মনরোভিয়াতে গিয়েছিলাম একটা ছোট্ট কাজ নিয়ে। দুদিনের জন্য ওখানে আমিই আমার রাজা – সকালের পিটি, বিকেলের গেমস বা দিনের অফিস সবই আমার ইচ্ছায়। সকালে জমিয়ে ঘুমাব বলে রাত জেগে অফিসাররা মিলে “স্লামডগ মিলিওনিয়ার” রিভাইস করলাম। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আর এক। অন্ধকার থাকতে থাকতেই পাশের বেডে মোবাইলে রিশাদের (রংপুর, ৯২-৯৮) উদ্ধিগ্ন কথোপকথনে ঘুম ভাংলো। জানালো ডিজি বিডিআর শট ডেড।
হুড়মুড় করে এখানে ওখানে কয়েক দফা ফোন চালালাম, ইন্টারনেটে গুঁতালাম। জানতে পারলাম প্রথম ধাক্কায় যতটা ভেবেছিলাম আসলে ব্যাপার তার চাইতে অনেক অনেক ভয়াবহ। নিজের কাজে কয়েক জায়গায় ঢু মারলাম ঠিকই কিন্তু মনের ভিতর খালি কোর্সমেটটার কথা ঘুরেফিরে আসছিল। যেহেতু কেউ কিছুই কনফার্ম করতে পারছে না সেহেতু মনের ভিতর সন্দেহের দোলাচল – হয়ত ওর কিছুই হয়নি, হয়তো ও ভালোই আছে। আমার কোর্সমেট ক্যাপ্টেন মাজহারুল হায়দার (কুমিল্লা, ৯২-৯৮) ডিজি বিডিআর এর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে খোঁজ খবর নিচ্ছি। অনেকেই ওর একাধিক মোবাইলে কল করছিল। ফোর্স হেডকোয়ার্টারে যেয়ে প্রথম আলো আর সিসিবি’র লাইভ ব্লগিংএর পাতা প্রিন্ট আউট নিয়ে গাড়িতে বসে পড়েছি। ওখানেই মাসুমের (কুমিল্লা, ৯২-৯৮) অপরাহ্ণ ৭:৫১ মিনিটে করা মন্তব্যে আশ্বস্ত হলাম। সাথে সাথে ফোন করে রিশাদ আর অন্যান্য কোর্সমেটদের জানালাম যে মাজহার ভালো আছে। তখনও ভাবীকে নিয়ে উৎকন্ঠা কাটেনি। ওদের বিয়ের বয়স তিন মাসও হয়নি – ভাবীকে নিয়ে ও অফিসার্স মেসেই থাকত।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অসমর্থিত অনেক খবর সত্য হয়ে দেখা দিতে শুরু করল। একই সাথে মাজহারের ব্যাপারে নিজের অজান্তেই মন শক্ত করা শুরু করলাম। এক অসহনীয় মানসিক অবস্থা নিয়ে রাতে কোনরকমে ঘুমালাম কয়েক ঘন্টা।
আগের দিনের মতো আজও সকালে ঘুম ভাংলো রিশাদের মোবাইলে কথোপকথনে। জানালো একেবারে প্রথম প্রহরেই যারা চলে গিয়েছেন তাদের মধ্যে এডিসি টু ডিজি বিডিআর একজন। মনের মধ্যে আশার যেই বাতিটা টিমটিম করে জ্বলছিল তাও নিভে গেল এক ফুৎকারে। আহসান (কুমিল্লা, ৯২-৯৮) ওর ফেসবুক প্রোফাইলে লিখল, “সব আশা শেষ”।
ফেসবুক আর গ্রুপমেইলগুলোতে আপডেট আসা শুরু করলো। টুকটাক করে পুরো চিত্রটা তৈরী হচ্ছে। দেশে নিকট বন্ধুদের সাথে কথা হয়েছে – ওরা মাজহারকে (‘ডেডবডি’ বা ‘লাশ’ শব্দদুটো লিখতে আমার কি যে কষ্ট হচ্ছে…….) সিএমএইচে দেখেছে, জানাজায় অ্যাটেন্ড করেছে। ডান চোখসহ ওর দেহের আরও বিকৃতি সাধন করা হয়েছে। আর দেশ থেকে প্রায় ১১,০০০ কিলোমিটার দূরে আমি অসহায় অবস্থায় সেগুলো কেবল শুনে যাচ্ছি।
বিএমএ’তে আমি আর ও একই কোম্পানীতে ছিলাম দীর্ঘ একটা বছর। দূর্দান্ত অ্যাথলেটিক ফিগারের অধিকারী ছিল ও। সবসময় হাসিখুশির উপরই থাকত। শাহেদের (রাজশাহী, ৯২-৯৮) পিছে লাগাটা ওর এক প্রিয় বিনোদন ছিল। আমরাও সেটা সমানে উপভোগ করতাম। একটা এক্সারসাইজে যেয়ে আমার সাথে ওয়্যারলেস অপারেটর হয়ে কি এক কনফিউশনে আমাদের জনৈক ইন্সট্রাকটরের মাথা খারাপ মতোন করে দিয়েছিল। সেটা আবার আমরা আমাদের গালা নাইটে উপস্থাপনও করেছিলাম। আমিই অভিনয় করে দেখিয়েছিলাম ওর পার্টটুকু। আর কি কপাল আমার, প্রায় আট বছর পর আজও আমিই ওকে নিয়ে লিখছি!!
যেকোন ভালো মুভি দেখে কিছু কিছু অংশ মাথায় এমনভাবে গেঁথে যায় যে আর বলার নয়। “গ্ল্যাডিয়েটর” মুভিটার শেষদৃশ্য মাথায় এখন খুব করে ভাসছে যেখানে নায়কের কিছু স্মৃতি মাটিচাপা দিয়ে তার কালো বন্ধুটি বলে ওঠে, “I will see you again. But not yet, not yet.” বন্ধু, তোর জন্যও আমার মনে একই কথা।
যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস।
কী দোষ ছিল ওনার??
এভাবে মেরে ফেলতে হবে??
এটা দাবী আদায়ের ভাষা??
এটা কোন মানুষের কাজ??
বিডিআরের জওয়ানরা আপনাদের জন্য আমার সমবেদনা ছিল- এখন একদলা থু ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই, বিশ্বাস করুন। আপনারা কর্নেল গুলজারের মতো মানুষকে মেরে ফেলেছেন। আপনারা মাযহার ভাইকে মেরে ফেলেছেন। আপনারা নিজেরাও জানেন না কাদের হত্যা করলেন আপনারা...
মাযহার ভাইয়ের ছবিটা সরিয়ে দিলে হয় না সায়েদ ভাই। চোখের পানি সামলাতে পারছি না...
আমিও পারছি না ভাই.....।
Life is Mad.
চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে...
তাও যদি মনটা একটু হাল্কা হয়...
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আমার কিছু বলার নেই । মাজহার ভাই এর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ।
মাজহার ভাইয়ের ছবিটার দিকে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে!!
I can't take this anymore...May Allah be with our martyr brothers who suffered the tragic fate in their own soil!!!
BDR , shame on you...You won't ever know the loss of Jewels like Col. Guljar , Capt. Majhar .....
সায়েদ ভাই, মন শক্ত করেন। মাজহার ভাইয়ের আত্না শান্তি লাভ করুক।
কি বলবো 🙁
হে আল্লাহ, এ কিসের মুখোমুখি করলে আমাদের সবাইকে! কি অন্যায় ছিলো এই নিরীহ মানুষগুলোর।
দোস্ত, মাজহার আর ভাবীর ছবিটা সরিয়ে দিয়েছিস, খুব ভালো করেছিস। সহ্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো।
স্রষ্টা ওর পরিবারকে এই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা দিন।
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
চোখে পানি চলে আসতেছে ভাই। সারাদিন এই সব খবর শুনতেছি, আর কানতেছি। নিজের দেশের মানুষ, একজন আরেকজনকে মারতেছে! এই সব কী শুরু হইলো?
কী বলব বুঝতেসি না কিছু অবস্থায় কিছু বলার থাকে না.........
মাজহার ভাইয়ের ঘটনা শুনে আমার মা আর আমি দুজনই কেঁদেছি একসাথে।
এই পোস্টগুলো পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে । ওই জীবনে আল্লাহ উনাদের ভাল রাখুন, এটাই কামনা ।
আর ধরে রাখতে পারলাম না চোখের পানি।
বারবার চেষ্টা করেও কিছু লিখতে পারলাম না।
... ... ...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
বিডি আর ব্রাশ ফায়ার করা উচিত।
মাজহার ভাই কে আল্লাহ শান্তিতে রাখুক