আমেরিকা থেকে এসেছি কয়েক দিন আগে। এখনো এক সপ্তাহ হয়নি। বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাত করে বেড়াচ্ছি। এরকম একদিন দুপুরের শেষে এক বন্ধুর বাসা থেকে নিজের বাসায় ফিরছি। আমাদের বাসার সামনে আসতেই দেখি নীচে আব্বা দাঁড়িয়ে আছে। আব্বা আমাকে দেখে হেসে বলল যে, তাড়াতাড়ি উপরে যা, তোর এক আমেরিকা ফেরৎ বন্ধুর বউ এসেছে। একটু অবাক হলাম। কে আসল আবার? আব্বা সহ উপরে আসলাম। ঘরে ঢুকে দেখি বেশ লম্বা সুশ্রী একটি মেয়ে সাবলীল ভাবে কথা বলে যাচ্ছে আম্মার সাথে। আবার অবাক হলাম। মেয়েটাকে আমি চিনতে পারলাম না। আমার মা আমাকে বললো কলোনিতে থাকত তোদের সাথের বাবুর বউ। আমি বুঝতে পারলাম না কি হচ্ছে? বাবু কবে আবার আমেরিকাতে গেল? বাবুর যে সাইজ এই মেয়ে তার চেয়ে এক হাত লম্বা। সন্দেহ বাড়তে লাগল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমেরিকার কই থাক? বলল আমার ভাইয়ের এপার্টমেন্ট এর থেকে দু’ই এপার্টমেন্ট দূরে থাকে। আরও প্রশ্ন করতে গেলে আমাকে বলল, “তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে আস, বাইরে থেকে এসেছ”। এবার আমার মনে পুরাপুরি সন্দেহ ঢুকে গেল। তাড়াতাড়ি রুমে এসে আমার ডলার আর ল্যাপটপ সহ সব জিনিস সেইফ জায়গায় রাখার চেষ্টা করলাম। একটু পর আম্মা আমার রুমে নক করলো। আমি দরজা খুলতেই আম্মা এসে আমাকে বলল, “তোর কাছে দশ হাজার টাকা আছে, আমাকে এখন দে আমি তোকে পরে দিয়ে দিব”। আমি তো বুঝে গেলাম কি হতে যাচ্ছে। আমি দরজা আটকিয়ে আম্মা কে বললাম ওকে এখনি বের হয়ে যেতে বল। তুমি বুঝতে পারতেছ না ও কেন আসছে? তারপরও আম্মা আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইলনা। আমাকে বলতে লাগলো আস্তে কথা বল। আমার তো আমার মায়ের উপর মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে গেল। আমি সহ যখন আম্মা আমার রুম থেকে বের হলাম এরপর দেখি ঐ মেয়েটা আম্মার হাতে কিছু টাকা দিচ্ছে যা কিছুক্ষণ আগে আমার মা সরল মনে তার হাতে দিয়ে দিয়েছে। আমি রুমে এসে আবার বের হতেই দেখি মেয়েটা নেই, বারান্দায় এসে দেখি মেয়েটা রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে। আম্মার রুম আটকানো দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। আম্মাকে আবার কিছু করে গেল নাকি? আল্লাহর নাম নিয়ে দরজা খুলে দেখি না আম্মা ভালই আছে। আমি বললাম মেয়েটাতো ভেগেছে। আম্মা বলল আস্তে কথা বল, এখনো সে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আমি আম্মাকে বললাম তুমি এত বোকা কেন? কেন বুঝতে পারনাই যে, মেয়েটা যে একটা ভদ্র ছিনতাইকারী। আমি আমেরিকা থেকেই অনেক বার বলেছিলাম যে এরকম করে আরো অনেকের বাসায় এসে তারা এর আগে এরকম বাইরে থাকার গল্প বলে টাকা নিয়ে গেছে।
একটু পর আব্বা উপরে আসলে পুরো ঘটানাটা কি হয়েছে বুঝতে পারলাম। মেয়েটা আমি বাসায় আসার আনুমানিক বিশ মিনিট আগে আমাদের বাড়ির নীচে এসে দাড়োয়ান কে বলল, এখানে যে বাসার ছেলেটা কয়েকদিন আগে আমেরিকা থেকে এসেছে আর তার আরেক ভাই আমেরিকাতে থাকে তাদের বাসায় নিয়ে চল। দাড়ায়োন তো ভাবল নিশ্চয় আমাদের কোন পরিচিত হবে। সে নিয়ে আসলো কোন সন্দেহ ছাড়াই। বাসায় ঢুকেই আম্মাকে বলল যে সে আমার ফ্রেন্ড বাবুর (মোস্ট কমন নেম, যে কোন পাড়াতেই এই নামে কাউকে আপনি পাবেন) বউ, আমেরিকা থেকে কয়েক দিন আগে এসেছে। আমার বন্ধু আমাদের জন্য ইফাতার কিনে আনতেছে। আব্বাকে বলল, আপনাদের জামাই কে একটু নীচে গিয়ে নিয়ে আসেন ও মনে হয় রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে, একটু সামনে গিয়ে দেখে আসেন। আব্বাও বোকার মত নীচে গিয়ে খুঁজতে লাগল। আর যে রিকশা নিয়ে এসেছে তা ছেড়ে দিতে বললে ঐ মেয়েটা মানা করল। আব্বা নীচে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করল, “কোথা থেকে এসেছে”? রিকশাওয়ালা বলল, “অনেক দূর থেকে” কিন্তু কোন জায়গা থেকে এসেছে তা বলেনি। আসলে রিকশাওয়ালাটা ওদের দলের লোক ছিল। আব্বা-ত এই ফাঁকে নীচে খুঁজতে ছিল আর মেয়েটা আমাদের বাসায় আমার মাকে বলল তার কাছে ডলার আছে কিন্তু সে ভাঙ্গাতে পারেনি, এখন তার পনের হাজার টাকা লাগবে। সে ডলার রেখে যাবে। আম্মা সব বিশ্বাস করে মেয়েটাকে পনের হাজার টাকা দিয়ে দিচ্ছিলো, যদিও আম্মা কোন ডলার নেয়নি। ভাগ্যিস আমি ঐ সময় এসে পড়েছিলাম। মেয়েটা বুঝে গিয়েছিল যে আমি পুরো ঘটানাটা ধরে ফেলেছি তাই আর দেরী না করে আম্মা যে পাঁচ হাজার টাকা তার হাতে দিয়েছিল তা দিয়ে কেটে পড়েছে।
এরকম ঘটনা কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েক বার ঘটেছে দেশের বিভিন্ন জায়াগা তে। কিভাবে যেন যেসব বাসায় ছেলে-মেয়েরা বাইরে থাকে কিংবা পড়াশুনা করে তাদের বাসার ঠিকানা নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে একই গল্প বলে। অনেকেই এদের প্রতারণার শিকার হয়েছে এবং টাকা-পয়সা হারিয়েছে। আমেরিকাতে থাকতেই বেশ কয়েকবার এরকম শুনেছি। আম্মাকেও বেশ কয়েকবার সাবধান করে বলেছি যাতে এরকম কেউ এসে আমাদের গল্প করলেই যেন টাকা না দিয়ে দেন। কিন্তু আমার মা ঠিকই তাদের ফাঁদে পড়ে গিয়েছিল। আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে এ যাত্রায়…
পাঠক একই ঘটনা যে কারো বেলাতেই ঘটতে পারে বিশেষ করে যাদের কেউ না কেউ দেশের বাইরে থাকে। তারা হয়ত কিছু ইনফরমেশন কালেক্ট করে বিভিন্ন সোর্স থেকে। আর বাকিটুকু রিস্ক নিয়ে আসে। এই ইনফরমেশনের সোর্স হতে পারেন আপনি নিজেই (ফেসবুক এ্যাকাউন্ট, টুইটার কিংবা যে কোন সামাজিক যোগাযোগের সাইট যেখান থেকে আপনার সম্বন্ধে কিছু ইনফরমেশন নিতে পারছে) কিংবা আপনার আপনজন বা আপনার আশেপাশের লোকজন। তারা না বুঝেই অন্যদের সাথে এই ইনফরমেশন শেয়ার করতে পারে যারা হয়ত এই ধরনের কাজের সাথে জড়িত। আশু বিপদের কথা ভেবেই আশা করি কেউ এ ধরনের ব্যক্তিগত ইনফরমেশন কারও সাথে বা সামাজিক যোগাযোগের সাইটে শেয়ার করার আগে আরেক বার চিন্তা করে নিবেন।
এই যাত্রায় আমরা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও বিপদটা কিন্তু সমাজ থেকে একেবারে যায়নি!
প্রথম...
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১
["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]
ভাইয়া,
এইটাতো দেখি খুউব ই বিপদজনক ঘটনা। 😮 কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে যে টা কে "স্যোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং" বলে...।
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১
["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]
আসলেই খুব বিপদজনক ব্যাপার ছিল... কিভাবে বেঁচে গেলাম এখনো ভাবাচ্ছে...
🙁 ভয়ংকর ব্যাপার 😕
Digital বাংলাদেশ এ Digital জালিআতি দেখি বাবা! আমাদের বাবা-মা রা শিক্ষিত হয়ে ও অনেক সরল।আর আমরা শিক্ষিত হয়ে হয়েছি বাটপার!! আল্লাহ আমাদের রক্ষা কর, আমিন।
ভাইজান কি বুঝাইতে চাইলেন?
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ঠিক বুঝলাম না ভাই আসলে কি বলতে চেয়েছেন। যাই হোক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ...
কি কইলেন কিছুই বুঝলাম না! 🙁
ছোট হাতি
সাইফুল বাইচা গেছ।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব ভাই,
আসলেই বেঁচে গেছি। কিন্তু একটা জিনিস এখনো মাথা থেকে যাচ্ছে না। সেটা হল, আমি আসলাম আগস্ট এর ২৫ তারিখে (বৃহস্পতিবার), আর সেই মেয়েটা এ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আসলো আগস্ট এর ২৮ তারিখে (রবিবার)। এত অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে তারা আমার বাসার ঠিকানা, আমার কিছু ডিটেইলস জানলো; সেটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে। আমার ফেসবুকে আমার বাসার ঠিকানা দেয়া ছিল না। তারা এত কিছু জেনে আসলো আবার আমি যে হাউজিং এ থাকি সেখানে আনসারের লোকজন সারাক্ষণ গার্ড দে, আবার আমাদের নিচের দারোয়ানও আছে। আমার বক্তব্য হচ্ছে, পুরো এ্যাসাইনমেন্টের প্ল্যান যখন করেছিল তারা ত এইসব ব্যাপারও কন্সিডারও করেছিল নিশ্চয়। একটা অর্গানাইজেশনের (হোক সে আর্মি অথবা সিভিল) একটা ছোটখাট এ্যাসাইনমেন্ট করতেও ত কমপক্ষে ৭ দিন সময় লাগা উচিৎ। ভেবে ভয় এবং অবাক হচ্ছি যে, এরা কত ভাল ভাবে অর্গানাইজড যে মাত্র দুদিনের মধ্যে মিশনে নেমে যেতে পারে... (সম্পাদিত)
এ দেখি বিরাট ধান্দাবাজ।
ভাগ্য ভাল বাইচ্চা গেছেন এই যাত্রায়।
কোন স্কেল আছে কিনা ধান্ধাবাজির আমার জানা নেই। আর যদি থেকেও থাকে... স্কেল এর রেঞ্জ এর বাইরে চলে যাবে রে ভাই; এই মেয়ে যা করেছে...
আমেরিকান ভাবী তো মনে হয় দেখতে ভালুই ছিলো!!!
আসলেই আমেরিকান ভাবী দেখতে সেরকম ছিল, যে কোন মডেল কে হার মানাবে... O:-)
:boss: amar jiboneo gotse.amare amar elakai dhoka dia mobile nia gese.sese amar jorimana gunte hoise.
ধন্যবাদ ভাই আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। আসলে কত ভাবে যে আমাদের সমাজে এ ধরনের সঙ্ঘবদ্ধ গ্রুপ বিভিন্ন গল্প ফেঁদে,ফন্দি- ফিকির করে কত শত মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে এর সংখ্যা শুধু সৃষ্টিকর্তা জানে... (সম্পাদিত)
ভয়ঙ্কর!
আপনি লেখাটা দিয়ে খুব ভালো কাজ করেছেন ভাইয়া...
🙂
ডিজিটাল যুগের নতুন জালিয়াতি।নাহ,আমার কাজকর্মের পরিমান বাইড়া গেলো 🙁 🙁 😛
কাজকর্ম যাই করনা কেন, কার কার সাথে শেয়ার করবা একটু ভাইবা... 😕 । না হলে নতুন আরেক গল্প হয়ত শুনব আমরা...
ami amar kichu indirect experience (from some experienced people ) boli..its a nice writing..it happens and people do such things....not only this..if u wanna visit bd from foreign countries specially america (janina america ttheke asche shunlei churgular matha khrp hoye jae kn?), please don't share it in n open place....try to keep it within family and may b trusted friends...i know about such severe accidents....
জি ভাই আপনি ঠিকই বলেছেন। ইনফরমেশন গুলো কোন না কোন ভাবে আমার সাইড থেকেই ওরা পেয়েছে, সেটা যত ঘুরিয়ে-পেঁচিয়েই হোক না কেন... ~x(
vai common porse..... amar nanur basha theke emon koira 10,000 taka niya gese
😕 কি আর করা ভাই? আরও কয়েক জনের সাথেও এরকম করা হয়েছে...
apni apnader batch er Nilotpal Talukdar er kono khabor janen? dite parle khub khusi hobo.. 1992 r por theke r kono khabor janina ami..
নীলোৎপল ভাই আমাদের এক বছরের সিনিয়র। আপনি ফেসবুকে (Nilotpal Talukder) লিখে search দিলে পেয়ে যাবেন। ভাই এখন আমেরিকা তে আছে... PhD করছে...
বিদেশি কিছুই খ্রাপ, এই চিন্তাটা ঠিক না। তবে আমাদের দেশের টাউটরা বিদেশি টাউটদের কাছে কচি শিশু মাত্র!
এই কাজ গুলো যখন হয় নিজেদের লোকের হাত থাকে। :((
১৯৭৫-৭৭ এর ভেতরে ঘটা একটা ঘটনা । গ্রামের বাড়ী থেকে ফিরবার জন্য বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি পুরো পরিবার । আব্বা, আম্মা, কোলে সবচেয়ে ছোটো ভাই । আমি আর আমার অনুজ আব্বার পাশে দাঁড়ানো । কি করে কি করে যেনো একটা মেয়েকে নিয়ে জটলা । মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । কলেজে ভর্তি হবার মতোন বয়স । সবাই মিলে আমাদের দায়িত্বে সঁপে দিলো । টাকা পয়সা আর পরিবারের সহযাত্রীদের হারিয়ে ফেলেছে । কোনো ভাবে যদি পৌছিয়ে দেয়া যায় ।
শহরের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে । মফস্বল শহরে এমন সময়ে কি করে অজানা মানুষের বাড়ী খুঁজে বের করা যাবে ! আমাদের কোনো বোন নেই । আবার সে রকম বাড়তি ভালো থাকার ব্যবস্থাও নেই । একটা ঘর ছিলো তাতে বিছানা থাকলেও তা ছিলো যাবতীয় বাতিল জিনিসের স্তুপে ঘেরা । কিছুক্ষণ বাদেই বুদ্ধি হলো বাড়ীর মালিক নানু যেহেতু থাকেন না, তার খালি তিন রুমের ঘরটা খুলে ওখানে থাকতে দেয়া যায় । একটা রুম খুলে নিলেই হয় । বাকী রুম দুটো তালা মারা আছে বিশাল সাইজের । যে রুমটায় থাকার ব্যবস্থা হলো তা আসলে বৈঠক খানা (কালের আবর্তে ড্রইং রুম থেকে লিভিং রুম) হলেও ওখানে একখানা সুন্দর সেমি ডাবল খাট পাতানো ছিলো ।
যাহোক সকালে উঠেই আমাদের প্রথম আবিষ্কার মেয়েটি উধাও । যাকে গতকাল মনে হচ্ছিলো একা একা এক কদমও যেতে পারবে না । রাতে খোয়া-দাওয়ার পর আলাদা এ ঘরে শোবার ব্যবস্থা করে সবাই চিন্তিত ছিলো ভয় টয় পায় কিনা ! মায়ের সন্দেহে ভালো করে দেখতে গিয়ে দেখা গেলো অন্য ঘরে ঢোকার জন্য তালা না খুলতে না পেরে আঁচড় কেটেই চলে গেছে অতিথি । যাবার আগে আমাদের মূল ঘরের জানালা দিয়ে বাঁশ গলিয়ে তার পুটুলীর মতোন ব্যাগখানা ঠিক ঠিকই বের করে নিয়ে গেছে । সেই সাথে দামী ক'খানা কাঁচের জিনিস যেটুকু তার নাগালের ভেতর পেয়েছে । মনে হলো বড় রকম একটা বিপদের হাত থেকে বাঁচা গেলো ।
পরে যে শোনে সেই বলে ... এমন বোকামী করতে গেলেন কেনো ! এগুলো তো ছদ্মবেশী ডাকাত । কিভাবে বেঁচে গেলেন কে জানে !
৮/৯ মাস আগে একদিন রাতে হাঁটতে বেরোলাম। কিছুক্ষণ স্লো ওয়ার্ম আপের পর যখন দ্রুতবেগে হাঁটা শুরু করে দিয়েছি, সেলফোনটা বেজে উঠলো। হ্যালো হ্যালো বলতেই ওপার থেকে বোবা কিসিমের এক লোকের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে মনে করলাম কোন রং নাম্বারের কল। কেটে দিলাম। আবারো আসলো, আবারো কেটে দিলাম। হাঁটা শেষ করে ঘরে ফেরার পর এবারে অন্য একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো। ধরলাম। কলার সালাম দিয়ে জানালো সে ফরিদপুরের টুঙ্গীপাড়ায় বসবাসকারী একজন ফ্লেক্সিলোড দোকানের মালিক। তার বাচনভঙ্গী অত্যন্ত মার্জিত ও বিনয়ী। তার ওখানে একজন বাকপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি এসে তাকে আমার নাম্বারটা দিয়ে দু'হাজার টাকা জরুরী ফ্লেক্সী করতে বলেছে কারণ ঐ টাকাটা দিয়ে পরদিন তার মাকে ডাক্তার দেখানো হবে। কিন্তু পরে লোকটা বুঝতে পেরেছে যে সে ভুল নম্বরে ফ্লেক্সী করেছে এবং তাই সে তার কাছে অনুনয় বিনয় করে অনুরোধ করছে আমাকে বলতে যেন আমি ঐ টাকাটা তাকে বিকাশ করে ফেরৎ পাঠাই। সে নিজেই আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি পরপর দুইবার তার কলটা কেটে দেয়াতে সে ঐ ফ্লেক্সী মালিককে ধরেছে আমার সাথে কথা বলার জন্য। সে আরো আমাকে অনুরোধ করলো আমি যেন আমার মেসেজবক্স চেক করে দেখি যে টাকাটা আসলেই আমার একাউন্টে এসেছে কিনা।
ভেবে দেখলাম, তাই তো! আমিতো একটা অচেনা বোবা লোকের কল কেটে দিয়েছিলাম। মেসেজ বক্স চেক করে দেখলাম, বরাবরের মতই ফ্লেক্সী করার পর যে ধরণের মেসেজ পাই, সে ধরণের একটা মেসেজ এসে জানাচ্ছে যে আমার একাউন্টে দু'হাজার টাকা জমা হয়েছে। তাই আর সেটা ডাবল চেক করার প্রয়োজন মনে করলাম না। গরীব বোবা একটা লোক তার মায়ের চিকিৎসার জন্য তার কষ্টার্জিত টাকা ভুল করে আমার ঠিকানায় পাঠিয়েছে। এখন সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে টাকাটা ফেরৎ চাচ্ছে, আমি কি করে এই দূর্যোগের সময়ে তার টাকাটা ধরে রাখতে পারি? তাই তাড়াতাড়ি করে দারোয়ানকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিকটের একটা দোকানে পাঠালাম বিকাশ করার জন্যে। টাকাটা পাঠিয়ে টুঙ্গীপাড়ার সেই ফ্লেক্সীওয়ালাকে ফোন করে জানালাম। সে বিগলিত হয়ে বেশ কয়েকবার ধন্যবাদ জানালো।
আমার সেলফোনের যে নাম্বার, ঠিক তার পরের নাম্বারটাই আমার স্ত্রীর। পরের দিন আমার স্ত্রীর নাম্বারেও ঠিক একই ঘটনার একই ক্রমানুসারে পুনরাবৃত্তি। বুঝতে বাকী রইলোনা যে আগের রাতে ঠগের পাল্লায় পড়েছিলাম। তারাতাড়ি করে একাউন্ট ব্যালেন্স চেক করে দেখি, সেখানে কোন টাকা যোগ হয় নাই। অর্থাৎ আগের রাতের মেসেজটা ভুয়া ছিলো। কি করে গ্রামীণফোনের পরিচয়ে একটা ভুয়া মেসেজ আমার সেলফোনে এলো সেটা আজো এক অজানা বিস্ময়। সেই ফ্লেক্সীওয়ালা এর পরে আর কখনো আমাদের ফোন রিসিভ করে নাই।
ভাল
ভাবির সাথে একটা সেলফি তোলা উচিত ছিলো।
ভাল লাগল পোস্টটি পড়ে ।