স্বদেশপ্রেম, দেশের প্রতি ভালোবাসা অথবা জাতীয়তাবাদ, এসব যখন মানুষের চিন্তা-চেতনায় স্থান নেয় তখন এসব নিয়ে মানুষ কখনই তাদের মনে অস্পষ্টতা বা বিভ্রান্তি রাখে না। যদি কেউ বাংলাদেশকে ভালোবাসে তবে সে কখনই বলবে না যে, “আমি দেশকে ভালোবাসি” বরং বলবে, “আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি”—–অবশ্যই সুস্পষ্টভাবে, কোন সংকোচ না রেখেই। অথচ বাংলালিংকের এই বিজ্ঞাপনটা/TVC শুরুই হয়েছে “দেশের” এই শব্দটা দিয়ে। যেহেতু বিজ্ঞাপনে দেশপ্রেমের বিষয়টা মুখ্য সেহেতু “দেশ” শব্দটার পরিবর্তে “বাংলাদেশ” শব্দটা ব্যবহার করতে পারতো। “বাংলাদেশ” শব্দটা ব্যবহার করতে তাদের সংকোচ/অনীহা কেন?
“বাংলাদেশের জন্য শর্তহীন ভালোবাসা ফুটে উঠুক আপনার মোবাইল নাম্বারে” – এখন শুনতে/পড়তে কেমন লাগে? বেখাপ্পা, খারাপ নাকি চরম অশ্লীল?
বিজ্ঞাপনে মোবাইল নাম্বারের একটা template ব্যবহার করা হয়েছে। তা হলো 01971XXXXXX . Graphics এ দেশের প্রতি ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছে আলাদা একটি বক্স, যাতে 1971 সংখ্যাটি পৃথকভাবে চেনা যায়। কিন্তু বাস্তবে কি হবে? বাস্তবে এই সংখ্যাটি যখন বাদবাকি অন্য ছয়টি সংখ্যার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে, তখন কি সংখ্যাটি (1971 সাল) আলাদাভাবে, অনায়াসে চেনা যাবে? (যেমনঃ 01971668471) তাহলে বাংলালিংকের ভাষ্য মোতাবেক দেশের প্রতি ভালোবাসা মোবাইল নাম্বারে কিভাবে ফুটে উঠবে?
১৯৭১ সালে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার জন্য সাধারন মানুষ নিজের জীবন কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জীবন বিসর্জন দিয়ে, আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করে, বিরাঙ্গনা হয়ে, সর্বপরি সবকিছু জেনে বুঝে যথাসম্ভব সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে। আজ স্বাধীনতার এতোগুলো বছর পর বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার মূল্য মাত্র দুইশ (২০০.০০) টাকা। ঐ দুইশতটি টাকার ত্যাগ (কত্ত বড় ত্যাগরে বাবা) স্বীকার করলেই মিলবে বাংলালিংক কর্তৃক বাংলাদেশকে ভালোবাসার স্বীকৃতি। ভালোই তো, ভালো না……… রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে দেয় মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র আর আপনি-আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি কিনা তার সনদপত্র দেবে বাংলালিংক।
বাংলালিংকের কথা মতো দেশের প্রতি নিঃশর্ত (?) ভালোবাসা যদি মোবাইল নাম্বারে ফুটিয়ে তুলতে চান তবে দুটি শর্ত অবশ্য পালনীয়।
প্রথমতঃ টাকা খরচ করে সিম কেনার বিষয়টা।
দ্বিতীয়তঃ বাংলালিংকের দ্বারস্ত হতে হবে ঐ 1971 সিরিজের সিমের জন্য।
আপনার কাছে যত টাকাই থাকুক বাংলালিংকের কাছ থেকে সিম না কিনলে ঐ বিশেষ সিরিজের নাম্বারটা পাচ্ছেন না। আবার আপনি যদি আশা করে থাকেন যে চাইলেই বাংলালিংক আপনাকে সিম বিনামূল্যে দিবে, তবে সে আশা গুড়ে বালি, নিঃসন্দেহে।
সুতরাং এসব শর্তপূরণ না করে যেখানে মোবাইল নাম্বারে দেশের প্রতি ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয় সেখানে শর্তহীন ভালোবাসা কতটুকু নিঃশর্ত থাকলো সেটাই প্রশ্ন।
জন্মগত কারনেই অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের কোন সুযোগই নেই যে তারা তাদের নাম্বারে (017, 016, 015, 011) বাংলালিংকের মতো করে মোবাইল নাম্বারে বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা ফুটিয়ে তুলবে। তারমানে দেশপ্রেমের চেতনা বিষয়ক বানিজ্য কেবল মাত্র বাংলালিংকই করবে, এককভাবে। এটা ঠিক যে বাংলাদেশে চেতনা (স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, একুশের চেতনা, আর অযুত নিযুত চেতনা) নিয়ে অনেক বানিজ্য (চেতনা নিয়ে সাধারন মানুষের যে মনস্তত্ত, তা নিয়েও খেলে একশ্রেনীর মানুষ) হয়। কিন্তু সে বানিজ্যও যে আবার একচেটিয়া হতে পারে তার জলজ্ব্যান্ত নিদর্শন বাংলালিংকের এই বিজ্ঞাপন।
যারা বিজ্ঞাপন তৈরি করেন আর যারা তার অনুমোদন দেন তারা কি বিষয়গুলো আদৌ মাথায় রাখেন?
একটা গল্প ফেঁদে বাড়তি দশ লক্ষ সীম যদি বিক্রি হয়, মন্দ কি?
সীম ট্যাক্স তো ওরাই দেবে।
আবার ইন্টার কানেক্টিভিটি নাকি এসে যাচ্ছে, বেনিফিটতো তাইলে সবাই পেতে পারে...
গল্প ফাঁদার সুযোগ তো সবাই খোজে, কিন্তু যদি কেউ অন্যে সুযোগ পাচ্ছে না বলে নিজের গল্পটা সেল করবো না, এটা আশা করাও ঠিক হবে না......
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
সহমত।
বিপণনের যুগ।
যেভাবে পারো বিক্রি করো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ