মন কি এবং মনের কাজই বা কি ? কিভাবে চলে মনের কাজ কারবার ? কখনোই সংজ্ঞায়িত করা হয়তো সম্ভব হবে না।
মনে কি থাকবে আর কি থাকবে না ? ব্যাপারটা ‘মনই’ নির্ধারণ করে ।আজব ! অনেক গুরুত্ব পূর্ণ , অতীব গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা হয়তো বেমালুম ভুলে আছি, আবার অনেক বছর আগের নেহায়ত সাধারণ কিছু হয়তো মনে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। যেন এইতো গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনা ।
মনের গহীনে খুজে জীবনের প্রথম দিককার যে সব কথা পষ্ট মনে পরে, তার মধ্যে ‘ সেইন্ট মেরিস ‘ স্কুলে প্রথম দিন । একদল লোক রাস্তায় ‘ ফাতিমা জিন্না ‘ ‘ফাতিমা জিন্না’ করে নেচেছিল। সম্ভবত কোন ভোটের ব্যাপার । পরে জেনেছি আসলেই তাই। মোহম্মদ আলী জিন্নার বোন কোন একটা ইলেকশনে (may be against Ayub Khan) ভোট চাইতে নেমেছিল সেটার দৃশ্য ‘মন’ খুব সজতনে ধরে রেখেছে।হয়তো রাস্তায় নাচার দৃশ্যটি ইন্টারেস্টিং লেগেছিল !
কোন সনের কথা হবে, ১৯৬৪~৬৫ ? তখন খুব ছোট বয়সেই KG Class এ ভর্তি করাতো ।কারন বাংলা স্কুলগুলিতে KG Class না থাকায়, ইংরেজি মিডিয়ামের বাচ্চারা নাকি অনেক বুড়া হয়ে যায় ম্যাট্রিক পাশ করতে করতে।তাই তাদের অতি অল্প বয়সেই স্কুলে দেয়ার ব্যবস্তা।
স্কুলের প্রথম দিন, পাশে বসা কালো একটা মেয়ে কাপড় নষ্ট করে দিয়ে ছিল।(নাম বলা যাবে না, ও এখন প্রফেসার) ইস কি দুর্গন্ধ ! আয়া এসে স্কুলের থেকে ড্রেস নিয়ে চেঞ্জ করাতে রক্ষা ! আমি গন্ধে টিকতে না পেরে কান্না জুড়ে দিয়েছিলাম । হেনা’পার কাছে যাব ! ( আমার কাজিন KGII তে পড়তো ) শেষ পর্যন্ত হেনা ‘পা কে আনিয়ে পাশের মেয়েটার কথা, গন্ধে বসা না যাওয়ার কথা বলেছিলাম।
আরেকটা ঘটনা , বাবার সাথে নতুন খোলা ” New Market ” (চট্টগ্রাম বিপনি বিতান ) যাওয়ার ঘটনা স্পষ্ট মনে আছে। সব দোকান তখনো শুরু করেনি। এক আধটা সবে চালু করেছে।Market টার concept নাকি ছিল গাড়ী নিয়ে দোতালা ঘুরে ঘুরে মার্কেটিং করা, কিন্তু বানানো শেষে ডিজাইনে ভুল ধরা পরায় আর গাড়ীর বিষয় এগোয়নি। পশ্চিম দিকের (জলসা সিনামার উল্টা দিকে, এক্ষণ যেটা ব্যাংক) সেই দোকানটা রেডিওর দোকান ছিল।তখনকার রেডিও মানে বিশাল বাক্স, শুধু কারেন্টে চলতো । একদম নতুন ট্যাকনলজীর রেডিও এসেছে , নাম ” ট্রানজিসটার ” খুবই ছোট, হাতে নিয়ে ঘুরা যায়। চালাতে কারেন্টের প্রয়োজন হয় না। টর্চের ব্যাটারিতে চলে । বাবা ” মারফি ” (Murphy) ব্র্যান্ডের ট্রানজিসটার কিনলেন। দিনকাল নাকি খারাপ, পাকিস্তানের সাথে নাকি ইন্ডীয়ার যুদ্ধ বেঁধে যাবে । কি উত্তেজনা।
রেডিওর দোকান থেকেই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ভাষণ শুনেছিলাম । “হিন্দুস্তান কা সাথ্ জং লাগ্ গিয়া! মেজর আজিজ ভাট্টী শের কে তেঁরা ……”। সিভিল ডিফেন্স প্রতিটি বাড়ীর জানালার কাঁচে খবরের কাগজ আঠা দিয়ে লাগানোর নির্দেশ প্রদান করল। ( বম্বিং হলে যাতে কাঁচের টুকরর আঘাত না লাগে, আর Black Out এ আলো যাতে বাইরে না যায় ।
আরেকটা হুকুম দিলেন সিভিল ডিফেন্স অনেক মজার ! প্রতিটি বাড়ীতে Trench খুড়তে হবে। বম্বিং হলে বা সম্মুখ সমরের প্রয়োজনে । আমাদের বাড়ীর সামনেও খোড়া হল Trench সরকারী মাপ অনুযায়ী। ধুর কিচ্ছু না। কোথায় যুদ্ধ? আমি Trench এ বালতি বালতি পানি ঢেলে ব্যাঙ এর পোণা ছাড়লাম, মাছের পোনার অভাবে ! কি মজাই না পাচ্ছিলাম ।
আবার অনেক গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা বেমালুম ভুলে বসে আছি!
সাইকোলজিতে পরেছিলাম ” মন ” নিয়ে । মন আসলে কি? একটা বিশাল ভাণ্ড। আমাদের জাগরণের (কোন কোন ক্ষেত্রে স্বপনের ) ঘটনা গুলি স্বজত্নে তুলে রাখে। তিনটি স্থরে । ‘কনশাস’, ‘সাব কনশাস’ আর ‘আন কনশাস’ স্থরে ।
আমাদের অতি দুঃখের স্মৃতি গুলি মনের গভীরে ঠেলে দেয়। যাতে আমরা ভুলে যেতে পারি।এতে মানসিক ভারসাইম্য বজায় থাকে। আবার খুশির স্মৃতি ধরে রাখি অনেক দিন।
মন নিশ্চয়ই কম্পিউটারের RAM সিস্টেমে কাজ করে? অনেক মেমোরি যেগুলি use হচ্ছে না, আলগোছে ভুলে যাই । যেমন একদম ছোট বেলায় চাট গাঁর টেলিফোন নম্বর চার ডিজিট ছিল। আমাদেরটা ছিল ২৬২১, পরে সত্ত্রর দশকের পর পাঁচ ডিজিট হয়ে ৮২৬২১ হল , নব্বইএ এসে ৬৫২৬২১ হয়ে কত দিন রইল মনে নেই, ডিজিটাল সাত ডিজিটে আসার পর মোবাইলের জমানায়, টি এন্ড টি নম্বর আর মনে রইল না।
অতি দুঃখের স্মৃতি গুলি যদি কোন কারনে মন জাগরুক রাখে, মানসিক ভারসাম্যের কারন সৃষ্টি হতে পারে তার থেকে।
এইতো সেদিন,বিরুধি দল গুলির টানা হরতালের দিনগুলিতে । হাসপাতালের চত্বরে বসে আছি। এক পাগল প্রায় বৃদ্ধা, চিকিৎসা সেবা নিয়ে বেরুচ্ছে। চাচাতো ভাই পরিচয় করিয়ে দিল। যুদ্ধের শেষ দিকে আমাদের বাড়ী জ্বালিয়ে দিতে এসে ‘ আল্লাহ রহমত’ করেন আমাদের বাড়ীর উপর। আমাদের বাড়ীর ১০০ গজ সামনেই জলিল জ্যাঠার বাড়ী । ওইটা ও “হাজি বাড়ী” বিঁধায়, ঐটাকেই গান পাওডার দিয়ে আর্মিরা সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়ে যায়।
বুড়ী হাও মাও করে বুঝাতে চেষ্টা করছিল, তখন ওঁর স্বামী জ্যাঠার বাড়ীর সিমানা শেষের ওই দুরের ক্ষেতে কাজ করছিল।হয়তো কি হচ্ছে কৌতুহলে উকি ঝুকি দিচ্ছিল। বুড়ী দেখালো এই খান থেকে ওরা নিশানা করে একটাই গুলি করে, চমৎকার নিশানা বলে হাবিলদার সাহেব আত্ম সন্তুষ্টির ঢেঁকুর তুলেন।
একটাই গুলীতে চল্লিশ বছর পূর্বের কিশোরী বধূর সমস্ত রঙিন স্বপ্ন ধূসর করে দিয়ে যায় । কিভাবে ক্ষেতের আলে উপুর হয়ে পড়ে ছিল, কোথায় , কি ভাবে গুলী লেগেছিল, সেই বিত্তান্তত ওঁর ” মন “এতই সজীব ভাবে ধারন করে রেখেছে, যে বাকি জীবন ওঁকে একাকীত্বে ভরিয়ে দিয়েছে।
মন, পাগল মন !
এত হৃদয়স্পর্শী লেখা আজিজ ভাই! এটাকেও মুক্তিযুদ্ধ ট্যাগ করে দিলে পারতেন।
চমৎকার লেখা, ভাইয়া।
মন এক আজব জিনিস। আমি শুধু আমার ব্যাচ ই না, আগে পরের ২/৩ ব্যাচ এর নাম এবং ক্যাডেট নম্বর একটু চেষ্টা করলেই মনে করতে পারব। আথচ গত দশ বছরে এর কোন ব্যবহার হয়নি।
ব্রেন সেল ফরমেট করার ব্যবস্থা থাকা উচিত। Empty সেল মনে হয় ফুরায় গেছে, আজ-কাল আনেক কিছুই মনে থাকে না 🙁
ব্রান সেল ও ফরমেট করা জায় কিনা জানিনা, কিন্তু অটোম্যেটিক ফরমেটেড হয় অবশ্যই। " পরাধীনতার নয় মাসে ঈদ এসেছিল।কোথায়, কিভাবে উজ্জাপন করছি, কিছুই মনে নাই।" অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না।
সকলকে ঈদ মোবারক !
Smile n live, help let others do!
হালকা মেজাজে প্রথমটুকু পড়তে পড়তে শেষে এসে ধাক্কা খেলাম।