১৯৮৮ থাকে এক্সটেনশন জীবনটা চলছিলো এডহক ভিত্তিতে কোনমতে।দ্বিতীয় হার্ট এট্যাকটা হল তখন ! আমরা ভেবেছিলাম সব শেষ ! কিন্তু আল্লাহ আরও অনেক হায়াত রেখেছিলেন ওনার। সেই থেকে প্রায় প্রতি বছর হজ্বে যাওয়ার বায়না ধরেন। গেলেন ও বেশ কয়েক বার। শুধু একটি খায়েশ,যদি আল্লাহ মক্কা মদিনাতে হায়াত কবুল করেন, তাহলে ‘জান্নাতুল বাকি’ বা ‘জান্নাতুল মওলায়’ শেষ আশ্রয় স্থানটুকু হয়তো নসীব হবে!
আমার বাবা, আব্দুল হাকিম মিয়া, যিনি স্বাধীনতার পর আর কোন ধরণের ব্যবসাই করেন নাই।সব নাকি অসাধুতায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।ফারমাসিটিক্যাল ইন্ডাসট্রিজটাও বিক্রি করে দিলেন পানির দামে ।কারণ একটাই ।অনেক মহা মূল্যবান ‘ইনগ্রেডিয়েন্ট’ নাকি ‘ক্যমিস্টরা’ চোরাই পথে বেঁচে দেয় ঔষধে না মিশিয়ে। তাতে ঔষধের সমস্ত গুনাগুণ নষ্ট হয়ে , মানুষ ‘চিনির সিরাপ’ কেনে ঔষধ মনে করে।চুরি চেক দিতে না পেরে ,তাই সব বেঁচে কিনে, শুধু “বাড়ি ভাঁড়া ” র হালাল রুজির উপর ৪০ টা বছর কাটিয়ে দিয়ে গেলেন।
‘৮৮ তে প্রথম ও দ্বিতীয় বার এর পর আরো বেশ কয়েকবার হার্ট এট্যাক, স্ট্রোক করলেও মানুষের জন্যে কিছু করার অদম্য স্পৃহা থেকে দমে যাননি কখনো তিনি।
একটা করুন ঘটনা অশতিপর এই বৃদ্ধর জীবনের মোড় ফিরিয়ে দিলো সম্পূর্ণ ভাবে।স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা নিয়ে ভালই কাটছিল গ্রামে কাটানো সময়। ছোট্ট একটি ঘটনা , যা হয়তো অহরহই ঘটে আমাদের গ্রামে গঞ্জে !
বাজারের ডাক্তার ঘরের পার্শে বসা ছিলেন উনি। এক অল্প বয়সী মা’র কান্না আর ডাক্তারের চেঁচামেচিতে স্বচক্ষে দেখলেন ,মার কোলে শিশুর মৃত্যুর মত করুন দৃশ্য ।দুদিন আগে অনেক কষ্টে নবজাতক শিশুটিকে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে ঔষধ খাওয়াতে পারেনি। বেচারা শিশু ওর ছোট্ট দেহে আর অসুস্থতা ধারণ করতে পারেনি।তাই সকাল থেকেই নীরব।
এই দেশের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের জন্য অতি স্বাভাবিক এই ঘটনাটা ভিন্ন ডাইমেনশন থেকে পীড়িত করতে লাগলো ওঁকে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাতো এদের জন্যেই ! কিন্তু ওই বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকছে কি ওরা ?
২০০৮ সালের দিকের ঘটনাটা। এই বৃদ্ধ বয়সে দাদাদের ‘বাগান বাড়ীর’ জায়গায় হাসপাতাল বানানোর কাজে হাত দিলেন। নিজের সমস্ত জমানো টাকা, আমাদের ভাই বোনদের থেকে যাই পেলেন, নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। একতলার ছাদ ঢালাইয়ের দিন আবার মাইল্ড স্ট্রোক করে সোজা ইউনাইটেড হাসপাতালে ! আবার এসে কাজ। এইকরে একদিন শেষ করলেন একতালার সাধের হাসপাতাল ।
উনার বক্তব্য সোজা , “তোমাদের কারো এই সময় নেই এর পেছনে ব্যয় করার। আমি যদি শুরু করি , নিশ্চয়ই তোমরা চালিয়ে যাবে”।
২০১০ এর পহেলা জানুয়ারি থেকে চালু করে গেছেন ওই দাতব্য হাঁসপাতাল ” আল হাকিমস ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন” । প্রতিদিন সকাল হলে কত গরীব সাস্থ্য সেবার জন্য আসে। সাথে যতটুকু সম্ভব জরুরী ঔষধ দিতে চেষ্টাও থাকে আমাদের।
২০১১ এর জানুয়ারিতে হাসপাতাল চালুর ঠিক এক বছরের মাথায় উনি চলে গেছেন। বৃদ্ধরা যখন লাঠি ভর করে আসেন ,আমি তাঁদের মাঝে বাবাকে দেখি। মনে পড়ে, বলতেনঃ “অন্যের জন্যে , গরিবের জন্যে মানুষের কাছে চাইতে কোন লজ্জা নেই বাবা।মনে রেখো তোমার চাওয়া টাকায় কেনা প্রতি ফোটা ঔষধ একটা জীবন বাঁচাতে সাহায্য করছে।
জ্ঞান হওয়া অব্দি দেখে এসেছি ” বাবারা কত বাড়ি-গাড়ী , জায়গা-জমি” রেখে যায় সন্তানদের জন্য। আমার বাবা আমার জন্যে রেখে গেছেন একটি দাতব্য হাসপাতাল ।আমার বাবা বেঁচে আছেন , ওঁদেরই মাঝে ! আমিন!!!
পুনশ্চ: হাসপাতালের ছবিটা দিলাম।
এই মানুষগুলোর জন্যই বোধহয় এখনো আমাদের দেশটা ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে চলছে এখনো...
আপনার আব্বার জন্য শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে এলো আজিজ ভাই।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
হাস্পাতাল চালানোর প্রয়োজনীয় ফান্ড উনি রেখে গেছেন।সাথে ওল্ড ফৌজিয়ান আমাদের ব্যাচ মেট বন্ধু , ওয়ান ব্যাংকের এম.ডি ফরমান, ডাক্তারের আংশিক বেতন হিশাবে মাসে হাজার বিশেক করে ব্যাংক থেকে সেংশেন করেছে।
আমরা লাইফ সেভিং ঔষধ দেবার জন্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ অথবা দান,জাকাতের টাঁকা পেতে ইচ্ছুক।
তোমাদের তো অনেক লিঙ্ক আছে, দেখো, এই হাসপাতালটার জন্য কিছু করা যায় কিনা!
(এটা দোহারে , আমাদের গ্রাম জয়পারায়)
Smile n live, help let others do!
অসম্ভব রকমের ভাল লাগল।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
:boss: :boss: :boss:
বলবার ভাষা খুঁজে পেলাম না। আপনার বাবার জন্য শ্রদ্ধা। এমন মানুষগুলো আছে বলেই এই দেশ এখনো শেষ হয়ে যায় নি।
অফটপিক: আপনার গ্রামের বাড়ি আমার গ্রামের বাড়ির কাছে। আমার বাড়ি সিরাজদিখানের রাজানগর। আত্মীয়তার সূত্রে জয়পাড়া নামটা মনে হয় শুনেছি। চেনা চেনা লাগলো।
::salute::
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।
আজিজ ভাই@ আমি আপনাদের হাসপাতালটা ঘুরে দেখতে চাই। আমি ইউএসটিসি'তে আছি। আমি একটি সংগঠনের সাথে জড়িত "প্রগতশীল চিকিৎসক ফোরাম"। আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি দুই বা তিন মাসে মেডিকেল ক্যাম্প করি। আপনাদের সাথে মিলে আমরা কিছু কাজ নিশ্চয়ই করতে পারি।
আজিজ ভাই@ আমি আপনাদের হাসপাতালটা ঘুরে দেখতে চাই। আমি ইউএসটিসি'তে আছি। আমি একটি সংগঠনের সাথে জড়িত "প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরাম"। আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি দুই বা তিন মাসে মেডিকেল ক্যাম্প করি। আপনাদের সাথে মিলে আমরা কিছু কাজ নিশ্চয়ই করতে পারি।