“( “সেগুন গাছের পাতাটা থেকে আলসে একটা গন্ধ আসছে।”
-“ধুর বোকা ! গন্ধ আবার আলসে হয় কিভাবে?”
-“ঠিক যেভাবে ভোর হয়েছে কাকডাকা। ”
-“মাদার অফ লজিক! এই দিয়ে কলেজে ডিবেট করতে?”
-“ডিবেট? সেটা আবার কিভাবে করে?”
-“শিখিয়ে দিতে হবে নাকি আবার?”
-“তবে তাই হোক সক্রেটিস ম্যাম !”
-“প্লেটোরা এখন বইয়ের পাতায়।রিপাবলিক, প্রতোগারাস, সিম্পসিয়াম”
-“দি রিং অফ গিগস”
-“কি বললে ? কিসের রিং?”
-“ না কিছুনা! সেই অদৃশ্য রাখাল ছেলের কথা মনে আসলো”
-“তারচেয়ে বরং জীবনানন্দ পড়”
-“বীমা কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে ট্রামের তলায় ঝাপিয়ে পরবো একদিন”
-“শুভকামনা রইলো। এবার হাত ছারো।”
-“কি দরকার? কেউ নেই তো এখানে।”
-“মা পুকুর পারে গিয়েছেন একটু আগে”
-“ধোয়া উঠা বাসমতি চালের ভাত আর ছোট মাছের চচ্চড়ি”
-“ কি ক্ষুধা লেগেছে বুঝি?”
-“না ,ওগুলোর স্বাদ তোমার ঠোটের মতো। খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে”
-“রাক্ষস কোথাকার! ইবলিস”
-“উহু !ফ্রান্কেনস্টাইন। নিজের স্রষ্টা কে খেয়ে ফেলতে চায়”
-“আমি বুঝি তোমার স্রষ্টা”
-“জানিনা। হেড ফোনটা কান থেকে নামাও”
-“কেন রাখলে কি দোষ ?”
-“পিঙ্ক ফ্লয়েড আর সহ্য হয়না। আর কতো ?”
-“যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, মিসিসিপি, ভলগা”
-“কিংবা টেইলর সুইফট এর এক ডজন কিশোর প্রেমিকেরা”
-“হুম ! কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের খরচ করা ইউরো ”
-“ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই”
-“ তাহলে দোষ দিও না টেইলর সুইফট কেও”
-“তোমার কানের পাশে একটা মাছি”
-“থাকুক না ! তাতে তোমার কি?”
-“চুল গুলো এভাবে বন্দী করে রেখেছ কেন খোপায়?”
-“কবি নজরুল এর মতো পুরুষ আছে বলে। কি না কি লিখে বসে ”
-“দিল ওহি মেরা ফাস গিয়ি ”
-“ফেব্রুয়ারি মাস। বাংলায় বলো ”
-“মার্গারেট থ্যাচার কোথাকার ”
-“তুমি বিল ক্লিনটন”
-“ তাহলে কোথায় আমার মনিকা লিউনস্কি?”
-“সাদা বাড়ি আজ কালো হয়ে গেছে”
-“একদম মাইকেল কর্লিয়নির হৃদয় এর মতো ”
-“উহু ! ডক্টর হ্যানিবল লেক্টার। একটু আগেই তো ঠোট খেয়ে ফেলতে চাইলে। ”
-“ তাহলে কাছে আসো , জোডি ফস্টার”
-“মা এখনো পুকুর পারে আছেন”
-“ঈদের ছুটিতে গ্রামে আসা ঠিক হয়নি”
-“কক্সবাজার? পাতায়া? বালি?”
-“আমার ইউনিট ”
-“অদ্ভুত একটা গন্ধ। দম বন্ধ করা”
-“সীমার মাঝে অসীম তুমি”
-“বইয়ের পাতায়, ছাপার অক্ষরে”
-“করল্লার জুস ?”
-“এরচেয়ে বরং পটাসিয়াম সায়ানাইড ভালো”
-“কিংবা কামিকাজি ককটেইল অথবা ফায়ারবল?”
-“লম্পট কোথাকার”
-“ অথবা কয়েক ফালি পর্ক বেকন! হালাল হারাম এর সেই বিতর্ক ”
-“এই নাও কোকাকোলা ! নাও এনজয়”
-“ফেব্রুয়ারী মাস। বাংলায় বলো”
-“হা হা ! সব্যসাচী অর্জুন। শোধ নিলে নাকি?”
-“হয়তো !খুব মজা পেয়েছো , তাইনা দশগ্রিব রাবণ”
-“ওমা ! রাবণ তো পুরুষ !”
-“হোক না ! আজকের দিনের মতো তাহলে আমি সীতা”
-“মেয়ে সাজতে লজ্জা লাগবে না?”
-“কিসের লজ্জা? লজ্জা নারীর ভূষণ”
-“তবে তাই হোক”
-“হয়েছিল একবার ! অনেক অনেক আগে”
-“ শুনেছি। নন্দিনী চরিত্রে তোমাকে খুব মানিয়েছিল বুঝি”
-“হাউজ মাস্টার স্যার এর দোষ”
-“ তুমি চেয়েছিলে বলেই হয়েছিল”
-“মাছিটা এখনো ঘুরঘুর করছে”
-“কই কোন শব্দ পাচ্ছিনা তো!”
-“হেডফোন টা নামাও কান থেকে”
-“পিঙ্ক ফ্লয়েড শুনছিনা তো আর। ড্রপকিক মারফি বাঝছে জোরে জোরে”
-“তাহলে থাক। জীবনানন্দ পড়ব তাহলে?”
-“ না থাক আজ ! তারচেয়ে ট্রামের নিচেই ঝাপ দাও”
-“তার আগে এই ইউনিফর্ম খুলে বীমা কোম্পানি তে যেতে হবে”
-“মা এসে গেছেন। আরো অনেকেই আসছেন”
-“তো? ”
-“একটু লজ্জার অভিনয় করতে হবে। নতুন বউ না !”
-“জোডি ফস্টার”
-“না ! মেরিলিন মনরো। কিংবা অদ্রে হেপবার্ন”
-“উহু ! টেইলার সুইফট ”
-“ধুর ছাই ! এখনি ঝাপ দাও ট্রামের নিচে”
-“তাহলে তোমার এক ডজন কিশোর প্রেমিকের হাত থেকে তোমায় বাচাবে কে?
-“দি রিং অফ গিগস। অদৃশ্য হয়ে যাবো।”
-“কি দেবে না ?”
-“কি?”
-“ঠোট খেতে চেয়েছিলাম?”
-“বাবা ,মা, অর্পিতা আর সৌমিক টেবিলে। ভাত খেতে আসো ”
-“লেট লেট নাইট ডিনার কিন্তু আজ হবেই। সবাই ঘুমিয়ে পরার পর ”
“”যাহ ! বিল ক্লিনটন কোথাকার” ) ”
চিত্রনাট্য পড়া শেষ করে পরিচালক সাহেব কপালের ঘাম মুছলেন। সানগ্লাস টা খুলে পাশের টেবিলে রাখলেন। গলা খাকারি দিয়ে বললেন ,”হুম পুরোটা পড়লাম। এই সবের মানে কি? ডাকো ওই হতচ্ছাড়া উডি অ্যালেন কে। বললাম ১/২ মিনিটের একটা রোমান্টিক দৃশ্যের চিত্রনাট্য লিখতে , আর সে দেখা যায় এখানে সাত খন্ড রামায়ণ লিখে বসে আছে। ফাইজলামির একটা সীমা আছে।”
“ডিরেক্টর সাহেব নাকি আমাকে ডেকেছেন।”
“হ্যা। বাধ্য হলাম ডাকতে। কি সব ছাইপাশ লিখেছেন এগুলো। লুতুপুতু স্টাইলের ডায়লগ। পাবলিক এগুলা খাবে নাকি? সব তো মাথার উপর দিয়ে যাবে পাবলিক দের। আমি নিজেও তো অনেক কিছু বুঝতে পারলাম না.. আপনারে কি লিখতে বললাম আর আপনি কি লিখলেন! কই আগরতলা, আর কই খাটের তলা।”
“না মানে ইয়ে , রোমান্টিক সিনের কথোপকথন। তাই ভাবলাম …… ”
“একটু বেশি ভেবে ফেলেছেন। এরপর থেকে কম ভাববেন। আপনি এতো বিখ্যাত কিভাবে হলেন বুঝতে পারলাম না। একটা ফ্রেঞ্চ কিস এর সিন তো রাখতে পারতেন। পাবলিক খাবে এমন কিছু লিখেন। এত টাকা খরচ করে মুভি বানাচ্ছি। দেশের বাইরে শুটিং করছি। বিদেশী এক্টর আনছি। ডলবি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল সিনেমা বানাচ্ছি। চিত্রনাট্য ভালো না হলে কি আর চলে। আবার লিখবেন এই সিন ”
“ঠিক আছে ডিরেক্টর সাহেব।”
“আগামী সপ্তাহে লিখে শেষ করে নিয়ে আসবেন”
“হ্যা, আগামী সপ্তাহে নতুন করে লিখে নিয়ে আসবো।”
“ঠিক আছে তাহলে, আমি যাচ্ছি”
ডিরেক্টর সাহবে টেবিল থেকে সানগ্লাস তুলে নিয়ে চোখে লাগলেন। আস্তে আস্তে বেড়িয়ে পড়লেন তিনি। পাশে দু জন সহকারী। উডি অ্যালেন চিত্রনাট্যের কাগজ হাতে শক্ত করে ধরে ডিরেক্টর সাহেবের চলার পথের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন,” অনন্ত জলিল কোথাকার”
উডি এলেন এর মোমের মূর্তির সাথে দেখ হলো নিউ ইওর্ক সিটির মাদাম তুসোর জাদুঘরে। বেশ কথা হলো বিভিন্ন বিষয়ে !
প্রথম। আহ বেচারা অনন্ত জলিল।
বেরি বেরি ইস্মার্ট 🙂
ভালবাসার অপর নাম উডি এ্যালেন! 😡 😡 😡
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
অন্য মিনিং বুঝে নিলাম 😛 সমাজ বিরোধী ভালোবাসা 😉
নাহ আমি পরিষ্কার মনে একটা কথা বললাম সেটাকে কলঙ্কিত করছো! =(( =(( =((
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
কই কলঙ্কিত করলাম ভাই? 😛 এইটা তো সহজাত প্রবৃত্তি। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই 😀
x-( :chup:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:))
ভাই রে ভাই!! এত রোমান্টিসিজম কই থেইকা আসে???
:clap: :boss:
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
কিছু কথা থাকনা গুপন 😛
তোমার এইটা পড়ে শরৎচন্দ্রের কথা মনে পড়ে। কথোপকথোন এর মাঝে তর্কের যে সৌন্দর্য তা বোধহয় ওনার চেয়ে কেউ ভাল পারে না।
The Bond Cadet
ধন্যবাদ শাহীন ভাই ! শরতবাবু কঠিন একজন লেখক ছিলেন। আসলেই !
কথোপকথন টা পড়ে যে আপনার শরৎচন্দ্রের কথা মনে পরেছে , তাতে আমি আনন্দে বিগলিত হয়ে গেছি ! 😛 :shy:
যাই হোক, ভাবছি এই লেখক দের লেখা গুলো নতুন করে আবার পড়ব... কিশোর বয়সে পড়েছিলাম। তখন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একরকম। দিন গড়াচ্ছে। বদলাচ্ছি আমিও। অল্প বয়সে যে মুভি গুলো দেখে ভালো লাগেনি, সেগুলো এখন দেখলে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে.. গল্প-উপন্যাস এর ক্ষেত্রেও একই জিনিস হওয়ার কথা... শরৎচন্দ্র যখন পড়েছিলাম, সেটা হজম করার মতো ক্ষমতা তখন আমার ছিল না ! সময় সুযোগ করে আবার পড়ব ভাবছি।
ভাল লাগলো নাফিস । তোমাকে একটা খবর দেই। মুরাদ টাকলা ফেসবুকে একটা নতুন পেজ খুলেছে- অলন্ত গলিল ( Alonto Golil ) 😀
আচ্ছা উডি অ্যালেনের কথা লিখছো কিন্তু মিয়া ফারোর নাম পেলাম না মনে হয় :-B
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
ধন্যবাদ ভাই !
অলন্ত গলিল =)) =)) !
মিয়া ফারো ও ডায়ানা কিটন দুইজনের কথাই ভাবছিলাম। কেন এড করি নাই নিজেও জানিনা 🙂
রোমান্টিকতা আউলা-ঝাউলা না হইলে ভাল লাগে না। তোমারটা হইছে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
অনেক ধন্যবাদ আপা ! অনুপ্রাণিত হলাম :hatsoff:
বাহ, রোমান্স পুরো ঝরে ঝরে পড়ছে 😉 :clap: :clap:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ইয়ে মানে ইয়ে 😛 :shy: একটু একটু আরকি
আমার প্রিয় নায়ক অনন্ত জলীল কে খোচা মারার জন্য লেখা লাইক দিলাম না। (সম্পাদিত)
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
😀 😀 :brick:
চরম রোমান্টিক !
আমি চোখ মেললুম আকাশে
জ্বলে উঠলো আলো পূবে পশ্চিমে
একটু আধটু আপা 🙂
:clap:
আমি জানি না কিভাবে সম্ভব হয়েছে, কারণ এটা আমি প্রথমবারের মতো পড়লাম। কিন্তু, আমার গল্পের সাথে এই গল্পের কিছু মিল আছে। ভাবিস না Quote করছি,কারন আমার পান্ডুলিপি লেখা গতকাল শেষ হয়েছে। আর এটা পড়লাম আজকে!
ভালো লাগছে!
ব্যাপার না। আমারটা শেষ এখানেই। আপনে চালাইয়া যান আপনারটা :hatsoff:
লেখা প্রকাশ হবার দিনই পড়েছিলাম।
অদ্ভুত রকমের ভালো লেগেছে।
সবথেকে ভালো লেগেছে শুরুর কাব্যিক বাক্যটা।
অনেক ধন্যবাদ নূপুর দা ! :hatsoff: