অজানা যাত্রা – (ভিন্ন জানালা দিয়ে দেখা-২)

[আগের অধ্যায় : ভিন্ন জানালা দিয়ে দেখা]

কালুরঘাটের কাছের গ্রাম উত্তর মোহরার একটি দালান বাড়ীর সামনে গাড়ী আমাদেরকে পৌঁছে দিল । আমরা তখনও ঘটনা প্রবাহের আকস্মিকতায় যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছি। এতগুলি মৃতদেহ একসাথে পড়ে থাকতে আগে কখন দেখিনি। এরা সবাই এক সময় আমার সহকর্মী ছিলেন। ক’দিন আগেও আমরা এক সাথে কাজ করেছি, গল্প করেছি। কি দোষ করেছিল তারা যে এভাবে মরতে হলো তাদের? আমার কানে আমি তখনও শুনতে পারছিলাম হাকিম সাহেবের কন্ঠ – “যদি কখনো না জেনে আপনাকে কোন আঘাত দিয়ে থাকি, আমাকে মাপ করে দেবেন।” সদ্যমৃত, তখনও শরীর থেকে রক্ত ঝড়ছে, এই দৃশ্য যেন কিছুতেই মন থেকে দূর করতে পারছিলাম না। কোথায় যাবো, কি করবো – কিছুই চিন্তা করতে পারছিলাম না।

আমাদেরকে গাড়ী যেখানে নামিয়ে দিল সে বাড়ীটি ছিল মুক্তিযোদ্ধা হারুনদের। বাড়ীর লোকেরা খুব সদয় ভাব দেখালেন আমাদের প্রতি। কোনার একটা ঘরে আমাদের দু’জনকে থাকতে দিলেন। প্রধান বৈঠকখানা ঘরে দেখলাম প্রায় ডজন খানেক লোক বসে আছে এবং গানের অনুশীলন করছে। আমাদের মিলের এক ইলেক্টিকাল ইঞ্জিনিয়ারকে সেখানে দেখলাম। সে আমাকে দেখে এগিয়ে এলো এবং জানালো এই লোকগুলি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের লোক। বিগত চার-পাঁচ দিন ধরে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তারা সংবাদ, দেশাত্ববোধক সংগীত, ইত্যাদি প্রচার করেছে।

তবে গতকাল বিকেল থেকে বেতার প্রচার বন্ধ হয়ে আছে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষনে ট্রান্সমিশন টাওয়ারের ক্ষতি হবার কারণে। ক্ষতিটা অবশ্য তেমন বেশী নয় – টাওয়ার এবং কেবল ইত্যাদির মেরামত যোগ্য কিছুটা ক্ষতি। তাই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের লোকেরা এই ইঞ্জিনিয়ারকে তাদের সাথে থেকে মেরামতের কাজে সাহায্য করতে বলেছে। সাধারণ অবস্থায় এই সব রেডিও ব্যক্তিত্বদের সাথে পরিচিত হতে পেরে আমরা হয়তো খুবই উৎসাহিত বোধ করতাম, কিন্তু তখনও আমরা আমাদের শক থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। দুপুরে এদের সবার সাথে বসে আমরা এক সাথে সাধারণ খাবার খেলাম। যত দূর মনে পড়ে – ভাত, ডাল ও লাঊ তরকারী খেয়েছিলাম।

দুপুরের খাবার পর এই ইঞ্জিনিয়ার আমাকে উত্তর মোহরার আরও ভেতরে এক বাড়ীতে নিয়ে গেলেন যেখানে আমাদের মিলের লেবার অফিসার আলম তার পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন। আলম জানালেন যে এই গ্রামকে তারা আর নিরাপদ মনে করছেন না এবং আগামী কাল তারা আরও অভ্যন্তরে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি যদি চাই তবে তাদের সাথে যোগ দিতে পারি।

Village Pond.bmp

আমি যখন আগের বাড়ীতে ফিরলাম তখন দেখলাম পিংকু বাড়ীর সংলগ্ন পুকুর পাড়ের শান বাধানো ঘাটে একাকী বসে আছে। এক পাশের শিউলি ফুলের গাছ থেকে সুন্দর গন্ধ ভেসে আসছে। পুকুরটা গভীর এবং শান্ত। মৃদ বাতাস বইছে তখন। সমস্ত পরিবেশটা কেমন যেন শান্ত এবং স্বাপ্নীল। আমি এর আগে কখনো গ্রামে বাস করিনি। এই শান্ত গ্রাম্য পরিবেশটা আমার কাছে খুব ভাল লাগলো। আমরা কোন কথা না বলে পাশাপাশি অনেকক্ষণ বসে থাকলাম সেখানে।

সন্ধ্যায় হারুন আমাদের সাথে দেখা করতে আমাদের ঘরে এলো। তার কাধে তখনও একটা রাইফেল ঝুলছে। সুন্দর দেখতে ভদ্র ব্যবহারের ছেলে। এই প্রথম কোন মুক্তিযোদ্ধার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ পরিচয় হল। অধিকাংশ কথা সেই বললো, আমরা চুপ চাপ শুনলাম। সে জানালো যে সে আর্মির বেঙ্গল রেজিমেন্টের লোকদেরকে বলেছিলো যে তারা যেন মিলের কোন লোককে প্রানে না মারে। আর্মি তার কথা না শোনায় সে দুঃখ প্রকাশ করলো। সে আমাদেরকে কোন দুঃশ্চিন্তা না করে তাদের বাড়ীতে যতদিন আমাদের ইচ্ছা থাকতে বললো। এই বাড়ীতে আমরা আর এক জন খুব কর্মঠ মহিলাকে দেখলাম। সে ছিল হারুনের বোন – সম্ভবত তার বড়। আমরা জানলাম যে তার বোনের স্বামী পাকিস্তান আর্মিতে কাজ করেন এবং বর্তমানে পশ্চিম পাকিস্তানে আটকা পড়ে আছেন। তার বাবা-মার সাথেও পরিচয় হলো। সবাই খুব ভাল ব্যবহার করলেন আমাদের সাথে। রাতে আমরা ঘরে বসে মুরগীর গোস্ত ও সাদা ভাত খেলাম।

আমাদেরকে থাকতে দেওয়া এই ছোট ঘরে আমরা মশারীর নীচে শুতে গেলাম সন্ধ্যার কিছু পরেই। সারা দিনের এই ধকলের পর সহজেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম, কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে গেলো যখন দেখলাম দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করেছে পিংকু। সে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করতে লাগলো –

– সাইফ যেও না – তোমাকে মেরে ফেলবে । ওরা গুলি ছুড়ছে… ওরা গুলি ছুড়ছে…

ধাক্কা দিয়ে জাগালাম তাকে।

– তুমি স্বপ্ন দেখছো। ঘুম থেকে ওঠো – বললাম তাকে।

সে ঘুম ভেঙ্গে উঠলো, কিন্তু মনে হলো যেন এক ঘোরের মধ্যে তখনো। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো –
– রক্ত পড়ছে তোমার থেকে।
– কোথায় রক্ত দেখলে? আমার কোন রক্ত পড়ছে না। – বললাম আমি।
– ওই যে রক্ত … ওই যে রক্ত … ওহ অনেক রক্ত – কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সে।

রাতে আরও কয়েকবার এমনি দুঃস্বপ্ন দেখলো সে। আমার ভয় হলো, পাগল হয়ে যাবে নাতো পিংকু? একবার সে বলল – “সাইফ, প্লিজ আমাকে কখনো ছেড়ে যেয়ো না। আমি সব সময় তোমার কথা শুনবো। প্লিজ তুমি মরে যেয়ো না।”

আমি বুঝলাম যে সে তখনও স্বপ্ন দেখছে। তাকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে রাখলাম বুকে, আর নিঃশব্দে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করলাম – ‘আমার জীবনে যাই নেমে আসুক, আমি কখনো তাকে ছেড়ে যাবো না।’

পরের দিন সকাল খুব শান্ত এবং সুন্দর মনে হলো। পাখীর ডাক শুনলাম এবং বাতাসে বসন্তের আবেশ পেলাম। আমরা আবার বাইরে এসে পুকুর পাড়ের সিড়িতে বসলাম। আমাদেরকে দেখে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার এসে জানালেন যে তিনি তখনই কক্সবাজারের পথে রওয়ানা হচ্ছেন এবং তিনি বেতার কর্মীদেরকে জানিয়েছেন যে দরকার হলে আমিও তাদেরকে সাহায্য করতে পারবো যেহেতু আমিও একজন প্রকৌশলী। আমি কিছু বলার আগেই চলে গেলেন তিনি।

পিংকু তখন কিছুটা ভাল বোধ করছে। সকালের নাস্তার পর সে বেতার কর্মীদের গানের অনুশীলনীতে যোগ দিতে চাইল। আমি জানতাম না যে সে গান গাইতে পারে। আগে কখনো তার গান শোনার সুযোগ হয়নি আমার। তবে পিংকুর পরিচিত কোন নজরুল বা রবীন্দ্র সঙ্গীতের বদলে বেতার কর্মীরা নতুন লেখা গানের অনুশীলনী করছিল। তাই তখনি সরাসরি তাদের সাথে যোগ দেবার বদলে আমরা সেখানে বসে তাদের গান শুনতে থাকলাম।

সারাদিন ধরে আমরা থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শুনছিলাম। কিন্তু দুপুরের খাবারের পর থেকে এই শব্দ আরও কাছে থেকে এবং আরও জোরে শুনতে থাকলাম। কেউ একজন জানালো তারা (পাকি আর্মি) মর্টার শেল ছুড়ছে এবং আমাদের থেকে মাত্র ৪-৫ মাইল দূরে রয়েছে। এর আগে আমি কখনো এত জোড়ালো আওয়াজের গোলার শব্দ শুনিনি। আমার কাছে মনে হল তারা যেন আরও কাছ থেকে গোলা ছুড়ছে। পিংকু খুব নার্ভাস হয়ে যাচ্ছিল মর্টারের এই জোড়ালো আওয়াজে এবং মনে হচ্ছিল আমাদের খুব কাছেই এগুলি এসে পড়ছে।

এবার দেখলাম আমাদের আশ্রয়দাতারাও চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে পড়েছেন। তাদের দুঃশ্চিন্তার মূল কারণ হচ্ছে আমরা যে বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছি সেটা ছিল মুক্তিবাহিনীর এক ‘সেইফ হাউস’ এবং এই বাড়ীর চিলা-কোঠায় আগে থেকেই অনেক গোলাগুলি জড়ো করে রাখা ছিল। পাকি আর্মি এসে যদি এই গোলাগুলির খোঁজ পায় তাহলে বাড়ীর কোন লোককেই আর জীবন্ত রাখবে না। হারুনের বোন ছিল খুব সাহসী এবং ঠান্ডা মাথার। সে চিলে কোঠায় উঠে অন্যদের সাহায্যে গোলাগুলি নামিয়ে পুকুরে ফেলা শুরু করলো। আমি তার এই ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা ও আদেশ দেবার ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হলাম। তার মত সাহসী মহিলা আমি আর খুব একটা দেখিনি।

যখন মর্টার শেলের শব্দ আরও প্রবল হয়ে উঠলো এবং মনে হল এগুলি আধা-মাইল দূরত্ব থেকে ছোড়া হচ্ছে তখন আর সেখানে থাকা উচিত মনে হলো না। আমাদের আশ্রয় দাতাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা রাস্তায় নেমে এলাম। প্রথমে হারুন আমাদেরকে থামাতে চেয়েছিল, কিন্তু তার মা তাকে বললেন আমাদেরকে যেতে দিতে।

গ্রামের রাস্তায় কিছুটা পথ হাটার পর সৌভাগ্যক্রমে আমরা দুটো রিক্সা পেয়ে গেলাম। রিক্সাকে পথ দেখিয়ে আগের দিন আলম পরিবার যে বাড়ীতে আছে দেখেছিলাম সেখানে উপস্থিত হলাম আমরা। যখন গ্রামের এই কুড়ে ঘরের বাড়ীতে এসে পৌছালাম আমরা, তখন চারি পাশে প্রায় সন্ধার আধার নেমে এসেছে। সম্ভবত আমাদের মিলের কোন শ্রমিকের বাড়ী ছিল এটি। আলম বাড়ীর মালিকের সাথে কথা বলে আমাদের জন্যে বাড়ীর পাশের গোলা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিল। ছোট এই ঘরে বড় একটা ধানের গোলা ছিল। আমাদের সৌভাগ্য যে সেখানে একটা ছোট কাঠের তক্তপোষও পড়ে ছিল। বাড়ীর মালিকের দেওয়া কিছু খিচুরী একটা এ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে নিয়ে এলাম আমি পিংকুর জন্যে। এখান থেকেই দুজনে ভাগ করে খেলাম। জীবনে এই প্রথম আমরা কোন শবজি, তরকারী বা মাংস ছাড়া শুধু খিচুরী খেলাম আমাদের ‘ডিনারে’। আমার মনে আছে আমি তখন পিংকুকে বলেছিলাম – “আমরা এখন গরীব হয়ে গেছি।”

আমরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কোন মতে রাতটা কাটালাম। যখন সকাল হলো তখন আমরা অন্য সবার সাথে হেটে নদীর ধারে এসে নৌকায় উঠলাম। নৌকা কর্ণফুলীর উজানের পথ ধরলো তারপর ঢুকলো হালদা নদীতে। প্রায় এক ঘন্টা পরে আমরা পৌছালাম আমাদের গন্তব্যে। চারি দিকে পানিতে ঘেরা প্রায় দ্বীপের মত দেখতে এই প্রত্যান্ত গ্রামের নাম – ‘চরণ দ্বীপ’। আমি জানতাম যে আমাদের অজানা যাত্রা শুধু শুরু হয়েছে মাত্র। তবু ভাল লাগল এই ভেবে যে আমার জীবনে সব চাইতে মূল্যবান যে – ‘আমার পিংকু’ – আমার সাথে আছে। আমি তাকে সব রকম আঘাত ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে রাখতে তখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম, আমার জীবন দিয়ে হলেও।

Boat

পরের আধ্যায়ঃ নববর্ষ ‘৭১ – (ভিন্ন জানালা দিয়ে দেখা-৩)

৪,৮৯০ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “অজানা যাত্রা – (ভিন্ন জানালা দিয়ে দেখা-২)”

  1. মাহমুদ (১৯৯৮-২০০৪)
    আমি জানতাম যে আমাদের অজানা যাত্রা শুধু শুরু হয়েছে মাত্র। তবু ভাল লাগল এই ভেবে যে আমার জীবনে সব চাইতে মূল্যবান যে – ‘আমার পিংকু’ – আমার সাথে আছে।

    :salute: :salute:

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সিসিবির কল্যানে মুক্তিযুদ্ধ সময়ের এরকম প্রানবন্ত স্মৃতিকথা পড়তে পারছি... ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য, পরের পর্বের অপেক্ষায়...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. জিহাদ (৯৯-০৫)

    আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে যারা নিজের চোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন জীবিত সেসব মানুষের সকলেরই কলম হাতে তুলে নেয়া। হাতে সময় খুব বেশি নেই। প্রত্যক্ষদর্শী আস্তে আস্তে কমে আসছে। যারা আছেন তাঁদের উপস্থিতিতেই যুদ্ধবিরোধীরা যেভাবে ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছে এখনই যদি যু্দ্ধের সত্যিকার ইতিহাস তুলে রাখা না হয় তাহলে আর কখনোই হবেনা।

    ভাইয়া লিখে যান। সময় লাগুক, তারপরও লিখে যান।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  4. আছিব (২০০০-২০০৬)

    ভাই,আমার আশঙ্কার কথা জিহাদ ভাইই বলে দিয়েছেন।আপনার কাছে শুধু অনুরোধ,সবই পারলে বলে যেয়েন আমাদের কাছে।আমরা আমাদের স্মৃতিতে রাখব,পৌঁছিয়ে দিব পরের উত্তরাধিকারদের কাছে।খুবই সুন্দর লিখেছেন।ছবি দিয়ে আরো বৈশিষ্ট্যময় করে তুলেছেন।আমার খালি মনে হল ইশ বর্ণনার সেই পুকুর আর সেইদিনের চারণ দ্বীপের ছবিটা যদি দিতে পারতেন!

    ইয়ে ভাই,আপনার আব্বু-আম্মুরা তখন কে কোথায় ছিলেন?আর শ্বশুর-শ্বাশুড়ী?

    জবাব দিন
  5. জিনাত (২০০২-২০০৮)

    আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনাগুলো কোন গল্প বা নাটককে ও হার মানায় ।সেই সময়ের মানুষের অসহায়তা আর সাহসিকতা বোধহয় আমরা কখনো বুঝতে পারবো না ।মনে হচ্ছিল যেন কোন সিনেমার পান্ডুলিপি পড়ছি ।আমার এক ফ্রেন্ড আছে সে ক্লাস এইট পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় পড়তো ,দেশে এসে এ লেভেলে পড়েছে ।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার ধারণা খুবই অস্পষ্ট । অবশ্য এ ব্যপারে সে জানতে আগ্রহী । আমি তাকে আপনার এই পোস্টটা পড়ে শুনিয়েছি এবং শুনে সে এত অবাক হলো যে বলার নয় । আসলে মুক্তিযুদ্ধকে জানার দায়িত্ব আমাদেরই ।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।

    জবাব দিন
    • সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

      জিনাত,
      মুক্তিযুদ্ধ এক বিরাট ইতিহাস। কারও একার পক্ষে সেটা বর্ণনা করা দূরুহ। এটা অনেকটা অন্ধের হাতী দেখার মত। তোমার বন্ধুকে বলো খোলা মন নিয়ে সব কিছু দেখতে ও বুঝতে চেষ্টা করতে। তোমাদের প্রজন্মের ঊপর নির্ভর করছে জাতীর ভবিষ্যত।

      জবাব দিন
  6. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    খুব ভালো একটা দলিল হচ্ছে। আমার এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে আপনি সৎ ভাবেই বর্নণা গুলো দিচ্ছেন, বায়াসড না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু পড়তে গেলেই ভয় লাগে, মনে হয় বায়াসড কিছু পড়ছি। কিন্তু আপনার লেখা পড়ে মোটেই তা মনে হচ্ছে না। আশকরি আপনি শেষ পর্যন্ত এইভাবেই নির্মোহ বর্নণার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। এটা দাবী করলাম ছোট ভাই হিসেবে। আর একটা অনুরোধ করবো, পুরোটা লিখে ফেলার পরে আপনার নিশ্চয় মনে হবে অনেক কিছু বাদ পড়ে গেল, নতুন করে মনে পড়বে অনেক কিছু, সেগুলোও জুড়ে দিয়েন, হয়ত ধারাবাহিকতা থাকবে না, কিন্তু একবার লেখা হয়ে গেলে গুছিয়ে নিশ্চয় আবার গোড়া থেকে শুরু করতে পারবেন। আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না, আপনাদের এইসব অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য কতটা জরুরী।

    ভাবী প্রতি আপনার ভালোবাসার প্রকাশটা অসাধারন।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

      ফয়েজ,
      একটা ইংরেজী সিনেমা দেখেছিলাম - "Absence of Malice" - সিডনী পোলাকের তৈরী, তাতে পল নিঊম্যান ও স্যালি ফিল্ড অভিনয় করেছিলো। এক সত্য সন্ধানী সাংবাদিকের কাহিনী। সত্য প্রকাশের কারনে এক মহিলার আত্মহত্যার পর নায়কের প্রশ্ন "What is truth".
      এ প্রশ্নটা সব সময় আমাকে চিন্তাক্লিষ্ট করে। তাই আমি বরং নিজেকে ক্যামেরার চোখ বলে ভাবার চেষ্টা করি। যা নিজের চোখে দেখেছি তাই তুলে ধরার চেষ্টা করি কোন রকম বিশ্লেষন ছাড়া। বিশ্লেষন করা পাঠকের হাতে ছেড়ে দিতে চাই।

      জবাব দিন
  7. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    সাইফ ভাই, অসাধারণ বর্ণনা। মনে হচ্ছে আপানার সঙ্গে আমিও একই যাত্রায় পথিক। এইরকমভাবে ১৯৭১-এ ২৭ মার্চ কার্ফ্যু তোলার পর মতিঝিল কলোনির বাসা ছেড়ে আমরা বাসাবো, মাদারটেক, নন্দীপাড়া, ত্রিমোহনী হয়ে নরসিংদী গিয়েছিলাম; কখনো হেটে, কখনো রিকশায়, কখনো নৌকায় করে। হাজার হাজার মানুষ তখন ওই পথে ঢাকা ছেড়ে পালাচ্ছিল। আপনার লেখা পড়তে পড়তে '৭১-এ ফিরে যাচ্ছি বারবার। তখন আমার বয়স ৯-১০ বছর মাত্র। অনেকবারই মনে হয়, ওই পথটা ধরে যদি এই বয়সে আরেকবার যেতে পারতাম! একটা অন্যরকম লেখা হতে পারতো হয়তো। কিন্তু মনে হয় না আর কখনো ওটা হবে। লেখার মাধ্যমে ওই স্মৃতি নতুনদের জন্য দিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো কাজ। আর সেটাই আপনি করছেন।

    ভালো লাগছে সাইফ ভাই, খুব ভালো লাগছে। এতোদিন ইংরেজিতে লিখতেন, এখন বাংলায় লিখছেন। আপনার আগ্রহ-একাগ্রতা আমাদের সবাইকে উৎসাহী করে তুলছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff: (সম্পাদিত)


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  8. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    লাবলু,
    আমার বাংলা লেখার ব্যাপারে তোমার ঊৎসাহ অনেক কাজ করেছে সে জন্যে ধন্যবাদ তোমারই প্রাপ্য।
    পরে তোমার কাছে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করব সময় সাপেক্ষে।

    জবাব দিন
  9. মেলিতা

    লেখাটা অনেক ভালো হচ্ছে :hatsoff: । আপনার স্মৃতিশক্তি অনেক ভালো ভাইয়া।

    আম্মু আব্বুর কাছে অনেক যুদ্ধের গল্প শুনেছি।আব্বু মুজিব বাহিনীতে ছিলেন। এখন মনে হচ্ছে তাদের গল্প গুলো লিখে ফেলতে পারলে ভালো হত।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।