এই ব্লগটি তাদের জন্য এড়ানো সম্ভব হবে না,যারা শুধু ভ্রমন পিপাসুই নয়, পুরাকীর্তি এর প্রতি আগ্রহী।
গত শনিবার আমি গিয়েছিলাম যশোর থেকে ২০ কিমি উত্তরে বারবাজারের মাজার আর প্রাচীন মসজিদ দেখতে। ঢাকা থেকে কেউ আসতে চাইলে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ এর পরেই এর অবস্থান। এখানে আরো আছে প্রাচীনতম বটগাছ আর নানা লোককাহিনী। স্বল্প এই ডে ট্যুর আপনি অবশ্যই উপভোগ করবেন।
shortly describe করছি আমার অভিজ্ঞতা…
দুপুর একটার দিকে যশোর পালবাড়ি থেকে বার বাজারের উদ্দেশ্যে বাসে করে রওনা দিলাম। দূরত্ব মাত্র ২০ কিমি আর মাত্র ৩০ মিনিট লাগলো। দুপুর ২ টা বাজে, ক্ষুধা লেগেছে, লাণ্চ করা খুবই জরুরী । লোকজনএর কাছে শুনলাম এখানে বাবুলের restaurant সবচেয়ে ভালো । খুঁজতে গেলাম বাবুলের খাবার দোকান। কিন্তু বাবুল recently মারা গেছে, তাই নেই, বন্ধ। যাইহোক বাস স্টপেজ এর পাশেই ঢুকে পড়লাম একটি লোকাল খাবারের দোকানে। পেট ভরে দুই প্লেট ভাত খেলাম; ছোটমাছ আর দেশি মুরগি দিয়ে। শহুরে রেস্টুরেন্টের মত আহামরি চাকরি করি তবে খাবারের টেস্টের কোন কমতি নেই। ভাত খাওয়ার পর গরম গরম ছানার পায়েস খাওয়ার সুযোগ হলো। অবাক করা ব্যাপার হল খাওয়ার পর বিল এসেছে মাত্র 220 টাকা। আমরা দুইজন ছিলাম।
খাওয়া পর্ব শেষ করে চললাম মাজার দেখতে। ঝিনাইদহ যশোর main road থেকে প্রায় 3-4 কিলোমিটার পূর্বে গাজী কালু চম্পাবতীর মাজার। ভ্যানের যাওয়াটাই সুবিধা ; খোলা মেলা ভ্যানে 360° view পাওয়া যায়।
এবার আসি মাজারের বর্ণনায়। গাজী কালুর পরিচয় নিয়ে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। জনশ্রুতিতে জানা যায় সুলতান শাহ সিকান্দরের ছেলে ছিলেন গাজী। আর কালু ছিলেন তার পালিত সন্তান। কালু গাজী কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং সর্বদা অনুসরণ করতেন। গাজীর সাথে সাপাই নগরীর সামন্ত রাজা রামচন্দ্র ওরফে মুকুল রাজার মেয়ে চম্পাবতীর সাথে দেখা হয়। গাজি ভুলে যান যে তিনি মুসলমান, চম্পাবতী ও ভুলে যায় যে সে হিন্দু রাজার মেয়ে। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলো কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ালো সমাজ ও ধর্মীয় বিভেদ। রাজা আদেশ দিলেন গাজীকে এর শায়েস্তা করতে। কিন্তু ঘোড় যুএদ্ধ পরাজিত হয়ে সেনাপতি দক্ষিণা রায় গাজীর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন। পরবর্তীতে তিনি গাজির অনুসারী হয়ে যান । গাজী কালুর মাজারের তারও কবর খানা রয়েছে। মুকুট রাজার ঝিনাইদহ বারোবাজার কালীগঞ্জ কোটচাদপুর ও বেনাপোলে সামন্ত রাজা ছিলেন। গাজীর সাথে রাজার অনেক খন্ড যুদ্ধ হয় । অবশেষে গাজী চন্দ্রাবতী কে নিয়ে বারোবাজারে আবাস গড়ে তুলেন। তাদেরই মাজার রয়েছে এবার বাজারে। মাজার এর সাথে রয়েছে পুরাতন কিছু বটগাছ। যা সত্যিই অবাক করা সুন্দর। মাজারের পাশে একটা বড় দিঘিও রয়েছে।
মাজার দেখা শেষ করে আমরা চললাম মসজিদ দেখতে। আমরা যে ভ্যানওয়ালা সাথে নিয়ে এসেছিলাম তাকে আর ছাড়িনি। সেই আমাদের গাইড করে মসজিদ গুলো দেখালো। প্রথমে গেলাম গোড়ার মসজিদ দেখতে। প্রায় ৫০০ বছর প্রাচীন কারুকার্যময় মসজিদ যেন সত্যিই ঐতিহ্যের বাহক। আমরা অবাক হয়ে গেলাম এটা দেখে এখনো মসজিদটি খুব মজবুত ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখে মসজিদের ইমাম সাহেব একটি রেজিস্টার বই নিয়ে আসলেন। সেখানে ভ্রমণকারীদের বিভিন্ন মন্তব্য বা সাজেশন লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এই উদ্যোগ আমার ভালো লাগলো। আসর নামাজ শেষে আমরা চললাম বাকি মসজিদ গুলো দেখতে। গ্রামের ভিতর এদিকে সেদিক ছড়িয়ে আছে প্রায় ৯-১০ টি ছোট বড় প্রাচীন মসজিদ। সবকটি দেখতে ৩০-৪৫ মিন সময় লাগ্লো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল আর আমাদের সময় ফুরিয়ে আসছিল। অনেক ইচ্ছা থাকা সত্তেও আমরা উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বট গাছটি দেখতে যেতে পারি নাই। ভ্যানওয়ালার কাছে শুনলাম বটগাছ বারোবাজার থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে। তাই এখন যাওয়া সম্ভব নয়।
পরবর্তীতে আবার আসবো এই বটগাছ আর মঠঝাট বাওর দেখতে। কেউ যদি সারাদিন হাতে নিয়ে আসেন, তাহলে খুব সুন্দর ভাবে ঘুরে যেতে পারবেন আশা করি।
আজ এ পর্যন্ত ই। ধন্যবাদ।
ভিডিও দেখতে নিচের ইউটিউব লিংক এ যেতে পারেন..
আর যেকোন প্রশ্ন কমেন্ট সেকশন এ করতে পারেন।
খুব ভাল লাগলো পড়ে। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম...