অনেক দিন পরে এসে নামলাম ঢাকা এয়ারপোর্টে। প্রথমেই ভাল লাগলো যখন দেখলাম বিমান বন্দরের নাম এখন শুধু “ঢাকা”। জিয়া, জালাল, হাসিনা, পুতুল না হয়ে শুধু ‘ঢাকা’ অনেক পছন্দের আমার। বাংলাদেশের মানুষ আসলে সব কিছু সোজাসুজিই পছন্দ করে। পাসপোর্ট কেউ দেখতে চাইলো না দেখে একটু অবাক হলাম। এক সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম – পাসপোর্টে সিল মারাতে হবে না?
– কত দিন পরে এখানে আসছেন আপনি?
– তা অনেক দিন হবে।
– হু, আজকাল আর পাসপোর্টে সীল মারতে হয় না।
– তবে কি ভাবে রেকর্ড হবে আমার এই আগমনের।
– আপনি যখন বিমান থেকে নেমে গ্যাংওয়ের সিড়ি ধরে আসছিলেন তখনই আপনার ফটো তোলা হয়ে গেছে এবং সেই ফটো থেকে আপনার বিস্তারিত তথ্য কম্পুউটার খুজে বের করেছে। আপনার আর কিছুই করতে হবে না।
আর প্রশ্ন করে নিজের অজ্ঞতা জানাতে চাইলাম না। অন্য প্যাসেঞ্জারদের সাথে বের হয়ে এলাম টার্মিনাল থেকে। সব কিছুই খুব সাজানো-গোছানো এবং শৃংখলাবদ্ধ ভাবে চলছে। আগেকার পরিচিত ঢাকা এয়ারপোর্টের সাথে যেন কোনই মিল নেই। ট্যাক্সি-স্টান্ডে এসে দাঁড়ালাম। আমার ভাগ্যে যে ট্যাক্সিটা জুটল তার ড্রাইভার একটা মেয়ে। বুঝলাম আমার অবর্তমানে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে।
মাটির অনেক উপরে স্থাপিত কয়েকটি ফ্লাই-ওভার রাস্তা পার হয়ে আধা ঘন্টার মধ্যে এনে আমাকে নামিয়ে দিল আমার হোটেলে। হোটেলে চেক-ইন করে আমার ঘরে এসে জেট ল্যাগ এবং বয়েসের ক্লান্তি দূর করার জন্যে বিছানার আশ্রয় নিলাম। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম জীবনের বিভিন্ন অবস্থানে ঢাকার সাথে আমার বিভিন্ন সম্পর্কের।
প্রথম যখন ঢাকাতে এসেছিলাম তখন আমার বয়স মাত্র ১২ বছর। আব্বার সাথে এসেছিলাম। উঠেছিলাম তেজগাঁতে – আমার বড় বোনের বাসায়। জায়গাটার নাম ছিল মনিপুরী পাড়া। এর পাশে ছিল লাল রং-এর দো’তলা বাড়ী – সায়েন্স ল্যাবরেটরী। তার কাছেই এক তলা ছোট একটা বাড়ীতে থাকতেন বড় আপা। তিনি আব্বাকে জানালেন তাদের বাড়ীর পাশে আধা-বিঘা জমি বিক্রী হবে – দাম চাচ্ছে বিশ হাজার টাকা।
আব্বা জানালেন যদি ঢাকাতেই জমি কেনেন তবে শহর থেকে এত দূরে কিনে কি লাভ। তেজগাঁ তখন শহর থেকে দূরে বলে গন্য হত। ঢাকা শহরে থাকতেন আমার সেজ আপা, যখন তার শশুর বাড়ীতে আসতেন। মিলিটারীতে কাজ করতেন দুলাভাই। বাড়ীতে তারা উর্দ্দূ মেশানো ঢাকাইয়া ভাষাতে কথা বলতেন। এটা নাকি নবাব পরিবারের ভাষা। তখনকার দিনের দস্তুর ছিল এই রকম ভাষাতে কথা বলা এবং নিজেকে খাটি পাকিস্তানী বলে গর্ব বোধ করা। আমার কানে অবশ্য এই নবাব পরিবারের ভাষা ও ঢাকাইয়া কুট্টিদের ভাষা এক রকম মনে হত।
তখন যদি ঐ আধা-বিঘা জমি কিনতেন আব্বা, তা’হলে কত টাকার মালিক হতে পারতাম আজকে?
এর পর ঢাকার সাথে ঘনিষ্ট পরিচয় হল যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হলাম। খুবই সুন্দর এবং উত্তেজনাপূর্ণ ছিল সেই চারটি বছর। ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হবার কারনে অনেক কিছু নতুন ভাবে দেখার সূযোগ হল। আইয়ুব খানকে গদী ছাড়তে বাধ্য করলাম আমরা, মুজিবকে জেল থেকে মুক্ত করাতে পারলাম। ভুট্টো নিজেকে বেশী চালাক মনে করতো – ফলে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ হত্যার পর দেশটাকে ভাগ করালো, নিজে ক্ষমতা দখল করল এবং শেষ পর্যন্ত তার দেখানো পথ ধরে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে ভুট্টোকে ফাসিতে ঝুলালো।
এদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবের কোন সক্রিয় অবদান না থাকলেও সে যখন পাকিস্তানের বন্ধীদশা থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফিরলো তখন সারা দেশের মানুষ তাকে লুফে নিল। কিন্তু এ অবস্থা বেশী দিন থাকলো না। দুর্নীতি, অরাজকতা, স্বজনপ্রীতি, দুর্ভিক্ষ, মৃত্যু, এক-নায়কত্ব, ইত্যাদির কারনে সামরিক বাহিনীর এক অংশ বিদ্রোহ করে খুন করল মুজিবকে। তারপর একে একে অনেকেই দেশ পরিচালনার ভার নিলো। বেসরকারী খাতের উদ্দোগে অর্থনৈতিক উন্নতির সূচনা হলেও দুর্নীতি গেড়ে বসলো সমাজের প্রতিটি স্তরে। এই দুর্নীতির খেসারত দিতে হল সহস্রাধীক পোশাকশিল্প শ্রমিককে যখন তারা অননুমোদিত কারখানায় কাজ করতে যেয়ে দালান চাপা পড়ে মারা গেল। লোক দেখানো কিছু চেষ্টা দেখালেও সত্যিকার দোষীদের কোন সাজা হল না।
ঘুম থেকে যখন উঠলাম তখন দেখলাম পড়ন্ত বিকেল। টেলিফোন উঠিয়ে অপারেটরকে জিজ্ঞাসা করলাম শুধু নাম বললে নাম্বার বের করতে পারবে কিনা।
– তিনি কি নাম করা কেউ?
– ঠিক নাম করা বলা যায় না, তবে আর্মির অবসরপ্রাপ্ত অফিসার।
– তা হলে বের করতে পারবো। নামটা বলেন স্যার।
– জেনারেল সেলিম।
কয়েক মিনিট পরেই টেলিফোন বেজে উঠলো। সেলিমের কন্ঠ টেলিফোনের অপর দিকে, জানতে চাইলো কে বলছি।
– দেখতো চিনতে পারিস কিনা?
– কি মনে করিস, ভুলে গেছিস নাকি যে আমি ডিজিএফআই-তে কাজ করতাম।
– সত্যি আমি ভাবিনি যে এতদিন পরে শুধু গলা শুনে চিনতে পারবি।
– চেহারা দেখলে হয়তো চিনতে পারতাম না। তবে গলার স্বরের পরিবর্তন খুব একটা হয়না – তা’তো জানিস। কবে আসলি ঢাকাতে?
– এইতো কয়েক ঘন্টা আগে। তোকেই প্রথম ফোন করলাম।
– ঠিক আছে, আমি আধা ঘণ্টার মধ্যে আসছি তোকে তুলে নেবার জন্যে। এর মধ্যে তৈরী হয়ে নে।
সেলিম আমার ছোটবেলার বন্ধু। এক সাথে স্কুলে পড়েছি, বড় হয়ে এমন কিছু কাজ বাদ যায়নি যা আমরা করিনি। দু’জনে একই মেয়ের প্রেমে পড়েছি – যদিও শেষ পর্যন্ত কেউ তাকে বিয়ে করিনি। মধ্যে অবশ্য বহুদিন দু’জনের মধ্যে কোন যোগাযোগ নেই। তবে দেখা হবার পর মুহূর্ত থেকে মনে হল যেন আমাদের গত কালই দেখা হয়েছে।
ঢাকা শহরের মধ্যে ঘন্টা খানেক চক্কর দিয়ে নিয়ে গেল উত্তরা ক্লাবে। ঢাকা শহরে পরিচিত কিছুই চোখে পড়ল না। পড়ার কথাও না, কারন মহা-ভূকম্পনের পর ঢাকার ৮০ ভাগ দালান ভেঙ্গে গিয়েছিল, মারা গিয়েছিল প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। পৃথিবীর ইতিহাসে এত বড় ক্ষতি এর আগে কখনো হয়নি। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঢাকা আজ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সুন্দর নগরী।
দু’জনে বসে বসে শুরু করলাম পুরানো দিনের কথা। ভুলে যাওয়া দিনগুলি আবার যেন সামনে এসে হাজির হতে আরম্ভ করল। কিছুক্ষণ নিজেদের কথা বার্তা বলার পর জিজ্ঞাসা করলামঃ
– আচ্ছা যে দেশ এক সময় পৃথিবীর বুকে দুর্নীতির এক নম্বর স্থানে ছিল সেখান থেকে দুর্নীতি দূর হল কি করে?
– ভাল প্রশ্ন। খাবার আগে শুনতে চাস, না এখনি?
– এখনি শুনি।
– মহা-ভূকম্পনের পর বোঝা গেল কতটা অসহায় এ দেশের মানুষ। যারা বেঁচে ছিল তারা আর এবার মাপ করলো না সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চপদের মানুষদের। যাদেরকে হাতের নাগালে পেল তাদেরকে এক এক করে পিটিয়ে হত্যা করা শুরু করলো। এ ভাবে কিছু দিন চরম অরাজকতা চলার পর নতুন প্রজন্মের কিছু ছেলে-মেয়ে এসে দাঁড়াল। তারা ঘোষনা দিল এখন থেকে দেশ ‘মুক্ত ধারা’ অনুসরন করবে। গোপনীয় বলে কিছু থাকবে না সরকারী কাজে। লিখিত ফাইলের ব্যবহার বন্ধ করা হল। তার বদলে চালু হল আন্তর্জালে সরকারী সব কাজ কর্ম। এর ফলে যে কোন সাধারন মানুষ ইচ্ছা করলে তার কম্পুউটার চালু করে দেখতে পারতো কি ভাবে সরকারী সীদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
– তাতে কি কাজ ঠিক মত হত?
– পরে দেখা গেল আরও ভাল ভাবে কাজ হচ্ছে।
– সেটা কিভাবে?
– আসলে ব্যাপারটা খুবই সোজা – আমরা যে কেন আগে এভাবে চিন্তা করিনি এখন ভাবতে অবাক লাগে।
– একটু খোলসা করে বল।
– একটা উদাহরন দিই। সরকারী কোন ক্রয়ে নিয়ম হচ্ছে টেন্ডার ডাকতে হবে। টেন্ডার বা দরপত্র দাতারা নির্দিষ্ট সময়ে টেন্ডার জমা দিয়ে যান তার পর সেটা সাধারনত সবার সামনে খোলা হয় এবং কে কত টাকার দরপত্র দিয়েছে সেটা সবাইকে জানানো হয়। এর পরের ধাপগুলি কিন্তু সাধারনের চোখের বাইরে। টেকনিকাল কমিটি দরপত্রের স্পেসিফিকেশনের সাথে সবার স্পেসিফিকেশন মিলিয়ে মার্কিং করেন। কারো স্পেসিফিকেশন যদি মোটামুটি হুবহু না মেলে, তবে সেই দরপত্র বাদ দেওয়া হয় এবং বাকিদের মধ্যে সে সব চাইতে বেশী মার্ক পেয়ে প্রথম হয়েছেন তাকে ডেকে তার সাথে আরও কিছু নেগোশিয়েশন করে তাকে বা তার পরের জনকে কাজটা দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেখলে নিয়মটা ভাল মনে হলেও এর মধ্যে ফাঁক থেকে যেতে পারে।
এবার আমি হেসে উঠলাম – এসব আমি ভাল করেই জানি। তোর তো মনে আছে এক সময়ে আমি বাংলাদেশের এক বৃহত্তম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতাম। এ সব ভাল করেই শিখেছিলাম তখন।
– কোন ঘটনার কথা মনে আছে?
– অনেক, অনেক। একটা ছোট উদাহরন দিই। একবার ‘মোবাইল ক্রেন’-এর এক টেন্ডারে টেকনিকাল কমিটির এক প্রকৌশন বন্ধুর সাহায্যে স্পেসিফিকেশনে একটা লাইন ঢুকিয়ে দিলাম – ‘ক্রেনের রং যেন হলুদ হয়’। তাকে বুঝালাম – হলুদ হচ্ছে উজ্জ্বল কালার এবং সাবধানতার রং, এর ফলে ক্রেনের পাশে কর্মরত মানুষেরা সাবধানে থাকবে। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের একই ভাবে বোঝাতে পারলো সে। টেন্ডারে তৃতীয় সর্বনিন্ম হওয়া সত্যেও কাজটা আমরা পেলাম স্পেসিফিকেশনের সাথে বেশী মিল থাকায়।
– আর মালপানি দিতে হয়নি?
– সে কথা আর নাই বললাম। – আবার হাসলাম আমি।
সার্ভার এসে জানতে চাইলো আমাদের খাবার পরিবেশন করবে কিনা। সেলিম সম্মতি দিয়ে খাবার আনতে বললো। খেতে খেতে আবার শুরু করলাম আমাদের কথাবার্তা।
– আর কি কি পরিবর্তন এসেছে?
– ভূমিকম্পে সেক্রেটারিয়েটসহ অধীকাংশ সরকারী অফিস বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়েছিল। ঢাকার অধীকাংশ লোক-জন তাদের আবাসন হারিয়েছিল। গ্রামের বাড়ীতে ফিরে গিয়েছিল অনেকে, অথবা অন্য শহরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে। ঠিক হল এখন থেকে তাদেরকে আর কোন অফিসে আসতে হবে না, বাড়ী থেকেই কম্পুউটারের মাধ্যমে কাজ করবে তারা। তাদেরকে একটা করে ল্যাপটপ জাতীয় কম্পুউটার দেওয়া হল এবং ই-মেইল আর ওয়েব-কনফারেন্স করার ক্রাশ-কোর্স দেওয়া হল। সব চাইওতে মজার ব্যাপার হল এতে দেখা গেল কাজে পরিমান অনেকগুন বেড়ে গেছে। আগে এক সহকারী সচীব যেখানে দিনে দুই-তিনটা নোট ফাইলে লিখে কাজ শেষ করতো – এখন দেখা গেল কয়েক গুন বেড়ে গেছে তার কাজের পরিমান। এর প্রধান কারণ সে জানে যে কেউ দেখতে পারে সে কি কি করছে এক দিনে। তা ছাড়া তদবিরের জন্যে অফিসে এসে মানুষ-জন তার সময় নষ্ট করে দিচ্ছে না।
– তাহলে সরকারী গোপনীয়তা বলে এখন আর কিছু নেই?
– না নেই। আসলে ব্রিটিশরা যখন দেশ শাষন শুরু করেছিল তখন তারা নিজেদের সার্থে অনেক কিছু গোপন করে রাখা শুরু করে এবং এর নাম দেয় ‘দেশের নিরাপত্তার খাতিরে’ এ সব জিনিস সাধারন মানুষের কাছ থেকে গোপন থাকবে। কিন্তু দেশের মালিকতো জনগন, সরকারের কিছু কর্মচারী বা রাজনৌতিক দলের ক্ষমতাশীল ব্যাক্তিরা না।
– কিন্তু বিদেশীরা যদি আমাদের গোপনীয় তথ্য জেনে ফেলে?
– কি জানবে? আমরা মায়ানমার বা ভারত আক্রমনের পায়তারা করছি?
– না, ঠিক তা বলিনি। আসলে এভাবে কখনও চিন্তা করিনি।
– ঠিক তাই। এখন দিন বদলে গেছে। কারো শুধু ঠিকানা জানা থাকলে এখন গুগল ম্যাপে দেখা যায় তার বাড়ীর সামনে ক’টা গাড়ী দাড়িয়ে আছে। এমন কি তার বাগানে ফুল গাছে ঠিক মত পানি দেওয়া হচ্ছে কিনা – তাও বোঝা যায়।
– তা সত্যি। এমনকি ঠিকানা না জানলেও শুধু নাম থেকে ঠিকানা বের করা কঠিন হয় না।
– আমি যখন সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতাম, তখন খুব অল্প সময়ে জেনে গেলাম – যত চেষ্টা করিনা কেন – আমাদের সব গোপনীয় তথ্য ভারতের কাছে প্রতিদিন চলে যাচ্ছে। আমরাও চেষ্টা করলাম কি ভাবে যাচ্ছে জানার জন্যে এবং জার্মান কোম্পানী সিমেন্স-এর কাছ থেকে মনিটরিং যন্ত্রপাতি কিনলাম।
– এর মধ্যে কি ট্রোভিকর ছিল?
– ঠিক তাই। সিমেন্স অবশ্য পরে সৃষ্টি করে ট্রোভিকর কোম্পানী এবং তারাই এই ব্যবসা চালু রাখে। আমরাও শুরু করলাম মনিটরিং – টেলিফোন, ই-মেইল, ফ্যাক্স, ভি-ও-আই-পি – কিছুই বাদ গেল না। তথ্য গোপন রাখা আজকাল খুবই দূরূহ। তাই সব কিছু খোলামেলা করা বরং অনেক নিরাপদ।
– সত্য শেষ পর্যন্ত বের হয়ে আসে। আচ্ছা, মানুষ-জন কিভাবে এই নতুন ব্যবস্থাকে দেখছে?
– প্রথম প্রথম কিছু মানুষ আপত্তি জানিয়েছিল – এখন বোধ হয় এমন কেউ নেই যে বিপক্ষে। সবাই বুঝে গেছে এর উপকারিতা।
– আচ্ছা, কার মাথায় প্রথম এই বুদ্ধিটা আসলো?
– নতুন প্রজন্মের মত্র ১৭ বছর বয়েসের এক ছেলের চিন্তাপ্রসূত এটা।
– অবাক করা ব্যাপার।
– হ্যাঁ, তাই।
– প্রোফেসর ইউনূসের গ্রামীণ ফাউন্ডেশনের ‘ইনোভেটিভ আইডিয়া’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পেশ করল সে তার এই চিন্তাধারা। ইউনূসের গ্রামীণ সৃষ্টির মূল চিন্তাটা যেমন খুব সোজা ছিল, কিন্তু পৃথিবী জুড়ে এনে দিয়েছে এক বিরাট বিপ্লব, তেমনি ‘মুক্ত ধারা’ চিন্তাটা আপাতঃ সোজা মনে হলেও বিপ্লব এনে দিয়েছে। পৃথিবীর সব চাইতে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ এখন সম্পূর্নভাবে দুর্নীতিমুক্ত। অনেক দেশ এখন আমাদেরকে অনুকরন করার চেষ্টা করছে।
– আচ্ছা, আগেকার সেই সব দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের কি অবস্থা?
– তাদের কারও পরিনিতি সুখের হয়নি। সে গল্প কালকে শুনিস। এখন চল অনেক রাত হয়ে গেছে। তোকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে আমি বাড়ী ফিরি।
– হ্যাঁ, তাই চল।
অনেক্দিন পর। :teacup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সাইফ ভাই আপনি আমার অনেক বড়।
অনেক কিছু চোখের সামনে দেখেছেন।
তারপরো মনে হলো কিছু তথ্য্গত ভুল দিয়েছেন।
ইচ্ছাকৃত কিনা বুঝলাম না।
ভাবছিলাম লেখার মধ্যে ইউনূস সাহেব আসবেন কিন্য শেষে তার দেখা পেয়ে ভালো লাগলো। প্রেডিকশন সঠিক হবার আনন্দ আরকি!
আমিও আপনার মতো বিশ্বাস করি বাঙলাদেশের সামনে সুদিন রয়েছে। এখন শুধু কাজ করে যাওয়া যার যার অবস্থান থেকে।
আর মনে হয় না সেজন্য এতো রক্তক্ষয় দেখ্তে হবে।
একবার তো ৩০ লাখ মরেছে। আজো সেই সংখা নিয়ে রাজনীতি চলছে।
আরেকবার ৩০ লাখ মারা গেলেও কি কোন পরিবর্তন আসবে!
তবে মোদ্দা কথা আপনার লেখা দেখে ভালো লাগছে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
ধন্যবাদ 'লেখা দেখে ভালো লাগার' জন্যে। লেখাটা প্রকাশ হবার পর যতই চিন্তা করছি ততই মনে হচ্ছে অন্যতম মূল একটি ইস্যু এখানে হচ্ছে - '‘মুক্ত ধারা’ চিন্তাটা'। বাংলাদেশের 'সাধারন মানুষ' আয়কর দেবার জন্যে 'আয়কর মেলা'য় যেয়ে লাইন ধরে - কেন? কেন? যাতে কোন রকম 'ঘুষ' বা 'কমিশন' না দিয়ে তার ন্যায্য কাজটা সহজে করতে পারে।
সবার জন্যে 'একই আইন' চালু করাটা কি এতই কঠিন?
সাইফ ভাই
আপনার গল্পটা যদি সত্য হত তাহলে খুব ভাল হত।তবে আমাদের এবং রাজনীতিকদের বোধদয় হওয়া উচিৎ।আর কত জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। আপনি ভুমিকম্পে ৩০লাখ মানুষের মারা যাওয়ার কথা বলেছেন আর তার পরেই টনক নড়েছে কিন্তু এই তো সেদিন রানা প্লাজায় ১২০০+ মানুষ মারা গেল। আর কত বেশি মানুষ মড়লে দেশের শাসকরা সচেতন হবে।আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনের কোন মুল্যই নাই। আর চাইনা প্রাণ যাক বরং বেশি করে চাই সামাজিক নিরাপত্তা।
যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি
সিরাজ,
আমি কখনোই চাইবো না এমন অঘটন ঘটুক আমাদের ভাগ্যে। রানা প্লাজা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। The Earth Institute, Columbia University এই ভিডিও টি বানিয়েছিল ২০১১ সালে। আমরা আসলেই বসে আছি এমনি পরিস্থিতির মাঝে।
http://blogs.ei.columbia.edu/2011/07/13/lurking-under-bangladesh-the-next-great-earthquake/
এই রিপোর্টের ত্রুটি গুলো আলোচনা করে প্রফেসর জামিলুর রেজা স্যারের একটা ভিডিও ছিল, খুঁজে পাচ্ছি না। যতদূর মনে পড়ে যেভাবে এখানে দেখানো হয়েছে ঠিক সেভাবে আতংকিত হবার কিছু নেই।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মোকাব্বির,
প্রফেসর জামিলুর রেজাকে ভাল ভাবে চিনি। হুবহু তার ডিজাইন অনুসারে কটা বাড়ী নির্মিত হচ্ছে ঢাকাতে? রানা প্লাজা কি আমাদের চোখ খুলে দেয়নি? ১৯৯৪-সালে লস এঞ্জেলেস-এর কাছে যে ভুকম্পন হয়েছিল সেটা 'মাত্র' ৬.৭ মাত্রার হলেও 'ground acceleration'-এর কারনে অনেক ক্ষতি হয়েছিল। সুতরাং 'অতিরিক্ত' প্রস্তুতি নিতে পারলে ক্ষতি কি?
সেটা তো অব্শ্যই। তবে
যতদূর বুঝি এটা নিশ্চিত করার কাজটা উনার নয়! দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আছে।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
"যারা বেঁচে ছিল তারা আর এবার মাপ করলো না সরকারের মন্ত্রী ও উচ্চপদের মানুষদের। যাদেরকে হাতের নাগালে পেল তাদেরকে এক এক করে পিটিয়ে হত্যা করা শুরু করলো।"
রাজনীতিবিদদের উপরে এত রাগ কেন? ইউনূসকে ড্রয়িংরুম রাজনীতি করতে দেয় নাই বলে?
পাঠক,
আগামী ৮ বছর পরে কি বর্তমান সরকার থাকবে?
আমার লেখার মূল বিষয় হচ্ছে 'দূর্নীতি' বন্ধ করার উপায় এবং 'গোপনীয়তা' কতটা প্রয়োজন সেটা নিয়ে। সে ব্যাপারে কিছু বলার থাকলে শুনতে আগ্রহী। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
দুর্নীতি বন্ধের জন্য রাজনীতিবিদদের নির্বিচারে পিটিয়ে হত্যা করা দিয়ে রাস্তা দেখানো শুরু কর্লেন। বাহ!
গোপনীয়তা উঠায় নিলে সবার আগে সম্ভবত আর্মিরই বারোটা বাজবে। হে হে।
সাইফ ভাই,
অনেকদিন পর লিখলেন এখানে।
গল্পের আশাবাদটা আশাজাগানিয়া, কিন্তু যে-পথে, যে-ভাবে তা এলো -- রাজনীতিবিদদের পিটিয়ে মেরে ফেলে- ইউনুসীয় ইনোভেশনের হাত ধরে -- সে-দর্শন/চিন্তন ভীষণভাবে ভ্রান্ত মনে হচ্ছে।
একজন একদা-অসৎ ব্যাবসায়ী, একদা-ডিজিএফআই অফিসারের 'আবার দেখা যদি হলো সখা' সভায় তাঁদের কষ্ট-কল্পনা ও উত্তেজনার লেভেল যদি বিবেচনায় রাখতে বলেন তাহলে অবশ্য ঠিক আছে -সেক্ষেত্রে আশা-হতাশা কিছুই আর কাজ করা উচিৎ না অবশ্য।
নূপুর,
এটা নিছক গল্প। ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অসম্ভব নয়। ঢাকার কটা বাড়ী আছে যে রেক্টর স্কেল ৮-এর ধাক্কা
সামলিয়ে টিকে থাকবে? রানা প্লাজা কি আমাদের চোখ খুলে দেয়নি? তোমার লেখা আমি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পড়ি - কিন্তু হাসিনা বা 'বাল'-এর উল্লেখ দেখলে এতটা খারাপ লাগে কেন? উপরে যেটা লিখেছি সেটা আবার উল্লেখ করছি - 'আগামী ৮ বছর পরে কি বর্তমান সরকার থাকবে?'
৩০ লাখ লোকের এ ভাবে মৃত্যু দেখলে অনেকের মাথা ঠিক থাকবে না। এদের মধ্যে সামান্য কয়েকজন যদি হত্যা শুরু করে তাহলে কি এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়?
আমার লেখার মূল বিষয় হচ্ছে 'দূর্নীতি' বন্ধ করার উপায় এবং 'গোপনীয়তা' কতটা প্রয়োজন সেটা নিয়ে। বাংলাদেশ ছাড়াও অনেক দেশে দূর্নীতি একটি বড় সমস্যা। আমেরিকাও বাদ যায় না এর হাত থেকে। তবে এখানে কেউ ধরা পড়লে বাংলাদেশের মত সহজে ছাড় পায়না। 'মুক্তধারা' চালু করলে এতা বন্ধ হওয়া হয়তো সম্ভব হতে পারে। আমি জানতে চাই 'গোপনীয়তা' না থাকলে অসুবিধাটা আসলেই কতখানি। তোমার যুক্তিপূর্ণ অভিমত জানতে আগ্রহী।
মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সাইফ ভাই,
একটা মাঝারি মাপের ভূকম্প হলে ঢাকা যে ধ্বসে পড়বে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই ধ্বস-পরবর্তী অরাজকতার ফলাফল যদি বাস্তবেও হয় রাজনীতীবিদ ও সরকারের কর্মকর্তাদের পিটিয়ে হত্যা করার মত কিছু - সেটা হবে একটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা, ভীষণভাবেই - এবং সে-দর্শন নিশ্চিতভাবেই ভ্রান্ত -- আরেকটা অরাজক অধ্যায়ের সূচনা, যা কিনা আমাদের নিয়ে পৌনপুনিক অরাজকতার বৃত্তে --- এই ছিলো আমার বক্তব্য।
সত্যিই সে-সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায়না - যখন মানুষ আক্রোশে সবকিছু ভেঙ্গেচুরে ফেলছে, যাকে পাচ্ছে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। আপনার লেখায় মনে হলো এমন ঘটনাবলীই কাজ করবে পরবর্তী বিপ্লবের অনুঘটক হিসেবে -- রাজনীতি-বিমুখ মানুষেরাই রাতারাতি পাল্টে দেবে সমাজ, সব বীতশ্রদ্ধতা একঘায়ে শেষ করে দিয়ে।
গল্পের মূল বিষয় দুর্নীতি ও আনুষাঙ্গিক ব্যাপার নিয়ে আপনার আইডিয়াটা ভাবাচ্ছে। একটা খোলামেলা সিস্টেম থাকলে, মানুষের ন্যূনতমটুকু দেবার বাধ্যবাধকতা তৈরী করতে পারলে কতটা পরিবর্তন আসবে সেটা বোঝার জন্য এক্সপেরিমেন্টটা শুরু করতে হবে। তবে আমার বিশ্বাস ভালো হবে ব্যাপারটা - এনিয়ে একটা বেশ আলোচনা চলতে পারে।
শেষে : আমার মনে হয়নি আপনি হাসিনা বা 'বাল' এর সমালোচনা করছেন - মনে হয়েছে আপনি পুরো রাজনৈতিক সিস্টেমটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। কাজেই
-- আপনার বক্তব্যের এই অংশটা ঠিক বোধগম্য হলোনা আমার।
আট বছর পর এ সরকার থাকবেনা তো বটেই। তবে আমি চাই, যেই থাকুক -- মানুষের ভোটে, মানুষের সরকার আসুক সবসময় - রাজনীতির পথ ধরেই। ভ্রষ্ট রাজনীতিকে মানুষ শুধরে নিতে চাক রাজনীতি দিয়েই; অন্য কোন পন্থায় নয়। ২০২১ এ নয় আবার আট বছর আগের একদিন -এর এই পোস্টে ফিরে এসে আবার আলোচনা করে যাবো - কি বলেন? (সম্পাদিত)
এই মূহুর্তে এই নিয়ে কিছু ভাবছি না। পরে আবার ফিরে আসতে পারি মন্তব্য করার জন্য।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আর কোন মন্তব্যা নেই কেন?