পরীক্ষার আগের রাত।

আজ অনেকদিন পরে লিখতে বসেছি। বার বার কেন জানি S.S.C পরীক্ষার আগের দিনের কথা মনে হচ্ছে। ১৯৭৬ সাল।ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ফজলুল হক ভবনের নিচের তলা। বারান্দার সামনেই সবুজ লনের বিস্তার। বন্ধুরা সব পাগলের মত রিভাইজ করছে। আমি বইয়ের কাছেও যাইনি। প্রিয় গীটারটা নিয়ে বারান্দায় টুং টাং করছি।

‘৭৫ সনে মা বাবার সাথে ইন্ডিয়া যাই বেরাতে ।জীবনের  প্রথম বিদেশ সফর। যা দেখি, সবই কিনতে ইচ্ছা করে।বাবা বাধ সাধেন। কিন্তু কেন যেন গীটার টা কিনতে বাধা দিলেন না।বরং জগদ্বিখ্যাত ‘ গীতাঞ্জলীর ‘ গীটার বলে কিনে দিতে পেরে বেশ তৃপ্তি বোধ করলেন ।

এটা এ জন্যেও হতে পারে যে ‘৭২ এর শুরুতে মৃত্যুর দোরগোরা থেকে ফিরে আসা একমাত্র পুত্র কে ‘আজমির শরিফ’ জেয়ারতের নিয়ত রক্ষা করার উদেশ্যই এই সফর।তাই ছেলের সাধ পূর্ণের মহান ব্রত তার হৃদয়ে।

যাহোক গীটারের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। ফয়জুল হাসান নামে ঝক ঝকে তরুন একজন স্যার জয়েন করেছে এফ সি সি তে। পাটুয়া কাম্রুল হাসান এর ছোট ভাই। শিল্প সাহিত্য গান বাজনার দিকে অনেক ঝোঁক। ওঁরই প্রতক্ষ্য তত্তবধানে আমার গীটার বাজানোর হাতে খড়ি।উনি ভাল গীটার বাজাতেন এবং মনযোগী ছাত্র পেয়ে যথেষ্ট  যত্নের সাথে তালিম দিচ্ছিলেন এবং সহযোগিতা করছিলেন। ওঁর বদলোতে গীটারটি রুমেই রাখার অনুমতি ছিল।

ঝড়ের আগে যেমন সব থম থমে হয়ে থাকে, আমার জীবনের কোন চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তের আগেও তেমনি শান্ত স্বাভাবিক ভাবে নিজেকে সম্পূর্ণ গুটিয়ে ফেলি।

সেদিনের বারান্দায় বসে একা একা গীটার বাজানো আর ৩৫ বছর পর আজকের ল্যপ টপ নিয়ে এই লিখার চেষ্টা সম্পূর্ণ এক ও অভিন্ন! শুধু  ভিন্ন আঙ্গিকে এবং ভিন্ন প্রেক্ষাপটে  নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা।

সামাজিক স্বীকৃতির আর প্রয়োজন নেই, নেই ‘কেউ-কেটা’ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা, তাহলে ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তড়ানোর’ সাধ কেন যে জাগলো , নিজেও জানিনা।ব্যপারটা নিছক  Fun হিসাবে শুরু হলেও এখন বেশ জমে উঠেছে।

কিছু দিন আগে বন্ধুদের অনুরোধে চট্টগ্রাম ক্লাবের এক্সকিউটিভ কমিটির জন্যে ইলেকশনে দাড়িয়ে পরেছি।ব্যপারটা বেশ কঠিন। প্রথমে বুঝতে পারিনি। এখানে জয় জুক্ত হওয়ার জন্যে বিভিন্ন শিবিরের আশীর্বাদ লাগে। বিজিএমই, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার দের সংগঠন বা এলাকা ভিত্তিক দলগত শক্তির সহায়তা কিছুই আমার নেই। উপরুন্ত এসব ক্ষেত্রে যেটা অভ্যশম্ভাবি ‘ আঞ্চলিকতা ‘ সেটাও আমার পক্ষে নয়।

আমার প্রধান পুঁজি, সাধারণ সদস্যদের আমার প্রতি অকিত্রিম ভালবাসা আর আস্থা। দেখা যাক শক্তি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রন থেকে বেরিয়ে সাধারণ জনগনের ভালবাসা জয়যুক্ত হতে পারে কিনা!

আগামি কাল রাতে নির্বাচন। মোট ১৩ জন প্রার্থী। সকলে টেলিফোন, এস এম এস সহ কত কিছু করছে নিজেকে ভোটারদের কাছে পৌছানোর। আমি সারাদিন চুপ চাপ ঘরে বসে আছি।নিজেকে একদম গুটিয়ে।দেখা যাক কি হয়।

এই নির্বাচনের হিশাব এত জটিল যে, কারো পক্ষে হারজিৎ নির্ণয় করা রেজাল্টের এক মুহূর্ত আগেও সম্ভবত সম্ভব নয় ।শুধুই অপেক্ষা।

অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল জিবনের থলিতে। একদিন সময় করে লিখবো। আমার এক্স ফৌজিয়ান/এক্স ক্যাডেট, চট্টগ্রাম ক্লাব সদস্য ভাইবোনদের অভাবিত সাহায্যের হাত, জীবনের স্বাদ অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে। হারি-জিতি কিছুই যায় আসে না, ওঁদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞতার বাঁধনে বাঁধা পড়লাম।

পুনশ্চঃ ফয়জুল হাসান স্যার কিছুদিন আগে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের প্রিঞ্চিপাল হিশেবে অবসর গ্রহন করেছেন।ওঁর প্রতি রইল অভিনন্দন।

 

১,১২৯ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “পরীক্ষার আগের রাত।”

  1. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    ব্যাড লাক খারাপ , আমার কোন ভোট নাই 🙁
    বেষ্ট অফ লাক, আজিজ ভাই ।


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  2. তৌফিক

    ফয়জুল হাসান স্যারকে পেয়েছিলাম আমার প্রথম হাউস মাস্টার হিসাবে। উনার বড় ছেলে আমাদের সিনিয়ার ছিলেন আর ছোট ছেলে আমাদের ক্লাসমেট। উনি গিটার বাজাতেন একথা জানতাম না। স্যার ভালো থাকুন।

    আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাইয়া।

    জবাব দিন
  3. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    সিসিবির সবাইকে একদিনের জন্য সদস্য করে নিলেই হয়ে যাবে...

    ইনশাল্লাহ জয় আপনার হবে... তবে আপনার নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার টেকনিকটা পছন্দ হয়েছে।

    জবাব দিন
  4. মীম (২০০৬-২০১১)

    ফায়জুল হাসান স্যারের মতোন ১ জনকে প্রথম প্রিন্সিপাল হিসেবে পাওয়া সত্যিই অনেক ভাগ্যের ব্যাপার... উনি জাস্ট ১জন ১০০% জেন্টেলম্যান। আপনার লেখাটা অনেক ভালো লাগলো...... :boss: :boss: :boss:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।