কলেজ আর পানিশমেন্ট দুজনে দুজনার। আমরা যখন বের হয়ে আসি তখন আমরা প্রায়ই আফসোস করতাম আহারে কলেজে সিনিয়রদের জুনিয়রদের দেওয়া পানিশমেন্টের হার কমে যাচ্ছে, পোলাপান কামনে সোজা থাকবে। তো সেই পানিশমেন্ট এর কিছু ঘটনা এখানে বলি –
ক্যাডেট কলেজের প্রথম পানিশমেন্ট খাইসিলাম বের হই হই করা ক্লাস টুয়েলভের কাছে। ব্যাপার আর কিছুই না দুই দিন আগে মাত্র কলেজে জয়েন করসি ট্রাডিশন অনুযায়ী হাউসের বিভিন্ন ক্লাস আমাদের ডাকবে, তাদের সামনে আমরা আমাদের প্রতিভা প্রদরশণ করবো। তো সেই অনুসারে বিদায়ী ক্লাস টুয়েলভ সবার আগে সুযোগ পায় ক্লাস সেভেন এর প্রতিভা দেখার। তো যথারীতি শুক্রবার লাঞ্চ এর পরে আমরা ফলোইন হলাম ক্লাস টুয়েলভের সামনে। কলেজে ঢুকে এই দুইদিনে আর কিছু না শিখি একটা জিনিস শিখসি, তা হল সিনিয়রের সামনে সাবধান হয়ে দাড়ায়ে থাকা, আর এ সময়ে হাতের ফাক দিয়ে চেষ্টা করেও যেন কেউ চিরুনি কিম্বা রুলার পযন্ত ঢুকাতে না পারে। তো আমরা সেইভাবে দাড়ায়ে আছি ক্লাস টুয়েলভের ভাইরা বেশ কিছুক্ষন আমাদের সাবধান হওয়া পরীক্ষা করলো, সেইদিনই শিখছিলাম যে রুলার বেশ সহজেই হাতের মাঝে প্রবেশ করে (এই শিক্ষা পরবতী সময়ে আমরাও কাজে লাগাইসি)। যাইহোক তা নিয়ে তারা কিছু বল্লো না, তারা আমাদের কে জিজ্ঞাশা করলো কে কি করতে পারি। আমার সহপাঠীদের বিভিন্ন গুণ দেখে সেইদিন বেশ মোহিত হয়েছিলাম। এক সময়ে তারা আমাদের ছাড়ল, ছাড়ার আগে বলল “ওকে তোমরা সবাই এখন ফ্রগজাম্প করে হাউসের এক মাথা থেকে অন্যমাথা যাবা”, একজন দেখায়েও দিল কামনে দেয় ফ্রগজাম্প। আমরা বেশ হাসতে হাসতে থপ থপ করে ফ্রগজাম্প দিলাম। ক্লাস এইটের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে দেখি তারা সব দরজায় দাড়ায়ে আছে আর দেখতেছে (সেই প্রথম আর সেই শেষ মনে হয় ক্লাস এইটের রুমের দিকে তাকায়ছিলাম, আর তারাও দেখতেছিল কে কে আমাদের মধেধ্য তাদের ভাষায় মাস্তান হিসাবে পরিগনীত হবে)। সেইদিন শুরু তারপর টুয়েলভে ক্লাস আর পিটি ওফ হয়ে যাওয়ার দিন পযন্ত তা অব্যাহত ছিল।
আমাদের ব্যাচে খালিদ হাউসের পোলাপান বেশ লম্বা লম্বা ছিল ক্লাস সেভেনে। আর ক্লাস এইটের সবচাইতে ছোটো খাটো আশরাফ ভাই ছিল খালিদ হাউসেই (ছোটোখাটো হলেও তার তেজ ছিল সবচাইতে বেশি, খালিদ হাউসের পোলাপান তার হাতেই সবচেয়ে বেশি থাপ্পর খাইসে)। তো আশরাফ ভাই আমাদের বেশিভাগ ব্যাচমেটের গালের নাগাল পেতো না, তো উনি নাকি লাফায়ে লাফায়ে থাপ্পর মারত। পোলাপান পরে প্রেপে এসে অভিনয় করে দেখাতো উনার থাপ্পড় এর দৃশ্য, আমরা তা দেখে নিরমল আনন্দ পেতাম। একদিন কামনে জানি ওই ঘটনা ঊনি জানছিলেন, এর পর থেকে উনি নাকি টেবেলের উপরে বসে থাকতেন আর যাকে থাপ্পড় মারবেন তাকে কাছে ডেকে নিতেন, দুইজনের মাথা তখন সমান উচ্চতায় আসত উনাকেও আর লাফানোর কষ্ট করতে হতো না।
ক্লাস সেভেনে সবচাইতে অসাধারণ পানিশমেন্ট খাইছিল কাশিম হাউসের একজন (ধরা যাক তার নাম দ)। সে এক শূক্রবার সকালে সবার আগে উঠে কোন কাজ না পেয়ে রুমে সবার টেবিলে সুকালি দিয়ে ছবি একে রাখছিল। ক্লাস এইটের রুমলিডার ঘুম থেকে উঠে সেই ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলে, কিন্তু ছবি সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং দ কে তার কপাল ব্যবহার করে সেই ছবি মুছতে বলেছিলেন। সুকালি আর টেবিলের ঘষায় মাথার চামড়া উঠে দ এর কপালে দাগ পরে গেলো। সেই দাগ দেখে আমাদের ইসলামিয়াতের শিক্ষক ভেবেছিলেন দ বুঝি নামায পড়তে পড়তে দাগ ফেলে দিসে কপালে, তিনি বড়ই খুশি হয়েছিলেন দ এর উপর। আমরা তো জানতাম আসল ঘটনা, সেইদাগ থেকে দ এর নতুন নামকরন হলো হুরমতি(আশা করি সবাই সংশপ্তকের হুরমতি কে চিনে)।
এরপর আমাদের জুনিয়র রা আসলো একদিন। আমরা খুবই খুশি, দুই দাগ বেশ কিছুদিন ধরে কাধে উঠলেও ক্লাস সেভেন না আসা পযন্ত তার ব্যবহার হচ্ছিলো না। সমানে আমরা আমাদের ক্লাস এইটগিরি ফলানো শুরু করলাম, একদিন এক জুনিয়রকে পিটায়ে হাসপাতালে পাঠায়ে দিলাম। কলেজে স্যার থেকে শুরু করে প্রিন্সিপাল পযন্ত সবার মাঝে হইচই পড়ে গেলো। রাতে এ্যাডজুটেন্ট, হাউস মাষ্টার ফারুক স্যার আমাদের ক্লাস এইট, আর ক্লাস সেভেন কে ডাকলেন। সবার আগে আমি, যেহেতু আমি অলরেডী ধরা খাইসি, এরপর আমারে ফারুক স্যার একটা করে বেত দিয়ে বাড়ী দেয়, আর ক্লাস সেভেন কে জিজ্ঞাশা করে আর কে কে আমাদের মধেধ্য তাদের কে পানিশমেন্ট দিসে। ক্লাস সেভেন মাত্র নতুন আসছে তারাও সুযোগ পেয়ে সমানে নাম বলে গেলো (এরা কিছুদিন পরে ঠিকই বুঝছিল যে সিনিয়রদের নামে কম্পলেইন করতে নাই)। যাইহোক আমাদের হাউস থেকে চারজন ধরা খাইসিলাম, অন্যদুই হাউস থেকে ঠিক সেই সময়ে একি ধরনের সভা হয়েছিল আর সেখান থেকেও আরো তিন চারজন যোগ হলো। কোন এক কারণে আমরা কলেজ আউট হওয়া থেকে বেচে গিয়েছিলাম, কিন্তু সবাই কে লাস্ট ওয়ারনিং দেওয়া হয়েছিল আর দুইটা করে ইডি। যারা রাজশাহীর তারা জানবে গ্রীষ্মে রাজশাহীতে কেমন গরম পরে, সেই গরমে, দুপুর বেলা লাঞ্চ এর পরে (যখন গরম এ সবকিছু আরো বেশি তেতে থাকে) আমাদের ইডি দেওয়া হলো। পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত সারা গায়ে ফোস্কা পরে গিয়েছিল আর বমি করে আমাদের অবস্থা টাইট হয়ে গিয়েছিল।
যাইহোক এই ঘটনার পরেও আমাদের পানিশমেন্ট দেওয়া বন্ধ হয় নাই। একদিন আমাদের ফরমে শাহাবুল আলম স্যার আসলেন, এসে জানতে চাইলেন আমাদের মধেধ্য কে জুনিয়র পিটায়ে জুনিয়রের হাতে দাগ ফেলে ধরা খাইসে। আমি উঠে দাড়ালাম,বলল কাছে আয়, গেলাম বলে বেন্ট হ, হলাম, আমার মাথা উনার হাটুর মাঝে ঢুকালেন তারপর ঠাস ঠাস করে আমার পশ্চাতদেশে ডাস্টার দিয়ে বাড়ী দিলেন। তারপর বলে উঠ, আমি ভাবসি বুঝি জুনিয়র পিটানোর শাস্তি এটা, তো আমাকে অবাক করে দিয়ে এর পর বললেন “বেডা এখন থেকে পিটালে পাছায় মারবি, দাগ পড়লেও দেখাতে পারবে না ওই দাগ”।
আমাদের কলেজ লাইফ টা পানিশমেন্ট দিয়ে চার বছর ভাজা ভাজা করে দিসিলেন এ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন পরাম (রংপুরের এক্স ক্যাডেট), বাকী আট টা কলেজের পোলাপান পযন্ত তার অত্যাচার কাহিনী জানতো। আরেকদিন নাহয় তার কাহিনী বলা যাবে।
আমি প্রথম পানিশমেন্ট খাইছিলাম যেইদিন কলেজে জয়েন করছি সেইদিনই।
ডিনারের ফল ইনে ক্লাস এইটের এক বড়ভাই জিজ্ঞেস করলেন- এই ছেলে তোমার নাম কি?
আমি বললাম- কামরুল,এইবার বলেন আপনার নাম কি? উনি বললেন- ইউ ব্লাডি হ্যান্ডস ডাউন। 😀 😀
"আমি বললাম- কামরুল,এইবার বলেন আপনার নাম কি? " =)) =)) =))
ভাই দুঃখ করার দরকার নাই। FCC আর RCC তে পানিশমেন্ট এখন আসে। আমরা আপনাদের আশিরবাদ এখনও ধরে রাখসি। 😀
কামরুল, তুই বড় ভাইদের মুখে মুখে কথা কইসস সেভেনে থাকতে, পাঙ্গা তো খাইবিই 😛
মুরাদ (২০০২-০৮) বলেছেন :
ভাই দুঃখ করার দরকার নাই। FCC আর RCC তে পানিশমেন্ট এখন আসে। আমরা আপনাদের আশিরবাদ এখনও ধরে রাখসি।
অন্যগুলাতে কি নাই নাকি ?
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সারোয়ার ভাই, বস্ দিলেনতো সেইসব "মাইর-মুখর" দিনগুলা মনে করায়া :(( :((
একটা সময় গিয়া আমরা পানিশমেন্ট খাইলে খুশিই হইতাম মাইর দিতোনা দেইখা।
প্রথম দিনই 4টা থাপ্পর দিয়া শুরু হইছিলো "ভাই" না কইয়া "ভাইয়া" কইছিলাম দেইখা :(( :((
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আমি পছন্দ করতাম হাত দিয়া মারতে =))
😮 ...অন্যগুলাতে কি নাই?
😀 :)) :(( 😀 😀
Life is Mad.
পাঙ্গা পালিশ আমার কোন কালেই ভালো লাগতোনা...। তবে নিজে খাইছি বহুত...কিন্তু আমার সারা ৬ বছরে আমি মাত্র একজনরে পাঙ্গাইছি তাও যখন আমি ক্লাশ টুয়েল্ভে।
খাই নাই তেমন একটা ......... তাই দেওয়াও হয় নাই ......
মিয়া না দাও ভালো কথা কিন্তু খাইলা না ক্যামনে? আর কম খাইলে তোমার ক্যাডেট লাইফ পুরা বৃথা।
সামি ভাই, কলেজ ট্যাগ কইরেন। 😀
পরের পর্ব কবে? 😕
ভুলে গেছিলাম ট্যাগ করতে, দেখি পরের পর্ব নিয়ে বসব। এখন বেশ হাতে সময় আছে।
ভাইয়া শাহাবুল আলম স্যার কি অর্থনীতি পড়াতেন?
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
হ্যা অর্থনীতি পড়াতেন, ভংকর রাগী টিচার ছিলেন, হুংকার দিয়ে কথা বলতেন।
মাঝে মাঝে পিঠে যা দুই চারটা বোম্বাই কিল দিত, এত সহজে ভুলে কেমনে!!! তবে মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলেন না, অন্তত আমাদের কখনো কর্তৃপক্ষের কাছে ফাসিয়ে দিতেন না, ভালো মন্দ শাস্তি নিজেই দিয়ে ছেড়ে দিতেন।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
পানিশমেন্ট-২ কবে যে আসবে? :dreamy:
ভাই চিন্তা করেন না RCC তে এখনো পানিশমেন্ট আছে.
x-( ওই ব্যাটা, খুব পাঙ্গা খাইছস মনে হয়.. x-( ......বাঁইচা গেছস,আমরা তগো ধরিনাই :grr:
.যুগে যুগে পাঙ্গার যে মাহাত্ম্য তা দিনে দিনে লোপ পাচ্ছে দেখেই আজ ক্যাডেট কলেজ গুলার সিস্টেম লুজ।আরো পাঙ্গানি দরকার :gulli2:
আমার কাহিনীটা একটু অন্যরকম।আমি কোন কারন ছাড়াই এত বেশি মার খেয়েছিলাম যে সেই তিব্র কষ্টের কথা কখনো ভুলতে পারিনাই। তাই পানিশমেন্ট দিতেও আমার কষ্ট লাগত।
সামি,
অনেক দিন তো হলো, পরের পর্ব ছাড়ো . .
মঞ্জুর ভাই, আপনি কই থেকে আইলেন... মারছে... এর পরের পর্ব দিতে হলে তো আপনার, রবিউল ভাই আর জাকির ভাইয়ের মাইরের কথা বলতে হয়। 😀
কও কি ? 😛
শুনতে মন চায় 🙂
আমারো শুনতে মঞ্চায় চায় 😀