটোগ্রাফার, সম্ভবত ইত্তেফাকের আলম ভাই। বসে আছি। সাক্ষাৎকার পর্ব শুরুর আগে বললেন, তুমরা একটু বসো। আমি একটু ফুন করিয়া লই।
আমাদের বসিয়ে রেখে ফোন করলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইনকে। এই প্রতিমন্ত্রী তখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তদারকি করতেন। আমরা কান পেতে রইলাম। শুনলাম ফোনের কহিনী। আগের দিন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজের ছেলে গিয়েছিল গুলশানের ফু ওয়াং কাবে। সেখানে সম্ভবত কাব কর্তৃপরে সাথে কিছু একটা হয়েছে। শাহজাহান সিরাজ ফোন করে নালিশ করেছে সাইফুর রহমানের কাছে। এই সাইফুর রহমান ফোন করে বললেন যে, প্রতিমন্ত্রী যেন ফু ওয়াং কাবে এনবিআরকে পাঠায়, দেখতে তারা ঠিক মতো ট্যাক্স দেয় কিনা। মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে বেয়াদবী। :gulli2:
৩.
এবার একটু আলম ভাইয়ের কথা বলি।আলম ভাই নিয়ে অনেক অনেক মজার গল্প আছে। তিনি আবার পানীয় রসিক। গল্পটা বলি। বঙ্গবন্ধু গেছেন রাশিয়া সফরে। সঙ্গে আলম ভাই। দেশে ফিরলেন। আলম ভাইয়ের হাতে একটা ভদকার বোতল। সমস্যা তৈরি করলেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। এয়ারপোর্টে কাস্টমস অফিসারদের বলে দিলেন যাতে কেউ বেআইনি কিছু নিতে না পারে। আলম ভাইরে আটকালো অফিসাররা।
বোতল নেওয়া যাবে না। আলম ভাই অনেক তর্ক করলেও কাজ হলো না। বঙ্গবন্ধুর নিষেধ আছে।
আলম ভাই তখন ভদকার বোতলটা খুলে সবার সামনে পুরো বোতল ভদকা খেয়ে ফেলে বললেন, -এইবার আমারে আটকাও। =))
এই গল্প আমার প্বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের কাছ থেকে শোনা। তিনি ছিলেন আলম ভাইয়ের পিছনেই।
৪.
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন গভর্ণর। নাম বললাম না সঙ্গত কারণেই। খবর দিলেন বাসায় যাওয়ার জন্য। তিনি একজন আমার ভাল সোর্স ছিলেন। অফিস থেকে বাসায় ফাইল নিয়ে যেতেন, আর আমি দেখে দেখে নোট নিতাম। একদিন এরকম তাঁর ড্রয়িং রুমে বসে কাজ করছি। তিনিও সামনে বসে আছেন। টুকটাক গল্প করছি। উঠলো এরশাদ প্রসঙ্গ। এরশাদকে নিয়ে তখন টানাটানি। এরশাদ হাসিনার না খালেদার?
গভর্ণর সাহেব একজন নেত্রীর নাম উচ্চারণ করে বললেন, আগের পাঁচ বছরে জেলে রেখে তাকে যে পরিমান যৌনযন্ত্রণা দেওয়া হয়েছিল, সেই যৌনযন্ত্রণা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলেন ঐ নেত্রী। সুতরাং এরশাদের উচিৎ না ঐ নেত্রীর বিপক্ষের জোটে যাওয়া। তারপর তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এরশাদের সাব জেলে কে প্রথম গিয়েছিল জানেন? আমি সহজ নামটাই বললাম, কে জিনাত। তিনি একটু হাসি দিয়ে বললেন, হলো না। স……মাহমুদ।
যৌনযন্ত্রণা-নতুন একটা কথা শিখেছিলাম সেদিন। 😀
৫.
এরশাদ প্রসঙ্গ যখন আসলো, একটা গল্প বলি। বলেছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। আমি তখন ইত্তেফাকে। এক রিপোর্টার্স মিটিং-এ তিনি এই গল্ল্পটা বলেছিলেন।
এরশাদ প্রায়ই অনেক সকালে মিটিং করার জন্য তাঁর বাসায় সব মন্ত্রীদের ডেকে পাঠাতেন। আর সবাইকে ছুটতে হতো। আর এভাবে ডাক পড়লেই শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ফোন করতেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। বলতেন, ‘মঞ্জু, চলো ফাকিংহাম প্যালেস থেকে ডাক এসেছে’। :khekz:
৬.
মাত্র মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি। ড. আতিউর রহমান তখন বিআইডিএস-এ। আমার বন্ধু বিন্দু তাঁর সাথে কাজ করে। সংবাদের অথর্নীতি পাতা দেখার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হল তাঁকে। তিনি বলে দিলেন তার পছন্ত হয় আর অর্থনীতির ছাত্র পাওয়া যায় তাহলে তিনি সাহায্য করবেন।
আমি লেখলেখি করতাম। বিন্দু আমাকে ফোন করলো কাজটা করবো কিনা। না করে দিলাম একবাক্যে। সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। পরে বিন্দু আবার দুইদিন পর ফোন দিল, আমারে পটাইলো। বললো যতদিন রেজাল্ট পেয়ে বিসিএস বা অন্য কোথাও চাকরি না পাই ততদিন তো করতে পারি। মাসে মাসে ৪/৫ হাজার টাকা পেলে ক্ষতি কি। আমিও ভাবলাম ক্ষতি কি? দেখা করলাম ড. আতিউর রহমানের সাথে। কথা বলে তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন সংবাদে। আর আমি হলাম সাংবাদিক। সেই যে এই পেশায় ঢুকেছি, আজও আছি।
আমাকে সাংবাদিক বানিয়েছেন এই ড. আতিউর রহমান। আর আজ তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর নিযুক্ত হলেন। :salute:
৩৬ টি মন্তব্য : “সাংবাদিক জীবন ও কয়েকটা গল্প”
মন্তব্য করুন
তিন নম্বরটাতে বিয়াপক মজা পেলুম :)) :)) :)) :))
আমিও মজা পাইছিলাম।
:khekz: :khekz: :pira: :pira:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
খুব তথ্যপূর্ণ আর হৃদয়স্পর্শী লাগল আমার কাছে...
এই অনুভূতি আর স্বীকারোক্তি টাও খুব চমৎকার লাগল।
:salute: :salute:
🙂
৫ নম্বরটা কম কিসে? 😀 😀 😀
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
:thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
মাসুম ভাই, সঙ্গের ছবিগুলা দিলেন কেন? তাইলে তো আরও জোশ হইতো। 😀
এরশাদের কাহিনি পিড়া হিসতে হিসতে পিড়া গিলাম। লোকটা একটা মহা ... ছিল। তবে ডট দিয়ে স... মাহমুদ ব্যাটাকে তো চিনলাম না! 😕 😕
আমিও চিনিনাই। ছোটদের জন্য শূণ্যস্থান টা আরেকটু সহজ করা যায়না? 🙁
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
এইখানে ছবি দেওয়াটা বড়ই যন্ত্রনাদায়ক। স..মাহমুদ ব্যাটা হইবেক না। অন্তত এই দোষ এরশাদের ছিল জানা নাই। 😛
:khekz: :khekz: :khekz:
'স......মাহমুদ' কে জানতে মঞ্চায়।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
জাতি জানতে চায়...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ঐ :thumbup:
ঝাতির এতো জানার কাজ কী? তয় স---তে সুচিত্রা হইতে পারে, আবার সবিতাও হইতে পারে। কিংবা ........
মাহমুদের পুরা নাম কি? 😀 😕
=)) =))
এরশাদ সাহেবের সব কাহিনীই প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্যে মনে হয় 😛
**
সত্য-মিথ্যা জানিনা, একবার এক ট্যাবলয়েডে পড়ছিলাম , জেলে থাকা অবস্থায় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সংসদ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করতে এসেও নাকি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর রুমে দরজা লাগিয়ে এরশাদ আঙ্কেল জিনাত আন্টিকে আদর করতো। আর বাইরে দাঁড়াইয়া মঞ্জু আর মওদুদ গার্ড দিতো। 😛 😛
**
৫ নাম্বারটার জন্যে ৫ তারা দিয়া গেলাম। 😉
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
=)) 😛
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সত্য বা মিথ্যা না। কাহিনী পুরা সত্য।
=)) =)) :))
আমিও আদর করপো :((
রকিব আর নাজমুলরে বাইরে গার্ড রাখিস :grr:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
নাহ, মাস্ফ্যুরে নিয়া আর পারা গেল নাহ...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
বড়ই হিংশা হইতাসে!!!! 🙁 🙁 :(( x-( ~x(
শওকত ভাইয়ের মত এত সুন্দর লেখা কেন আমি লিখতে পারি না!!! ~x(
ভাইজান আমারে শিখায়া দেন না!!!
:shy: 🙂 🙁
শওকত ভাই পুরা সেরকম :))
বিসিসি এর ক্যাডেট দের রস বোধ এর কমতি নাই ভাই B-)
পুরাপুরি সহমত।
শওকত ভাই আর সায়েদ ভাই দুই জনেই তো মনে হয় বিসিসির।
এ্যাঁ 😛 😀 ।
Life is Mad.
বরাবরের মতোই সেইরকম মিজা পিলুম। সাংবাদিক হয়া অন্য কিছু হন নাই দেইখা আল্লাহর কাছে শোকর। নাইলে তো এই গল্পগুলা পাইতাম না।
ভাইয়া নিমাই পড়ে অনেক আগেই সাংবাদিক হবার ইচ্ছা জাগছিল। এখন আবার আপনার লেখাগুলা পড়ে মনে হয় ইশশ সাংবাদিক হতে পারলে চরম হত। সেইরকম লাগল এই পোস্ট।
শওকত ভাই চরম মজা পেলাম আপনার পোস্ট পড়ে। এরকম আরো গল্প শুনার অপেক্ষায় রইলাম।
:khekz: :khekz:
ভাইয়া, আপনার এইসব লেখা পড়ে আমার সাংবাদিক হইতে মঞ্চায়।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
মাসুম ভাই, ব্যাপক মজা পিলাম। =)) =))
৩ আর ৫ ত পুরা :gulli2: :gulli2:
সব রসুনের এক ... ...
=)) =)) :boss:
:salute: :salute: :salute:
Life is Mad.