২০০০ সালের মে-জুন মাসের দিকে হবে । সময়টা সকালের সবচাইতে ‘Rush Hour’. New York MTA’র দুই নম্বর লাইনের শেষ প্রান্তে Brooklyn College – Flatbush Avenue থেকে উঠেছি বলে বসার সিট পেয়েছি।গন্তব্য ম্যনহাটন।Clark Street আর Wall Street এর মাঝে সম্ভবত East River এবং সমুদ্রের মোহনার নিচ দিয়ে টিউব লাইন, তাই বাইরের কিছু দেখার যো নেই। বেশ সময় নেয় নদীর তলদেশটা পাড় হতে।বসে বসে তাই মানুষ দেখছি।
পৃথিবীর এই একটি মাত্র শহরে এসে সব সময় অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি। যাকে Mega Cosmopolitan Culture বলা যায়। লন্ডন, প্যারিস এর ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারাবে বলে আমার মনে হয় না। আমার চির চারিত স্বভাব অনুযায়ী চারিদিকের মানুষদের দেখছি।এত ছোট পরিসরে এত জাতি গোষ্ঠীর সমাবেশ নিউ ইয়র্ক ছাড়া পৃথিবীর আর কোথায় নেই।
কম্পার্টমেন্টের এক কোণের থেকে চোখ বুলাচ্ছি। এক জোড়া চাইনিজ বা কোরিয়ান, আরবি, মাথার খুলিতে কাল টুপি আটকানো ইহুদী রাব্বি, ইন্ডিইয়ান বা পাকিস্তানি, আমি, আর সাদা-কালোতে তো ভর্তি আছেই। তাহলে আর পৃথিবীর পাঁচটি নৃ গোষ্ঠীর বাকি রইলই বা কি? আর্য-অনার্য, ককেশীয়,মঙ্ঘোলিয়, নিগ্রয়েড,এত বর্ণের এত ধরনের মানুষ ! অবাক হয়ে ওদের একেক জনের আচরণের ভিন্নতা দেখি।
ভদ্র মহিলাকে আমার নজরে পরেনি। বেশ বয়েশ্কা, প্রায় বৃদ্ধা বলা চলে। কোন এক স্টেশন থেকে উঠে আমার সীটের সামনে হাতল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এই দেশে মহিলা বলে ওই ভব্যতার বালাই নেই, যে উঠে দাড়িয়ে বসার জায়গা করে দিতে হবে। At least New York এর এই busy hour এ তো নয়ই !
পারলাম না। নিজের অজান্তে এশিয়া মহাদেশীয় ‘চার হাজার’ বছরের সভ্যতার যে আচার-রীতি নিজ রক্তে বহন করে চলছি, ওতেই বাধ সাধল।উঠে দাড়িয়ে বসার জায়গা করে দিলাম। বয়সের ভারে ন্যুজ্জ ভদ্রমহিলা অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে একবার তাকিয়ে থাকলেন এবং ধন্যবাদ দিয়ে বসে পড়লেন।
আলাপ জমানোর চেষ্টায় আমাকে প্রশ্ন করলেন, ইন্ডিয়ান নাকি? বাংলাদেশ বলায়, উনি অনেক দিন ভারতে কাজ করেছেন বলে জানালেন। আমাদের উপমহাদেশীয় দের প্রশংসা করে প্রশ্ন করলেন, কাল” Mother’s Day” ছিল, আমি জানতাম কিনা।এবং জানালেন এই দিনে ওদের ছেলে মেয়েরা উপহার সামগ্রী, কার্ড পাঠিয়ে মা’ দেরকে শুভেচ্ছা জানায়।
” Mother’s Day” র ব্যাপারটা আমার জানাই ছিল না। তাই সত্যি কথাই বললাম।সাথে জুড়ে দিলাম মা’ র সাথে আমার/আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের কথা।আসলে প্রতিদিনই আমাদের ” Mother’s Day”/”Father’s Day”, কারন অফিসে যাবার আগে যত তাড়াহুড়াই থাকুক, মা-বাবার’র রুমের সামনে দিয়ে উকি দিয়ে হলেও যেতে ভুল হত না। প্রতিদিনই গৎবাঁধা প্রশ্ন ‘ কিছু লাগবে আম্মা”?
“নাহ রে, কিছুই লাগবে না, বা চারটা বাংলা কলা আনিস বা তালের শাঁস উঠেছে কিনা, সর্ষের তেল পাওয়া যায় কিনা দেখিস তো!” লক্ষ লক্ষ টাকা দামের কোন জিনিসের ওঁর কখনো প্রয়োজন পরেনি। শুধু একটু ভালবাসা, একটু caring এর প্রয়োজন ছিল ওঁর। এই বয়সে ওদের সকলেরই এর প্রয়োজন।আমার কথাগুলি বৃদ্ধা শুনছিলেন আর যেন মরমে গেঁথে নিচ্ছিলেন প্রতিটা কথা।
চোখ দুইটা কি জলে ছল ছল করে উঠছিল ওঁর? আমি দেখিনি,কারন মাত্র ষাট দিন আগে মাতৃ বিয়োগের সম্পূর্ণ ভাবাবেগ আমার চোখ কে ঝাপসা করে দিয়েছিল এর অনেক আগেই!
আমি খুব চাই আম্মুর সাথে ঠিকঠাকমত থাকতে। কেন জানি শুধু ঝগড়া করি 🙁
ঝগড়া কোন সমস্যা নয়, মতের অমিল থাকবেই। কিন্ত মনের দূরত্ব যেন একদম না থাকে। আল্লাহ ওঁকে দীর্ঘজীবী করুন। তুমি নিজে 'মা', নানী, দাদী হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ ওঁকে হায়াত দান করুন। আমিন!
Smile n live, help let others do!
🙁
কিছু হবেনা 🙁
ছেলেদের গুয়ার্তুমি টা বোঝা আমার জন্যে সহজ। মা', ছেলের উভয়েরই একজন আরেকজনের প্রতি expectations টা থাকে অনেক বেশী, তাই প্রায় সময় সংঘাত অনির্বাজ্জ্য। Think the other way around- She's such a cute personality,...adorable..but sometimes unbearable... , still Mom!.... your Mom!!
Smile n live, help let others do!
জ্বী ভাইয়া, আমি আমার কথা বলতেসি যে আমারে দিয়া কিছু হবেনা 🙁
কেন হবে না! অবশ্যই হবে। দোয়া করি, দেখো অন্য দশজন থেকে অনেক বেশিই হবে। এবং ঈর্ষানিয়ই হবে ইনশাআল্লাহ্ !
Smile n live, help let others do!
ইদানিং একটা মজার জিনিষ দেখছি। এবার বাংলাদেশে গিয়ে দেখলাম বাবা-মারা বেশ একা একা। এমনকি সন্তানসহ একই বাড়িতে থাকলেও। সবাই খুব স্পেস চায়। আবার এই আমেরিকাতে বাচ্চাদের বন্ধুদের জন্মদিনের দাওয়াতে বিভিন্ন জাতের মানুষের বাসায় গিয়ে দেখি ককেশিয়রা দুই-তিন প্রজন্ম একই বাড়িতে থাকছে। বিষয়টা অর্থনৈতিক যদিও। কারণ সিলিকন ভ্যালিতে ককেশিয়রা হয় খুব বিত্তশালী নয় টেনেটুনে চলা। তাই দেখা যাচ্ছে নানার বাড়িতে মা আর মেয়ে দুজনেই থাকছে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
Its "CYCLE OF THE HISTORY" Sis! Chinese দের লিভিং স্পেস এখন ঈর্ষা করার মত। আমাদের মধ্যবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্তরা ও এগুচ্ছে ধিরে ধিরে।
Smile n live, help let others do!
আজিজ ভাই,
ফিরে আসার জন্য ধন্যবাদ।মায়ের প্রতি আপনার এ গভীর টান আপনাকে কি নিঃসীম একাকিত্বের মধ্যে ফেলে দিয়েছে কিছুটা বুঝতে পারি যেন। হারিয়ে গিয়েও তিনি যে আপনার সাথেই আছেন সর্বক্ষণ তাও তো দেখছি।
সেদিন বললেন, অবাধ্য যৌবনের গল্প বলবেননা। কেন! বলুন না আপনার পাগলা দিনগুলার কথা! আমরাও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনি।
দূর থেকে নদী ভাঙার আওয়াজের মত, ঘড় ভাঙার আওয়াজ যেন শুনতে পাচ্ছি তোমার আহ্বানে! হা হা হা!!
Smile n live, help let others do!