আজকাল কীবোর্ড, মনিটর টেনে (??) তেমন একটা লিখতে ইচ্ছে করেনা। খালি আলসেমি লাগে। তাই বলে বলবোনা আমি দিন দিন অলস হয়ে যাচ্ছি। কারণ সেটা আগে থেকেই ছিলাম। এখন শুধু ধারাবাহিকতাটা বেশ যত্ন করে বজায় রাখছি। এরমধ্যেই দেখতে দেখতে আঠারোটা রোজা কেমন করে চলে গেল। টেরও পেলাম না। শুধু বিকেল হতে হতে পেটের ভেতর কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কি যেন নেই, কীসের যেন অভাব।তাছাড়া বাকি সব ঠিক আছে। অবশ্য ইফতার করতে করতে একসময় সেটাও ভুলে যাই। আই ইউ টি কর্তৃপক্ষের দয়া দাক্ষিণ্যে ইফতারিতে যা জোটে সেটা খেয়েই খুশি থাকি। আমার মনে থাকেনা এবারের রোজায় একদিনের জন্যও ছোলা, মুড়ি দিয়ে ইফতারি করিনি। দুইটা খেজুর, চারটা পাঁচটা ফ্রেন্চ ফ্রাই, দাঁত ভাংগার জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি কয়েকটা বড়া, নেতিয়ে পড়া একটা কলা (ভাইসব, অন্য কিছু ভাইবেন না) আর গরম গরম একটা জ্যুস। ব্যাস। সারাদিনের ক্লান্ত দেহ ঐটুকু পেয়েই তৃপ্তিতে ঢেকুর তোলে। মুখ টুখ মুছে আবার পিসির সামনে বসে যাই। মনে যাও একটু খেদ থাকে মরতুজা ভাইয়ের তিন নাম্বার এপিসোড দেখে সেটাও চলে যায়। জীবনে খুব বেশি কি কষ্টে আছি? নট এট অল । :party:
ইদানীং বই পড়ার সময় মনোসংযোগ ধরে রাখতে পারছিনা। ভয়াবহ ব্যাপার। ভাববার মত। টেক্সট বইয়ের কথা বলছিনা। সেটার উপর মনোসংযোগ কোন কালেই ছিলনা। কাজেই ঐটা নিয়ে ভাবাভাবির কিছু নাই। একটা সময় ছিল ভাল একটা গল্পের বই পেলে সময়ের ব্যাকরণ ভুলে দুই চোখ দিয়ে গিলতে থাকতাম, যতক্ষণ না শেষ পৃষ্ঠায় এসে থামছি। চারপাশের পৃথিবী হুট করে কোথায় যেন মিলিয়ে যেত। বদলে গল্পের চরিত্রগুলো সঙ্গ দিতো পুরোটা সময় জুড়ে। দীপুর নতুন স্কুলে যাবার কথা ভেবে মন খারাপ করে বসে থাকা দেখে ইচ্ছে হতো ওর পাশে গিয়ে একটু বেশি, ওর বন্ধু হই। কিংবা আমার বন্ধু রাশেদ- যার কখনো এভাবে চলে যাবার কথা ছিলোনা, কেন গেল সেটা ভেবে অভিমান করে ঝিম মেরে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। রুমী, জামী যখন তাদের প্রিয় আম্মাকে জন্মদিনে সদ্য ফোটা বনি প্রিন্স দিয়ে উইশ করলো , চোখের সামনে এমন ভালোলাগা একটা দৃশ্য দেখতে দেখতে আমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমার মাকে কখনো জন্মদিনে কিছু দেয়া হয়নি। টের পাইনা চোখের কোণায় কেমন জল টলমলে অনুভুতি কখন এসে ছুঁয়ে যায়। ক্লাস এইটে হসপিটালের স্পেশাল ওয়ার্ডে শুয়ে শুয়ে একদিন চুপচাপ কেঁদেছিলাম অনেকক্ষন। বুকের ওপর তখন সদ্য শেষ করা “একাত্তরের দিনগুলি” উপুড় করে রাখা। মাথার ভেতর জিবরান এসে ঘুরপাক খায়… তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের নয়…। নিভু নিভু সন্ধ্যা আলোয় হয়তো ফিসফিসিয়ে বলে উঠেছিলাম, প্রিয় “আম্মা” তুমি একটুও কেঁদোনা। আমরা আছি তো।
এরপরে আরো কত সন্ধ্যা এলো গেল। বইয়ের ভেতরের মানুষগুলোর জীবন থেকে নিজে কখন আস্তে আস্তে দুরে সরে এসেছি টেরই পেলাম না। অথচ পুর্ব পশ্চিমের বাবলু,পিকলু, মন কেমন কেমন করে দেয়া অলি কিংবা প্রথম আলোর ভরত সিংহ, ভুমিসুতা; সমরেশের মাধবীলতারা আমার জীবনের সাথে সারাক্ষণ লেগে থাকতো একটা সময়। গেমসের হুল্লোড় থেকে লাইটস অফের নি:সঙ্গতা। সবসময়। আমার সার্বক্ষণিক সংগীগুলোকে ইদানীং খুব বেশি মিস করছি। একসময়কার চেনা জানা চরিত্রগুলোকে কেমন ধোঁয়াশার ভেতরে দেখি। একটা বইয়ের কথা বলতে গিয়ে আরেক বইয়ের কাহিনী ঢুকিয়ে ফেলি। দিনের বেলায় আটটা পাঁচটা ক্লাস, ল্যাব এর দৌড়ঝাপ, তারসাথে ফেসবুকিং ব্লগিং এর ঝড় ঝাপটা শেষে দীপাবলী বন্ধ্যোপাধ্যায় এর জন্য আলাদা করে সময় দেবার জন্য এখন আর সময় কোথায়। মাঝে মাঝে ভুল করে মাসুদ রানা, সোহানা রা এখনো তবু কাছে টানে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। পরের দিনের কুইজ, কিংবা ল্যাব এসাইনমেন্টের চোখ রাঙানি দেখে বিসিআই এর দুর্ধর্ষ এসপিওনাজ এজেন্টও খুব বেশি কাছে আসার সাহস করে উঠতে পারেনা।
জীবনের এত বেশি গিয়ান্জাম দেখে আজকাল বাইশ বছরের জীবনেই মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠি। বড় অশান্তি লাগে। দিন দিন বোধহয় অনুভুতিশুণ্য হয়ে যাচ্ছি। তারচে আমার সেই বইপড়ে চুপি চুপি কাঁদার জীবনটাই কত ভাল ছিল।
এই লেখাটা লিখতে লিখতে দুইবার চারপাশের সব কিছু নড়ার আভাস পেলাম। ইদানীং যে হারে ঘর বাড়ি কাপিয়ে ভুমিকম্প হচ্ছে তাতে বেশ ভয় লাগে। মুখে যতই বলি এই দুনিয়ায় আর বাঁচতে চাইনা কিন্তু মরার কোন লক্ষণ পাইলেই হৃদপিন্ড গলার কাছে এসে ঠেকে। এখনো যে অনুভুতিশুণ্য হয়ে যাইনাই সে কথাও ভালমত টের পাই। :dreamy:
যাই হোক। জীবনে দু:খ কষ্ট থাকবেই। তরকারীতে লবণ একটু আধটু কম বেশি হবেই। কাজেই বাঁচতে যখন হবেই একটু ভালভাবেই বাঁচার চেষ্টা করি।
সবাই ভাল থাকুন। ভালভাবে বাঁচুন। শুভ জীবন।
ক্যাডেট কলেজ ব্লগের সব পোলাপান ইদানিং খুব বদ হয়া গেছে। নিজের চরিত্র ঠিক রাখা দেখি দায় হয়া গেল। 😛 :))
পাশে রুবায়েত না থাকলে আমি ভূমিকম্পটা টের পাইতাম না। আমার অনুভূতি আবার একটু ভোঁতা কি-না। দুইবারের প্রথমবার তাই টের পাই নাই। রুবায়েত না কইলে দ্বিতীয়বারও টের পাইতাম না। x-(
সবশেষে শুভ জীবন! :boss:
শুভ জীবন। :boss:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
পোলাপাইন চরম ফাজিল হয়া যাইতাছে।ওরে ধইরা বিয়া দিয়া দিলে কেমুন হয়?ব্লগের লোকজন আওয়াজ দেন 😀
মিয়া নিজে আগে বিয়া করেন। তা' না। ছোট ভাইরে নিয়া টানাটানি। :duel:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ঠিক, জিহাদরে বিয়া করায় দেয়া দরকার। পাত্রীর তো অভাব নাই।
সহমত । :clap:
জিহাদ,তোমার লেখাটা পড়ে আমিও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতিসমূহ ফিরে পেলাম...............THE SHAWSHANK REDEMPTION MOVIE থেকে একটা সংলাপ QUOTE করি........you have two options in life............either get dying easier or get living harder..............অনেকটা এইরকম...............।রিমিক্স হতে পারে............।।
বাহ! সুন্দর কথা তো। মুভিটা দেখা হয়নি। পেলে দেখার চেষ্টা করবো।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
amar kub prio akta movie
শশাঙ্ক রিডেম্পশন মুভিটা আমার জীবনের দেখা সেরা ছবি।যেহেতু জেল জীবন নিয়ে কাহিনি,ক্যাডেট লাইফের সাথে অনেক মিল পাওয়া যায়।আরো ২০ বছরেও এত অসাধারণ একটা ছবি দেখতে পাব বলে মনে হয়না।আর সাইফ ভাই, আপনার পছন্দের সাথে আমার পছন্দের মিল দেখে আনন্দিত হলাম-"গেট বিজি লিভিং অর গেট বিজি ডাইয়িং" আমার খুব প্রিয় ডায়ালগ।ডেড পোয়েট সোসাইটী দেখেছেন?ওটা দেখলে হুবহু ক্যাডেট জীবনের প্রতিচ্ছবি বলে মনে হয়।না দেখলে দেখে নেবেন প্লিজ।
শশাঙ্ক রিডেম্পশন আর ডেড পোয়েট সোসাইটী ২টাই দেখছি। সেইরকম। ডেড পোয়েট সোসাইটী'র জন্য রবিন উইলিয়ামস রে প্রতি বছর অস্কার দেয়া উচিত।
ওইটার একটা হিন্দি ভারসন আছে। মুহাব্বতে। শাহরুখ'চকলেট'খান রবিন উইলিয়ামস এর কারেক্টার করছে। ওইটা দেইখা ওরে আমার জুতা দিয়া পিটাইতে ইচ্ছা করছে।
:boss: মাসরুফ,তুই শালা একটা ফাজিল,তোর মেমোরি এতো সার্প কেন রে............।।আমি অনেক আগে দেখছি মুভি টা.........।।তুই ভুল ধরতে পারিস এই আশঙ্কায় আমি বলছি সংলাপ টা রিমিক্স .........আমি বি এম এ তে শুধু ফাইনাল টার্মেই restriction khaisi 66 day।। 3rd term e 36days,2nd term e 18 dayz .er modhye 1st term er mid term theke 2nd term 3rd week porjonto out of parade mane cmh e cilam ............r ed ,erc er kono hisab nai bujhli..............mathay kemne jinis thakbo bol.............যাই হউক তরে শুরুতে একবার বস বলছি আবার বলছি............ :boss:
ভাইজান এইটা কিন্তু খুব অন্যায়-আমি যেইটাই কই আপনে মুনে করেন ভুল ধরতাছি 🙁
🙂
'বর্ষা'কাল(রেইনি সিজন) আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। 😉 😉
শুভ জীবন!
ইয়া আল্লাহ, এখনো পর্যন্ত একটা রোযাও ভাংগিনাই।সেই উসিলায় এইসব পরনিন্দাকারী, কুৎসা রটনাকারী মানুষগুলার হাত থেকে এই মুমিন, মাসুম বান্দাকে তুমি রক্ষা করো। :bash:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ছোট ছোট অপূর্ণতাগুলো না থাকলে জীবনকে ঠিক মতো মূল্যায়ন (এপ্রিসিয়েট) করা যায় না।
যথারীতি ভালো লেখা।
যথারীতি ধন্যবাদ 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আমারো ইদানিং বই পরতে মন বসেনা আগের মত...পড়ার বই তো দূরের ব্যাপার। এতোদিনের জমা করা বইগুলো বু্কসেলফেই পড়ে থাকে। নতুন আর কেনা হয়না বইমেলা ছাড়া... 🙁 মাঝখান দিয়ে শত শত ফালতু ইংরেজী "সাহিত্য"এর বই জমা হয় (এইখানে একটা বমির emotion থাকলে ভাল হত) :bash:
এইটা দিয়া আপাতত কাজ চালাইয়া নেও।
পোলাপাইন এই বয়সেই আউলা হইয়া যাইতাসে। কি সব কয় মাথার উপর দিয়া যাইতাসে।
হ !! বস ঠিক কইসেন।
আমাদের সময় , মানে ইন দ্য ইয়ার অব ১৯৬৯ এমুন আছিলো না। 😉 😉
এখনকার পোলাপাইন গুলি জানে কেমুন কেমুন। :grr: :grr:
অসাধারন একটা লেখা পরলাম জিহাদ তোর জন্ন।অনুভূতি গুলা দিন দিন জানি কেমন হয়ে যাইতেসে।।
আমি কবে এইরকম একটা লেখা লিখতে পারবো?????
আদৌ আমার দ্বারা হবে কিনা জানিনা...।
জিহাদ hats off to you buddy.... :salute:
জিহাদ, ফ্রন্ট পেজ এ লেখা আসার প্রসিডিউর টা কি? একটা লেখা দিয়েছি গতকাল। মডারেটররা কি পেয়েছে সেটা?