কলেজ জীবনের সাতকাহন (গ্যাং অব চোর)

কলেজে থাকতে আমরা ছ’জন ছিলাম আম-কাঁঠাল চুরির ওস্তাদ। আমি, নাসিম, শহিদ, মেহেদি, শফি আর আনিসুল। আমি ছিলাম আশঙ্কাজনক রকমের হ্যাংলা পাৎলা, জোর বাতাসে উড়ে যাবার মত পলকা। তাই আমাদের অপারেশনগুলোতে শরীরের চেয়ে মাথা আর চোখ-কান ব্যবহারের কাজেই আমাকে বেশি ব্যবহার করা হত। অসাধারণ মেধাবী অথচ কেয়ারলেস এবং রিতিমত পালোয়ানী ফিগারের নাসিমের কাজ ছিল ধরা খাবার সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে তাঁর সুবোধ বালক সুলভ ইমেজটা ব্যবহার করে নিজের এবং বাকিদের পিঠ বাঁচানো। শহিদ আর মেহেদি – দুটোর শরীরেই দারুণ বল। এরমধ্যে মেহেদি তো, সেই বয়সেই প্রায় আসুরিক শক্তির অধিকারি ছিল। নেইল কাটারের ব্লেড দিয়ে ফলবতি এবং দশাসই সাইজের এক একটা কলাগাছ সে অবলীলায় ঘ্যাচা ঘ্যাঁচ মাটিতে পেড়ে ফেলত! কাঁঠাল পাড়ার সময় ছুরি চাকুর কোনো ধার ধরতো না, দুহাতে ধরে হ্যাঁচকা টানে গাছ থেকে নামিয়ে আনতো। তবে তার সবচেয়ে ভয়াবহ কাজটি ছিল আধলা বা সিকি সাইজের ইট ছুঁড়ে মেরে ২০/৩০ ফিট উঁচু গাছ থেকে ডাব পেড়ে ফেলা। সেগুলো এমনই নারকীয় এবং আসুরিক ব্যাপার ছিল যে, চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। এবং যতদূর জানি, আজ পর্যন্ত মেহেদির সেই ডাব পাড়ার রেকর্ড কেউ স্পর্শ করতে পারেনি। দলের বাকি দুজন – শফি আর আনিসুলও ছিল খানিকটা আমার মতই, মুলতঃ চুরি করা ফল ভর্তি বস্তা টানাই ছিল আমাদের অন্যতম প্রধান দায়ীত্ব।

এভাবেই বেশ দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের ডর্মে দুটো খালি কাবার্ড ছিল। ওদুটো ছিল আমাদের চোরাই ফলের ভাঁড়াড়। পুরো ব্যাচের সবার জন্য উন্মুক্ত। যার যখন ফল খেতে ইচ্ছা হত সে তখনই আমাদের ডর্মে এসে দু’মুঠো আম-কাঁঠাল-কলা কিংবা জাম-পেয়ারা খেয়ে যেত। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো আমাদের HSC পরীক্ষার মাস ছয়েক আগে, কোন এক শুক্রবারের পড়ন্ত বিকেলে।

স্টকের কাঁঠাল সব শেষ। তাই ছয় চোরা মিলে বের হলাম কাঁঠাল কব্জা করার মানসে। ছয় জনেই প্রেয়ার ড্রেস পড়ে রওয়ানা হলাম মসজিদের পানে। হুনাইন হাউজের পাশের পুকুরের মসজিদ-প্রান্তে বেশ কয়েকটা গাছে সেবার কাঁঠাল ধরেছিল বেশুমার। বিগত কয়েক সপ্তা ধরে ইভনিং প্রেয়ারে যাবার সময় সেগুলির দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে থেকেছি প্রতিদিন। সেখানে গিয়েই গাছগুলো থেকে মেহেদি আর শহিদ ধাপাধাপ একের পর এক কাঁঠাল টেনে নামাতে লাগলো আর আমরা পালাক্রমে সেগুলো বয়ে নিয়ে এলাম বদর হাউজে, আমাদের ডর্মে। এভাবে ২২ টা কাঁঠাল আনার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম এখানে আর না। এবার প্রিন্সিপাল স্যারের অফিসের পেছনের গাছ থেকে কাঁঠাল চুরি করতে হবে। ওখানকার কাঁঠাল গুলো বেশ বড়সড়, তাছাড়া ওখানে একটা পাতিলেবুর বাগান ও আছে। বৃহস্পতিবার রাতের খিচুড়ির সাথে গাছের চোরাই পাতিলেবু আর হুনাইন হাউজের গার্ডেনের কাঁচা মরিচ দারুন যায়। ওহ! ভাবলে এখনও জিভে জল চলে আসে।

শফিউল্লা বলল, নাহ ওদিকে যাওয়া ঠিক হবে না। ধরা খেয়ে যেতে পারি। আমি বললাম, আরে নাহ, প্রদীপের নীচেই অন্ধকার থাকে। চুরি করার জন্য প্রিন্সিপালের অফিসের পেছনটাই তামাম কলেজের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ যায়গা। তাছাড়া, তখন একাডেমিক বিল্ডিং এর মিটিং রুমে কি একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে যেন ফ্যাকাল্টি মেম্বার দের সাথে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের ম্যারাথন মিটিং চলছিল। কাজেই, চুরিতে যাবার ওটাই ছিল মোক্ষম সময়। অতপর সবাই মিলে রওয়ানা দিলাম।

একাডেমিক ব্লকে বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের পাশের টয়লেটে গিয়ে জানালা দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করলাম। আমাদের অবস্থান থেকে টেইলারিং শপ পর্যন্ত অনেক খানি খোলা জায়গা দিয়ে যেতে হবে। ব্যাপারটা বেশ রিস্কি, তবুও গেলাম। এক দৌড়ে খোলা জায়গাটা পেরিয়ে ঝপ করে বসে পড়লাম টেইলারিং শপের কোনায়। সেখানে দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে ঘাপটি মেরে উঁকি দিয়ে দেখি আমাদের আর লেবু-কাঁঠালের বাগানের মাঝে কেউ নেই। শুধু প্রিন্সিপাল বাংলোর মালিটা সেখানে ঘাস কাটছে (ঘোড়ার না গাধার জানিনা)। তবে আমাদের জন্য সেটাতে দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না। কারণ মালিটা ছিল বাকপ্রতিবন্ধী, কথা বলতে পারে না। আমাদের সবার পরানের গহীনে এক অদ্ভুত পৈশাচিক আনন্দ জেগে উঠলো। কোন প্রকার লুকোছাপা না করেই দৌড়ে চলে গেলাম কাঁঠাল বাগানে। মেহেদি আর শহিদ দাঁত খিঁচিয়ে কাঁঠাল ছিড়তে লাগলো, আর আমরা সেই ঘাস কাটা মালিকে দেখিয়ে দেখিয়ে দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে তাঁর সামনে দিয়ে সেগুলো বয়ে নিয়ে টেইলারিং শপের কোনায় জমা করতে লাগলাম। এক একটা দসাসই সাইজের কাঁঠাল, উঁচু করতেই প্রান রীতিমত ওষ্ঠাগত হয়ে যাবার যোগাড়। এভাবে কয়েক দফা কাঁঠাল পরিবহন করার পরে হঠাত খেয়াল করলাম যে, মালী আর সেখানে নেই! বাতাসে বিপদের গন্ধ পেলাম। সাথেসাথে কাঁঠাল গুলোকে টেইলারিং শপের কোনায় রেখেই সবাই দৌড়ে চলে এলাম বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের পাশের টয়লেটে। স্ট্রাটেজিক্যাল রিট্রিট!

টয়লেটের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি হতচ্ছাড়া মালীটা প্রিন্সিপাল অফিসের আর্দালীকে নিয়ে এসে টেইলারিং শপের কর্নারে রাখা কাঁঠালগুলি দেখাচ্ছে আর ইশারা-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, এগুলো ছয়জন ক্যাডেটের কাজ। কিছুক্ষণ পরে দু’জনেই গজগজ করতে করতে হন্তদন্ত হয়ে প্রিন্সিপ্যাল অফিসের দিকে ছুটে গেল। শহিদ বলল, সর্বনাশ! ব্যাটা তো প্রিন্সিপ্যালকে ফোন করতে যাচ্ছে। নাসিম বলল, সর্বনাশ টর্বনাশ বুঝিনা, এই রকম কিং সাইজ কাঁঠাল কোনভাবেই মিস করা যাবে না। চিন্তা করে দেখলাম কথাটা ঠিক। তাছাড়া এভিডেন্স ফেলে রেখে পালিয়ে গেলে সেটা হবে চৌর্য্য-সমাজের মুখে চুনকালি মাখানোর মত ভয়াবহ কাপুরুষতার বহিঃপ্রকাশ।

সাথে সাথেই আমাদের ক্ষাত্রতেজ জাগ্রত হয়ে গেল। আর্দালি ব্যাটা ফিরে আসার আগেই একছুটে দৌড়ে গিয়ে টেইলারিং শপের কর্নার থেকে কাঁঠাল গুলি নিয়ে চলে এলাম একাডেমিক বিল্ডিং এ। কিভাবে যে সেদিন আমরা ছজন এক স্পেলেই আঠারোটা আজদাহা মাপের কাঁঠাল বয়ে নিয়ে এসেছিলাম তা আজ ও আমার কাছে এক বিষম বিস্ময়। যাহোক, কাঁঠালগুলিকে ওখানে সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে রেখে হাত টাত ধুয়ে আমরা দিব্যি ভদ্রলোকের মত রিল্যাক্সড ভংগিতে একাডেমিক বিল্ডিং এর বারান্দা দিয়ে হেঁটে হেঁটে মেইন এন্ট্রান্সের দিকে এগোলাম। আপাতত মিশন স্থগিত। রাতে কোনো এক সময়ে এসে কাঁঠাল গুলো ডর্মে নিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু বিধি বাম! বায়োলজি ডিপার্টমেন্ট অতিক্রম করে বামে মোড় নিয়ে দু’কদম না এগোতেই আকাশবাণী শুনতে পেলাম – “এই! আপনাঁরা এখানে কীঁ করশেন ষ্যার?”…. (চলবে)

১৪,০৭৭ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “কলেজ জীবনের সাতকাহন (গ্যাং অব চোর)”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    ১ম হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় গিয়ে ১ম কমেন্ট ছোট করে ফেলেছিলাম 😀

    কাঁঠাল চুরি আমাদের কলেজেও একটা বিশাল বিনোদনের ব্যাপার ছিল। সেটা ছিল মসজিদের আশেপাশে। আর আমাদেরও কাঁঠাল চিরু এবং রুমভর্তি কাঁঠাল হাপিশ করে দিয়ে তদন্ত কমিটিকে বোকা বানানোর দুর্দান্ত এক কাহিনী। যদিও এই অধম এহেন কুকর্মে সরাসরি যুক্ত হওয়ার মতো সৌভাগ্যবান ছিলনা।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      😀 😀
      নিঃসন্দেহে দারুন মজার হবে কাহিনীটা।
      কোন ব্যাপার না মাহমুদ, লিখে ফেল সেই কাহিনী। আমরা একটু মজা পাই, পাশাপাশি বর্ত্তমান ক্যাডেটরা একটু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুক। 😉


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    আমাদীর ছিলো ডাব-নারকেল আর খেজুরের রস চুরির কারবার।
    তা প্রথম যেদিন গেলাম ... আচ্ছা থাক পুরো কিচ্ছা এখানে কুলাবে না।
    এক রাতে পাঁচটা গাছে উঠে মোট ১০৯ খানা ডাব-নারকেল পেরেছিলাম রেকর্ড করবার মানসে। আমার সাথের জন পেরেছিলো ২২ টা।
    সব এনে জমা করা হলো আমাদের হাউসের রিক্রিয়েশন রুমে।
    বিপত্তি হলো এই যে এতোগুলো খাবে কে ! আমাদের আবার এমন খালি কাবার্ডের সুবিধা ছিলো না।
    আমাদের হাউসে আমাদের ক্লাসকে ওঠানো হলো ঘুম থেকে। তারপর বাকী তিন হাউসে আমাদের ক্লাসের সবাইকে পারলে ঘুম থেকে উঠিয়ে টেনে আনার চেষ্টা।
    এর পর শুধু আমাদের হাউসে আমাদের পরের ক্লাস, তারপর তার পরের, তারপর তার পরের ... পুরো হাউস। শর্ত খাও সবাই যতো খুশী। নিতে পারবে না।
    পরের কাহিনী আছে কিছু ... আরো ...
    আর খেজুরের রস ! ওটার জন্যে রেকর্ড করবো যেদিন ঠিক করেছিলাম সেদিন কটা গাছে উঠেছিলাম ওই দিনো গুনে দেখিনি। তবে, এমন করে অনেককে খাওয়াবার পরও দুই বালতি ছিলো। তো রিক্রিয়েশন রুমের সামনে হাউসের খাবার পানি যে কল লাগানো ড্রামে থাকতো সেটার সব পানি ফেলে তাতে ঢেলে রেখে দিয়েছিলাম। ভোর হলেই পিটিতে যাবার জন্য ফল ইন হতে গিয়ে যারাই পানি খেতে গিয়েছে ভিমিরি খেয়েছে। আর খবর পেয়ে ফল ইন করা বাদ দিয়ে সব পানি খেতে লাইন দিচ্ছিলো ...
    কতো কি যে মনে পড়লো বান্দ্রামির গল্প এই লেখা পড়ে !

    জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    আবু সাইদ বিশ্বাস স্যারকে দিয়ে এই পর্বের ইতি।
    দেখি আগামী পর্বে কোথায় পৌছে।
    প্রিন্সিপাল কে ছিল, কর্নেল এমদাদ নাকি কর্নেল মোশারফ?


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      ঠিক ধরেছেন, ওটা সাইদ বিশ্বাস স্যারের গলা ছিল!
      প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন কর্নেল মোশাররফ।


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আহারে।
    বরশালের ডাব গাছ গুলো ভালোই উচু ছিলো।
    কিন্তু আমাদের ক্লাসের জোবায়েদ আর ববিন গাছ বাওয়াতে ওস্তাদ ছিলো তাই কখনো ডাব খেতে কষ্ট করতে হয় নি। আর আমড়াও।
    ওরা উপর থেকে ডাব মুচড়ে মুচড়ে নিচে ফেলতো আর আমি ক্যাচ ধরতাম যাতে শব্দ না হয়।
    কি এক সময় ছিলো আমাদের/////


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      আমাদের জন্য উঁচু গাছে ওঠা নিরাপদ ছিল না। যতবারই কেউ এরকম গাছে উঠেছে প্রায় ততবারই নেমে আসার দেড় সেকেন্ডের মাথায় পিছন থেকে শুনতে পেয়েছে, "এই! এখানে তোমরা কি কর? কি কর তোমরা এখানে!!!" - কলেজের কেয়ারটেকার আদম আলির গলা। ২৪/৭ সদা জাগ্রত সে এক মুর্তিমান অভিশাপ। আগামী তে কোন এক সময়ে এই আদম কাকাকে নিয়ে লিখব আশা রাখি।


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)
    “এই! আপনাঁরা এখানে কীঁ করশেন ষ্যার?”

    এই মিয়া, এমন ঘ্যাচাং করে ব্রেক মারা কি ঠিক হল?
    পরের পর্ব নামাও জলদি!
    বেড়ে লিখেছ ভাই।
    এখনকার পোলাপানের জীবন তামাতামা করে দিচ্ছ, বুঝতে পার?
    ইদানীং আবার প্রিন্সিপালও এক্স-ক্যাডেট আছেন কেউ কেউ।

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      নির্মাণ কাজ চলিতেছে 😉
      হা হা হা নুপুরদা, আমাদের সময়ে সেলিম ভাইকে পেয়েছিলাম এডজুটেন্ট হিসেবে। তার উপর তিনি জেসিসিরই এক্স ক্যাডেট! বুঝুন ঠ্যালা! তাই আমি জানি, আমার এই লেখার কারনে এক্স ক্যাডেট প্রিন্সিপ্যাল বা এডজুটেন্ট দের অভিজ্ঞতার ভান্ডারে নতুন কিছুই যোগ হবেনা। কিন্তু ভাবছি নন-এক্স ক্যাডেট যাঁরা আছেন তাদেরকে নিয়ে। বিশেষ করে, অথরিটিকে কিভাবে নমনীয় করেছিলাম সেই কাহিনী জানিয়ে দিলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মত ঘটনা ঘটবে না তো আবার? অথচ আগামী পর্বে তো সেই কাহিনীই লিখতে যাচ্ছি! :-/


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  6. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    কাঠাল! আমাদের কালে ছিল কিনা মনে নাই, ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিল ডাব নারিকেল আর দেয়ালের বাইরে ছিল খেজুরের রস, আখ। কাজেই এডভেঞ্চারের শখ হলে দেয়াল টপকানোই ছিল প্রথা, রিস্ক ফ্যাক্টর যে অনেক বেশি বলাই বাহুল্য। আহাদ ভাই দৌড়ে যাচ্ছেন ক্ষেত খামার ভেঙ্গে, আর পেছনে লাঠিসোটা হাতে ধেয়ে আসছে গ্রামবাসী...

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      আমাদের সময়ে গ্রামবাসীরা সবাই তামাক চাষে বেশী আগ্রহী হয়ে পরেছিলো, মাহবুব ভাই। ছয় বছরে কখনোই আখ লাগাতে দেখিনি, সব তামাক আর তামাক। শুধু কলেজ মস্ক বরাবর দেয়ালের ওপাশে ছোট একটা কলাবাগান ছিল। মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়েই মেহেদি তাঁর নেইল কাটার চালন বিদ্যা প্রয়োগ করত।
      ৯৩/৯৪ সালের দিকে যখন খুলনা জেক্সকার ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিকটা শুরু করেছিলাম তখন প্রতি শুক্রবারেই ক্লিনিক শেষ হলে আমরা চা-পুরির আড্ডায় বসতাম। সেই আড্ডার অন্যতম আকর্ষণ ছিল আহাদ ভাইএর স্বকন্ঠে বিবৃত তাঁর সেই ঐতিহাসিক রস চুরির কাহিনী। বারবার শুনলেও সে কাহিনীর আবেদন ম্লান হয়নি একটুও।


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  7. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    মুজিব ভাই, এমন জায়গায় থামালেন... :bash:

    আমরা আবু সাইদ বিশ্বাসকে পাই নি, তবে প্রিন্সিপ্যাল হিসেবে কর্নেল মোশারফকে কিছুদিন পেয়েছিলাম।
    আর আমাদের সময় খায়বারের পেছনের গাছেই ভাল কাঁঠাল হত।
    হাউজের প্রায় গা ঘেঁষে থাকা আমগাছ, পেছনের দিকে জাম গাছ, আরেকটু দূরে বরই গাছ এবং নারিকেল গাছ। আর দেয়াল টপকালেই আখ বা খেজুরের রস।
    কলেজ জীবন আসলেই মধুময় ছিল! :dreamy:

    এমনিতে কাঁঠাল কখনোই পছন্দ করতাম না, তবে কলেজে চুরি করে খাওয়ার মজাই আলাদা ছিল! 😀
    সবচেয়ে আইরনি মনে হয় এটাই যে- ডাইনিং হলে কাঁঠাল যারা খেত না বা নষ্ট করত, তারাই চুরি করে কাঁঠাল খাওয়ায় লিড দিত! =))


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      কলমের কালি ফুরিয়ে গেছে ভায়া, একটু সবুর কর। সবুরে কাঁঠাল পাকে.... 😉


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  8. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    চমৎকার কাহিনী। আমাদের কলেজে তখন ডাব নারকেল গাছ ছিলনা। তারকাঁটার ওপারে বেশ দূরে কয়েকটা মাত্র খেজুও গাছ ছিল। শীতকালে ওগুলোর উপর অপারেশন হতো, তবে রস তেমন পাওয়া যেতনা। কিন্তু কাঁঠাল চুরির ঘটনা বেশ অহরহই ঘটতো, এজন্য কেউ কখনো শাস্তি পেয়েছে বলে শুনিনি। আমরা চলে আসার পর প্রিন্সিপাল উইং কমান্ডার (মরহুম) বদিউর রহমানের সব্জী ও ফলের বাগানে আক্রমণের ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল বলে শুনেছি এবং এজন্য বোধকরি একবার গণশাস্তিও দেয়া হয়েছিলো।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুজিব (১৯৮৬-৯২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।