ঘোরা হয়নি হয়নি করেও একদম কম জায়গায় যাইনি। সেদিন বসে বসে চিন্তা করছিলাম কয়টা জেলা আমার দেখা হয়েছে। সর্বশেষ ভ্রমণটা ছিল ঢাকা থেকে প্রায় ২.৫ ঘন্টার দূরত্বে মানিকগঞ্জের ঝিটাকা নামক থানায়। ঝিটাকায় ফারুকের বাসায় ঘুরতে যেয়ে ‘ফ্রি’ হিসেবে পদ্মা দর্শনটা বেশ উপভোগ্যই ছিল বটে। তবে সবচেয়ে উপভোগ্য ছিল চরের বাচ্চাদের সাথে ফুটবল ম্যাচটা!
মানিকগঞ্জে যাওয়ার প্রায় মাস ছয়েক আগে ঘুরে এসেছিলাম পাহাড়ের জেলা বান্দরবান থেকে। এককথায় আসাধারণ ছিল পাহাড় দর্শন। কেওক্রাডং এ চড়া,ব গা লেকে গোসল কিংবা সিয়াম দিদির কটেজের বারান্দায় ঘুমানো-কোন স্মৃতিই কম উল্লেখযোগ্য নয়।তবে ঢাকায় আসার পর প্রায়ই বগা লেকের কথা মনে হয়।এত ঠান্ডা আর পরিষ্কার পানি আর কখনো দেখব বলে মনে হয় না।তবে বগা লেকের আসল বিশেষত্ব হল এর পানির সবুজ রঙ এবং ২৭০০ ফুট উঁচুতে এমন একটা লেকের উপস্থিতি।
পাহাড়ে চড়েছে কিন্তু পানিতে গা ভাসায়নি এমন বাঙালি পাওয়া বড্ড কঠিন।বান্দরবনের ‘কোর্স’ কমপ্লিট করার প্রায় বছরখানেক আগে ঘুরতে গিয়েছিলাম সেইন্টমার্টিন দ্বীপে।তবে সেবার ভ্রমণের প্রথম দিনটা আমার জন্য খুব একটা সুবিধাজনক ছিল না।টানা ১৫ ঘন্টার বাসভ্রমণের ধকল না নিতে পেরে আমি সেইদিন শয্যাশায়ীই ছিলাম সারাদিন এমনকি সন্ধ্যা-রাত।অবশ্য পরদিন সকালবেলার ‘থ্রিলিং’ সমুদ্রভ্রমণে প্রায় ১০ ঘন্টার ঘুমে পাওয়া চাঙা ভাবটা একদমই উবে গিয়েছিল।কি ভেবে যে উত্তাল সমুদ্র পেরিয়ে ছেড়াদ্বীপ দেখার বাসনা সেদিন কাটিয়ে উঠতে পারিনি জানিনা,তবে সেদিনের পর আমরা ৯ জন আর কখনো সমুদ্রযাত্রা করব কিনা সেটা নিয়ে আমার সংশয় আছে।সেবার ‘নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপ’ হয়ে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৈকততেও ঢু মেরে এসেছিলাম,তবে সেখানে ঘুরাঘুরির চেয়ে সমুদ্রের জলে দাপাদাপিই বেশি মনে রাখার মত।
আমার ঘুরাঘুরির জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বছর ছিল ২০০৮| এ বছরের মধ্যের দিকে আমি দ্বিতীয়বারের মত রাঙামাটি দেখার সুযোগ পাই।উপরের সবগুলো ট্যুরের মত এটিও আমার বুয়েটের বন্ধুদের সাথে করা, তবে এটাই ছিল আমাদের একসাথে ঢাকার বাইরে প্রথম ট্যুর এবং সত্যিকার অর্থে সেটাই ছিল আমাদের করা সেরা ট্যুর। রাঙামাটি লেকে রিজার্ভ ট্রলারে ক্রমাগত ধোঁয়া নির্গমন এবং কার্ড খেলা-এ দুয়ে মিলে আমাদের লেক ভ্রমণটাকে অসাধারণ করে তুলেছিল। তবে আসল কৃতিত্ব আমি এই দুইটি কৃত্রিম বিষয়কে না দিয়ে বরং লেকের মনোরম পরিবেশ আর বেশ আরামদায়ক বাতাসকে দিয়ে চাই।
আমার প্রথমবারের মত সিলেট দেখাও হয়েছিল ২০০৮ ই, পুরা গুষ্টিসুদ্ধা আমাদের সিলেট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল এককথায় অসাধারন। আমার ২ খালার পরিবার এবং আমরা চা বাগান,আমার খালাতো ভাইয়ের শিক্ষালয় ‘সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ’, জাফলং সব জায়গা চষে বেড়ালাম।তবে আমার সবচেয়ে সুন্দর সময় কেটেছে হোটেলে অবসর সময়ে যখন আমরা সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিতাম সেই সময়টা।এমন গেটটুগেদার হয়ত বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে হয়,কিন্তু সেখানে কি এমন আরাম করে গুষ্টিসুদ্ধা আড্ডা দেয়া যায়!
সিলেট যাওয়ার কিছুদিন আগে আমি ঘুরে আসি কুমিল্লা থেকে।কুমিল্লায় আমাদের যাওয়াটা বেশ আকস্মিক ছিল এবং সেখানে মূলত গিয়েছিলাম ময়নামতি বিহার দেখব বলে।আমি এবং আমার সাথীরা যারপরনাই হতাশ হয়ে এহেন আহাম্মকির জন্য গোটাকতেক ‘ফ্রন্টরোল’ দিয়ে কুমিল্লা শহরকে বিদায় জানালাম।তবে কুমিল্লায় যাওয়ার সময় ট্রেন ভ্রমণটা বেশ আনন্দদায়ক ছিল।
২০০৮ এ আমার আর একটা জেলায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়,গাজীপুর।তবে এর আগে আমি গাজীপুর বেশকয়েকবার গিয়েছিলাম।প্রতিবারের মত সেবারের যাওয়ার হেতুও একই-চড়ুইভাতি!আনসার একাডেমী,ভাওয়াল গড়,গলফ ক্লাব কোনটাই দেখার বাকি নেই এই অধমের!
সিলেট বিভাগে আমার দ্বিতীয়বার যাওয়া পড়ে এই চড়ুইভাতির কল্যাণেই।তবে এবার গন্তব্য মৌলভিবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।ওই চড়ুইভাতিটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল, ফাঁক পেয়ে ৭ রংওয়ালা চাও পরখ করে নিয়েছিলাম;যেটার স্বাদ আমার কাছে অতিশয় সাধারণ মনে হয়েছে।
এর মাঝখানে দুইবার আমি ময়মংসিংহ থেকে ঘুরে এসেছিলাম।একবার এক বন্ধুর বাসায় আর একবার ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরে নাসির গ্লাসে।ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরে আমরা মুন্সিগঞ্জে একটা স্টিল মিলেও গিয়েছি।তবে দুর্ভাগ্যবশত আমার জন্ডিস থাকার যেতে পারিনি সাভার ইটের ফ্যাক্টরিতে আর ‘গ্র্যাণ্ড ট্যুর’ এ।‘গ্র্যাণ্ড ট্যুর’ এ আমার বন্ধুরা ঘুরে এসেছে কক্সবাজার বিচের ‘কলাতলী এক্সট্রাকশন ল্যাব’,চিটাগাঙ্গে বিএসআরএম সহ বড় দুইটা স্টীল ইন্ডাস্ট্রী। আর উত্তাল বিচ তো আছেই,সাথে বাসের তুমুল ফান!
বাসের ফানের কথা উঠলেই আমি কেমন করে যেন ৬ বছর পিছনে চলে যাই। ২০০৪ এর আগষ্টে ক্লাস ইলেভেনের সেই সাতদিনের এক্সকারশন আজও আমার কাছে ‘জীবনের সেরা ট্যুর’।কি ছিলো সেই সাতদিন!জনৈক বন্ধুর বালিশ পুড়ানো,তাকে নিয়ে গান রচনা,সমুদ্রে একে অপরকে চুবানো,মোটেলে একসাথে ৫৩ জনের ফ্লোরিং,ফৌজদারহাটের গেষ্ট রুমে থাকার সময় নীল ছবি দেখে কয়েকজনের ধরা খাওয়া-এমনি কত টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে উঁকি দেয় আর বলে উঠি-‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’!কক্সবাজারে আমি এরপর গিয়েছি আরো পাঁচবার,কখনো বন্ধুদের সাথে,কখনো ফ্যামিলির সাথে।কিন্তু সবসময়ই কি যেন একটা মিস করতাম,এখনো করি। আমার মনে হয় সারাজীবনই করব।
আত্মীয়তার সূত্রে ঢাকা থেকে অনেক দূরের আরো দুটা জেলায় আমার যাওয়া হয়েছে-পাবনা আর বগুড়া। দুইটাই আমার দুই কাজিনের শ্বশুরবাড়ি! দুইটার মধ্যে ইন্টারেস্টিং ছিল পাবনা যাত্রা।মাইক্রোবাসে করে দীর্ঘ ভ্রমনের পর নৌকায় করে অনেকক্ষানি পথ আমাদের যেতে হয়েছিল, সেই যাত্রাটা বেশ আনন্দদায়ক ছিল। তা্র উপর ওই কাজিনের শ্বশুরবাড়িতে খানাদানার আয়োজন ছিল রীতিমত মোঘলীয়!
একটা অদ্ভুত অনূভুতি আমার আছে এতবার সমুদ্র দর্শন করে। আমি প্রতিবারই সমুদ্রে নেমেছি অনেকখানি, তবে নিরাপদ থেকে। শুধু একবার আমি নেমেছি আব্বুর সাথে, আমার মনে পড়ে সেবারই আমি সবচেয়ে গভীরে গিয়েছিলাম এবং সেবারই বোধহয় আমি সবচেয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম! কি অদ্ভুত না!
কক্সবাজারের ‘ঝাউবন’ রেষ্টুরেন্টের কথা না লিখলে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।এখানকার মত মজার ভাজি আর ভর্তা আমি বোধহয় আর কোথাও খাইনি।
এবার গুনে দেখি কয়টা জেলায় ঘুরলাম।মাঝখানে বাদ দিয়েছি সাভার স্মৃতিসৌধে বহুবার যাওয়ার গল্প আর আমার কৈশোর কাটানো টাঙ্গাইলের গল্প। আমার দাদাবাড়ি নানাবড়ি পাশাপাশি হওয়ায় মিস করলাম আরো একটা ‘এক্সট্রা’ জেলা!সব মিলিয়ে হিসেব যা দাড়ালো তা হল আমার দেখা হয়েছে মাত্র ১৬ টা জেলা।উত্তরাঞ্চল আর দক্ষিনাঞ্চল এখনো বাকি রয়ে গেছে।দেখা যাক,১৬ কবে ৬৪ হয়!
মেহেদী
১৩ নভেম্বর,২০১০
অটঃ এটা এই ব্লগে আমার চতুর্থ পোষ্ট।গতকাল পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করতে গিয়ে দেখি আমার পুর্বতন সকল পোষ্ট গায়েব হয়ে গেছে।ইহার কি কোন প্রতিকার আছে?
গৌ...ল!
ছবি সহ পড়তে আরোও ভালো লাহতো, যদিও অনেক সুন্দর লিখেছ, চোখেই যেন দেখতে পাচ্ছিলাম।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
আপু ছবিগুলা দেখেন আর :teacup: খান
কি চমতকার দেখা গেল। :clap: :thumbup: :thumbup:
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
ধন্যবাদ আপু 😀
ছবি চাই :duel:
মাথা ঠাণ্ডা কর,তুমিও :teacup: খাও...
এইবার হইছে :clap:
ধন্যবাদ... 😀
ছবিসহ তো আমিই প্রথম দেখলাম মনে হয়......তাইলে গোলটা কে দিলো ????? আমি না ? 😛
আপনি এক্সট্রা টাইমে গোল দিয়েছেন...
শিবলী সাহস তো কম না তোমার পুচকে! ১০ টা ফ্রন্টরোল... স্টার্ট ন্যাও!
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
😀 জনৈক বন্ধুর বালিশ পুড়ানো,তাকে নিয়ে গান রচনা...
-ওহ, কী মনে করাইয়া দিলি দোস্ত !! =))
🙁 সমুদ্রে একে অপরকে চুবানো...
-এইডা মনে কইরা বেশী পুলকিত হইতে পারলাম না... x-( যতদূর মনে পড়ে, আমারেই তোরা সবচেয়ে নির্মমভাবে চুবাইছিলি.. উইথ দ্য সাপোর্ট অফ এডজুট্যান্ট... ~x(
ফৌজদারহাটের গেষ্ট রুমে থাকার সময় নীল ছবি দেখে কয়েকজনের ধরা খাওয়া...
- :dreamy: ...রইলো না সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি...(দীর্ঘশ্বাস)
৭ দিনের মহাকাব্য ছিল ওইটা ।
পোস্ট- :thumbup:
জায়গাগুলা দেইখা খুবই লোভ লাগতেছে । ভালই ঘোরাঘুরি করছস দেখা যায়... আচ্ছামত নজর দিয়া দিলাম... B-)
😀 জনৈক বন্ধুর বালিশ পুড়ানো,তাকে নিয়ে গান রচনা…
-ওহ, কী মনে করাইয়া দিলি দোস্ত !! =))
সোবহেইল দেখলে আমার খবর আছে,বদ্দোয়া দিব... ~x(
আজকাল তুই কাপ্তাই হ্রদ পার হস সাঁতরাইয়া,এগুলা কোন ব্যাপার!!! :))
🙁 সেটাই,স্মৃতির জাবর কাটি......
নজর দিস,আমাদের সাথে জয়েন কর...... 😀
:clap:
তুই একখানে আছিস জানতামই তো না!সোহানরে নিয়া একটা ব্লগ নামায় ফেল......:D