পুরোনো সেই দিনের কথা কেন জানি সবাইকেই পীঁড়া দেয়। খুবই মনে পড়ে কলেজের মূহুর্তগুলো। আজ অফিসে বসে আছি। একজন আসলেন তার ছেলের কাগজপত্র সত্যায়িত করতে। তার ছেলে বরিশাল ক্যাডেট কলেজে চান্স পেয়েছে। শুনে কেন জানি না খুব ভালো লাগল। ক্যাডেট কলেজে না গেলে জীবনে অনেক কিছু অদেখা আর অজানা থাকতো। আর তাই আজও প্রতি মূহুর্তে অনুভব করি আমার ক্যাডেট কলেজ। গ্রীষ্মে কলেজের পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মা নদীর উড়ন্ত বালূকণার কথা।
শীতের কুয়াশা আর প্রচন্ড ঠান্ডায় পিটি মাফ করে হাউসে ঘুমানোর কথা। মজার স্মৃতি বলতে গেলে ফিরে যেতেই হয় কৈশোরে। আর তার সবটুকু জুড়েই ক্যাডেট কলেজ। যেতে ইচ্ছে করে প্রায়ই। এবার আর একটা সুযোগ পাব বলে মনে হচ্ছে।
ক্যাডেট কলেজে যাবার একটা প্ল্যান আছে অরকা তে। গতকাল কমান্ডিং অফিসার স্যার তার কলেজের গল্প করছিলেন। এনামুল কবির স্যার তার সময়েও সেই একই রকম ছিল সেই গল্প। খাজা মাঈনুদ্দিন স্যারের ভালোমানুষি কাজে লাগিয়ে তাকে জ্বালানোর গল্প। আর বোটানির আতিক স্যারের তরূন বয়সে তার রূম থেকে চুরি করা প্রেমপত্রের সুবাদে হাউসের সামনে দিয়ে যাবার সময় প্রিয়তমার নাম ধরে চিৎকার করে সবাইকে জানান দেবার গল্প।
এনামুল কবির স্যারের কাহিনিটা বলি। স্যার পড়াতেন ম্যাথ। সেবার পরীক্ষা হচ্ছে পাক্ষিক। ২৫ নম্বরের পরীক্ষা। স্যার আবার ৪টা পাটিগণিত দিয়েছেন তার মাঝে ৩টার উত্তর দিতে হবে। অপশন আর কি। সাথে ৪টা বীজগণিত। ৩*৩=৯ আর ৪*৪=১৬। মোট ২৫। যথারীতি পরীক্ষা শেষ। খাতা দেখানোর সময়ে স্যারের বিরাট কৌতুহল। একটা খাতা নিয়ে তিনি বেজায় ইন্টারেষ্টেড। কার খাতা!
একটু পরে সমস্যার সমাধান হল। খাতাটা স্যারের বন্ধু মাসুদ স্যারের। সামনের সারির একজন খেলোয়াড় টাইপ ক্যাডেট। তো মাসুদ স্যার পেয়েছেন ২৫(পঁশিশ) এ ২৮।
স্যার আবার “স”, “ছ” উচ্চারণ করতে পারতেন না। “শ” প্রভাব বেশি ছিল।
স্যার বলছেন…
“আমি বুঝতে পারশি না একটা শেলে কেমন করে ২৫(পঁশিশ) এ ২৮ পায়। শামনে থেকে পেশনে গুনলাম… ২৮, পেশন থেকে শামনে গুনলাম ২৮”
“পরে দেখি এই শেলে একটা উত্তর বেশী দিয়েশে। তাই আমি তাকে পুরশ্কার দেব। পেয়েশে ৩ বেশি.. তাই ওকে ৩ কমিয়ে দিলাম বাইশ!!(২২)”
নগদ পাওনা হিসেবে এই চালাকির জন্য স্যারের বিখ্যাত কারাতে দিতে ভুল করলন না।
ফিরে পাওয়ার ব্যাকুলতা ছিল স্যারের কথায়, আবেগে……… স্যার বলতে চাচ্ছিলেন সেই দিনগুলোর দুষ্টুমি করা হয়তো ঠিক হয়নি। আজ এই বয়সে যখন স্যারদের আরো বয়স্ক দেখা যায় তখন খারাপ লাগে সেদিনের সেই তরূন স্যারদের সাথে চ্যালেঞ্জিং মিশন কি ই না মজার ছিল। তাদের সেই ক্ষিপ্রতা আর নেই বলেই হয়তো। আর যাই করি না কেন, স্যারদের জন্য একটাই কথা; মুখ ফুটে বলতে না পারলে ও আজ বলছি “গুরু তোমাদের সালাম” মুখে যাই বলি না কেন যাই করি না কেন। তোমাদের জন্যই আজ আমরা এখানে। এই আমি। আমার বন্ধুরা, সবাই।
অনেক কষ্ট করেও হিসাব মিলাতে পারতেসিলাম না, এই পোলা আমার চেয়ে সিনিয়র না জুনিয়র। হিসাব মিলানোর পরে বুকফাটা আর্তনাদ বের হলো, জুনিয়র পোলাপানেরা আজ অফিসে বসে আছি লিখে স্মৃতিকথামূলক পোস্ট দেয়, আর আমি এখনও পড়াশুনা করতেই আছি করতেই আছি, ও পিথিমী, তুমি এমন কেনু কেনু কেনু...
(বিঃদ্রঃ আমি কিন্তু ফেল করি নাই)
লেখা উপাদেয় হয়েছে...
.........................আপু এত দুঃখ করেন কেন! জানেন আমার না আর্কিটেক্ট হবার খূব ইচ্ছে ছিল। এখনো আছে কিন্তু আর বুঝি হল না। আর আপনি তো সেই আর্কিটেক্ট। ক্রিয়েটিভ জব। আমার খুব হিংসে হচ্ছে। (পজেটিভ)
এতো এতো ষাঁড় এর মাঝে কোনটা কে কিছু এ বুঝবার পারলাম না 🙁
ভাই আপনি মনে হয় স্যারদের কাউকেই পাননি। সরাসরি কলেজ লাইফে। তাই হয়তো....................
::salute::
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
:hatsoff: ধন্যবাদ ভাই.................... :pira:
সামিয়া আপু, হাহাহা আমি প্রথমে পড়ে আতঙ্কিত হয়ে গেসিলাম- আমাদের ব্যাচের ছেলেপেলে কাগজপত্র সত্যায়িত করে আজকাল!! হায় হায় আমার কি হইবো? :khekz:
স্মৃতিকথা পড়ে ভালো লাগলো :thumbup:
আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।
নাফিজ কথা বলিস না। ঠিকই একদিন মজা করবি। ........................ একটু অপেক্ষা কর।
হায়রে কপাল আমার...... আমাগো পুলাপান অফিসে বসে সত্যায়িত করে... আর আমার তো কেবল পড়াশুনার মাত্র শুরু...
পিয়াল মজায় আছিস তো। ভালো লাগছে না। তাই না।এতো সত্যায়িত করা লাগবে না। তার্কিতে মজা করতে থাক। আরে আমি তার্কিতে থাকলে তো দুনিয়া উড়ায়ে দিতাম মজায় মজায়.........................
লেখাটা পড়ার সময়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও আবার চলে গিয়েছিলাম সেই স্বপ্নময় দিনগুলোতে । চমৎকার লেখা। :clap: :clap: :clap:
তানভীর আহমেদ
মনে আছে প্রথম যখন attested করতে গেছিলাম এক ডাক্তারের কাছে, ব্যাটা হা করে চেয়েছিল...ক্যাডেট কলেজ এ ভর্তি পরীক্ষা দিবে শুইনা বেচারা বেশ খাতির করছিল, আমি মনে মনে ভাবতেছিলাম এখনই এত খাতির, সুযোগ পেয়ে গেলে না জানি কত খাতির হবে...এই লেখা পড়ে একসাথে অনেক কথা মনে পড়ে গেল... :tuski:
আসলেই একদিন সত্যায়িত করার জন্য কত দৌড়াদৌড়ি করেছি। আজ নিজেই .............. কত যে একটা প্রত্যাশিত জিনিস ছিল................. ভালোই লাগে।