“নাপিতের ভিটা” নিয়ে গ্রামে অনেক মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে।সবথেকে অথেনটিক গল্প বাবার তৃতীয় ভাই, ‘ চেয়ারম্যান চাচা’, বর্তমানে আমাদের ঢাকা জেলার দোহার পৌরসভার ‘মেয়র রহিম চাচার’ কাছ থেকে শুনা।
ঘোর বর্ষার রাত। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। হিসেব-নিকেশ, মানুষের বিচার-সালিস শেষে বাড়ি ফিরতে রাত দশটা এগারটা প্রতিদিনই হয়। আসামান্য শারীরিক শক্তি, দুর্দম্য সাহস আর ন্যয় পরায়ণতা ‘রহিম চেয়ারম্যান’ এর নাম সকলেরই জানা। আসম সাহসিকতায় বিশ পঞ্চাশ মাইলের ভিতর কত চোর ডাকাত নিজ হাতে গ্রেফতার করেছেন,নিজের ও হিসাব নেই।
অনেক অনুরোধেও সাথে দেহরক্ষী রাখতে তিনি নারাজ। তবে পয়েন্ট থ্রি এইট ক্যেলিবার এর লোডেড ‘অয়েবলি স্কট’ রিভলবারটা কোমরে সব সময়েরই সাথি।
এক হাতে পাঁচ ব্যটারির টর্চ আরেক হাতে কুকুর তাড়ানোর একটা লাঠি নিয়ে হন হন করে বাড়ির দিকে হেটে চলছেন চাচা। গ্রাম্য মেঠো পথ, বৃষ্টি-কাঁদায় একাকার। বিদ্যুতের আলোর নামও তখন গ্রামের অনেকেই শুনেওনি!
বাড়ি তখনো শ দুএক গজ বাকি। নাপিতের ভিটের জঙ্গলের মাঝ দিয়ে পথ।ঝি ঝি, কোলাব্যেং এর ঐকতান ঘোর অন্ধকারকে আরো গা ছম ছমে করছে। মেঠো পথটা হঠাৎ করেই সামনের একজায়গায় নিচু হয়ে গেছে। জঙ্গল থেকে পানির একটি ধারা আড়াআড়ি নিচু পথটাকে ডুবিয়ে স্রোতের মত প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির ধারাটা এক লাফে পেরুনোর প্রস্তুতি নিতেই, ঘাড়ের লোম সব সর সর করে খাঁড়া হয়ে উঠল অকল্পনীয় একটা দৃশ্য দেখে।
যেই লাফ দিবেন, হঠাৎ স্যাৎ করে গাঁ ঘেঁসে মনে হল একজন মহিলা আড়া আড়ি পানির স্রোতের উপর ভর করে জঙ্গলের অন্য অংশে পার হয়ে গেল! শুধু হিস হিস একটা শব্দ কানে বাজলোঃ আজ বেঁচে গেলি!
পাঁচ ব্যটারির টর্চের আলোটা ফেলতেই মনে হল, একজন শাড়ি পরহিতা মহিলার অবয়ব ধ্রুত মিলিয়ে গেল।
কি, কেন আর কানের কাছে হিস হিস শব্দে আজ বেঁচে গেলি বলেই বা কোন নারী কণ্ঠ বলে গেল, কি ব্যাখ্যা আছে এর??
পদটিকাঃ অনেক আগের আমলে, জমিদার শ্রেণীর মানুষদের নিজেস্ব নাপিত-ধোপা থাকত। তাদের বসতের জন্যে বাড়ির পার্শেই ভিটেমাটি বরাদ্ধ করা হতো। কথিত আছে, সেখানে তারা ভুত,প্রেতপূজা অজানা অশরীরী ইত্যাদি জগতের চর্চা করতো।
এখন সেই রামও যেমন নেই, সেই অযোদ্ধাও তেমন নেই। জমিদারী শেষ, নিজেস্ব ধোপা-নাপিতের জমানা শেষ, পরে আছে শুধু জঙ্গলাকীর্ণ “নাপিতের ভিটে”!!!
পুনশ্চঃ নাপিতের ভিটের উপর পূর্বে প্রকাশিত “অদভুতরে গল্প” টি প্রাসঙ্গিক মনে করে নীচে জুড়ে দিলাম।
আমার ছোট বেলা-তিন “অদ্ভুতুড়ে গল্প”।
“নাপিতের ভিটা” নিয়ে অনেক ভয়াবহ গল্প আছে । বহু মানুষের চাক্ষুষ প্রমান সমৃদ্ধ গল্প।তার মধ্যে একটা না বলে পারছিনা। চাঁদ রাত। পরের দিন সকালে ঈদের নামাজ পরে দু-চার শ ‘সমাজই-জমাতি’ মানুষ ক্ষীর পায়েস খাবে।তাই হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে দালান বাড়ির উঠানে বড় কাচাঁরি ঘরের সামনে মণই ডেকচা তে কলস কলস দুধ ঢালা হচ্ছে ঘন মিষ্টান্ন করার উদ্দেশ্যে ।
“সমাজই- জমাতি” মানুষ হচ্ছে, সেই দাদাদের ঘনিস্ট সমস্ত মুন্সি- মাতব্বর, পাইক-পেয়াদা , গন্য-মান্য মুরব্বি যারা জীবিত আছেন তারা অথবা তাঁদের বংশধরা যুগ যুগ ধরে এই বাড়ি কেন্দ্রিক বেড়ে উঠেছেন , তাদের সম্মানিত পদবি। আর তাঁদের অপ্পায়ন প্রথাটা অনেক যুগ থেকে চলে আসছে।
সারি সারি ডেকচা চুলার পার্শে, চেয়ারম্যেন চাচা সহ অনেক মানুষ গল্পে মশগুল। রাত তখন দ্বিতীয় প্রহর পেরিয়ে গেছে। হঠাৎ ওই নাপিতের ভিটার দিক থেকে “করিমা ভেঙ্গুর” ছুটে এল।এক হাতে তার সব সময়ের মত বল্লম ধরা, অন্য হাতে জলন্ত হারিকেন। ছুটে এসে সকলের সামনে চার হাত-পা ছড়িয়ে মাটিতে পড়ে রইল। মুখ দিয়ে ফেনা বেরুচ্ছে !
” করিমা ভেঙ্গুর ” ওরফে করিম মিয়ার একটা অতন্ত্য সাহসী ব্যাক গ্রাউনড্ আছে। ছোট বেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে মানুশ। বড় হয়ে দাদাদের খাস্ পেয়াদা। হাতে সব সময় বল্লম। আর “ভেঙ্গুর” উপাধি হল সেই ব্রিটিশ আমলে অন্য জমিদার দের সাথে লড়াই এ কোমরে বর্শার খোঁচা খেয়ে বাঁকা হয়ে সামনের দিকে ঝুকে হাটতো , সেজন্যে ।বুড়ো হয়েও সারা রাত বল্লম ও হারিকেন হাতে আমাদের বাড়ি পাহারা দিতে কোন আলস্য করতো না।
সেই অসম সাহসী বীর যোদ্ধার এই করুন পরিণতি !! পানি টানি ছিটিয়ে অনেক কসরৎ করে জ্ঞান ফিরিয়ে ওর কাছ থেকে যা উদ্ধার করা গেল, তা হোল (ওর জবানীতে ): নাপিতের ভিটায় বেশ কিছু তাল গাছে তাল পেকে থাকে। বড়ো মা বললো রাতে সব চোরে চুরি করে নিয়ে যায় , তাই আমি নজর রাখছিলাম। সন্ধ্যা রাতে আমি পাকা তাল পড়ার শব্দ শুনেছি । কিছুক্ষন আগে আমার মনে হোল কোন এক মেয়ে মানুষ ওই তাল গাছের দিকে যাচ্ছে ।তাই আমি পিছু নিলাম। হারিকেনের আলোয় দেখলাম ঠিকই মেয়েলোকটা আমার দিকে পেছন ফিরে তাল টুকাচ্ছে ।আমি রেগে জিজ্ঞেশ করলাম : এই কোন বাড়ির বউ তুমি এত বেহায়া , প্রতিদিন তাল চুরি করো ? আজ ধরেছি। মেয়েলোক টা আমার কথার তয়াক্কা না করে পেছন ফিরে তাল টুকাতেই থাকলো। আমি রেগে-মেগে যেই কাছে গেছি, এমনি ঘুরে দাঁড়ালো ! বীভৎস চেহারা, আগুনের গোলার মত দুইটি চোখ,আমার দিকে মুখ তুলে দেখে, একহাত লম্বা লাল জিহ্বা বের করে শুধু ‘থু’ করে আমার দিকে থুথু ছিটালো । আমার আর কিছু মনে নেই। হুশ ফিরলো আপনাদের সামনে।
ঘটনা এখানেই শেষ । সাত আট দিন প্রচণ্ড জ্বরে ভুগে ‘করিমা ভেঙ্গুর’ ভাল হল। শুধু একটি বেপ্যার আমার বা ওখানে উপস্তিত বিঞ্জাণ মনস্ক কারো এখনো পর্যন্ত বোধগম্য হয়নি যে , করিমা ভেঙ্গুর এর সাথে “প্রচণ্ড পায়খানার গন্ধ”…, যেটা ডেটল, কারবলিক,লাক্স সাবানের বহু গোসলের পরেও পনেরো/বিশ দিন পর্যন্ত ওর গা থেকে কিছুতেই যায় নাই।”
কেন??? -এর উত্তর আমার বা কারো জানা নেই ! অতি প্রাকৃতিক কোন কিছুর অস্তিত্ব কি আসলেও আছে? আমি জানিনা ।
স্যার,
আর ও মেওয়া চাই। 🙂
সুসাস্থ্য কামনা করছি আপনার।
ভাই,
রুজি রোজগার, পরিবার-সন্তান, ক্লাব এক্তিভিটিজ- সামাজিকতা সব করার পর, যে টুকু সময় পাই, লিখতে চেষ্টা করি। আশা করি বুঝতে পারবেন।
Smile n live, help let others do!
😮
আজিজ ভাই পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় 🙂
ভাই,
নিজের স্টক প্রায় শেষ।দেখি অথেনটিক কোন কাহিনী 'ধার' পাই কিনা। 🙁
Smile n live, help let others do!
ভাইয়া বেশ মজা লাগছে আপনার এই সিরিজ টা। খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি।
আশা করি আপনার ঝুলি তে আরও X-Files আছে।
ব্লগ পড়ে বেশ বুঝতে পারছি, আপনার সাথে আড্ডা বাজী খুব উপভোগ্য হবে। দেশ এ থাকলে হয়ত একটা এত দিনে একটা আয়োজন করে ফেলতাম। সময় এখনও ফুরায়নি ইনশাল্লাহ দেখা হবে কোন একদিন।
সাব্বির,
আসলে ডিটেইল লিখা উচিত ছিল। তাহলে আরো আন্তত দশ পর্ব হত। আর অনেক রসাত্মক গল্প হিসাবে বলা যেত। এখন কার মত এত কাঠ খোট্টা শুধু facts findings type হতো না।
হা, আড্ডাতে সব ডিটেইল বলা যায়, কারন কষ্ট করে টাইপ করতে হয়না তো, তাই :)) ।
দেশে এসো।ইনশাল্লাহ দেখা হবে।
ভাল থেকো।
Smile n live, help let others do!
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
'পড়তে' আর 'হাততালি' দিতে তো আরাম। লিখতেই না যত কষ্ট! ~x(
Smile n live, help let others do!