ডিসক্লেইমার: ঘটনা খুবই খারাপ। আবার একটা গল্প লিখছি। শুধু তাই না, ব্লগে দেওয়ারও সাহস করতাছি। আবারও বলি এইটা কাল্পনিক গল্প।
আজমল হায়দার কথা বলতে ভালবাসেন। ২৭ বছর চাকরি করেছেন। সচিব ছিলেন তিনটি মন্ত্রণালয়ের। তখন কথা শোনার অনেক মানুষ ছিল। আজমল হায়দার কথা বলতেন আর বাকিরা শুনতেন।
কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন। ঘড়ি ধরে টানা ৪০ মিনিট কথা বলতে হতো। ক্লান্ত হতেন না আজমল হায়দার। তবে কথা বলতে পারলেও তাতে সন্তুষ্টি ছিলো না। আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবই বড় কারণ। তাছাড়া সুফিয়ার বাবা একজন কলেজ শিক্ষকের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে কিছুতেই রাজী ছিলেন না। সিএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তবেই বিয়ে করতে পেরেছিলেন সুফিয়াকে। শুরুতে সুফিয়াও কথা শুনতে পছন্দ করতো। পরে অবশ্য শ্রোতার অভাব হয়নি আজমল হায়দারের জন্য।
তিনি চিন্তিত হলেন অবসরে যাওয়ার সময় মাস আগে থেকে। সচিব মানেই প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা। আর তাতে আসে কামিনী ও কাঞ্চন। কিন্তু চাকরি না থাকলে যে কথা শোনারও কেউ থাকবে না বিলক্ষণ জানেন তিনি। ফলে দলের কাছে তদ্বির করতে হলো। সচিব থাকলে অনেককেই নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়। তার বদলে কখনো কামিনী, কখনো কাঞ্চন আবার কখনো ভাল জায়গায় পোষ্টিং নিয়েছেন তিনি। শেষবার নিলেন এক্সটেনশন।
চাকরির সব মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও একেবারেই বসে থাকেননি আজমল হায়দার। শ্রোতারও অভাব হয়নি। একটা রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হলো তাকে। একটু আয়েশ করা, আরামে থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে ততদিনে। ফলে চেয়ারম্যান হয়েই ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে একটা দামী জিপ কিনিয়েছেন ব্যাংককে দিয়ে। পত্রিকাগুলো এ নিয়ে লেখালেখি করায় মেয়াদের বেশি এই পদে আর থাকতে পারেননি। এর পর সরকারি এক কমিশনের চেয়ারম্যান বানিয়ে দেয় সরকার। সরকারের জন্য একটা গণমাধ্যম নীতিমালা তৈরি করে দেয়াই ছিল এই কমিশনের কাজ। আজ যে এতো চ্যানেল এ জন্য খানিকটা তৃপ্তি অনুভব করেন আজমল হায়দার। এজন্য অবশ্য পাঁচটা দেশ ঘুরতে হয়েছে, বৈঠকের পর বৈঠক করতে হয়েছে।
পরিপূর্ণ অবসর জীবন নিয়ে বিপাকে পড়ে গেছেন আজমল হায়দার। কথা বলার ইচ্ছাটা আরও বেড়েছে। কিন্তু একদমই শ্রোতা নেই। একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস হয়ে গেছে। তারপর থেকে অফুরন্ত অবসর। সাফিয়াকে খুব বেশি কাছে পাওয়া যায় না। দুই ছেলের একজন দেশে আছে। সেও মহাব্যস্ত। মেয়েটা স্বামীর সাথে অষ্ট্রেলিয়ায়। কার সাথে কথা বলবেন আজমল হায়দার?
আজমল হায়দারের মনে হয় আজকাল সবাই যেন তাকে একটু এড়িয়ে চলেন। এমনকি সাফিয়া বা ছেলে রাজও। নাতিরা আগে কাছে আসতো, এখন তারাও আসে না। বরং আড়ালে-আবডালে হাসাহাসি করে। ‘দাদা ভাই খালি কথা বলে’-এটাই তাদের হাসির বিষয়। দম বন্ধ হবার মতো অবস্থা এখন আজমল হায়দারের। অনেক কথা জমা হয়, কিন্তু শ্রোতা পান না বলেই সেগুলো বলা হয় না।
বুদ্ধিটা সাফিয়ার। আজমল হায়দারে সূত্রে অনেকের সাথেই এখন ভাল সম্পর্ক সাফিয়ার। সুফিয়া থেকে সাফিয়া হয়েছেন, পরিচিতদের ক্ষেত্রও বেড়েছে। টিভি চ্যানেলগুলোর মালিকদের প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় আজমল হায়দারের সহযোগিতা নিয়েছেন। কয়েকজন বড় সাংবাদিকও চেনেন সাফিয়া। বলা যায় চিনতে হয় তাদের। ফলে আজমল হায়দারকে কিছু একটা ধরিয়ে দিতে সমস্যা হয়নি সাফিয়ার। কিছুদিন ধরে বড্ড জ্বালাচ্ছিল আজমল হায়দার। এখন আর ফালতু প্যাচাল ভাল লাগে না তার। সাফিয়ার কাছে আজকাল আজমল হাদারের কথাবার্তাকে প্যাচাল বলেই মনে হয়।
আজমল হায়দার এখন টিভি চ্যানেলগুলোর অত্যন্ত পরিচিত মুখ। টক শোতে তাকে দেখা যাবেই। কোনো না কোনো চ্যানেলে তাকে প্রতিদিনই দেখা যায়। এমনিতেই কথা বলতে পছন্দ করেন তিনি। এক সময় সুন্দর করে কথাও বলতে পারতেন। এখন বয়স হয়ে গেছে। কথা বলার সময় সবসময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না তিনি। একটু উল্টাপাল্টা বলে ফেলেন। তাতে অবশ্য কোনো সমস্যা হয়না। এইসব নাকি আজকাল পাবলিক খায়। অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের কাছ থেকে এই কথাটা শিখেছেন তিনি। আরও দুটো জিনিষ শিখেছেন তিনি। যেমন, সব সময় সরকার বিরোধী কথাবার্তা বলতে হবে। এ ধরণের কথা-বার্তার খুব দাম। তবে কিছুটা রয়ে সয়ে বলতে হবে।
দ্বিতীয়টি নিজের উদ্ভাবিত। টক শো শেষে প্রযোজক ছেলেটা এক হাজার টাকার একটা খাম নিয়ে আসে। অর্থের তার অভাব নাই। আর এক হাজার টাকাকে টাকা বলেই গণ্য করেন না তিনি। আজমল হায়দার কাগজে সই করে টাকাটা নেন। তারপর এক ফাঁকে খামটা ঐ প্রযোজক ছেলের পকেটেই আলতো করে ঢুকিয়ে দেন। দুইদিনের মাথায় আবারো টক শো অতিথি হওয়ার ডাক পান।
কথা বলতে যে ভালবাসেন আজমল হায়দার।
😀 🙂 🙂
১ম... 🙂 🙂
🙂
২য় 🙁 🙁 🙁
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
বস পুরাটা দুইবার আসছে
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
সিরাম লিখা :boss: :boss: :boss:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
লেখাটা দুবার হয়ে গেছে ভাইয়া একটু এডিট করবেন প্লিজ?
আর ভাল লাগল রম্য পাইলাম না রাগ লাগল।
ঠিক করে দিছি। রম্য হয় নায় কিছু? তাইলে গল্প বলে পঠিত হোউক।
চরিত্রটা চিনি চিনি মনে হয়!! মাসুম তোমার এই কথারু এক সময় গানও লেখতো। সিনেমায়। বিখ্যাত এক গায়ক বোনের ভাই................ হাহ্ টক শোতে গিয়া তুমিও পাইক্কা গেছ!! :grr: :grr: :grr:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
বিখ্যাত এক গায়ক বোনের ভাই কে ঝাতি তা জানতে চায়...... 😕
আসাফুদ্দৌলা, আবার কেডা। গাছেরটা খায়, তলারটাও কুড়ায়!! নজরুল সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের ভাই। টক শোতে এখন অশ্লীল কথাবার্তায় ওস্তাদ। কয়দিন আগে নাকি আমিনী-চরমোনাইওয়ালাদের পক্ষেও অবস্থান নিছে!! তারে কি কেউ জিগাইবো, .......... তুমি তো সচিব আছিলা বহুত বছর কি ........ ছিড়ছিলা??
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু ভাই কাল্পনিক গল্প তো। এর মধ্যে আবার কারে খোঁজেন?
আমি আবার পাকলাম কেমনে? লাবলু ভাই।
লাইফ বিগিন্স @ ৫৭ 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
মিললো দেখি। 🙂
নাহ! পৃথিবী জুড়ে প্রচুর গিয়াঞ্জাম.........লোকজন খালি কথা বলতে চায়, কেউ শুনতে চায় না! 🙁
মাসুম ভাই......আপনার আরও গল্প পড়তে মঞ্চায়...... :guitar: :guitar:
কাল্পনিক গল্পরে সত্যি বইলা ধইরা নিলে বেশিদিন আর এইসব লেখা যাইবো না।
বাংলা টিভি চ্যানেল খুললেই এখন খালি টক শো। 🙂
টক শো সবচেয় সস্তা। নাটক বা অন্য কোনো অনুষ্ঠান হলে খরচ লাখ টাকার উপর। আর ১০ হাজার টাকা দিয়েই টক শো করা যায়। এ কারণেও টক শো বেশি দেখা যায়।
Vallagse 😀
tor ajmol haydar lokta keda jhati jhante chhay 🙁
পুরাই কল্পনা।
মাসুম ভাই,
"বিলক্ষণ" বানানে "ক্ষ" বাদ পড়েছে।
এখানে মনে হয় "বৈঠকের" দুইবার হয়ে গেছে।
সম্ভব হলে একটু এডিট করে দিবেন প্লিজ।
সবার মত আমিও আজমল সাহেবকে চিনতে চাই।
লেখা ভালো লেগেছে যথারীতি।
মাসুম ভাই,
দয়া করে আমার আগের কমেন্টের শেষের দু'টি লাইন রেখে বাকি লাইনগুলো এখন মুছে দিন।
আর এই কমেন্টটাও ডিলিট করে দিন।
স্যরি ভাইয়া কষ্ট দেবার জন্য।
থাকুক। আমরাইতো।
আমার পড়ার সময়েই চেনা চেনা মনে হচ্ছিলো, লাবলু ভাইয়ের কথায় নিশ্চিত হলাম। ঊনার আরেকটি পরিচয় ইনি রুবাবা আপার চাচা!
কারো সাথে একটু আধটু ছায়া থাকতে পারে। তবে গল্পটা পুরোটাই গল্প।
😮 তার মানে রবিন ভাইয়ের চাচা শ্বশুর!!!!
আরে কি আজব ব্যাপার 😀 সানা ভাই বলার আগেই আন্দাজ করে ফেলছি লোক্টারে B-)
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
আমারে পিটাইবো এই লোক।
আসাফুদ্দৌলা-কে চিনতাম না, আমি ছোটখাট মানুষ। মাঝে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পরে আমি যখন আর টিভি দেখছিলাম না, তখন শুনলাম এই লোক নাকি উল্টাপাল্টা কথা বলে। কী বলেছে সেটা শুনে আরো মেজাজ খারাপ হলো।
টক শো দেখি নাই, তবে মাসুম ভাই, আপনার রম্যের খোঁচা পড়ে হাসি পাইলো ঠিকই।
উল্টাপাল্টা কথা শুনলে মাঝে মাঝে চড় মারতে ইচ্ছা করে এই আসাফুদ্দৌলা-টাইপের মানুষগুলাকে। :chup:
এইটা আসলেই রম্য। খোঁচাটাই দিতে চাইছি। আমি তো আসলে গল্প লেখক না। গল্প লিখতে হলে ভাষার উপর যে দখল থাকতে হয় সেইটা নাই। তাই এই সব চেষ্টা আরকি।
ই কিথি বিলি তি ইমিদির লিজ্জি দিলিন...
লোকটা নিজে কিন্তু ভালো গান-টান গায়। কয়দিন আগে এক টক শো'তে গান গাইতে দেখলাম। 🙁 আর এখন তো নিজেই এক প্রাইভেট চ্যানেলের উচ্চ পদে আসীন, আরো বেশি টক শো'তে আসতে পারবে। 🙁
ব্যবসায়ী, আমলা সবাই একে একে মাসুম ভাইয়ের গল্পের নায়ক হয়ে যাচ্ছে দেখি! এর পর কে?
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
তোমরা যার কথা বলছো তিনি যে গুনী মানুষ তা নিয়ে সন্দেহ নাই।
দেখি এরপর কে আসে!
ডিরেক্টর'রা আর বাদ যায় কেন, এটা কি বলতে চাইছিলে তুমি? 🙂
মাসুম ভাইয়া, যাক আপনি গল্প লেখা শুরু করেছেন। 😀
জীবনঘনিষ্ট রম্য, মজা লেগেছে । দেশে থাকিনা দেখে অন্যরা কার কথা বলছে বুঝতে পারিনাই । তবে এতে গল্প বুঝতে কোন সমস্যা হয়নাই, এটাই বোধহয় গল্পকারের স্বার্থকতা ।
বাংলাদেশের টক শোর সবচেয়ে বড় দর্শক নাকি প্রবাসীরা, এই সব টক শো তাদের বিভিন্ন দাওয়াত আড্ডায় বড়ই কাজ দেয়, তারাও একেক জন আজমল হায়দার হয়ে উঠে।
১১০% সহমত।
কথার রাজা, প্রবাসে বসে সব হাতি ঘোড়া মারার ওস্তাদ। 😡
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
তাই নাকি ? আজবতো । আমার বাংলা চ্যানেল দেখা হয়না । নাটক ভালো শুনলে ডাউনলোড করে দেখি । আমি আসলে টিভি দেখি খুব কম । কিছু ভাল লাগলে চালাও ডাউনলোড ।