বাড়ীর মসজিদের ঘাটে বসে ছিপ দিয়ে মাছ ধরছি।অদ্ভুত দর্শন একটা লোক দাড়িয়ে মাছ ধরা দেখছিল, ছোট খাট টাকি-পুঁটি পেলে খ্যক খ্যক করে হাসছিল।কেমন যেন অস্বস্থিকর মানুষটা। যেন ঋণাত্মক একটা অনুভূতি ছড়াচ্ছে ওর চারি পার্শে।কোন কারন ছাড়াই বিরক্তি উৎপাদন করে চলছে লোকটা।
পড়ন্ত বিকেল। বাবা আসর নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেরুলেন।
বড় মিয়াঁ, পেন্নাম হই! বাবাকে দেখে কপালে হাত ঠেকালো লোকটা। কিরে পাগলা কি খবর? বাবার প্রশ্নে নোংরা দাঁত সবকয়টা বের করে আবার খ্যক খ্যক হাসি। আজ্ঞে ভাল! এই তুক তাক করে মানুষের যথা সাধ্য উপকারে লাগি, তাতেই পেট চলে যায়।
এখনো এসব ছাড়িসনি? সরল সহজ মানুষদের আর কত ঠকাবি?
একথায় খুব মাইন্ড করল সম্ভবত লোকটা। হাজি সাব আপনি বিশ্বাস করেন না, তাইনা? কি যে একটা আলাদা জগত আছে, যদি দেখাতে পারতাম আপনাকে!
ততক্ষণে মাছধরা চাঙ্গে উঠে গেছে আমার।একথা সেকথা, কথার সুরে বুঝেছি ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট নিয়ে কথোপকথন চলছে।
বাবাকে বুঝানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছে লোকটা। কর্তা, কথায় সব কিছু! কথায় মানুষ মানুষের গোলাম, কথায়ই চির শত্রুতা… এমন কি কথা দিয়েইতো আল্লাহ- খোদা- ভগবানের উপাসনা। দোয়া-দরুদ, মন্ত্র-শ্লোক সবই তো কথা! কেন বিশ্বাস হবে না আপনার।
বাবা অবজ্ঞা মেশানো স্মিত হেঁসে বললেন, ‘হয়েছে পাগলা, তুই আর ভাল হলিনা। সংসার বিরাগি হয়ে আর কত এসবই করে বেরাবি’?
কি যে বলেন কর্তা। কত কি যে শেখার আছে, কথার যে কত ক্ষেমতা, না দেখলে কেমনে বুঝাই!
এক পর্যায়ে বাবাকে দেখানোর জন্যই হয়তো বলে, ঐযে ছোড মিয়াঁর লগের পেয়ারা গাছডা, হেইডার উপর চালান দিয়ে দেখাই?
আমার বাম দিকে পুকুর পাড়ে চিকন লিকলিকে একটা পেয়ারা গাছ, অল্প কিছু ফুল এসেছে, সাথে কড়া কড়া কয়েকটা পেয়ারা। বাবা হেসে বলে কি দেখাবি, দেখাতো? উৎসাহ পেয়ে বির বির করে কি যেন পড়তে লাগলো, সাথে দৌড়িয়ে যেয়ে কয়েকবার গাছটা শুধু ছুয়ে এলো।
আমরা সকৌতুকে চেয়ে রইলাম। কিছুই হলনা। ঝাড় ফুক শেষে লোকটা বললোঃ দেইখেন তামশা।বলে সে চলে গেল হন হন করে।
মাগরিবের আগে পর্যন্ত পুকুর পাড়ে ছিলাম, সেই সময়ের মধ্যেই গাছটার পাতা, ফুল ও ছোট পেয়ারা গুলি কেমন যেন নেতিয়ে গেল। দুই তিন দিনের মাথায় সম্পূর্ণ গাছটা যেন পানির অভাবে শুখিয়ে মরে গেল।
সম্পূর্ণ ব্যপারটা আমার শিক্ষা,শুভ বুদ্ধি, বোধ-সব কিছুর ভিত্তি নাড়িয়ে দিয়ে গেল।
দ্বিতীয় অংকটা আরো ক্লোজ এনকাউন্টার ।
১৯৮২~৮৩ সালের কথা। সামার হলিডেতে দেশে আসছি বেড়াতে।দুলাভাইয়ের কুয়েত ট্র্যান্সফারে মেজ আপা বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের বাসায়। নিচের তলায় আপা আর আমার রুম।
একদিন ভাল মানুষ মেঝোআপা শ্বশুরদের গ্রামের বাড়ী থেকে ঘুরে এসে আসুস্থ লাগতে শুরু করে। তার পর ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে শরীর। রাতে ঘুম হয় না,চোখের নিচে দুই দিনেই কালি পরে চেহারা ভেঙ্গে কেমন নির্জীব হয়ে যেতে লাগলো।
অস্থিরতা, বুক ধড়ফড় সহ বিভিন্ন কমপ্লেনে বাধ্য হয়ে রাতে পড়শি এক ডাক্তারকে ধরে নিয়ে এলাম। কোন বেসিক রোগই পাওয়া না যাওয়াতে সাইকোলজিক্যাল বলে ঘুমের ঔশুধ দিয়ে গেলেন। কিছুই হয়না। এক সপ্তাহের মধ্যে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া হোলো। কোন রোগ নাই। নার্ভাস ব্রেক ডাউন, সম্ভবত রায় দিলেন, খানা পিনা ঘুম আস্তে আস্তে সব বন্ধ হয়ে হঠাৎ করে যেন মৃত্যু পথয়াত্রি ।
বাসার কাজের মহিলা আমাদের অস্থিরতা সব খেয়াল করছিল।একদিন সাহস করে আপাকে বললেন আফনেরে মনে হয় ‘বান’ মারছে। একটা ওঝা আসে আমাদের মহল্লায়, বললে এনে দেখাতে পারি।
কি বলে মহিলা? প্রথমে হতভম্ভ হয়ে বসে রইলাম। এসব ঝাড়-ফুক তুক-তাক এবাড়ীতে চলবেনা। সব কুফরি চিকিৎসা! এ্যবসার্ড।
কিন্তু পরবর্তীতে যখন আপা আর বিছানা থেকে উঠতেই পারছিল না, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল, তখন বাধ্য হয়ে ওই ব্যক্তিকে ডেকে আনা হল।
কালো, ছোট খাট মানুষটি।আদি বাড়ী নাকি কামরূপ-কামাক্ষ্যা। নিজের নাম বলতে নারাজ। বললো চমনের বাবা ডাকলেই হবে।
চিকিৎসা শুরু হল।
অদ্ভুত সব জিনিষ লাগবে। কাফনের কাপড়, একটা লাউ, নতুন আগড় বাতি, মোমবাতি ইত্যাদি। অল্প টাকার জিনিষ, এনে দেয়া হল। বলাতো যায়না যদি বাই চান্স ভাল হয়ে যায়! মেঝ’পা কে লম্বা করে বিছানায় শুইয়ে, কাফনের কাপড় দিয়ে ঢেকে, লাউটা পেটের উপর রেখে, ফুল স্পীডে কি সব পড়তে লাগলো। বার বার ফু টু দিয়ে শেষে পেটের উপরে রেখেই এক কোবে লাউটাকে দুইভাগ।
বললো ভাইজান শেষ! বান কেটে ফেললাম। বিশ্বাস যেহেতু নেই, কোনরকম হু হা করে নিজের রুমে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
তাজ্জব ব্যপার এক ঘণ্টা ও হয়নাই সম্ভবত, মেঝ’পা হেঁটে আমার ঘরে এসে বলে, এখন একদম ভাল লাগছে। দুইদিনে উনি আবার সম্পূর্ণ সুস্থ।
ইংরেজি ছবিতে ক্যরেবিয়েন কালচারে, আফ্রিকান ভু ডু ছবিতে সাদা মোরগ কেটে যাদু টোনার, ব্ল্যাক আর্টের ব্যাপার সেপার দেখেছিলাম। নিজ বাড়ীতে, নিজ চোখে দেখে বিশ্বাস করবো কিনা নিজেই কনফিউজড হয়ে পড়লাম!
শুধু ছোট বেলার ঐ পকুর পারের লোকটার কথাই কানে বাজছিলঃ
“কর্তা, কথায় সব কিছু! কথায় মানুষ মানুষের গোলাম, কথায়ই চির শত্রুতা… এমন কি কথা দিয়েইতো আল্লাহ- খোদা- ভগবানের উপাসনা। দোয়া-দরুদ, মন্ত্র-শ্লোক সবই তো কথা! কেন বিশ্বাস হবে না আপনার………”!
আসলে যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। আমি ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশ্বাস করি কারণ এটা আমার বাবার সাথে হয়েছিল। এবং আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আব্বু কিছুদিন পরে ভাল হয়েছিলেন। খুব শীঘ্রই সেই সৃতি নিয়ে আপনার ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট করব যদি আপনার(@আজিজুল ভাই) কোন আপত্তি না থাকে।
Islam, CCR (1996-2002)
ধর্মভিরু মুসলিম হিসাবে আমাকে 'ব্ল্যাক ম্যজিক' ,'যাদু' বা 'কুফুরি কালাম' আছে বিশ্বাস করতেই হবে, কারন রসূলে পাক (সঃ) এঁর উপর এর প্রয়োগ হয়েছিল এবং তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
আমার প্রশ্ন অন্যখানেঃ "কি সেই ব্যাখ্যাতীত অতিপ্রাকৃতিক শক্তি,যা আমাদের জ্ঞ্যান বিজ্ঞ্যানের এত উৎকর্ষ সাধনের পরেও ধরা ছুঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে ?"
পুনশ্চঃ অবশ্যই এই ক্যাপশনে পোস্ট করতে পারবে। ব্যাখ্যাতীত সকল বিষয়ই X-File অন্তর্গত।
Smile n live, help let others do!
স্যার
আমি আপনার লেখা গুলো খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি।
অসম্ভব সুন্দর লেখেন আপনি।
খুব ভাল লাগলো পড়ে।
মুন্তাসির হামিদ সাহেব,
জীবনে স্যার হতে পারিনি, আর এই বুড়া বয়সে হতেও চাইনা। ভাই, শুধু ভাই বলে সম্বোধনেই আমি খুশি।
যতই আন্তরিকতার সাথে লিখি, তবু ক্ষেদ রয়ে যায়। বাক্য গঠন, বানান এসবের দিকে আমার আরো নজর দেয়া উচিৎ।সারাটা জীবন ইংরেজি, জার্মান, বিদেশী ভাষায় লিখে, শেষ অধ্যায়ে বাংলা শিখতে শুরু করেছি!
লিখা ভাল লাগে জেনে খুবই আনন্দিত বোধ করছি।দোয়া করবেন ।
Smile n live, help let others do!
বিশাশ না করে উপায় নাই .......
অবশ্যই বিশ্বাস করতেই হবে। কোরআন- হাদিসে এর উল্লেখ আছ। কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ (শারীরিক ভাবে) হলে, শাস্র মোতাবেক চিকিৎসা করা যাবে।
কিন্তু কারো ভাল বা মন্দ করার জন্যে এই গুপ্ত জ্ঞানের সাহায্য গ্রহন করা কোন অবস্থাতেই যাবেনা।মনে রাখতে হবে, আদেশ অমান্যকারির ইহকাল-পরকাল উভয়ই শেষ।
Smile n live, help let others do!
আজিজ ভাই, রীতিমতো গা ছমছম করতেসে। 😮
তবে হ্যাঁ, আপনি সঠিক তথ্যই দিয়েছেন। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
ভাইজান, সরি দেরিতে দেখলাম তোমার মন্তব্য। এক্স ফাইল-৩ লিখতে ছিলাম।
প্রকৃতই গা ছম ছম করার মত দুই একটা ঘটনা আছে, পরে লিখবো।Stay tuned! ;;;
Smile n live, help let others do!
:clap:
স্যার,
আপনাকে স্যার না বলে অন্য কিছু বলে ডাকতে মনে সায় দেয় না,মনে হয় আপনাকে যথার্থ সন্মান করতে পারছি না।
আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।
sajeebsajeebsajeeb@gmail.com
কখনও যোগাযোগ করলে খুব খুশি হবো।
আপনার সুসাস্থ্য কামনা করসি।
মুন্তাসির হামিদ ভাই,
এখন যথার্থই লজ্জা পাচ্ছি। আমার ইমেইল tradetechbd@gmail.com
you r welcome.
Smile n live, help let others do!
:thumbup:
ভাল লাগতেছে পোস্ট গুলো 🙂
ভাই,
অনেক পুরানো ঘটনা গুলি সাজিয়ে লিখা আর কি। তাও সংখিপ্ত করার জন্যে কতো কিছু বাদ যায় !
Smile n live, help let others do!
ভাই বাদ দিবার দরকার নাই। পর্বে পর্বে ছোট ছোট করে লিখুন 🙂
আজিজ ভাই,
অসাধারণ লাগছে পড়তে। আপনার সাথে আড্ডায় গল্প শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে।