সংস্কৃতি(!)মনা মনটার বিড়ম্বনা-২

মনে পড়ছে ক্লাস এইটের কাল্‌চারাল ইভ্‌নিং এর কথা। সেবার আমি নাম লেখালাম উপস্থাপক হিসেবে। এই ভাল । বেশ একটা একটা অর্গানাইজার গোছের ভাব এসে গেছে।

দলীয় সঙ্গীত ঠিক হলো – প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ… এই গানটি। ভাল গান। বাংলার শ্রদ্ধেয় রিয়াজ উদ্দীন স্যার দায়িত্বে ছিলেন। স্যার চাচ্ছিলেন এই গানটার শেষ পর্যায়ে একটু উঁচু স্কেলে হামিং দেয়া হবে -বাংলাদেশ…বাংলাদেশ …বাংলাদেশ……। আর বাকিরা গানের শেষাংশ গাইতে থাকবে। নিঃসন্দেহে উত্তম পরিকল্পনা। কিন্তু সমস্যা হলো সাইজ মত ঐ স্কেলের কোন গায়ক পাওয়া যাচ্ছে না।

এ রকম হতাশাপূর্ণ পরিস্থিতিতে আমার উপস্থাপনার স্ক্রীপ্ট নিয়ে আমি গেলাম স্যারের কাছে। স্যারের হঠাৎ কি মনে হলো জানি না- উনি আমাকে একটা চান্স দিতে চাইলেন। বললেন চেষ্ঠা করতে। মন পুরোপুরি সায় না দিলেও হাল্কা কনফিউশন নিয়ে ঐ জায়গাটুকু করলাম। স্যার বললেন- এইতো ! (মানে এতক্ষন কোথায় ছিলে ছুপা রুস্তম !!) :clap:

এই কথা শুনে আমি বহুত মোরাল পেয়ে গেলাম। একেবারে চোখ বুজে চরম আবেগ নিয়ে গাইলাম আবার – বাংলাদেশ…বাংলাদেশ …বাংলাদেশ……। 😀
স্যার এই বার সন্তুষ্ট হলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন – ‘উত্তম রূপে অনুশীলন করো। উপস্থাপনা অন্য একজন করুক; তুমি বরং এই গানটাই করো।‘

মনে কিঞ্চিৎ চোট পেলাম। 🙁
যাইহোক উপস্থাপকের পদ খুইয়ে আমি গায়ক হিসেবে অভিষেক পাওয়ার জন্য একান্ত মনে নিবিষ্ট হ’লাম।

আসলো অভিষেক দিবস। আমাদের কলেজ অডিটরিয়াম হাউসফুল। (পরে শিখেছি – এর মধ্যেও গ্যাপ মারা পার্টি কিছু রয়ে যায় !) মঞ্চের মাঝখানে টেবিলে এক পাশে তবলা আর মাঝে হারমোনিয়াম। আমরা সব মিলিয়ে ৭/৮ জন হবো। তিনটি মাউথপিসের ডিস্পোজাল হচ্ছে- একটি হারমোনিয়ামে- একটি তবলায়- আর অপরটি গায়কদের মাঝে। আমি ‘হাই পিচ ভোকাল’ বলে আমার অবস্থান মাঝে । যার অর্থ হচ্ছে- মাঝের মাউথ পিসটি ঠিক আমার সামনে।

বেশ। শুরু হলো আমাদের দলীয় সংগীত।

কথায় বলে না – যখন ভাগ্যের চাকা ফাইস্যা যায় – তখন তা কোন দাড়ি-কমা’র ধার ধারে না।
আমার ও বুঝি সেই হাল হলো !

গানের অন্তরা শেষ হতে না হতেই (পরে জেনেছি) কোন এক অজানা কারনে (হয়তো আমার অভিষেক ভাগ্য এরূপই হওয়ার কথা ছিল !) হারমোনিয়াম আর তবলার মাইক্রোফোন দুটি এক্কারে বোবা হয়ে গেল। আমরা যারা গান গাচ্ছিলাম- তাদের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব ছিল না। আর আমার তো প্রশ্নই ওঠে না। কেননা আমি চরম আবেগে চোখ বন্ধ করে গাচ্ছিলাম।। ;))

ফলে ঘটনাটা হলো এরকম- পুরা অডিটরিয়ামে সুনশান নীরবতা। হারমোনিয়াম বা তবলার কোন বালাই নেই- মাঝ থেকে শোনা যচ্ছে শুধু একজন উঁচু স্কেলে গেয়ে যাচ্ছে – বাংলাদেশ…বাংলাদেশ …বাংলাদেশ……।
😉

রীতিমত উরি বাবা টাইপ অবস্থা !!
আর কি লিখব – এই হলো গায়ক হওয়ার অভিষেক দিবসের কথা।
‘মিস্টার বাংলাদেশ’ খেতাবটা কানের পাশ দিয়ে শাঁই করে কেটে বেরিয়ে যেয়ে আমার জান ছুটিয়েছে । :-B

এরপর… আবার আমার অবুঝ মনটাকে লাগাম টেনে রাখলাম। মাঝে হাল্কা নাটকে টুকটাক রোল মিলেছিল। আর শেষে এসে উপস্থিত বক্তৃতা দিয়ে আমার ক্যারিয়ার পোক্ত হয়েছে।
😕

কিন্তু গায়ক হওয়ার ভুত পালিয়েছিল আমার ঘাড় থেকে। কিন্তু আমার ঘাড় থেকে নেমে ঐ ভূতটা যে আমার বন্ধু মুজিবের ঘাড়ে চেপে বসবে তা ভাবিনি। তাও আবার যখন ক্লাস ইলেভেন এ যখন উঠলাম। সে ভূত, মুজিব কে গান গাইয়ে ক্ষান্ত দিলে চিন্তার কোন কারন ছিল না। কেননা মুজিব ভাল গীটার বাজিয়ে গান করতো তখন।

কিন্তু, আমি বাটে পড়লাম যখন মুজিব চেয়ে বসলো যে -আমাকেও একটা গান গেতে হবে। আর ও তাতে গীটার বাজিয়ে দেবে। আমি মনে মনে নিজেকেই শুধালাম –
‘আবার। মানে আমি ! আবার কেন রে ?’

তারপর…

থাক। আজ আর না। শেষের সাস্পেন্স টা আগামী পর্বে~
B-)

৮৮১ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “সংস্কৃতি(!)মনা মনটার বিড়ম্বনা-২”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ভাইয়া, নামে কিছুটা পরিবর্তন আনার জন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত। ওয়ার্ডপ্রেস প্লাটফর্মে ব্লগিং এর একটা ঝামেলা হচ্ছে ইংরেজী ভাষা ব্যতীত অন্য কোন ভাষাতে ব্লগিং করলে যদি পোস্ট টাইটেল বড় হয়ে যায় এবং যুক্তাক্ষর থাকলে post slug বলে একটা জিনিস আছে সেটা অনাবশ্যক ভাবে অনেক বড় হয়ে যায়। ফলে পোস্ট মাঝে মাঝে পাবলিশ হতে চায়না। আপনার পোস্ট দুটির ব্যাপারেও একই ঘটনা ঘটেছিল।

    আশা করি আমাদের সীমাবদ্ধতাটুকু বুঝতে পারবেন। ধন্যবাদ।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. আলম (৯৭--০৩)

    পুরা অডিটরিয়ামে সুনশান নীরবতা। হারমোনিয়াম বা তবলার কোন বালাই নেই- মাঝ থেকে শোনা যচ্ছে শুধু একজন উঁচু স্কেলে গেয়ে যাচ্ছে - বাংলাদেশ…বাংলাদেশ …বাংলাদেশ……।

    :clap:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।