আমার ক্যাডেট কলেজের স্বর্ণালি দিনগুলি- (দুই)

আমার ‘মেজাজ’ আমার জীবন কে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে আবার অন্য হাতে দিয়েছে ও অনেক। এখন ভাবি, মেজাজ বিগড়ে না গেলে লাজুক আজিজুল হাকিম হয়তো কখনোই ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হত না আর জীবন টাও সাদা-মাটা ভাবে অন্য ধারায় বয়ে যেত। ভর্তির চিঠির সাথে বিশাল একটা ফর্দও এসেছিল। …সাথে কি কি জিনিষ নিতে হবে। প্রথম বছর সম্ভবত (অথবা বেশ কয়েক মাস) কলেজ থেকে আমরা কিছুই পাইনি। আমাদের নিজেদের সাদা ফুল-হাফ শার্ট, প্যান্ট, জামা-জুতো, Games Vest, PT shoes, মশারি, বিছানা, চাদর, সবই আমাদের সাথে করে নিয়ে যেতে হয়েছিল।অবশ্য কয়েক মাস পরে আমরা খাকী উর্দি পেয়েছিলাম।infact সেটা কে যদি at all খাকি বলা যায় ! গাঁড় সবুজ এক প্রকার মোটা মশারীর কাপড় এর উর্দি (ইন্ডিয়ান আর্মিদের ইউনিফর্ম),সাথে পুরানা পাকিস্তানী দের ফেলে যাওয়া বেল্ট ও বুট। দুই টুকরো হাউস কালার এর কাপড়ের টুকরো “এপোলেট” (লিনিয়ারড ছাড়া) তাতেই আমাদের কি খুশি ।

যাহোক এ প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। নামাংকিত ষ্টীল ট্রাংক এ ‘মা’র চোখের জলে প্যাকিং সেরে ২৫ শে নভেম্বর ৭২ এর এক শনিবার দুপুরে রওনা হলাম অজানার উদ্দেশ্যে ।

বাবার Ford Prefect গাড়িটা তে মাল সামান লোড করা থেকে ফৌজদারহাট রেল ক্রসিং পার হয়ে ক্যাডেট কলেজের গেট দিয়ে গাড়ি ঢুকা পর্যন্ত মা’র কান্না আর স্বপনের ঘোরে কেটে গেলো । রেজিস্ত্রি তে এন্ট্রি করিয়ে কিভাবে কার সাথে ” ফজলুল হক হাউস ” এর ১৩ নম্বর রুম পর্যন্ত আসলাম, মনে নেই । মনে আছে মা- বাবা কে বিদায় দিয়ে বারান্দায় একাকী দাঁড়িয়ে হাপুস নয়নে কান্না করছিলাম। পেছন থেকে আমারই বয়সী একজন এসে কাঁধে হাত রেখে পরম স্নেহে সান্ত্বনার বাণী শুনাল: কেঁদে কি হবে ভাই, আমিও তো তোমার মতই বাবা-মা ছেড়ে এসেছি। কেঁদো না, আমরা একই রুমের, আজ থেকে আমি তোমার বন্ধু। মা-বাবা, ভাইবোন হীন জীবনে প্রথম বাড়ানো বন্ধুর হাত আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শুরু করলাম। নূর মোহম্মদ নুরুল ইসলাম। বর্তমানে বাংলাদেশ আর্মির চাকরিরত আর্টিলারির একজন চৌকস জেনারেল।আমার প্রথম ক্যাডেট বন্ধু।

(চলবে)

৮৫৮ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “আমার ক্যাডেট কলেজের স্বর্ণালি দিনগুলি- (দুই)”

  1. মোর্শেদ (৯৮-০৪প.ক.ক)

    ভাইয়া অনেক ভাল লাগেছে পড়ে।মনে হচ্ছে ইতিহাস।যত বারই দেখি ৭২সালের ইনটেক তত বারই কেমন রোমাঞ্ছকর লাগছে।স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ব্যাচ।


    মোর্শেদ_(৯৮-০৪)পাবনা ক্যাডেট কলেজ

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আপনার স্মৃতিচারণ ভালো লাগছে আজিজ ভাই।
    পারলে আরেকটু ডিটেইলে বলুন প্লিজ।
    রুম নাম্বারটা পর্যন্ত কি করে মনে রাখলেন অবাক ব্যাপার!
    আমিও ফজলুল হক হাউসের.. 🙂

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।