আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আমাদের প্রায় সবারই ফটোগ্রাফির প্রতি খানিকটা দুর্বলতা আছে, এটাই স্বাভাবিক। হরেক রকমের সোস্যাল নেট ওয়ারকিং আর ফটো আপলোডের এত প্লাটফর্ম থাকায়, সবাই এখন ভালো ছবির কাঙ্গাল। ভালো ছবির জন্য DSLR ক্যামেরা একটি অন্যতম মাধ্যম।আমদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন হইতো চিন্তা করছেন DSLR কিনবেন, কিন্তু বাজারে এত বেশি অপশন থাকায় ঠিক ধরতে পারছেন না , কি করা উচিত। হ্যা , আপনাদের এই সাহায্যের জন্য এই ব্লগ লিখা। আশা করি ভালো লাগবে।
ক্যামেরা নিয়ে মোটা মোটি বিস্তর আলোচনা প্রথম পর্বে করা আছে।
ক্যামেরা কিনলেন, এবার কোন লেন্স টি কিনবেন ? লেন্স এর প্রকারভেদ ও পরিচিত। লেন্সের গায়ের লেখা গুলোর মানে কি? আজকের পর্বে আমরা এগুলো জানবো।
ফোকাল লেন্থ
লেন্সের গায়ের উপরে mm একক দিয়ে ফোকাল লেন্থ এর পরিমাপ টা দেয়া থাকে ।নিচের ছবিতে লেন্সের ফোকাল লেন্থ হল ১৮-৫৫ মিমি।
ফোকাল লেন্থ হলো , ছবি তোলার সময় কতটুকু অংশ ছবিতে আসছে এর নির্ধারক। অর্থাৎ ফোকাল লেন্থ বেশি হলে ছবিতে কম জায়গা কভার করবে। আবার ফোকাল লেন্থ যত কম হবে ততবেশি জায়গার ছবি উঠবে, তত বেশি wide হবে। নিচের ছবিটিতে খেয়াল করুন
ফোকাল লেন্থেরপার্থক্যের জন্যে আরো একটা ব্যাপার সম্পরকযুক্ত, তা হলো ব্যাকগ্রাওন্ড ব্লার বা ঘোলাটে হউয়া। ফোকাল লেন্থ বেড়ে যাওয়া মানে ফোকাসিং অবজেক্ট এর পিছনের Material গুলো আরো কম্প্রেস হয়ে যাওয়া।
কেন এরকম হয়ে থাকে এর ব্যাখ্যা নিচে দেয়া হলো। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি ফোকাল লেন্থের ওপর ভিত্তি করে লেন্সের ভাগ করা যায় এভাবে, নরমাল লেন্স ( সাধারণত ১২-৭৫ মিমির মধ্যে), ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স(২৪ মিমি এর নিচে) আর টেলিফটো লেন্স( ৭০ এর ওপরে)।
সাধারনত বাজারে দুই ধরনের লেন্স পাওয়া যায়, জুম লেন্স আর প্রাইম লেন্স। জুম লেন্সের ফোকাল লেন্থ পরিবরতন করে ইচ্ছা মতো লিমিটের ভিতরে ছবি তোলা যায় , আবার প্রাইম লেন্সের ফোকাল লেন্থ ফিক্সড।
এটি একটি প্রাইম লেন্স। এই লেন্সের গায়ে ফোকাল লেন্থের কোন লিমিট নাই, অর্থাৎ জুম করতে পারবেন না, কন্তু এই লেন্স গুলি প্রফেসনাল দের ছইচে, কারন এটির আপারচার বেশি, লো লাইটে ভালো ছবি পাওয়া যায়, সফট ব্যাকগ্রাওন্ডেড় কারনে অনেক ভালো পোট্রেট তোলা যায়।
অ্যাপারচার
উপরের ছবি থেকে বুঝতে পারি যে অ্যাপারচার লেন্স দিয়ে কতটুকু আলো ঢুকবে তা নিরধারন করে। f/(number) হলো একটা অনুপাত, সঙ্খ্যাটা যত ছোট হয় ,অ্যাপারচার তত বড় অ্যাপারচার মানে তত বেশি আলো ঢুকে ছবি উজ্জ্বল করে তোলে। সাধারনত রাতে বা কম আলোতে সুন্দর ছবি তোলার জন্য বড় অ্যাপারচার দরকার।
অ্যাপারচারের সাথে কিন্তু DEPTH OF FIELD এর বড় একটা সম্পর্ক আছে। নিচের ছবি টি খেয়াল করুন
অর্থাৎ বলা যায় আপারচারটা যত বড় হয়, তত ফোকাসিং আর ডিটেইল ছবি তোলা যায়, যা আমরা সবাই চাই।
লেন্সের গায়ে সাধারণত ফোকাল লেন্থ এর পরেই লেখা থাকে।
Image Stabilizar( IS)
হাতে ক্যামেরা নিয়ে ফটোগ্রাফি করার সময় হাল্কা কাপানো কে সহনীয় মাত্রাই রেখে ছবি কে সুন্দর করে তোলে। একি জিনিস নিকনের লেন্স এ VR( Vibration Reducer ) হিসেবে বলা হয়ে থাকে। আবার ক্যামেরা যখন ট্রাইপডে রেখে ছবি তোলা হয় তখন এটা অফ রাখা উচিত।
STM ( Stepping Motor)
STM-Step motor ক্যানন লেন্সে ব্যবহৃত মটর যা লেন্সকে অটোফোকাস করে। এই মটর শব্দহীন ভাবে আটোফোকাস করতে পারে। সুতরাং STM লেন্সগুলো ভিডিও করার সময় কোনরূপ শব্দ ছাড়াই অটোফোকাস করে থাকে।
কয়েকটি লেন্সের উদাহরন
আমি ক্যানন লেন্সের উদাহরন দিয়ে দিচ্ছি। আসলে নিকন বা ক্যানন একই , নামকরণে একটু পার্থক্য থাকে, তবে দেখলেই বুঝবেন
১। CANON ZOOM LENS EF-S 18-135mm 1:3.5-5.6 IS STM
এটি ক্যাননের জুম লেন্স, যার ফোকাল লেন্থ ১৮-১৩৫ মিমি পর্যন্ত, অ্যাপারচার ১৮ মিমি তে সরবোচ্চ ৩.৫ আবার ফোকাল লেন্থ বাড়ালে কমে ৫.৬ পর্যন্ত যায়। Image Stabilization আছে, স্টেপিং মটোর ও আছে। কথা হলো EF-S কী। এটি হলো ক্যানন ক্যামেরা যেগুলোতে APS-C ( CROPPED FRAME) সেন্সর ব্যবহার করা হয়ছে , যেমন Canon 70D, Canon Rebel T3i ।
২। CANON LENS EF 35mm 1:1.4 L
এটি একটি প্রাইম লেন্স, যেখানে ফোকাল লেন্থ ৩৫ মিমি, EF মানে হলো, এটি ফুল ফ্রেম , larger sensor body এর ক্যামেরার জন্য যেমন, Cano 6D, Canon 5D । এখানে L মানে হলো এই লেন্স আরো উন্নত্মানের ছবি তুলতে পারে, বড় এবং শার্প।
৩। Canon EF 24-70 mm 1:2.4 L II USM
USM-UltraSonic Motor ক্যানন লেন্সে ব্যবহৃত মটর যা অটোফোকাস করে। USM আবার দুই ধরণের হয়ে থাকে। micro motor USM এবং Ring type USM। Ring type USM মটর গুলো STM মটরগুলোর মতই শব্দহীন এবং মসৃন হয়ে থাকে। micro motor USM গুলো Ring type USM-এর মত এতটা শব্দহীন না হলেও এই ধরণের মটর যে লেন্সগুলোতে ব্যবহার করা হয় সেই লেন্সগুলোর দাম তুলনামূলক কম হয়।)
এখন আমরা সহজেই বলতে পারবো কোন লেন্স কেমন এবং কি মানে বোঝায়। নিকনের ক্ষেত্রেও একী শুধু EF এড় ্যায়গায় AF পড়তে হবে। IS বা VR ও একি জিনিস। তারপর ও কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।
ধন্যবাদ। এই লেখাটির ১ম পর্ব পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
DSLR ক্যামেরা কিনছেন? পর্ব- ১ ( মধ্যম দামের মধ্যে কয়েকটা ক্যামেরা )
সুন্দর লেখা।
ভালো কথা বিষয়ে গিয়ে ফটোগ্রাফি, ছবি তোলা ইত্যাদি সংযুক্ত করে দিও। এতে করে ঐ বিষয়ে সার্চ দিলে এই লেখা সহজেই পাওয়া যাবে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂
করে দিচ্ছি
চমৎকার উদ্যোগ। অনেকেই উপকৃত হবে তোমার ব্লগ থেকে
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা করব
আবারও ধন্যবাদ!
"আপারচারটা যত বড় হয়, তত ফোকাসিং আর ডিটেইল ছবি তোলা যায়"--- বোঝাতে চেয়েছ "অ্যাপারচার নাম্বারটা" যত বড় হয়?
সাদিক ভাই, না, নাম্বার যত ছোট হয় , অ্যাপারচার তত বড় হয়, আসলে ওইটা একটা ratio, যার পরের নাম্বারটা বড় ছোট হয়, 1 constant.
যেমন,1:2.8 এর থেকে1:4 লেখা লেন্সের অ্যাপারচার ছোট। আশা করি উত্তর পেয়েছেন B-)
পেয়েছি! এখন বুঝেছি যে তুমি এখানে একটা নির্দিষ্ট লেন্সের সর্বোচ্চ অ্যাপারচারের (Maximum Aperture) কথা বলছিলে।
আমি ভাবছিলাম ওটা একটা ছবির Depth of field-এর উপর ছোট-বড় অ্যাপারচারের ভূমিকার আলোচনার অংশ। (Small aperture= more area in focus)
ধন্যবাদ। চালিয়ে যান। :clap:
🙂
:clap: :clap:
দুর্দান্ত হয়েছে। আরো বিষয় ভিত্তিক লেখা আশা করছি।
বিবেক হলো অ্যানালগ ঘড়ি, খালি টিক টিক করে। জীবন হলো পেন্ডুলাম, খালি দুলতেই থাকে, সময় হলে থেমে যায়।
ধন্যবাদ ভাই
সময়ের অভাবে লেখাই হয় না
ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো ভাবে ব্লার করতে হলে কি কি করতে হবে? আমি কারো পুরো ছবি সহ ব্যাকগ্রাউন্ড ভালোভাবে ব্লার করতে চাই,,,এক্ষেত্রে কি করতে হবে?
nikon D3200(kit lens 18-55mm)
ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো ভাবে ব্লার করতে হলে কি কি করতে হবে? আমি কারো পুরো ছবি সহ ব্যাকগ্রাউন্ড ভালোভাবে ব্লার করতে চাই,,,এক্ষেত্রে কি করতে হবে?
(নিকন ডি৩২০০(১৮-৫৫এমএম লেম্স)
কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করার জন্য ১৮-৫৫ তেমন সুবিধার লেন্স না। তবে আমি আপনাকে কিছু টিপস দিতে পারি।
১. ম্যাক্সিমাম জুম করে ছবি তুলুন। দরকার হলে সাবজেক্ট কে ফ্রেম এর ভিতরে আনতে আপনি নিজে পিছিয়ে নিন।
২. আপারচার মিনিমাম করুন। ৫৫ মিমি তে মনে হয়ে ৫.২ ই সবচেয়ে কম।
৩. ব্যাকগ্রাউন্ড মোটামোটি দূরে রাখুন। যেন ফোকাসিং করা সাবজেক্ট টা স্পশট লাগে
ধন্যবাদ