~ গাং শালিখ ~

লোকালয়ে রেখে গেছো কতোটা অভিমান !
শহর-নগর ভরা সব মানুষ সমান !

দরাজ দালান আর লাইটপোস্টের
বাগান তোমার কাড়ে নাই একটুও
মন, কাড়ে নাই কারখানা, শ্রমিকের দল,
পার্কের জোড়ামুখ, সাজানো লেকের
পাড়, গ্রীলের গেটে বোনা বোগেনভেলিয়া, নীল
অপরাজিতা, ছাদে ও বারান্দায়
গহনার মতো রাখা দুষ্প্রাপ্য ফুল,
ক্যাকটাস কিংবা সেই সব নাগরিক
সভাসদ, গেলো বছর যারা আইল্যান্ড
মুখর করে লাগিয়েছিলো কৃত্রিম
মার্বেলে আঁকা রংগীন লতা পাতা কুল ।

লোকালয়ে রেখে গেছো কতোটা অভিমান !
সড়ক ও নৌপথের দৈর্ঘ্য সমান !

শাপলা শালুক কচুরীরা যেখানে
জলের বুকে স্বপ্ন আঁকে ভীষণ
পাগল করা এক অলৌকিক ঘ্রাণে ।
সন্ধ্যা লাগা ঘাস ও গাছেদের গানে
আঁধার নামলেই জলের বুকে পিঁড়ি
পাতে মন্ত্রমুগ্ধ চাঁদ সন্ধানে ।

ওইখানেই তোমার ঘর, বুকের
ভিতর পৃথিবীর সবটুকু ওম যার ।
ভেঁজা বালির গায়ে রাখা মগ্নতায়
হলুদ ঠোঁটে কসমেটিকসের
প্রলেপ মাখার রংধনু সভায়
নদীজল রোদ মুগ্ধতা এঁকে যায় ।

নিঃসংগ মাচার নীচে গাছেদের
ছায়ারা যেখানে, নিস্তরংগ
জীবনেরে দিয়েছে মোহন হাতছানি,
ঘাসফুল বুনোলতা স্নায়ুবশ ঘ্রাণে বুনি
কিনারে বহতা নদীরে জীবনের
মাঝখানে সখ্যসন্ধানে নিছে টানি ।

সেইখানে নদী ও বিলের গায়ে তুমি
বাঁধো ঘর নরোম মাটির বুক চুমি ।

১৫ জুন ২০১৫ ~ ভোর

ছবিস্বত্ত্বঃ লীনা হাসিনা হক

ছবিস্বত্ত্বঃ লীনা হাসিনা হক

১,৯৫০ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “~ গাং শালিখ ~”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    ছাদে ও বারান্দায়
    গহনার মতো রাখা দুষ্প্রাপ্য ফুল,

    লোকালয়ে রেখে গেছো কতোটা অভিমান !
    সড়ক ও নৌপথের দৈর্ঘ্য সমান !

    জীবনেরে দিয়েছে মোহন হাতছানি,
    ঘাসফুল বুনোলতা স্নায়ুবশ ঘ্রাণে বুনি
    কিনারে বহতা নদীরে জীবনের
    মাঝখানে সখ্যসন্ধানে নিছে টানি ।

    এই কবিতা থেকে কত উদ্ধৃতি যে দেয়া যায়!

    ছবিটার জন্যে লীনা হাসিনা হককে ধন্যবাদ


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      অগণন ধন্যবাদ সাইদুল ভাই ।
      অমন মন্তব্য বুকের ভেতর বাজায়
      ভীষণ রকম আনন্দের সানাই ।
      অনবধানে সাহসের ডানা গজায় ।

      ছবিটাই এক অর্থে লিখিয়ে নিয়েছে ।
      তাই লীনা হাসিনা হকের কাছে
      কৃতজ্ঞতা পৌছানোর জরুর তাড়া আছে ।

      জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      ছবিটা নিয়ে বসে ছিলাম প্রায় সপ্তা খানেক ।
      সময়ের আর ভাবের জুত হচ্ছিলো না ।
      তারপর একদিন লিখবোই ভেবে অনড় হলাম
      কারন তার আগের রাতে মাথায় এসে ভর করেছিলো
      প্রথম দুটি লাইন । বুঝলাম অর্গল খুলেছে ...
      তারপর আবার দ্বিধা ছিলো নগর কেন্দ্রিক অংশটুকুন
      কবিতাটায় থাকবে কি থাকবে না ।
      যার ছবি এবং আমার আর এক বোদ্ধা বন্ধু সুহৃদ বন্ধু
      এই দুজন মত দিলেন নগর ভিত্তিক লাইনগুলো সহই ভালো লাগছে ...
      গাং শালিখের মতোন এক্সটিংক্ট টাইপ একটা কিছুকে নিয়ে লেখার মধ্যে
      অন্য এক রকম অনুভূতির চাপও ছিলো ।

      জবাব দিন
    • লুৎফুল (৭৮-৮৪)

      মাহবুবকে যা বলছিলাম ... আমাদের নগরের আগ্রাসী জগত জুড়ে বিরল এক প্রজাতিকে নিয়ে
      লিখতে গিয়ে আংগিক ও প্রতিপার্শিক কিছু কথা আনতে হয়েছে যা এক রকমের স্থানভেদের বর্ণনা চিত্র তুলে এনেছে ।
      এতে এক রকমের ভ্রমণানন্দ যদি মনে ঊঁকি দিয়ে থাকে তবে তা হবে বাড়তি সার্থকতা ।

      মোবাইল কবিটা টার্মটা দারুন মন কেড়েছে ।

      জবাব দিন
  2. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    শুধু মন্তব্যে যথেষ্ট নয়, এই কবিতা আলাদা করে লেখা 'পাঠ-প্রতিক্রিয়া' দাবী করে। সময় নিয়ে একটু একটু করে লিখতে চাই।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    কবিতা ভালো লেগেছে।
    কিন্তু গাং শালিক বলে আসলেই কি কিছু আছে/ নাকি কবির কল্পনা!


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    ছবিতে মাটির গায়ে যে ফোকরগুলো দেখা যাচ্ছে । ওগুলো গাং শালিকেরই বাসা ।
    পাখির পুঁথিগত ব্দ্যা নেই যে অন্যভাবে বুঝিয়ে বলবো । কোথাও লোকে এমন নামেই ডাকে এই প্রজাতিটাকে ।
    এখানে পোস্ট করতে গিয়ে ছবির সাইজটা ছোটো হওয়াতে অতোটা ভালো চোখে পড়ছেনা যদিও ।
    আর ছবিটা গত এক মাসের ভেতরেই তোলা ।

    জবাব দিন
  5. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    চমৎকার একটা ছবি নিয়ে চমৎকার কবিতা। কবি ও ছবিগ্রাহক, উভয়কে ধন্যবাদ। ভালো লাগার কিছু পংক্তিঃ
    ১। লোকালয়ে রেখে গেছো কতোটা অভিমান !
    শহর-নগর ভরা সব মানুষ সমান!
    ২। গহনার মতো রাখা দুষ্প্রাপ্য ফুল।
    ৩। লোকালয়ে রেখে গেছো কতোটা অভিমান !
    সড়ক ও নৌপথের দৈর্ঘ্য সমান!
    ৪। ওইখানেই তোমার ঘর, বুকের
    ভিতর পৃথিবীর সবটুকু ওম যার।
    ৫। সেইখানে নদী ও বিলের গায়ে তুমি
    বাঁধো ঘর নরোম মাটির বুক চুমি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : লুৎফুল (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।