শুক্রবার ৩০ শে সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর ” অন্য আলোতে” প্রকাশিত ‘প্রথম বাঙালি মিলিয়নিয়ের’ রাম দুলাল দে ‘র কাহিনী পরে অনুপ্রাণিত হলাম, কিছু লিখতে!
শূন্য থেকে উঠে আসা রাম দুলাল নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অংক, ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ১০ টাকা মাসিক বেতনে কোলকাতা বন্দরে নোঙর করা জাহাজের আমদানি-রফতানির কাজ তদারকি করতেন।
১৭৬০~৭০ সালের কথা ।
মনিব মদন মোহন দত্ত একদিন ১৪ হাজার টাকা নগদ দিয়ে রাম দুলালকে কিছু নিলাম সামগ্রী কিনার জন্যে পাঠালেন । কিন্ত পথমধ্যে বিলম্বের কারনে নিলাম অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ায় বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে গঙ্গার মোহনায় ‘ ডায়মন্ড হারবারে ‘ ঘুরে বেড়ানোর সময় একটি মালবোঝাই জাহাজ নিলামে যাচ্ছে দেখে তিনি ১৪ হাজার টাকা ডেকে সর্বোচ্চ হন।এবং নিলামটি পেয়ে যান। এক ইংরেজ বণিকের ভয় ভীতিকে উপেক্ষা করে দর কষা-কষি করে শেষে ১ লক্ষ ১৪ হাজার টাকার বিনিময়ে রফা করে সমুদয় মালামাল বিক্রয় করে দেন। রাম দুলাল ঐ সমস্ত টাকা তার মুনিবের পায়ের কাছে রেখে সবিস্তারে সব ঘটনা খুলে বলেন।
ভেজা চোখে মদন মোহন আশীর্বাদ করলেন রাম দুলাল কে।তিনি নিজের ১৪ হাজার টাকা রেখে লাভের ১ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়ে তাঁকে স্বাধীন ব্যবসা শুরু করতে অনুরোধ করেন।
১৭৭৫ সালে এক লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে রাম দুলালের যাত্রা শুরু। ১৭৭৬ সালে আমেরিকা স্বাধীন হলেও ১৭৮৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের বাণিজ্য অবরোধের মধ্যে পড়ে । ১৭৮৭ সালেই প্রথম মার্কিন পণ্য বোঝাই বাণিজ্যতরী কলিকাতা বন্দরে ভিড়ে ।তিনি ন্যায্য মূল্যে তাদের সমস্ত মালামাল বিক্রয়ের বেব্যস্তা করে দেন। রামদুলালের সততা নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততায় মার্কিনীরা মুগ্ধ হন। মার্কিন বনিক মহলে ভারতীয় বাণিজ্যের “শ্রেষ্ঠ বিশারদ” হিশাবে তিনি স্বীকৃতি লাভ করলেন। কালক্রমে তার নিজের বাণিজ্যতরী কন্যার নামে “কমলা”, স্ত্রীর নামে “বিমলা”, ব্যবসায়িক অংশিদার বন্ধুর নামে “ডেভিড ক্লার্ক” এবং নিজের নামে “রাম দুলাল” নৌবহর আমেরিকার বিভিন্ন বন্দরে যাতায়াত শুরু করে। মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বোস্টনে ১৬, নিউইয়র্কে ১৫, ফিলাদেলফিয়াতে ১, সালেমে ২, নিউবেরিতে ২ ও মার্বেল হেডে ১ জন করে তার এজেন্ট নিযুক্ত হয়।
তাঁর এই অবদানের সম্মান ও স্বীকৃতি স্বরূপ উপরুক্ত ৩৫ মার্কিন বনিকেরা স্বেচ্ছায় অর্থ দান করে প্রখ্যাত শিল্পী গিলবার্ট স্টুআর্ট কে দিয়ে জর্জ ওয়াশিংটনের একটি তৈলচিত্র আঁকিয়ে উপহার হিসাবে ১৮০১ সালে তাঁর কাছে প্রেরন করেন, যা পরবর্তীতে বহু হাত ঘুরে ১৯৬৩ আবার মার্কিন যুক্ত রাশ্ট্রে ফিরে যায় এবং বর্তমানে স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরে স্থান পায়।
১৮২৫ সালে মৃত্যু কালে তিনি ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকার সম্পদ রেখে যান,যা প্রায় ২০০ বছর পূর্বে সম্ভবত বাঙালি বণিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ।দুই পুত্র সন্তান রেখে গেলেও ব্যাবসায়িক উত্তরাধিকার ধরে রাখতে পারেননি তারা তৎকালীন ‘ বাবু কালচার ‘ এর আমোদ-প্রমোদের গড্ডালিকা প্রবাহে !
কলা পাতায় লিখে জীবন শুরু করা প্রথম আন্তর্জাতিক বাঙালি ব্যবসায়ী রামদুলাল দে ব্যক্তি জীবনে ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল এবং ভুলে যাননি তাঁর প্রথম জীবনের দুঃখ-কষ্টের কথা।
স্বাধীন ব্যবসা শুরুর পর প্রথম দিকে এক পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন হ্যানার সাথে লেনদেন করে তিনি লাভবান হন। হ্যানার মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী ও কন্যাদের তিনি ভাতা দিয়ে গেছেন আজীবন। ছোট বেলায় তাঁর মাতামহের নিদারুন অর্থ সংকটের সময় বালক রামদুলাল যখন কারো কাছ থেকে সামান্য কটি টাকা ধার চেয়ে পাননি , তখন এক দোকানদার তাকে সাহায্য করায় তিনি জিবনেও এই ঋণের কথা ভুলেননি। আর্থিক সমৃদ্ধির দিনে সেই দোকানদারের খোজ করে মৃত যেনে তার ছেলেদের মাসিক ১৫ টাকা করে ভাতা দিয়ে গেছেন আজীবন।
ঐশ্বর্জের শিখরে আরোহণ করেও মনিব মদন মোহন দত্ত যত দিন জীবিত ছিলেন , মাসের শেষে নগ্ন পদে যেতেন তার চরণ ছুতে !
ইতিহাসের এই সকল মহা মানবের জীবন এবং জীবনাদর্শ আমাদের অনুপ্রানিত করুক এই আশা ব্যক্ত করে তাঁদের প্রতি আমার স্বশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাঞ্জলি।
:thumbup: :thumbup:
বারে বারে বাঁধ ভাঙিয়া বন্যা ছুটেছে
দারুণ দিনে দিকে দিকে কান্না উঠেছে
ওগো রুদ্র, দুঃখে সুখে এই কথাটি বাজল বুকে
তোমার প্রেমে আঘাত আছে, নাইকো অবহেলা
নয় নয় নয়, এ মধুর খেলা
তোমায় আমায় সারা জীবন
সকাল সন্ধ্যা-বেলা ।
ভাই,
প্রথম আলো তে পড়েছিলাম। কিন্তু সেখানে তাঁর ছেলেদের পার্ট টুকু ছিল কিনা জানিনা। আপনার ব্লগটা পড়ে তা জানলাম। বাঙ্গালীরা কি বংশ পরম্পরায় সম্পদ ধরে রাখতে পারে না নাকি এক পুরুষে করে ধন, এক পুরুষে খায় টাইপ অবস্থা অনেক আগে থেকেই... বেচারা একটা বিশ্ববিদ্যালয় করে গেলেই পারত...
বাঙালি entrepreneurship নষ্ট করার অভিলাষে ব্রিটিশরাজ Lord Cornwallis ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা "Permanent Settlement" প্রথা প্রবর্তন করে একদল অথর্ব জমিদার, বা Feudal Leader শ্রেণী সৃষ্টি করে । who diverted all the Bengali capital towards unproductive, idle investment and in return ruined the growth of Bengal Economy!
তা না হলে হয়তো দক্ষিন এশিয়াতে আজ মাড়োয়ারি, গুজরাটি দের বদলে বাঙ্গালীদেরই ব্যবসায়ি হিসাবে দেখা যেতো !
Smile n live, help let others do!
দেখছি যারা খুব বেশি বড়লোক হয় তারা টাকার পেছনে ছোটে না, টাকা তাদের পেছনে ছোটে। আর তাদের টাকা বদলাতে পারে না। বিল গেটস নব্বইয়ের দশকেও নাকি কূপন হাতে গ্রোসারি স্টোরের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতো। আর ওয়ারেন বাফে তো বিখ্যাত মৃতব্যয়ী। এইসব বড়্লোকরা এখন বুঝে গেছে যে ছেলেমেয়েদের সব টাকা দিয়ে যেতে নাই। বরং তাদের ভাল ভাবে মানুষ করতে হয়।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ভাগ্যিশ আমি বড়োলোক নই! There's just a thin line between "মিতব্যয়ি" আর "কিপ্টামি"... and I dislike both group!! HaHaHa.
Smile n live, help let others do!
সরি মিতব্যয়ি। শব্দগুলো অনেকদিন উচ্চারণ না করলে বানানও ্ভুলে যাই এই প্রবাস জীবনে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
প্রথম আলোতে লেখাটা পড়িনি। এখানে পড়ে জানলাম আজিজুল ভাই। ভাল লাগলো।
আমার বন্ধুয়া বিহনে