(হাবিজাবি পোস্টের সাথে বোনাস হিসাবে একটা গল্প দিলাম। হাবিজাবি গপপো 😀 ) পরপর দুইটা পোস্ট দেয়ার জন্য ক্ষমা চাই 🙂 )
যখনকার ঘটনা বলছি তখন আমার বয়েস সাতাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সটা শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছি। কলাবাগানের মোড়ে এখন যে বড় মার্কেটটা উঠেছে তার সামনেই অফিস। অফিস মানে একটা কাঠের চেয়ার আর একটা টেবিল। নতুন চাকুরি জীবন। একটা উত্তেজনা কাজ করত সবসময়। মাসের শুরুতে মাইনে নিয়ে নাকের সামনে ধরতে অন্যরকম একটা আনন্দ হতো। যদিও বাবার অনুপস্থিতি এবং পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ার কারণে মাইনের অধিকাংশই গ্রামের ঠিকানায় পাঠাতে হতো।
সারাদিন অফিস শেষে বলাকায় একটা সিনেমা দেখা- কিংবা মাঝে মধ্যে ভার্সিটি জীবনের বন্ধুদের সাথে কয়েক হাত তাস পেটানো। এই ছিল বিনোদন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মায়ের চিঠি আসতো। চিঠির একটা অংশে থাকত-এবার আমাকে একটা বিয়ে করার অনুরোধ। তখনও নবীন চাকুরে। মাইনেও তেমন কিছু নয়। তাই মায়ের অনুরোধ গ্রাহ্য করতাম না। এরই মাঝে একটা চিঠিতে অনুরোধের সাথে একটা ছবিও এলো। আপনমনে কিছুটা হেসে নিয়ে ছবিটার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। রানুর ছবি। চমকে ওঠার কারণ- একসময় রানুর প্রতি আমার বেশ দূর্বলতা ছিল। গ্রামে কলেজে পড়ার সময় চিঠিও দিয়েছিলাম বেশ কয়েকটা। আবহমান কালের নিয়মানুসারে সেই কয়েকটা চিঠি লেখা দিয়েই রানুর প্রতি আমার প্রেম নিবেদনের সমাপ্তি হলো। অন্যপাশ থেকে সাড়া না পেলে ভালোবেসে যাওয়ার মতন মহান প্রেমিক অবশ্য আমি কখনোই হতে পারিনি।
রানুর সাথে মা আমার বিয়ে ঠিক করেছেন। বেশ মজা পেলাম। আবার বুকের কোথায় একটা আনন্দও উঁকি দিল যেন। অফিস থেকে দিন কয়েকের ছুটি নিয়ে বেশ কিছু কেনাকাটাও করে ফেললাম আর বাড়ির উদ্দেশ্যে ট্রেনে চেপে বসলাম।
ট্রেন থেকে যখন নামি তখন বেশ রাত হয়েছে। পাড়াগাঁয়ের স্টেশন। রাত এগারোটায় চারপাশ একেবারে নীরব হয়ে পড়েছে। আশেপাশে কোন ভ্যান কিংবা রিকশাও দেখা গেল না। কিছুকষণ স্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কয়েকটা সিগারেট টেনে হাঁটা শুরু করি। হাঁটতে গিয়ে বুঝতে পারি কেনাকাটা ভালোই হয়েছে। ব্যাগের ভর কিছুক্ষণ পর পর হাঁটা থামিয়ে দিতে বাধ্য করে। খাঁটি গ্রাম্য পথ। মাটির রাস্তা। চারপাশে ঝোপঝাড় আর গাছগাছালির মেলা।
– ভাইজানের হাঁটতে খুব কষ্ট হইতেছে! হে হে।
হঠাৎ করে ঝিঁঝিঁ পোকা আর ব্যাঙের ডাক ছাপিয়ে মানুষের কন্ঠ শুনে চমকে উঠি। ব্যাগ নামিয়ে রেখে পাশে তাকাতেই দেখি ঝোপঝাড়ের ভেতর থেকে এক লোক এগিয়ে আসছে। চাদর দিয়ে সমস্ত শরীর ঢাকা। মুখে দাঁত বের করা হাসি। আমার মনে কিছুটা অস্বস্তি ভর করে। ওদিকে লোকটা কাছে এসে ব্যাগটা তুলে নেয়।
– দ্যান দ্যান। আমারে দ্যান। শহুরে মানুষ। আপনাদের জইন্যে না এসব কাম। আমারে দ্যান। তুফানের মতন ভাসাইয়া নিয়া যাই। হে হে হে।
আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই লোকটা হাঁটা শুরু করে। চাপা অস্বস্তি নিয়ে আমিও পেছন পেছন হাঁটি। চাঁদের আলোয় সামনের রাস্তা পরিস্কার দেখা যায়। অস্বস্তি কাটাতে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে গুজে দিই। সামনে লোকটা আপনমনে হাঁটে। একসময় হেসে ওঠে।
– ভাইজান, ডরাইতেছেন নাকি আমারে? আরে ভাইজান- আপনে শহরের ইউনিভার্সিটি থেইকা কয়েকটা পাশ দিছেন। ভূতের ভয় পাইলে সাজে। হে হে হে। তাছাড়া আমি কিন্তু ভূত না। ভূত হইলেতো আপনে সিগ্রেট ধরাইলেই দৌড় দিতাম আগুন দেইখা। হে হে হে।। হে হে।
আমি লোকটার দিকে ভালো করে তাকানোর চেষ্টা করি। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মুখ। আমাদের গ্রামের কেউ নয়। আমি শহরের ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি- এই লোকটা জানল কী করে? পরক্ষণেই নিজেরই হাসি পায়। এসব গ্রাম থেকে কারো শহরে পড়তে যাওয়া বিশাল কোন ঘটনা। আশেপাশে কয়েকটা গ্রামে শোরগোল পড়ে যাওয়াটাও তেমন একটা অস্বাভাবিক নয়।
– আপনার নামটা কী? বাড়ি কোন গ্রামে?
আমার কথা শুনে লোকটা আবারো বিকট শব্দ করে হেসে ওঠে। চাঁদের আলোর নির্জন এই রাস্তায় সে হাসি বুকের কোথায় যেন ধাক্কা দেয়। অস্বস্তি কিছুটা বাড়ে।
– আমার নামধাম বাড়ি টাড়ি কিছু নাই ভাইজান। হে হে হে। না না, বাড়ি একখান আছে। তয় সেটা মাটির তলায়।
একথা বলে সে হাসির মাত্রা অনেক গুন বাড়িয়ে দেয়। ঠিক তখনি অস্বস্তি ছাপিয়ে আমার রাগ হয়। গ্রামের একটা লোক আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। কিছুটা ধমকের সুরে কথা বলার চেষ্টা করি আমি।
– মিয়া, ফাজলামি করো আমার সাথে? যাও। তুমি তোমার পথ দেখো। আমি নিজেই ব্যাগ নিয়ে যেতে পারব।
আমি থামলেও লোকটা থেমে যায় না। হাসতে হাসতে কিছুদূর এগিয়ে পেছন ফেরে আমার দিকে তাকায়। চাঁদের আলোয় কিছুটা রহস্য দেখতে পাই যেন! হঠাৎ হাসি থামিয়ে কথা বলে ওঠে।
– আহা! ভাইজান। এত রাগ করে আছেন ক্যান? আমি কী আর খায়েশ কইরা আইছি? আমার মায়ে আমারে পাঠাইলো। কইলো- আপনে নাকি ভালো লোক। বড় পাশ টাশ দিছেন, আপনারে সাবধান কইরা দিয়া যাইতে। না হইলে কার ঠ্যাকা পড়ছে- মাটির তলায় এত আরামের ঘুম ছাইড়া এই নিশিরাইতে ব্যাগ কাঁধে নিয়া হাঁটতে!
এ কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। কেন জানিনা এই প্রথম মনে হলো- চাঁদের আলোয় রহস্যময় লোকটা সত্যি কথা বলছে। ওদিকে আমার যুক্তি খোঁজা মন বাঁধা দিতে চাইল। তবুও যেন ঘোরের মধ্যেই জিজ্ঞেস করলাম,
– সাবধান করে দিতে এসেছো মানে?
– ঐযে আপনি সালাম চাচার মেয়ে রানুরে বিয়া করতে আইছেন না। আমার মায়ে কইছে- আপনে যেন তারে বিয়া না করেন। মাইয়ার নাকি কী গোলমাল আছে। আইচ্ছ্যা আমি আহি ভাইজান।মায়ে চিন্তা করব। আপনার বাড়িও আইয়া পড়ছে।
একথা বলার সাথে সাথে পাশ থেকে একটা নারী কণ্ঠ ভেসে আসে। “দুলাল- বাবা, তুই ক নে?” দুলাল ব্যাগটা আমার হাতে তুলে দিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। আমি স্তব্ধ হয়ে খেয়াল করি দুলাল আমাদের গ্রামের গোরস্থানের দিকে হেঁটে যাচ্ছে- যেখান থেকে সেই নারী কণ্ঠ ভেসে এসেছিল। ! মনে হলো- এখুনি বাড়িতে গিয়ে একটা গোসল না দিলে আমার চিন্তাভাবনা এলোমেলো হয়ে যাবে।
চাপাকলের পানিতে গোসল করার পর মায়ের হাতের রান্না খেতে খেতে নানা কথা হতে লাগলো। ছোটবোন নিরুর জন্য একটা ক্যামেরা নিয়ে এসেছি। আমার এক প্লেট ভাত খাওয়ার মাঝেই সে কয়েকটা ছবি তুলে ফেলল। আমি হেসে বললাম,
– কীরে, তুইতো একরাতেই রিল শেষ করবি মনে হচ্ছে!
লক্ষ্য করলাম – মা আমার বিয়ে নিয়ে কোন কথা বলছে না। খাবার পরে বাড়ির উঠোনে পাটি পেতে বসেছি। তখনই ঘটনা পরিস্কার হলো। মা আমার সাথে রানুর বিয়ে দিচ্ছেন না। মুখে পান নিয়ে মা বলতে লাগলেন,
– বুঝলি বাবা। তোর সালাম কাকারে ভালো মানুষ বলেই জানতাম। কিন্তু মেয়ের বিয়ে দেওনের জন্য এমন মিছা কথা বলবে, কে জানত?
এরপর মা গলা নিচু করে ফেলল। বলতে লাগল,
– মেয়ের আগে একটা বিয়া ভাঙছে। যার লগে বিয়া ঠিক হইছিল, সে পোলার নাকি পাগলের মতন অবস্থা। রাতের বেলায় জ্বীন ভূত দেখে….
আমি বুকে হঠাৎ করে যেন একটা ধাক্কা খাই। কী মনে করে মাকে প্রশ্ন করি,
– আচ্ছা মা। তুমি কী দুলাল নামে কাউকে চেনো?
আমার এই অপ্রাসংগিক প্রশ্ন শুনে মা কিছুটা অবাক হয়। পানের পিক উঠোনের এক প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে দিতে বলে,
– কোন দুলাল? আগের বছর শীতে পানিতে ডুইবা মারা পড়লো। আইনুলগো বাড়ির পোলা। ক্যান রে? হঠাৎ…
সেবারের মতো বিয়েতে ইস্তফা দিয়ে আমি ঢাকার পথ ধরি। সত্যি কথা বলতে কী- রানুর সাথে বিয়েটা না হওয়াতে আমি খুশিই হয়েছিলাম। আমি ভূত প্রেতে বিশ্বাস করি- সেকথা বললে ভুল বলা হয়। কিন্তু রাতের বেলা সে ঘটনা আমাকে কোথায় যেন একটা নাড়া দিয়েছিল। তবুও নিজে থেকে বিয়েটা না করলে একটা অস্বস্তি রয়ে যেতো।
কয়েক মাস পরের কথা।
বিয়ে করতে আবারো বাড়ি আসা হয়েছে। মেয়ে অন্য গ্রামের। ভারী মিষ্টি দেখতে। এবার মায়ের চিঠির সাথে ছবি দেখার পর প্রায় ছুটতে ছুটতেই চলে এসেছি। বাড়িতে আমাকে ঘিরে – আমার বিয়েকে ঘিরে বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব। সেই উৎসবের মধ্যমণি হয়ে থাকতে বেশ ভালোই লাগে! বিয়ের আগে একদিন দুপুরে খাবার সময় হঠাৎ মা বলল,
– বুঝলি বাবা। আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্য করেন। ঐ যে সালাম সাবের মেয়ে রানু। সেবার তুই চলে যাওনের কয়েকদিন পরেই তো পলাইয়া গিয়া বিয়ায় বইল। ছি ছি। ভাবতে গ্যালে গা শিরশির করে- এই মাইয়ার লগে আমার পোলার বিয়া ঠিক করছিলাম। সালাম সাবেরওতো লজ্জা শরম কিছু নাই। মাইয়ার এমন বেশরম কাজ মাইনা নিল- আবার ঘটা কইরা অনুষ্ঠানও করল। ছি ছি।
পাশে বসে থাকা আমার ছোটবোন ভেতরের ঘরে ছুটে যায়। সেবার কিনে আনা ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবির কোনটা হয়তো আমাকে দেখাতে বাকী রয়ে গেছে। হাতে ছবির এলবাম নিয়ে নিরু ছুটে আসে।
– দ্যাখো ভাইজান!
– কীসের ছবি রে?
– রানুদির বিয়েতে উঠাইছি!
হাসতে হাসতে ছবির দিকে তাকাই। বিয়ের সাজে রানু আর পাশে বর। বরের দিকে তাকাতেই আমি চমকে উঠি। আর পরক্ষণেই হো হো করে হাসি পেয়ে যায়। বিয়ের সাজে রানু আর ভ্যাবলার মত চেয়ে থাকা বরটার দিকে তাকালে কে বলবে?- ওদের পেটে এত বুদ্ধি ধরে!
১ম
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
😮 😮 😮
কয় কি? তুমি ত দেহি মিয়া টাইম মেশিনে চইড়া ভবিষ্যতে গেছিলা।তোমার বয়স সাতাশ হতে ত ঢের দেরি আছে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
😀 :)) =))
দোস্ত হেভভি হইছে। :clap: :clap:
জটিল তো... :clap: :clap: :clap:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:boss: :boss: ভয় পাইছিলাম
আগের জায়গায় কিছু বলি নাই তবে এখন বলি দারুন হইছে :thumbup:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ভাইয়া ভালো লেগেছে :clap: :clap:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
এত্ত চমতকার গপ্পো , আর ক্ষ্মা করব না? :thumbup:
জটিলস .................. :hatsoff:
বেশ মজার গল্প! দারুন লাগলো ভাই :clap: :clap: :clap:
গল্পটা খুবই চমতকার । :clap:
দারুন হইছে :clap: :thumbup:
অনেক ভাল একটা গল্প!
(+++++++++++) টু দা পাওয়ার অসীম
ভালো লাগল মহিব। :clap: :clap:
পরপর দুইটা কেন, একশটা লেখা দিলেও আমরা বিরক্ত হব না!
ওই মহিব, তুমার উপ্রে মিজাজ বহুত খারাপ হই আছে, যাইহোক লিখা টিখা দিতেছে,শান্তি শান্তি লাগতেছে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
লেখা ভাল হইছে, তোমার লেখার ষ্টাইলটা অনেক আলাদা, শেষের দিকে এসে অবাক করা মোড় নেয়।
@ কাইউম, তুমি কই, দেখ দেখ ফৌজিয়ানের লেখা কিন্তু ট্যাগ নাই। 😀
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
দারুণ, আর খুবই ম্যাচিওরড লেখা, মজা পেলাম।
আগে পড়েই কমেন্টাইছিলাম। খুব ভাল লেগেছে। মহিবের অধিকাংশ গল্পই খুব ভাল লাগে।
আইডিয়াটা জটিল । আগে পাইলেই হইতো। এটলিস্ট পার্বতীর বিয়াটা ঠেকাইয়া দিতে পারতাম। 😛
এই ছেলের অনেক সমস্যা আছে। নিয়মিত লেখে না তা তো একটা আছেই আর সব কিছু ধরে শুরু করে তারপর আর কোন পাত্তা দেয় না। এই সেই ছেলে যে অন্যরকম ক্যাডেট কলেজ বইলা একটা জিনিস শুরু করছিল তারপর কত পর্ব হয়ে গেল সে আর উঁকিও দিল না।
আমাদের পান্ডুলিপি বলে একখান জিনিস শুরু করছিল কেমনে জানি সেটার ২য় পর্ব ও লেখছিল তারপর গঙ্গা-যমুনায় কত পানি গেল ৩য় পর্ব আর আসল না। সেই লেখার নিচে কিন্তু চলবে কথাটা এখনো দেখি ।
অনেক গুছানো লেখা
সুন্দর প্লট আর অনেক পরিণত লেখার স্টাইল...
খুব ভালো লাগলো...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
ভাল লাগল।ভাল লেখা।
হরর গল্প আমি হড়ড় করে গিলি... কুপ মযা লাঘচে।