সাবজেক্ট হিসেবে রসায়নে খুব একটা ভালো না করলেও কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রায় সবার সাথেই আমার কেমন করে যেন টুকরো টুকরো অনেকগুলো স্মৃতি জমা হয়ে আছে। ক্লাস ইলেভেনের প্রথম দিকে একদিন ক্লাস করার জন্য যখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছি তখন বাতেন স্যার এসে গল্প করেই পুরো ক্লাস পার করে দিলেন। সাধারণত স্যার এটা করেন না। কেন যেন স্যারের এইদিনের ব্যাপারটা আমার পছন্দ হল না। কিন্তু সমস্যা এখানে না। সমস্যা হল তখনই যখন এই একদিনের আনকমন ঘটনাকে জেনারালাইজ করে ডাইনিং টেবিলে বসে বলে ফেললাম, “বাতেন স্যার ঘোড়ার ডিম পড়ান”। বলেই খেয়াল হল যে কথাটা আমার বলা উচিৎ হয়নি। বিশেষ করে স্যারের ছেলে যখন আমার টেবিলেই বসা – রবিনের মুখটা মুহূর্তে কালো হয়ে গেল।
তারপর টুকটুক করে দিন কেটে গিয়েছে। প্রি-টেস্টে রসায়নে কৃতিত্বের সাথে ফেল করে বসলাম। একদিন দুপুরে প্রেপের সময় ক্লাসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাতেন স্যারকে বললাম, “স্যার, কি করা যায়”? ঠান্ডা, স্থিতধী বাতেন স্যার বললেন, “এই পরীক্ষার জন্য কিছু করতে চাও নাকি সামনেরগুলোর জন্য”? বললাম, “এটা তো যা হবার হয়েছেই। সামনেরগুলোর কথা ভাবছি”। আমার মতোন কেস আরও যারা আছে তাদের নিয়ে স্যার পরদিন ডিপার্টমেন্টে রিপোর্ট করতে বললেন।
পরদিন স্যার পুরো ব্যাপারটা কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন তার একটা আউটলাইন ভিপি স্যারের কাছ থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আমাদের নিয়ে পড়লেন। রসায়ন প্রথম পত্র বইটা তিনি সমান তিন ভাগে ভাগ করলেন। তারপর প্রতিভাগের প্রত্যেকটা চ্যাপ্টার থেকে যেভাবে যতগুলো প্রশ্ন আসা সম্ভব ততগুলো প্রশ্ন পূর্ণমানসহ লিখে ফটোকপি করিয়ে আমাদের প্রত্যেকের হাতে দিয়ে দিলেন। এই এক ভাগেই প্রায় ১৩০/১৪০ মার্কের প্রশ্ন হয়ে গেল। আমাদের কাজ হলো সেগুলো ভালোমতোন পড়ে রেডি হয়ে এসে দুদিন পর পরীক্ষা দেয়া। স্যার আলাদা করে প্রশ্ন তৈরী করে রাখবেন। যথারীতি আমরা রেডি হয়ে গেলাম। ফেল পার্টিসহ টাইনাটুইনা পাশ কয়েকজনও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিল। ক্যামিস্ট্রি ল্যাবের ভিতরে আমাদের তেরোজনকে (প্রায়, সঠিক সংখ্যা মনে নেই) কাগজ কলমসহ বসিয়ে দিয়ে নতুন প্রশ্ন না দিয়ে স্যার যেই প্রশ্নগুলো আমাদেরকে দিয়েছিলেন প্রিপারেশন নেবার জন্য সেটার উপরই পরীক্ষা দিতে বললেন। কোন গার্ড থাকবে না – স্যার আমাদের রিয়েল অবস্থা যাচাই করার জন্য টাইম ধরে অনেস্টলি পরীক্ষা দিতে বললেন।
এভাবে কয়েক ধাপে আমরা সততা রক্ষা করে রসায়ন প্রথম পত্র, দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা দিলাম। আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম আমি আসলে এইচএসসি’র রসায়নের কিচ্ছুই জানতাম না। আরও লক্ষ্য করলাম যে আমার মধ্যে একটা অন্যরকম কনফিডেন্স গ্রো করেছে। বইয়ের কোথায় কোন সমীকরণ আছে, কোথায় কোন চিত্র আঁকা আছে, কোথায় হাত দিলে কোন প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে, কত মার্কের প্রশ্নের জবাব কত মিনিটের মধ্যে দিলে সময়ের অভাব হবে না ইত্যাদি সব ফিঙ্গার টিপসে চলে এল।
তারপর পরীক্ষা দিয়ে কলেজ থেকে বিদায় নেবার সময় চলে এলো। আমাদের ব্যবহারিকসহ সব পরীক্ষা শেষ হবার আগেই কলেজের টার্মএন্ড ব্রেক শুরু হয়ে গিয়েছিল। সবার কাছ থেকে আমরা কি বিদায় নেব, উল্টা ছুটিতে যাবার আগের দিন রাত্রে সারা কলেজ চলে এলো আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে। তখন রবিনকে অনেকদিন আগে ডাইনিং হলে বলা কথাটার জন্য আস্তে করে সরি বললাম। আরও বললাম, যদি এইচএসসি’তে ক্যামিস্ট্রিতে ভালো নম্বর পাই তবে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব বাতেন স্যারের। বাবার মতো চুপচাপ রবিন সেদিন আমার কথা চুপ করেই শুনেছিল। [সেদিন এইটুকু কথা বলতে না পারলে আজও আমি নিজের কাছে নিজেই অপরাধী হয়ে থাকতাম।]
দিন পরিক্রমায় একদিন আমাদের রেজাল্ট বের হয়। প্রি-টেস্টে দুই মার্কের জন্য ফেল করা এই আমি মাত্র দুই মার্কের জন্যই লেটার নম্বর মিস করেছি। নিঃসন্দেহে নিজের জন্য এটা একটা বড় প্রাপ্তি। ততদিনে আইএসএসবি’তে চান্স পেয়েছি। প্রভিশনাল সার্টিফিকেট তোলার জন্য কলেজে বাতেন স্যারের সাথে দেখা হলে শরীরের সাথে সমান্তরালে হাত সোজা করে সালাম দিতেই স্যারের সহাস্য মন্তব্য, “আর্মিতে যাবার আগেই আর্মি হয়ে গেলে নাকি”? হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে আমি বললাম, “স্যার আমি ক্যাডেট অবস্থাতেও এভাবেই সালাম দিতাম”।
বাতেন স্যারকে অশেষ শ্রদ্ধা।
বাতেন স্যারকে :salute:
বাতেন স্যারকে অশেষ শ্রদ্ধা. :salute:
আমাদের কেনো যে একজন বাতেন স্যার ছিল না! ছিল খালি ভূত আর মিজান স্যারের মত মানুষ। মিজান স্যার তো সোহরাব আলীরে তেল মারতে মারতেই শেষ হয়ে গেল। সোহরাবরে তেল মারতেই তো আমাদের প্র্যাক্টিক্যালে গনহারে ২০ ধরাইল। ফলাফল ৩ নম্ব রের জন্য BUET এ ভরতি পরীক্ষা দিতে পারিনি।
স্যারের জন্য :salute: :salute: :salute:
আর এই লেখাটার লাইগা সায়েদরে :salute:
এহসান ভাইয়ের কাহিনিটা দেইখা খারাপ লাগলো। আসলেই স্যাররা যেমন মানুষ গড়ার কারিগর ঠিক উল্টাপাশে অনেকেই বুঝে না বুঝে এরকম ক্ষতি করে বসেন ক্যাডেটদের।
বাতেন স্যার এক কথায় অসাধারণ। পরে একসময় স্যারকে নিয়ে লিখব। আমার অনেক শ্দ্ধার একজন মানুষ তিনি। :salute:
@এহসান ভাই
দিলেন তো মিজান স্যারের কথা মনে করাইয়া। তারে নিয়া "কোথায় পাবো তাদের" একটা পর্ব লেখা উচিত ছিলো। ভুইলা গেছি। তাই ছোট্ট একটা ঘটনা এইখানে শেয়ার করি।
আন্ত হাউজ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় শাহজালাল হাউজের আপনাদের পরের ব্যাচের অনুপ ভাই "রেল লাইন বহে সমান্তরাল" গানটা গাইয়া চ্যাম্পিয়ন হইয়া গেলো (অনুপ ভাই দারুন গান গাইতো)। মিজান স্যার তখন শাহজালাল হাউজের হাউজ মাস্টার।
পরের দিন হাউজ এসেম্বলিতে মিজান স্যার অনুপ ভাইয়ের প্রশংসা করতে গিয়া বললেন "আই মাস্ট থ্যাঙ্ক অনুপ ফর হিজ সং রেললাইন পরস্পর সমান ও সমান্তরাল"। :)) :)) :))
মিজান স্যাররে আমরা সালাম দিতাম না। স্যার পাশ দিয়া যাওয়ার সময় আমরা বলতাম "সিনেমা দেখুম স্যার"। উনি বলতেন "ওয়ালাইকুম আস সালাম"। :)) :))
সবাইকে ধন্যবাদ 🙂 ।
বাতেন স্যারের একটা অদ্ভুত গুণ ছিল। স্যারকে আমরা কেউ কখনো রাগতে দেখিনি। স্যার একবার চ্যালেঞ্জের মতোন করে বলেছিলেন যে কেউ উনাকে অশ্লীল কিছু বলা ব্যতিত রাগাতে পারবে না। ব্যাপারটা অবশ্য টেস্ট করে দেখা হয়নি। এরকম একজন শিক্ষকের সাথে সেটা টেস্ট করতে যাবেই বা কে?
@ কামরুল
মজা পাইছি 😀 ।
Life is Mad.
খুব মজা পাইসি...কিন্তু মাথায় ঠিক মত কমেন্ট আসতেসে না...খুব খিদা পাইসে 🙁
না ভুল হইসে, আসলে মজা পাইসি কামরুল ভাইয়ের কমেন্টে, আর আপনার লিখা পড়ে স্যারকে সালাম দিতে ইচ্ছা করসে। :salute:
বাতেন স্যার হলেন আমার দেখা one of the most gentlemen in my life.অদ্ভুত ভালো লাগতো স্যারের ক্লাশগুলো। খুবই ভালো পড়াতেন স্যার। স্যারের প্রতি রইল অশেষ শ্রদ্ধা।
সায়েদ,
যথারীতি সুন্দর লেখা।
ভালো লেগেছে।
স্যার :salute:
তুমি তো ভাগ্যবান, সরি কইতে পারছ, অনেকে তো বুজেইনা সরি কইতে হইব।
তোমার লেখা গুলা খুব সহজ সরল, তোমারেও :salute:
আমরা খুবই ভাগ্যবান যে বাতেন স্যারকে শুধু ফর্ম মাস্টার না, একজন অভিভাবক হিসাবেও পেয়েছিলাম.. :salute:
@ সামিয়া
থ্যাংকস আপু।
@ আহসান ভাই
বাতেন স্যারের পড়ানো সত্যিই খুব সুন্দর। আপনার মন্তব্য আমাকে উৎসাহ যোগাচ্ছে।
@ ফয়েজ ভাই
আপনাকে :salute: । সত্যিই আমি ভাগ্যবান।
@ আরিফ
তোমার লেখা নাই কেন ;;)?
Life is Mad.
ভাই, পোস্ট করতে পারছিনা যে....আমার লগইন হলে পোস্ট অপশনটা দেখা যাচ্ছেনা যে....তাই আর কি করবো বলেন...?
মানবিকে ছিলাম(বোঝাই যাচ্ছে খারাপ স্টুডেন্ট)তবু ইন্টারে সাধারণ বিজ্ঞান পড়তে হয়েছে। স্যার সাবান তৈরী করতে শিখিয়েছিলেন। জেলির মত পিচ্ছিল পদার্থ(আমরা সাপ্লাই দিয়েছিলাম পোলাপানরে এবং তারা কাপড় ধোয়া ছাড়া আর সব কিছুই তাই দিয়ে করত)বনাতাম। তাতেই স্যারের সাথে আমাদের কি রসায়ন!
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
:salute:তোমাকে এবং বাতেন স্যারকে।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মন রে তুই এত খারাপ কেন খা;লি কুচিন্তা মাথায় আনিস? 😛
আচ্ছা মল্লা স্যার কে নিয়া কিছু লেখা জায়না????আমি লিখতাম কিন্ত আমি খালি মাইর খাইসি তাই কিছহু মনে নাই 🙁
নাজমুল,
তুমি তো ভাইয়া একটা বুকা 😛 ।
বরিশাল ক্যাডেট কলেজের কোন স্যারকে নিয়ে লেখা হবে আর মোল্লা স্যার :salute: তার টপ লিস্টে থাকবেন না তা কি হয়?
মোল্লা স্যারকে নিয়ে পড়তে পার:
"আমার নাম নুরুজ্জামান মোল্লা……"
সেই মোল্লা স্যার
এখানে যা আছে তা মোল্লা স্যারের বেশ আগের গল্প। ইদানিংকালের গল্প লিখে ফালাও। মাইরের গপ্পোই লেখ....আমরা একটু হাসি 😀 😀 ।
Life is Mad.
সানাউল্লাহ ভাই,
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Life is Mad.
aj ki hoilo k jane..
bangla type korte parchina...
ei lekhata aj-i chokhe porlo. Baten Sir amar dekha shobchyeye gentle manushder moddhey ekjon.
r Mijan Sir mane ki, Chemistry-r Mijan Sir? unar cheleo kintu ExCadet, FCC-r. Sir o kintu durdanto poraten amader shomoye, khub shohoj kore bojhaten.
এই বাতেন স্যার কি আব্দুল বাতেন স্যার? 😕
খেয়া (২০০৬-২০১১)
:clap:
:clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমরাও মনে হয় স্যার কে পেয়েছি......তবে ভিপি হিসেবে...... 😐 😐