আমার আগের ব্লগ ‘দৃষ্টিনন্দন দৃষ্টিতে’ বলেছি আব্বার ডান চোখে cataract সার্জারীর কথা।বাম চোখেও সার্জারী করা দরকার।তাই আমি চাচ্ছিলাম যত দ্রুত করে ফেলা যায়।দেরী হলে যদি আবার কোন অসুবিধা হয়!তাই আব্বাকে তাগিদ দিচ্ছিলাম এই বছরের শুরুতেই করে ফেলার জন্য।কিন্তু যথারীতি তাঁর সার্ভিস,পারিবারিক,সামাজিক ব্যস্ততার কারনে বিলম্বিত হচ্ছিল।আমি বারবার বিরক্ত হয়ে বলেছি তোমার চোখ আগে বাকী সব পরে।টাকাসহ সবই ত রেডি করে রেখেছি।খালি ঢাকা আসবা আর অপারেশন হবে।আরেকটি চোখ ভাল হওয়ার কারনে চশমা ছাড়াই দিব্বি ভাল দেখতে পাচ্ছেন তাই মনে হয় তেমন তাগিদ দেখা যাচ্ছিল না তাঁর মধ্যে।আর ঝামেলাও যেন শেষ হয়না।এবার আর অনেককিছু নিয়েই আমাদের ভাবতে হয়নি।আগেই চিন্তা করেছিলাম সেই ইসলামিয়াতেই সেইম ডাক্তার দিয়ে সেইম লেন্স নেয়া হবে।আগের ম্যাচের সাফল্যে কোচরা যেমন উইনিং কম্বিনেশন ভাঙ্গতে চাননা এখানে আমার ভূমিকাও ছিল তাই।
অনেক প্রতীক্ষার পর ঠিক হলো মঙ্গলবার এসে তারপরদিন ১০ মার্চ বুধবার ভর্তি করানো হবে।বৃহস্পতিবার ১১ মার্চ সার্জারী করা হবে।ডাঃ সারোয়ার আলমের সিডিউল বৃহস্পতিবার সেটি চিন্তা করেই আসব।আমি একদিন আগেই মঙ্গলবার আসতে বলেছিলাম।কারন বুধবার সকালে আর্লি হাসপাতালে না গেলে সব টেষ্ট করার পর কেবিন না পাওয়া গেলে কি করবো?এখন অবশ্য এই সমস্যারও সমাধান আছে।কেবিন না নিয়ে ডে কেয়ারে ভর্তি হওয়া যায় যদি কারো বাসা কাছে থাকে।আমার চাচার বাসা ইন্দিরা রোডেই।সব কিছুরই ত বিকল্প ভেবে রাখতে হয়।সার্জারীর আগের দিন ভর্তির জন্য রেজিস্ট্রেশন করে চলে যেতে হয়।তারপরদিন ডে কেস সার্জারীর জন্য আলাদা ইউনিট আছে সেখানে রিপোর্ট করতে হয়।ওখানেও ব্যবস্থা খুব ভাল। প্রত্যেক রোগীর জন্য আলাদা বেড আছে।ওখান থেকে ওটিতে গিয়ে সার্জারী করে আবার সেখানে ঘন্টা দুয়েক রেস্ট নিয়ে রোগী বাসায় চলে যেতে পারে।তারপর দিন এসে ব্যান্ডেজ খুলে ভিসন চেক করে ছেড়ে দেয়া হয়।
কিন্তু আমার হিসেব নিকেশ অনুযায়ী বাস্তবতার বারবারই ভিন্নতা দেখতে পাচ্ছিলাম।বাসায় ঝামেলার কারনে মঙ্গলবার আসতেই পারলেন না।ভাবছিলাম সময়মত হাসপাতালে না গেলে আসল উদ্দেশ্যই ত ব্যহত হবে।কারন টাঙ্গাইল কাছে হলেও জ্যাম ত থাকবেই ঢাকায় তাই আমি টাইম হাতে রেখেই আসার পক্ষপাতি ছিলাম।যাইহোক রওনা দিলেন ভোরে টাঙ্গাইল থেকে।সাড়ে ৮ টায় ফোন করে জানতে পারলাম রাস্তায় রেইলক্রসিং এ ট্রাক এক্সিডেন্টের কারনে রাস্তা ব্লক।একেই বলে অভাগা যেদিকে যায় সগরও শুকিয়ে যায়।বুধবার সকালে আমার প্রতীক্ষার প্রহর আর কপালের ভাঁজ বাড়ছিল।তারপরও বিচলিত না হয়ে ভাবলাম দেখা যাক কি হয়।যাইহোক অনেক বাধা পেরিয়ে আসলেন হাসপাতালে এবং মুহুর্তের মধ্যে এই টেস্ট সেই টেস্ট করে ডাক্তাররা বললেন কোন প্রব্লেম নাই।চোখের কন্ডিশন ভাল,ব্লাড প্রেসার সহ সবকিছু নরমাল।তাই ভর্তি করা হল।
তারপরদিন সকালে সার্জারীর আগে আব্বাকে বললাম ‘নার্ভাস?’।তিনি না সূচক জবাব দিলেন।কারন এটি তেমন জটিল কোন অপারেশন না।তাছাড়া আরেক চোখ করানোর কারনে এইবার তাঁর কাছে সার্জারী ‘জলবত তরলং’।তারপরও যেকোন সার্জারীর আনসাক্সেসফুল কেইস থাকতেই পারে।আর চোখের ব্যাপার সবচে’ সেন্সেটিভ।আমি ‘হোপ ফর দা বেষ্ট,প্রিপেয়ার্ড ফর দা ওরস্ট’ নীতিতে বিশ্বাসী।আমারা আমাদের বেষ্ট ট্রাই করেছি বাকী আল্লাহ্ ভরসা। আম্মা টেনশন করতে পারেন তাই আমি হাসপাতালে রাখলাম না,চাচার বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।আমার এক কাজিন ছিল সেও আব্বা ওটিতে ঢোকার পর চলে গেল।এখানে শুধু শক্ত নার্ভের অধিকারী বাপ বেটা।একজন ওটিতে আরেকজন প্রতীক্ষারত(টাইম পাস করার জন্য ঐদিনের পত্রিকা ‘ফার্স্ট লাইট’ কিনে নিয়েছিলাম আর মোবাইলে গান শোনা)।একসময় ওটি থেকে আব্বা বেরিয়ে এলেন এবং বললেন সব ঠিকমত হয়েছে।ডাক্তার ত পরিচিত তাই ওখানে সংক্ষিপ্ত কিছু বাতচিত হয়েছে আব্বার সাথে।হাই হ্যালো থেকে শরু করে আব্বার জব সেন্টার কোথায় এইসব।সার্জারীর পর আব্বাকে বলে দিয়েছেন ‘ইট ওয়াজ সাক্সেসফুল’।আবার তরল খাবার হিসেবে থাই স্যুপ এনে দিলাম।ঐদিন ভালমতোই কেটে গেলো।তারপরদিন ব্যান্ডেজ খোলা হবে।
পরীক্ষা ত ভাল হলো এবার রেজাল্টের পালা।ভিসন টেস্ট করে দেখা গেল (6/36) থেকে (6/12) হয়েছে।এক সপ্তাহ ড্রপ ইউস করলে আরো পরিস্কার হয়ে আগেরটার মত (6/9) হবে আশা করা যায়।আজ রিলিজ করে দিল।এক সপ্তাহ পর আবার চেক আপের জন্য আসতে হবে তারপর আরো একমাস পর ফাইনাল চেক আপ।এখন একটু সাবধান থাকতে হবে।কারন আল্লাহ্ প্রদত্ত লেন্স আর আর্টিফিসিয়াল লেন্স ত তফাত থাকবেই।আপনারা সবাই প্লিজ আমার আব্বার জন্য দোয়া করবেন।
বেরিয়ে আসার পথে দেখলাম বরিশালের সেই দরিদ্র মহিলা যাকে দেখেছিলাম বুধবার, সর্বনিম্ন যে অপারেশনের রেট ৩৫৮৫ টাকা দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত ছিল।তার মায়ের চোখের অপারেশন করাবে।তারা ভেবেছিল চোখের সমস্যা চশমা দিবে চলে যাবে।আমার ইচ্ছা ছিল হেল্প করি কিন্তু আব্বাকে নিয়ে দৌড়ের উপর ছিলাম।
এখন মনে হচ্ছে হেল্প করা উচিত ছিল।আব্বাকে বললাম,আব্বা বললেন জিজ্ঞেস কর।আমি মহিলাকে বললাম
-আপনার আম্মার অপারেশন হয়েছে?
-অইছে,ক্যান?
-আপনাদের সমস্যা দেখলাম, টাকা দিতে পারছেন?
-হ দিছি কষ্ট কইরা।
-আমি যদি আপনাকে কিছু টাকা দিয়ে হেল্প করি নিবেন?
মহিলা নীরব।মৌনতা সম্মতির লক্ষন মনে করে হাতে কিছু টাকা গুজে দিলাম।বললাম আপনার ত ওষুধ কিনতে আরো টাকা লাগবে।আব্বার সার্জারী করতে এসেছি মনটা স্বভাবতই নরম।আর চোখে না দেখার সমস্যা যে কি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারি।অন্যকে হেল্প করলে আব্বাকেও আল্লাহ রহম করবেন বলে মনে হয়েছিল।বেরিয়ে আসার পথে দেখলাম বৃদ্ধ মহিলা আমাকে ডাকছেন।
-বাবা তুমি আমারে টেকা দিছ এই ঋন আমি কেমনে শোদ করুম?
-না সমস্য নাই।আপনার অপারেশন ভাল হইছে?চোখে দেখেন ঠিকমত?
-হ দেহি
-দোয়া কইরেন।
আব্বার সাক্সেসফুল সার্জারী, দৃষ্টিপ্রত্যাশী একজন অসহায় মহিলার দোয়া এবং মানষিক তৃপ্তি নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।
ফার্স্ট 😀 😀 😀
অসাধারন।
আরো অসাধারন, ১ম স্থান :awesome:
হয় নাই, হয় নাই। বেটার লাক নেক্সট টাইম 😉
এই হাঁসের ছানাটা যে কোনদিক দিয়া আয়া পরলো ! 😕 বেচারা হায়দার।
নিজের পোষ্ট দেইখা ছাইড়া দিলাম। :goragori:
চাচার জন্য শুভকামনা। শিগ্গিরই তিনি পুরো সুস্থ হয়ে উঠবেন।
অপারেশনের এতো সুন্দর বর্নণা পড়ে তো মনে হচ্ছে নিজের চোখেরও অপারেশন কইরা ফালাই!! তাইলে এখনকার চেয়ে ভালো দেখতে পাবো!! :-B :-B :-B
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মানুষ মানুষের জন্য - তুমি সেটা আবার দেখিয়ে দিলে। চাচা শীঘ্রই ভালো হয়ে উঠুক।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আবদুল্লাহ ভাই,আল্লাহ আপনার ভাল করুন...
চাচা দ্রুত ভাল হয়ে উঠুক সেই দোয়া রইল। অনুভূতির বিবরনগুলো খুব টাচিং।
ট্রাই নিতে পারেন লাবলু ভাই।আমার না হয় xray vision/শকুনের দৃষ্টি(6/6) কিন্তু তারপরো(6/9)ই বা কয়জনের আছে।এডভান্স লেন্স চেঞ্জ কইরা ফালান।এই অপারেশনের মর্মকথাই হলো চশমা ছাড়া ভাল দেখা।আরেকটা কথা-
আমার প্রতিটা পোষ্টে আপনার ইন্সপাইরিং কমেন্ট দেখে খুব ইন্সপায়ার্ড হই।ধইন্যাপাতা 😀
ধন্যবাদ আপু।এটা আমার বাবা মা'র শিক্ষা।'কেউ যদি কর্মক্ষম হয় তাকে দান করোনা।আর যদি মনে কর কেউ অসহায় তাকে ডেকে হেল্প কর'।
ভাল লাগলো পোস্টটা পড়ে...
সবাই দোয়া করবেন।জুনি সিনি সবাইকে ধন্যবাদ কমেন্টানোর জন্য।
আবদুল্লাহ ভাই কি অবস্থা, কেমন আছেন ? রিইউনিয়নে গেসিলেন? আপনার সাথে কনটাক্ট করতে পারতেছি না তাই আপনার ব্লগে লিগলাম।
হ্যা, রিইউনিয়নে গেছিলাম এবং অনেক মাস্তি হইছে।কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ। :hug: