বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এর রিউনিয়ন থেকে ফিরে আসলাম ১৮ জানুয়ারী ২০১৫ সকালে। শুরুটা ছিলো ১৪ জানুয়ারী ২০১৫ সন্ধ্যায় লঞ্চ যাত্রা এর মধ্য দিয়ে। সারারাত ধরে লঞ্চের কেবিন এ বসে জাতিকে উদ্ধার করার পর ভোরবেলা নামলাম বরিশাল শহরে! দুইটা মাহেন্দ্রতে [টেম্পু এর মতো একটা বাহন] চড়ে কলেজ এর গেট দিয়ে ঢুকে পড়লাম। আমি আসলে পুরো রিউনিয়ন বর্ণনা করতে বসিনি, আমি বলবো শুধু আমার ব্যাচ এর কথা [আমরা ১৭তম ব্যাচ, বিসিসি ১৭, এইচ এস সি ২০০০]। কলেজে ঢূকেই চলে গেলাম অ্যাডজুট্যাণ্ট এর বাসায়, আমাদের ব্যাচ এর আসাদ এখন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এর অ্যাডজুট্যাণ্ট। বলে রাখা ভালো, জীবনে প্রথম অ্যাডজুট্যাণ্ট এর বাসায় যাওয়ার সাহস করলাম, ঃ-)। আমরা ২ জন ছিলাম পরিবার সহ আর বাকি ৩ জন একা। সবাই এ থাকলাম অ্যাডজুট্যাণ্ট এর বাসায় পুরা রিউনিয়ন। অ্যাডজুট্যাণ্ট এর কথায় আবার পরে ফেরত আসব, আগে বলে নেই, আমাদের সাথে ছিল বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এর লিজেন্ড এবং আমাদের ব্যাচ এর কলেজ প্রিফেক্ট মাহমুদ হাসান [বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এর কলেজ ব্লু প্রাপ্ত ক্যাডেট]; ছিলো মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ এর বর্তমান অ্যাডজুট্যাণ্ট ফায়েজুল আরেফিন; বিশিষ্ট টিভিসি মেকার হাফিজুর রহমান টিটো [আর এফ এল এর অধিকাংশ টিভিসি এ যার হাতে সৃষ্ট]; বুদ্ধিমান ব্যাংকার রাজিব আহমেদ, আপাতত দ্যা সিটি ব্যাংক এ কর্মরত; এবং আমি, আবু হানিফা মোহাম্মাদ আব্দুল হাসিব, বর্তমানে একটি আইটি কোম্পানি তে কাজ করছি।
আমাদের ব্যাচ এর আর একজন ছিলো এই রিউনিয়ন এ, আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে, রাশেদউদ্দিন আহমেদ তপু। প্রথম রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাদের ব্যাচ এর এই সুপার স্টার তার ব্যান্ড গ্রুপ, ইয়াত্রি কে নিয়ে পারফর্ম করে। গানের এক পর্যায়ে তপু জিজ্ঞেস করে বিসিসি ১৭ এর আমরা আছি কিনা দর্শক সারিতে, প্রবল উৎসাহে চিৎকার দিয়ে জানাই আমাদের অবস্থান। কিন্তু এর পরেই তপু আমাদের বলে তার সাথে স্টেজে উঠতে। আমরা হতবাক হয়ে কিছুক্ষন বসে ছিলাম, এর পর এক দৌড়ে উঠে যাই স্টেজে আমাদের সুপার স্টার এর সাথে। স্টেজে ওঠার সময় নিজের অজান্তেই কেন যেন ভিজে উঠছিল চোখ, বারবার নিজেকে বলছিলাম, আমি ক্যাডেট, কান্না আমাকে মানায়না। এই অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার দুঃসাহস আমি করবোনা, শুধু বলবো, আমাদের বন্ধু যে কিনা পুরা দেশের লাখো মানুষের হৃদয়ের ভাষা গানের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরে, তার সাথে স্টেজে দাঁড়িয়ে আমরা গাইলাম তারই গান ‘পুরো পৃথিবী একদিকে আর আমি অন্য দিক, সবাই বলে করছো ভুল আর তোরা বলিস ঠিক, তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি, বন্ধু…বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে…আর কি লাগে!’ ভাগ্য ভালো আমারা কিছু না বলে স্টেজ থেকে নেমে যেতে পেরেছি, নাহলে হয়তো বুড়ো ক্যাডেটদের চোখের পানি দেখতে হতো পুরো কলেজের! গর্বে আমাদের পা মনে হয় মাটি থেকে অনেকখানি ওপরে উঠে গিয়েছিলো। এই সম্মান আমাদের প্রাপ্য কিনা জানিনা, কিন্তু সেদিন জানতে পেরেছি আসলে একজন পরিপূর্ণ সুপার স্টারকে, আমাদের রাশেদকে, পুরো বাংলাদেশের তপুকে।
এবার আসি আমাদের অ্যাডজুট্যাণ্ট আসাদের কথায়, আসাদের কথা অনুযায়ীই আমরা সবাই কলেজে ঢুকেই চলে যাই অ্যাডজুট্যাণ্ট এর বাসায়। রেজিস্ট্রেশান এর সময় যখন অর্গানাইজাররা বলছিলেন “তোমরাতো অ্যাডজুট্যাণ্ট এর ব্যাচ, ওর বাসায়ই থাকো, নাকি?”, সাথেসাথে গর্ব ভরে উত্তর দিলাম, “আমরাতো ওর বাসাতেই উঠসি!”। যার সাথেই দেখা হয়, তাকেই বলি, “আমরাতো অ্যাডজুট্যাণ্ট এর ব্যাচ!” “এখনকার অ্যাডজুট্যাণ্ট আমাদের ব্যাচ!”। আরও অনেকভাবে ঘুরায়ফিরায় বুঝাই যে আমরাই সেই গর্বিত ব্যাচ যাদের একজন ক্যাডেট নিজের ক্যাডেট কলেজ এর অ্যাডজুট্যাণ্ট, যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে কলেজটাকে সুন্দর করে তুলতে, যার নেতৃত্বে অনেকগুলো ব্যাচ এগিয়ে এসেছে কলেজের সার্বিক উন্নয়ন সাধনে, যার উদাহরণ হিসেবে এই রিউনিয়নেই আমরা দেখলাম ঝকঝকে ডাইনিং হল, হাউসের দেয়ালে প্রতিটা হাউসের সিম্বল, আরও অনেক নতুন নতুন উদ্যোগ। রিউনিয়ন এর পুরো সময়টা জুড়ে আমরা দেখেছি কিভাবে এক এ মানুষ কখনও অ্যাডজুট্যাণ্ট আসাদ কখনও বন্ধু আসাদ, যা ছিলো আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশী। এবং বুঝতে পেরেছি, কেনো এই অ্যাডজুট্যাণ্ট এর নাম এখন সব ক্যাডেট কলেজে ছড়িয়ে পরেছে একজন তুখোড় অর্গানাইজার আর লিডার হিসেবে।
এবার আমাদের ব্যাচ এর কথা বলি ছোট করে, আমরা হচ্ছি সেই ব্যাচ যারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২৮টি স্থান দখল করেছিলো সম্মিলিত মেধা তালিকায় (যেটা যে কোন বোর্ড এ যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ), বিজ্ঞান এবং মানবিক দুই বিভাগেই প্রথমস্থানসহ।
আমার লেখাটা জুড়ে আমার ব্যাচ এর এ কথা, আমার ব্যাচ এর এ গর্ব। এই গর্ব আমরা ধরে রাখতে চাই, চাই এই গর্ব হোক সব ক্যাডেট কলেজের, হোক পুরো বাংলাদেশের…
আবু হানিফা/৮৬৯/বিসিসি১৭ (৯৪-০০)
পড়ে খুব ভাল লাগল। ছবি থাকলে বা পুরো রিইউনিয়ন নিয়ে লিখলে আরো ভাল হত। আমার দুটো প্রশ্ন:
"কলেজ ব্লু প্রাপ্ত ক্যাডেট" - এর মানেটা আমার জানা নেই বলে বুঝতে পারছি না - একটু বলা যায়।
"মাধ্যমিক পরীক্ষায় ২৮টি স্থান" - যশোর বোর্ডে না বরিশাল বোর্ডে? যশোর বোর্ডে থাকাকালীন (৮০ এর শেষ/ ৯০ এর একটা সময়) ঝিনাইদহ ও বরিশাল ভাগাভাগি করে পজিশন পেত। ৯৮ এর মাধ্যমিক কি সেই সময়ের না তার পরের - আমার কৌতুহল।
ভাই, আমার এইটাই প্রথম লেখা ব্লগ এ, তাই অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে, এর পর ছবি দিবো ইনশাল্লাহ।
কলেজ ব্লু দেয়া হয়েছে remarkably outstanding performance এর জন্য from every aspects , আমাদের ৬ বছর আগে একজন ভাইকে দেয়া হয়েছিলো, আর আমাদের ব্যাচ, এর পর আমার জানানাই কেউ পেয়েছে কিনা।
আমরা যশোর বোর্ড এই পরীক্ষা দিয়েছিলাম 🙂 ; কিন্তু বরিশাল বোর্ড হবার পরেও এই সংখ্যাটাই সর্বচ্চো।
:clap:
ব্লগে স্বাগতম।
এখন ১০ টা :frontroll: দিয়ে দে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাল লিখেছো। শুভেচ্ছা।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আবু হানিফা ভাই, খুব ভাল্লাগলো আপনার লেখা পড়ে। সঙ্গে কিছু ছবি যোগ করে দিলে আরও অছাম হতো 😀
সিসিবি তে স্বাগতম। ফেবুতে আগেই তো পড়ছি...সেই লিখছিস....
লাবু দোস্তরা...
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই