আমেরিকা আবিষ্কার (ভানু ই প্রথম)

উপস্থাপক: আচ্ছা ভানুবাবু, কানাঘুষা শুনলাম আপনি নাকি দাবী করেছেন যে, কলম্বাস নয় আপনিই প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন?

ভানু: কি কইতাছেন কানাঘুষা! না না, এগুলা আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য কেউ কেউ বইলা থাকেন। আমি কানাঘুষায় বিশ্বাসী না, আমি পাবলিকের কানে ঘুসা মাইরা মাইরা তত্ত্বকথা ঢুকাইতে বেশি পছন্দ করি।

উপস্থাপক: সে কি? আপনি এরকম মাস্তানদের মত গায়ের জোরে …
ভানু: আরে রাখেন আপনার গায়ের জোর! মাঝে মাঝে শান্তির জন্য শক্তি প্রয়োগ করা জায়েজ আছে … হেঃ হেঃ হে … বোঝেনইতো …

উপস্থাপক: সে যাই হোক, চলুন আসল প্রসঙ্গে যাই – আমরা তো জানি কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিল …
ভানু: ভুল সবই ভুউউল, সবাই খালি গুল মারে গুউউল। আসল ইতিহাস হইলো আমি, এই ঢাকার ভানুই সর্বপ্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করি।

উপস্থাপক: আপনি কলম্বাসের কৃতিত্ব অস্বীকার করতে চাচ্ছেন?
ভানু: চাইতাছি মানে? আমি তো পরিস্কার ভাবেই অস্বীকার করতাছি! তিন মাস ধইরা জাহাজের ক্যাপ্টেনের কেবিনে শুইয়া বইসা, আরাম আয়েস কইরা, সাগরের বাতাস আর বিয়ারের লগে ফিস ফ্রাই খাইতে খাইতে একসময় তিনি অবশ্য সেখানে গিয়া পৌঁছায়ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি তো সেটা চাইছিলেন না!

উপস্থাপক: তার মানে?!!!
ভানু: “শোনেন সবাই, আমি ক্রিস্টোফার কলম্বাস, আমেরিকা আবিষ্কার উদ্দেশ্যে জাহাজ ভাসাইতাছি …” – যাত্রা শুরু করার আগে তিনি কি এমন কোনো ঘোষনা দিছিলেন? না, তিনি দেন নাই। তার সমুদ্র ভ্রমণের নেশা আছিলো। সেই সাথে খ্যাতি আর ধন সম্পদের লোভ তো ছিলই! তা ছাড়া কলম্বাস সাহেব কি কখনো জাহাজের দাঁড় টানছে, কখনো কি পালের দড়ি-দড়া লইয়া টানাটানি করছেন? করেন নাই। জাহাজ চালাইছে সব মাঝি-মাল্লারা। এমন কি আমেরিকার উপকূল দেখা যাবার পরেও তিনি আমেরিকা আবিষ্কারের ঘোষনা দেন নাই। তার চাইতে বরং ওই মাস্তুলের উপরে “কাকের বাসা” তে বইসা যে খালাসীটা “ল্যান্ড আহোয় …” বইলা চিত্কার দিছিলো,হেরে আমি আমেরিকার আবিষ্কারক মানতে রাজি। তার চাইতেও বড় কথা হইলো, কলম্বাসের বহুত আগেই মিশরের ফেরাউনরা ডিঙ্গি নৌকায় কইরা আটলান্টিক পাড়ি দেবার চিন্তা ভাবনা করছিলো। কাজেই কলম্বাসরে আমেরিকা আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়ার কোনো মানে নাই।

উপস্থাপক: কিন্তু সবাই তো জানে …
ভানু: ভুল সবই ভুউউল। সব ইহুদি-নাছারাগো প্রোপাগান্ডা! সব ফটোশপ … হেঃ হেঃ হে … বোঝলেন না …

উপস্থাপক: হুম, সে নাহয় বুঝলাম। কিন্তু আপনি যে সর্ব প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেছেন তার প্রমান কি?
ভানু: আরে ভাই আপনারা তো দেখতাছি বড়ই বেয়াদব! প্রমান লাগে নাকি আবার? বিশ্বাসে মেলায় বস্তু … হেঃ হে … কোটি কোটি মানুষ এগুলা বিশ্বাস করতাছে, আর আপনে চান প্রমান?

উপস্থাপক: অনেকেই আপনার এই কথা বিশ্বাস করতে পারে, কিন্তু আমরা তো অর্বাচিনের মত বিনা প্রমানে আপনার কথা মানতে পারি না …
ভানু: বেশ, এতই যখন প্রমান চান, এই যে দ্যাখেন, সেই উন্নিশ শো ছাপ্পান্নো সালের পেপার কাটিং। পরিস্কার ভাষায় লেখা আছে – “এবার আমেরিকাকে আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে ঢাকার ভানুর বিদেশ গমন” – হেঃ হেঃ পকেটের পয়সা দিয়া পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির আকারে এই ঘোষণা দিয়া তারপরে প্লেনে চইড়া আমেরিকায় গেছিলাম। প্লেনের জানলা দিয়া আমেরিকার আলো দেখার সাথে সাথে কইছিলাম, “আমি আমেরিকা আবিষ্কার করলাম!” পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কেউ আছে যে কিনা আমার আগে এইরকম ঘোষণা দিয়া আমেরিকা আবিষ্কার করছে? নাই! অতএব,আমিই প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করছি। এক্কেবারে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত! আপনারা চাইলে গুগল, উইকিপিডিয়া, উইকিলিকস আর ফেসবুকে সার্চ কইরা প্রমান সংগ্রহ করতে পারেন।

উপস্থাপক: ওফফ … সব বুঝতে পেরেছি। তা ভানুবাবু, এই গাঁজাখুরি গল্প দিয়ে কতদিন চালাবেন? এক সময় তো এতে আর পোষাবে না, তখন কি করবেন?
ভানু: হেঃ হে … আপনাগো আশির্বাদ থাকলে এই গপ্পো দিয়া বছর বিশেক খুব ভালো ভাবেই চালানো যাইবো। তারপরে পাবলিকে যদি এইডা আর না খায় তখন “আমিই প্রথম চন্দ্রাভিযান করছি” – এই রকম নতুন কোনো থিওরি লইয়া বাজারে আসুমনে। হে হে … পৃথিবীতে সত্যি কথার সংখ্যা সীমিত, আপনে চাইলেই নতুন একটা সত্যি কথা বানাইতে পারবেন না। কিন্তু মিথ্যা কথার সংখ্যা তো অসীম, ইনফাইনাইট, চাইলেই নতুন একটা বানাইয়া ফেলা যায়। আর তা প্রচার করা এবং বিশ্বাস করার মত পাবলিকেরও অভাব নাই। খালি ঠিক জায়গা মত ধান ছড়াইতে জানতে হয়, এদেশে কাকের কোন কমতি নাই …. হেঃ হেঃ হে …

 

খবরঃ Muslims found Americas before Columbus says Turkey’s Erdogan

পাদটীকাঃ   
কয়েক মাস আগে আমার নিজের ব্লগে এই স্যটায়ার টা লিখেছিলাম।  নতুন খবরের প্রেক্ষিতে এবং সবার সুবিধার্থে পুরো লেখাটি এখানে কপি করলাম। ভাইয়া তখন “স্বাধীনতার প্রথম ঘোষক”, “বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি”, ইত্যাকার বিষয়াদি নিয়ে তুমুল গবেষণায় লিপ্ত। তখন এই লেখাটির মাধ্যমে ভাইয়াকে একটু ইঙ্গিতে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, এই সব ছোট-খাট হিসাব বাদ দিয়ে আসল জায়গায় হাত দেন, তাহলে পরে একসময় হোয়াইট হাউসের মালিকানাও দাবী করতে পারবেন। কথায় আছে না, মারি তো গণ্ডার, লুটি তো ভাণ্ডার? কিন্তু তখন তিনি আমার সেই ইঙ্গিত বুঝলেন না । এখন হোল তো? এরদোগান ছাহেব অলরেডি সেই জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছেন! তবে হতাশ হবার কিছু নাই, আমেরিকার ফাউন্ডার ফাদারদের মধ্যে টমাস ‘জিয়া’ফারসন নামে একজন ছিলেন। ওনাকে পূর্বপুরুষ দাবী করে আরেক প্রস্থ নতুন ইতিহাস বাজারে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। বিশ্বাস করার মত আদমের অভাব হবে না।

মুল প্রকাশনার লিঙ্ক ঃ  http://wp.me/p1DL73-6f

 

২,৫৫০ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “আমেরিকা আবিষ্কার (ভানু ই প্রথম)”

    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)
      আমাগো ঢাকার ভানুই পরথম! 😀

      "পরথম নয় প্রথম, একটা র-ফলা হবে!" ... 😛
      ভানুর সেই বিখ্যাত কৌতুকটা মনে আছে নিশ্চয়ই - "ন্রা! দ্রিমু য্রখন ত্রখন স্রব ট্রাতেই দ্রিমু" =)) =))


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      চেনা চেনা লাগে, নও তো অচেনা ... 😀 😀
      হাহ হাহ হা ... মামুন ভাই, এহেবারে ধইরে ফেলাইছি (আমাদের রেফাউদ্দউলা খান স্যারের অমোঘ উক্তি)...
      সিসিবিতে আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকলাম


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ছোটবেলায় ক্যাসেট প্লেয়ারে ভানুর কৌতুক নিয়মিত শোনা হতো।

    স্যাটায়ার দারুন হয়েছে 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. Runa Shabnam (83-89)

    লেখাটি পড়ে, বিগত ক'দিন মনের গোচরে এবং অগোচরে হেসে, সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম,
    " এবার কমেন্ট লিখে, দাবি জানাবো একটি নিজস্ব পেন্টাগনের, এবার কমেন্ট লিখে, আমার চাই করভেট ভাইপার"
    পড়ছি আর হাসছি।


    মানুষ এমনতয়, একবার পাইবার পর
    নিতান্তই মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর.........

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুজিব (১৯৮৬-৯২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।