আমি এখন নতুন করে দেখার চেষ্টা করছি। বিষয়টা হচ্ছে ‘ভালবাসা’। জানি, বহু কিছু লেখা হয়েছে এই বিষয় নিয়ে। এক গুগল সার্চেই দেখা যায় প্রায় হাজার কোটি লেখা তার রেকর্ডে আছে। নতুন করে কিছু বলার কি আছে?
প্রায় সব ধর্মেই শেখানো হয়ে থাকে – ভালবাসতে। ইশ্বরকে ভালবাস, বাবা-মা, ভাই-বোন, প্রতিবেশী – এদের সবাইকে ভালবাস। দেশকে ভালবাস, অন্য দেশের মানুষকেও ভালবাস। কিন্তু আমরা কি কখনো মুক্ত ভাবে চিন্তা করে দেখেছি – পৃথিবীতে যত অশান্তি – তার মূলে এই ‘ভালবাসা’।
আমি আমার খোদাকে ভালবাসি, আর একজন তার ইশ্বরকে, অন্য জন তার ‘গড’কে – ফলে কেউ অন্য কারো ভালবাসাকে ছোট বলার চেষ্টা করলে লেগে যায় যুদ্ধ। কার লাভ হয় এতে? এতে কি খোদা, গড বা ইশ্বর – কেউ কারো চাইতে বড় হন?
যখন আমার ভালবাসার মানুষ আমার চাইতে অন্য কাউকে বেশী ভালবাসা দেখায় সেটা সহ্য হয় না আমার। কেন হয় না?
মঞ্জুর এবং কবির – এরা দু’জনেই আমার সমসাময়িক সময়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। তারা ছিল তখনকার ‘লিয়াকত হল’-এ, আর আমি থাকতাম শেরে-বাংলায়। এখন আর ঠিক মনেও করতে পারি না তাদের চেহারা। তবে তাদের ছেলেমেয়ে – মানে যেন আমার নিজের ছেলেমেয়ে। রুমানার ঘটনাটাতে প্রথম দিন যেমন দুঃখ পেয়েছিলাম, তেমনি আজ আরও দুঃখ পেলাম যখন জানলাম সুমনের মৃত্যুর খবর।
কেন এমন হল? সারাটা দিন আজ কেটেছে এই কথাটা ভেবে। এরা দু’জনেই সমাজের উচ্চ-বিত্ত্ব ঘরের ছেলে মেয়ে। একজন প্রকৌশলী এবং অন্যজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এরাই তো সমাজের মধ্যমনি। এদেরকে দেখেইতো অন্যরা তাদের জীবনের স্বপ্ন গড়ে তুলবে। এটা কি শুধুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা?
প্রায় ১০০ বছর আগে যখন আমার বাবা আমার মাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন, তখন মায়ের বয়েস ছিল নাকি মাত্র ১৩ বছর। হলফ করে বলতে পারবো না কথাটা সত্যি কিনা, কারণ ‘তাদের বিয়ের সময়ে তখনও আমার জন্ম হয়নি’।
উপরের কথাটাতে অনেকে মজা পেতে পারে। ভাববে বাবা-মায়ের বিয়ের সময় কোন ছেলেমেয়ে হবে কি করে। কিন্তু হতে পারে। আমার এক আমেরিকান পরিচিত মহিলা গল্প করে আমাকে বলেছিলেন যে তার বাবা-মায়ের বিয়েতে সে মায়ের ‘ব্রাইডস-মেইড’ হয়েছিল এবং তার বড় ভাই হয়েছিল বাবার ‘বেস্ট ম্যান’। প্রথমে তার বাবা-মা ঠিক করেছিল কখনো বিয়ে করবে না। পরে শেষ বয়েসে এসে ঠিক করেছে যে বাকি জীবনটা বিবাহিত হিসাবে কাটাতে চান – কারন একে অপরের প্রতি দৈহিক আকর্ষনের চাইতে মমত্ববোধ এখন বেশী কাজ করছে।
আমার বাবার বিয়ের গল্প শুনে এক জন আমাকে মনে করিয়ে দিল – এটা বর্তমানের ঘটনা হলে আমার বাবাকে ‘পেডোফাইল’-এর অভিযোগে জেলে থাকতে হতো। হুম… চিন্তার বিষয়। আমি পরে জেনেছিলাম বাবা কম বয়েসী মেয়ে বিয়ে করেছিলেন যাতে তাকে নিজের মত করে তৈরী করে নিতে পারেন। অবশ্য সে ব্যাপারে তিনি কতটুকু সার্থক হয়েছিলেন বলা মুশকিল। বড় হয়ে আমি তো দেখেছি আমার মা-ই বাবাকে চালাচ্ছেন, এমন কি মাঝে মাঝে প্রয়োজনে ধমক দিচ্ছেন।
আমার প্রতিবেশী এক মহিলা, যে আমার ছেলেকে কয়েক ঘন্টা করে কিছু টাকার বিনিময়ে দেখে রাখে, সম্প্রতি তার বড় মেয়ের বিয়ে দিল। তার আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। ছেলে ‘এয়ার ফোর্সে’ কাজ করে। ভদ্র মহিলা খুবই পরোপকারী এবং ধার্মিক – নিয়মিত চার্চে যায় এবং নানা ধরনের সাহায্যমূলক সংস্থার সাথে কাজ করে। আমি তাকে ডিভোর্সড ভেবেছিলাম। পরে একদিন তিনি জানালেন যে তারা কখনো বিয়ে করেননি – ফলে ডিভোর্স করার প্রশ্ন ওঠে না।
বাংলাদেশেও যে আমরা খুব একটা পিছিয়ে আছি মনে হয় না। আমার মা জীবনে কখনো কোন অন্য পুরুষের সাথে সামান্যতম ‘শেক-হ্যান্ড’ করার সুযোগ পাননি। পরের প্রজন্মের আমি এবং আমার স্ত্রী ঢাকার বিভিন্ন উচ্চ-বিত্তের পার্টিতে যেয়ে অন্যের স্ত্রী এবং স্বামীর সাথে নেচেছি। এখনকার প্রজন্মের বেলায় শুনি কিছু কিছু স্থানে ‘ওয়াইফ-সোয়াপিং’ ও ‘থ্রি-সাম’ চালু হয়ে গেছে। আসলে সেই ‘৭২-এর “বাবা একটু ফ্যান হবে” বা মাসিক এক হাজার টাকা মাইনের সর্বোচ্চ সীমার সময়’ থেকে আমরা এখন অনেক দূর সড়ে এসেছি। এর ফলে সমাজে যে পরিবর্তন আসছে বা এসেছে – সেটা কিন্তু শুধু একলা বাংলাদেশের সমস্যা নয়। প্রায় সব উন্নতিশীল দেশে কম বেশী দেখা যাচ্ছে এই ধরনের ব্যাপার।
এক সময় এই আমেরিকাতেও ‘বউ-পিটানো’ প্রায় সাধারন ঘটনা ছিল। কড়াকড়ি আইন আছে – তবুও অহরহ এ সব ঘটনা ঘটে। আইন করে কি সব বদল করা যায়? এ ব্যাপারে আমাদের ধর্মে কি বলে জানার জন্যে আমার এক বন্ধুকে ফোন করলামঃ
– আচ্ছা, এটা কি সত্যি যে আমাদের ধর্মে আছে যে দরকারে ‘বউ-পিটানো’ যায়।
– হ্যাঁ আছে, তবে বিশেষ সর্ত সাপেক্ষে।
কি সর্ত আর জানতে চাইলাম না।
আর একটু তলিয়ে দেখি। একজন পুরুষ ও একজন নারী বিয়ে করে একত্রে থাকার ইচ্ছা পোষন করে মোটামুটি এই কারনগুলির জন্যেঃ
১) সামাজিক
২) ধর্মীয়
৩) আইনের অনুশাষন (লিগাল)
৪) ভাবাবেগ (ইমোশন)
৫) অর্থনৈতিক
৬) যৌন আকাক্ষা (লিবিডিনাল)
৭) উত্তরসূরী প্রজননের আকাক্ষা
৮) অর্জিত সম্পদ ধরে রাখার আকাক্ষা
৯) ইত্যাদি, ইত্যাদি…
উপরের তালিকাতে আমি ইচ্ছা করে ‘ভালবাসা’ শব্দটি রাখিনি। আমি আজও বুঝতে পারিনি ‘ভালবাসা’ বলতে ‘সঠিক কি বুঝায়’। কাউকে বিয়ে না করেও তো ভালবাসা যায় – চিরকাল ভালবাসা যায় – নয় কি?
ইশ্বরকে যদি আমি ভালবাসি, তার জন্যে কি ইশ্বরকে বিয়ে করতে হবে? পাশ্চাত্যের অধিকাংশ দেশে এখন দীর্ঘস্থায়ী ‘বিবাহিত’ যুগলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। খুব কমই এখন আশা করে যে ‘Till death do us part’ ধরনের স্থায়ী বিয়ে সবার জন্যে সম্ভব। বিয়ে ৭ বছর স্থায়ী হলেই মনে করে অনেক সফল হয়েছে তাদের বিয়ে।
‘বিয়ে’ কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে কোন ‘স্বাভাবিক’ প্রক্রিয়া নয়। মাত্র চার হাজার বছর আগের ইতিহাসে এর খোঁজ পাওয়া যায়। তার আগে সাধারনত ২০/৩০ জনের এক একটা গোষ্টিতে কিছু পুরুষ নেতৃত্ব দিত এবং সেই গোষ্ঠির মেয়েদেরকে নিজেদের মধ্যে ‘শেয়ার’ করতো। গোষ্ঠির বাচ্চাদেরকে সবাই মিলে পালন করতো।
অনেক পরে বিয়ের নিয়মটা কার্যকর হতে থাকে। আমেরিকার ইন্ডিয়ানদের মধ্যে অনেক ভিন্ন ভিন্ন গোষ্টি আছে – তাদের একটি হল ‘কোমানচি’। নিউ মেক্সিকো, এরিজোনা, ওকলাহোমা, টেক্সাসে যাদের আবাস ছিল। এদের বর্তমান সংখ্যা কমে মাত্র ১৫ হাজারের নীচে এসে পৌছিয়েছে। এদের মধ্যে নিয়ম ছিল বিয়ের পর স্ত্রী অন্য পুরুষে গমনের অধীকার হারাবে এবং এর ফলে স্বামী তার ভরন-পোষনের দায়িত্ব নেবে। এদের স্ত্রীলোকদের অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী কাজ করতে হতো। আমার শহরে এদের অবস্থান এখনো আছে। এদেরকে দেখে আমার অনেকটা পুরানো দিনের আমাদের দেশের অবস্থার কথা মনে হয়। কোমানচিদের মত আমদের দেশের সমাজও ক্রমে বদলে যাচ্ছে – আমরা সেটা মানতে পারি আর না পারি।
শুধু স্থানীয় আমেরিকান নয়, অনেক অভীবাসী বাংলাদেশী দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিয়ে ভেঙ্গে যাবার পরিসংক্ষন আশংকাজনক ভাবে বেশী। এই চিত্র যে বাংলাদেশেও স্থানান্তরিত হবে না, তা বলা মুশকিল। আমার বিয়ের সময় আমাকে বলা হয়েছিল যে আমার প্রিয় ছোট শালীর বিয়ের দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে। আমার আপত্তি ছিল না। কিন্তু আমার জন্যে অপেক্ষা না করে সে নিজেই ক্যাডেট কলেজের এক ছেলেকে প্রেম করে বিয়ে করে ফেললো যখন আমরা বিলাতে অবস্থান করছি। ছেলে সুন্দর দেখতে, কথা-বার্তায় চমৎকার আর সর্বপরি ক্যাডেট কলেজে পড়া। কারও আপত্তির কিছু কারন ছিল না। আমি শুধু একটু মিন মিন করে বললাম – এত তাড়াতাড়ি কেন, আরও একটু বড় হয়ে বিয়ে করতে। আমার চৌকশ শালী আমাকে শুনিয়ে দিল – “আপনি কি করেছিলেন, মনে আছে।” কথাটা ঠিক, আমরাও বেশ কম বয়েসেই বিয়ে করে ফেলেছিলাম। তাকে আর বলতে পারলাম না যে সেই জন্যেই তো এই কথাটা বলছি। আমাকে আরও জানালো – ‘সাইফ ভাই, আমাদের প্রেম সম্পূর্ণ অন্য রকম। এর সাথে অন্য কিছুর তুলনা হয় না।’ মেনে নিলাম। জানলাম, দেখলাম – গভীর প্রেম তাদের।
২৫ বছর সংসার করার পর সম্প্রতি তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। এটা কি বেশী ভালবাসার কারনে? আচ্ছা, একটু কম ভালবাসলে কি হয়?
বহুদিন পর সাইফ ভাইয়ের পোষ্ট দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। ইটা রেখে এবার পড়া শুরু করি।
কেমন আছেন ভাইয়া?
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
রকিব,
কি হল? লেখাটা পড়ার পর কি 'লা-জবাব' হয়ে গেলে?
সুন্দর লেখা।
ধন্যবাদ রবিন।
হতে পারে, বেশী ভালবাসা বিপদ টেনে আনে।
কম কম ভালবাসুন, টেনশন মুক্ত জীবন-যাপন করুন।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
হু... সুন্দর কথা।
সাইফ ভাই,
জীবনের শুরুতে দৃঢ় ধর্মীয় অনুশাসন, যৌবনে পশ্চিমের খোলা হাওয়া, বিকেলের মধ্যস্তিতিতে থিতু হয়ে (নিজের জন্যে) একটা সিদ্ধান্তেই আসতে পেরেছি যে " মধ্য পন্থাই সর্বোত্তম পন্থা, আর সৃষ্টিকর্তা মধ্যপন্থা অবলম্বনকারীকেই পছন্দ করেন"।
আপনার কি মত? Threesome,.. Swap,... Live together পার্টি রা কি আমাদের চেয়ে সুখে আছে? (দীর্ঘ মেয়াদি আত্মিক সুখ আর শান্তির বিচারের মাপকাঠিতে!)
বরাবরের মত গভীর জ্ঞ্যান সমৃদ্ধ সুন্দর লিখার জন্যে অভিনন্দন।
-আজিজ/এফসিসি/৭২~৭৮
পুনশ্চঃ সম্ভবত ‘বউ-পিটানো’ নয়, ব্যাপার টা পড়তে হবে "স্ত্রী কে শাসন করার অধিকার স্বামী সংরক্ষন করেন"। কি কি কারনে এই শাসন, উল্লেখ করলে ভাল হতো। সাথে এও যে ' শুধু স্বামীর চেহারা পছন্দ না হওয়ার কারনে', স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার ও একমাত্র ইসলামই প্রদান করে ।
(সম্পাদিত)
Smile n live, help let others do!
আজিজ,
খুব কঠিন প্রশ্ন। বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্ন উত্তর হয়তো পাবে। কিন্তু মানুষ নিজের ইচ্ছায় কতটুকু করতে পারে? এ ব্যাপারে আমার ধারনা এখানে আরও কিছু পাবেঃ
Love and mental illness
দুনিয়ার বেশিরভাগ প্রেমিক প্রেমিকা যুগল এইটা মনে করে। আমি মনে করি আসলে আমরা কেউ স্যাম্পল স্পেসের বাইরে নই।
পোস্ট টা পড়ে গেলাম একটানে। মতামত দেবার দরকার নেই। কারণ কোন জায়গাতেই দ্বিমত করতে পারলাম না।
সালাম আর শ্রদ্ধা রইলো।
ভালো থাকবেন ভাইয়া।
আমিন,
তবে যতই বল - ওই যে কিছু ক্ষনের বা কিছু দিনের অনুভুতি - তার তুলনা হয় না।
আমি এক তরুন যুগলের কথা জানতাম - মেয়েটা ছিল হিন্দু এবং ছেলেটা মুসলমান। দু'জনেই চরম রক্ষনশীল পরিবারের সন্তান। তারা এক মাস পালিয়ে পালিয়ে ছিল, পরে ধরা পরা আসন্ন জেনে দু'জনেই এক সাথে বিষ খেয়ে মৃত্যু বরণ করে। আমি আক্ষেপ করছিলাম খবরটা জেনে। সেখানে উপস্থিত এক মহিলা হঠাৎ বলে উঠলেন - অন্তত এক মাস তো এরা সম্পূর্ণ ভালবাসার মধ্যে কাটাতে পেরেছে - অনেকের জীবনে তো কখনো ভালবাসা আসে না।
ঘটনাটা শুনে কেমন যেন একটা আদ্র অনুভূতি হলো।
অদ্ভুত সত্যবাচন।
:((
:clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:-B
সাইফ ভাই, আপনার লেখায় চমৎকার তুলনামূলক ক্রস কালচারাল দৃষ্টিভঙ্গির দেখা মিললো। লেখার উদার এবং শুদ্ধ চিন্তার খোলা হাওয়ায় সবার বোধন হোক।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
অনেক ধন্যবাদ, রাব্বী।
:clap:
;;)
::salute:: ::salute:: ::salute::
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
::salute::
স্যালুট দিলে প্রতিত্তরে স্যালুট দিতে হয় - তাই না?
সাইফ ভাই, অনেকদিন পর আপনার লেখা। দেখে খুব আনন্দিত হলাম।
প্রথমেই আপনার শিরো্নামটার সাথে একটু ্দ্বিমত জানাচ্ছি। সমস্যার মূল ভালবাসা নয়। বরং মানব প্রজাতি এখনও যে টিকে আছে এবং উত্তরোত্তর উন্নতি করছে তার মূলে রয়েছে ভালবাসা। দেখেন বাবা-মা যদি নিঃস্বার্থভাবে সন্তানদের ভাল না বাসতো তাহলে সন্তানদের কি গতি হতো বলেন? আবার সেই সন্তানরা যখন সেই বাবা-মাদের ভুলে যায় (কোন কোন ক্ষেত্রে) তখনও কিন্তু বাবা-মারা তাদের সন্তানদের অভিশাপ দেয় না, কোন ক্ষতি হোক তা চায় না। বাবা-মাদের কিন্তু সবচেয়ে দুর্বলতা থাকে তাদের দুর্বল সন্তানদের প্রতি। অথচ প্রেমিক-প্রেমিকা বা হাজব্যান্ড-ওয়াইফদের মধ্যে কিন্তু এই নিঃস্বার্থ ভালবাসা কাজ করে না। পশ্চিমে যেটা কাজ করে তা হলো আকর্ষণ আর আমাদের পূর্বে তো বিয়েটা দুটো ছেলে-মেয়ের সাথে হয় না, হয় দুটো পরিবারের সাথে - কিন্তু মূলে সেই আকর্ষণটা কাজ না করলে সম্পর্ক দায়সারা হয়ে যায়। সেই আকর্ষণটাকে আমরা ভালবাসা ভেবে নিয়ে পুলক বোধ করি। কিন্তু দেখেন সেই আকর্ষণটা সবচেয়ে বেশি কাজ করে যখন দুদিকেই ভারসাম্য বজায় থাকে। একদিন হেলে পরলেই বিপদ। আমি কথাটা বলছি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে। যখন থেকে মেয়েরা নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পেয়েছে। আগে যখন ছেলেদের সবকিছুতে রাজত্ব ছিল তখন বোধহয় সমাজ অধিকারবোধের নিয়মে চলতো। তখন মেয়েদের কোন কন্ঠস্বর ছিল না। ছেলেরা যা চাইতো তাই হতো। তখন ছেলেদের ভারসাম্যের জন্য একটা মেয়ের জায়গায় আরো কয়েকটা মেয়ে লাগতো - ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন দেখা যাচ্ছে মেয়েরা পূর্ণ বিকশিত হলে তাদেরও ঠিক ছেলেদের মতোই ইচ্ছা করে। তারাও হেলে পড়া সম্পর্ক পছন্দ করে না। সুযোগ থাকলে তারাও আরো ভারসাম্যময় কাউকে বেছে নিতে চায়। এটাও এক ধরনের ইঁদুর-দৌ্ড়। ছেলেরা যখন তাদের বৌকে ছেড়ে যায় মেয়েরা তেমন প্রতিবাদ করতে পারে না। কিন্তু মেয়েরা একই কাজ অতো সহজে করতে পারে না। ছেলেদের শিকারী রক্ত এতো সহজে ছাড় দেয় না।
ওথেলো সন্দেহের বশে ডেসডিমোনাকে খুন করলো। আমি এর মধ্যে কো্ন ভালবাসা খুঁজে পাই না। এটা শ্রেফ একজন শিকারীর অহম যা তার অধিকারবোধকে জিতে যাওয়ার আনন্দ দেয়। যেখানে আঘাত নেমে আসে সেখানে আর যাই থাকুক ভালবাসা ছিল তা মানতে আমি রাজী নই। কোথায় জানি পড়েছিলাম 'ভালবাসায় আমি জিতেছি - তাই কোনদিন জয়ী হব না ঘৃণায়।' একই সাথে কেউ ভালবাসা আর ঘৃণায় জয়ী হতে পারে না।
প্রাথমিক আকর্ষণ কেটে যাবার পর অধিকাংশ সম্পর্কই ভারসাম্য বা গিভ অর টেকের ভিত্তিতে চলে। ব্যাপারটা হচ্ছে এরকম - 'আমি তোমার জন্য এই এই করলাম আর উপরে উঠে গিয়ে তুমি আমাকে ল্যাং মারবে। আমি তোমার পা'ই কেটে দেব।' তবে আশার কথা সব সম্পর্কই এমন নয়। সত্যিকারের ভালবাসাময় সম্পর্কও আছে অজস্র।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা,
অনেকদিন পরে কোথায় - কিছুদিন আগেই না একটা লিখলাম?
তোমার এই মন্তব্যে অনেকগুলি কথা উঠে এসেছে। এর মধ্যে একটা কথার ব্যাপারে কিছু আলোচনা করতে চাই - যেটা সাধারনত আমরা অনেকেই জানি না। তুমি লিখেছো - "এখন দেখা যাচ্ছে মেয়েরা পূর্ণ বিকশিত হলে তাদেরও ঠিক ছেলেদের মতোই ইচ্ছা করে।" খুবই খাটি কথা - এটা কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা। মূল বিষয় হচ্ছে যেটা প্রফেসর সোয়ার্জ বলেছেন - "I don't think we are a monogamous animal" - এখানে কিন্তু আমি সামাজিকতা, ধর্ম, স্থান-দেশ বা উচিৎ-অনুচিৎ-এর কথা বলছি না। নিচের লেখাটা না দেখে থাকলে লিঙ্কটা দেখে নিওঃ
Monogomus
এ ব্যাপারে যারা ধর্মীয় অনুশাষনের পক্ষে আমি তাদেরকে বলি - শুধু মেয়েদেরকে বোরখা বা হেজাব পড়ানো কেন - ছেলেদেরকেও তেমনি আচ্ছদনে রাখা উচিৎ যাতে তাদেরকে দেখে মেয়েদের মনে অন্য তেমন চিন্তার উদয় না হয়।
তোমার কি মনে হয়?
কথাটি একদম ঠিক। আমাদের দেশে কোন ছেলে প্রথম বৌএর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন বা না করে আরেকটা বিয়ে করলে সেই দ্বিতীয় বৌকে দোষ দেওয়া হয় যে সে নাকি ছলা কলায় ভুলিয়েছে। এখন সেই ছেলে যদি হিজাব ধারণ করতো তাহলে তো আর সেই মেয়ে তাকে আর ভুলাতে যেত না।
আপনার মনোগামি লেখাটা পড়লাম। একজায়গায় লিখেছেন জীবকূলে ৫% মনোগামি। সাধারণত যেখানে সন্তান পালন করা দূরুহ সেসব ক্ষেত্রে প্রাণীকূল মনোগামি হয়ে থাকে। যেমন মেরু অঞ্ছলের গীজরা মনোগামী। মানুষের ক্ষেত্রে সন্তানপালন ছাড়াও সমাজ এবং সভ্যতা আরো কিছু উপাদান আছে যে কারণে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মনোগামী। সমাজের একক পরিবার আর পরিবারের ভিত্তি বিশ্বাস। এখন ধর্ম বলেন, দর্শন বলেন, কিম্বা আইন বলেন সব ক্ষেত্রই কিন্তু এই পরিবার টেকার সপক্ষে কাজ করে। কখনও চোখ রাংগিয়ে, কখনও বুঝিয়ে কিম্বা কখনও শাস্তির ভয় দেখিয়ে। কারণ পরিবার নড়বড়ে হলে সমাজ টিকবে না, সমাজ না টিকলে সভ্যতা ধ্বসে পড়বে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
সাইফ ভাই, ভালোবাসার ময়নাতদন্ত ভালো লাগলো। কম ভালোবাসা! ভাবনার বিষয়। গতকাল আপনার লেখা পড়ার পর থেকেই ভাবছি। সম্ভবত ভালোবাসা যখন সঙ্গে থাকে তখন কম-বেশি কোনোটাই টের পাওয়া যায় না। নতুন ভাবনার খোরাক দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সঙ্গে শান্তার নাতিদীর্ঘ মন্তব্যও মজার। ও না ভেবে কোনো মন্তব্য করে না। ধন্যবাদ তোমাকেও।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু,
উপরের শান্তার লেখার জবাবে আরও খোরাক দিলাম - ছেলেদের বোরখা পড়ার ব্যাপারে। ভেবে দেখো।
আমি তোমাকে না দেখেও যতটা বুঝি তাতে বুঝি যে তোমরা খুবই সুন্দর দাম্পত্য জীবন যাপন করছো। এভাবেই তোমাদের বাকী দিন কাটুক - কামনা করি।
কাজের ফাকে তোমার মিঠা-কড়া শুনতে শুনতে এখন যেন অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। আজ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা শুনে একটা লেখা মাথায় এল - দেখি সময় করতে পারি কিনা। বর্তমান কাজে দৈনিক ১৩০ মাইল গাড়ী চালিয়ে যাওয়া-আসা করার পর তেমন সময় থাকে না হাতে।
আসলে সুমন আর রুমানার কথাটাই খালি মাথায় ঘুরছিল। কেন নস্ট হল এ ভাবে এতগুলি জীবন। আলাদা ভাবে দেখে কিন্তু আমি এদের কাউকেই তেমন দোষ দিতে পারলাম না - দোষ তো সব আমাদের ঐ সব কেমিকেলের...
সাইফ ভাই,
এখানে রুমানা আর তার কথিত ইরানি প্রেমিকের 'পরকীয়া'র প্রমাণ একেবারে ফকফকা পরিস্কার!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সাইফ ভাই,
ভালোবাসার ঘড়া কখন যে চুপিসারে ভরে উপচে যায়
আবার কখন যে কাত হয়ে গিয়ে পুরোটাই শুন্য হয়ে যায়
তা কে কবে বুঝতে পেরেছে।
আরেকটু বেশি বা আরো একটু কম,
অথবা কাঙ্খিত সঠিক পরিমাণটি
কি করে, কোথায় নির্ধারিত হবে বলুন!
যমুনার ঢল তো পাড় থেকে তেমন বোঝা যায়না,
নেমে পড়লেও তো কিছু করার থাকেনা।
নূপুর,
খুবই সুন্দর করে বলেছো। এই জন্যেই তো আমি বলেছি - "আমি আজও বুঝতে পারিনি ‘ভালবাসা’ বলতে ‘সঠিক কি বুঝায়’।"
তাই আমি ঠিক করেছি এ ব্যাপারে আর চিন্তা না করে বরং 'স্ট্রিং থিয়োরী' বোঝার চেস্টা করে দেখি...
সাইফ ভাই
অসাধারণ লেখা।
তবে ওয়াহিদা আপার মত আমারো কিছু ভিন্নমত আছে।
ভানুর কৌতুকটা কি মনে আছে, দৃমু যখন সবটাতেই দৃমু।
মেপেই যদি ভালোবাসা যেতো???
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
গনতন্ত্রের মূলে হচ্ছে ভিন্ন মতের স্বাধীনতা। নিশ্চয় জানাবে ভিন্ন মত। কি সেটা? (সম্পাদিত)
ভাইয়া আপনার মূল বক্তব্যের সাথে দ্বিমত নাই।
কিন্তু ডিভোর্সের ব্যাপারে একমত হতে পারছি না।
আমার কাছে এই ব্যাপারটা খুব একটা খারাপ মনে হয় না।
বরংচ অনেক সুন্দর সমাধান মনে হয় যদি মিলমিশ না থাকে বা একসাথে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠে।
আর ভালবাসা যে আজীবন থাকবে তার ও তো দিব্যি নেই। ভালবাসা মরে গেছে। এর মানেই তো আগে ভালবাসা ছিল।
আর ঐ যে ১ মাসের ভালবাসার কথা বলেছেন; কোনো ভালবাসাই তো ফেলনা নয়।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
...সাইফ ভাই, আপনি অনেক দেখেছেন, অনেক অভিজ্ঞ। আপনার সব লেখাই আমি খুব ভালো করে বুঝার চেষ্টা করি। কখনও বুঝে যাই, কখনও ঘোরের মধ্যে থাকি। আপনি,শান্তাপু, লাভলুভাই সহ যারা আমার পিতৃ-মাতৃস্থানীয় সিনিয়র, তাঁদের প্রতিটা কথাতেই আমি প্রভাবিত হই। সবাইকে সালাম
ভালোবাসা যখন 'ভালো' হয় তখন তা স্টিমুল্যান্ট হিসেবে কাজ করে। আর যখন ভালোবাসার মধ্যে 'শর্ত', 'বৈষম্য' কিংবা 'লাভ-ক্ষতি'-র হিসাব চলে আসে, তখন তা বাড়তি চাপ হিসাবে কাজ করে। আমরা কে-ই বা বাড়তি চাপ পছন্দ করি বলেন?
এখনও অভিজ্ঞতার ঝুলি খালি, সবে বুঝতে শুরু করেছি। কয়দিন পর জব লাইফে ঢুকতে যাচ্ছি। নতুন জীবন, ভবিষ্যত অজানা। দোয়া করবেন। ভালোবাসা আসলেই প্রয়োজন সবার জীবনে, যতদিন ভালো চালানো যায়, খারাপ কী?
অফটপিকঃ সাইফ ভাই, মাস্টার্স করতে চাচ্ছিলাম নর্থ আমেরিকা থেকে। ওখানকার শিক্ষা-চাকরী এসব নিয়ে নানা মুনীর নানা মত শুনতে পাচ্ছি। এ বছর অ্যাপ্লাই করতে পারলাম না, ২০১৩-তে কষা ট্রাই দেয়ার ইচ্ছা আছে। আপনি আপনার বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যদি কিছু লিখতেন তাহলে আমার মত সদ্য ইঞ্জি গ্র্যাজুদের খুবই উপকার হত!
আছিব,
তোমার ই-মেইল ঠিকানা দিও, যাতে তোমার অফ-টপিকের উত্তর পাঠাতে পারি।
আমি সব সময় মনে করি - ফলাফল শেষ পর্যন্ত যায় হোক না কেন - সব সময় তোমার 'মন' তোমাকে যে পথে চলতে বলে সে পথে চলাই ভাল।
একদম ভালো না বাসলে কী হয় ? 😕 😕
বন্য,
চেষ্টা করে দেখতে পার। আমাদেরকে পরে ফলাফল জানিও।