পিকনিক পূর্ববর্তী প্যাচাল এবং ক্যাচাল

“আমি হলাম যারে বলে মাল সিংহ”

কালকে ঘুম থেকে উঠেই আমার চিটাগং এর এবং বোধহয় বাংলাদেশেরও একমাত্র খাঁচা ছাড়া সিংহের কথা মনে পড়লো সবার আগে। আহারে! সিংহ হয়াও শান্তি নাই। এই ইট প্রাসাদের জংগলে বেঁচে থাকার জন্য তাদেরও আজকাল সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয়। কি আর করা! সিংহ বিনে গাজীপুর জংগলে যেতেই হবে। বাস্তব বড়ই কঠিন। এবং সেটা রজনীকান্ত ছাড়া মোটামুটি আর সবার জন্যই প্রযোজ্য।

ঘুম থেকে উঠে এসব ভাবতে ভাবতে আবার চোখ বন্ধ করে পাশ ফিরলাম। এলার্ম তো দেয়াই আছে। চিন্তা কি। তাও কি মনে করে মোবাইলের দিকে তাকালাম। সাধের ঘুম আমার তিনতলা থেকে ধপাস করে পড়ে গেল। দেখি সাড়ে আটটা বাজে। অথচ আটটায় দেয়া এলার্ম বাজেনাই! আমার মোবাইল স্ক্রীণে তখন সকাল বেলার হলদেটে রোদ পর্দা ছাড়া জানলা দিয়ে এসে ঝিকমিক করছে। আমি আবার ভালোমত মোবাইল স্ক্রীণে তাকালাম। দেখি সেখানে রাত সাড়ে আটটা বেজে আছে।

মাথার সিংহ ততক্ষণে তখন ঘাড় থেকে নেমে গেছে আর তার জায়গা দখল করে নিলো কামরুল ভাই। দিব্য দৃষ্টিতে দেখলুম পিকনিকের বাসের শেষ জানলা দিয়ে ঘাড়টা কোনমতে বের করে গানের পাখি কামতাজ অসম্ভব বিষণ্ন সুরে গাইছেন – আমায় ডেকোনা , ফেরানো যাবেনা। এর বেশি আর ভাবতে পারলাম না। মুহাম্মদের নাক ডাকা ততক্ষনে আরেকটু বেড়ে গেছে। আমি ওর ঘাড় ধরে দুইটা ধাক্কা দিলাম। মুহাম্মদ, তাড়াতাড়ি উঠো! দেরী হলে কিন্তু ফেরানো যাবেনা। মুহাম্মদ আমার ধাক্কাধাক্কিতে বিরক্ত হয়ে বাম থেকে ডান কাত হয়ে শোয়। আমি ভাবলাম – কাম সারছে!

প্রথমে ফোন দিলাম লিংকনরে। তোরা কই? ও বলে – একটু পরে ফোন দে। বিজি আছি।
জিজ্ঞেস করলাম – কি নিয়ে?
স্মার্টনেসের মূর্ত প্রতীক রায়হান আবীর ততোধিক স্মার্ট টোনে জবাব দেয়
– আমি আর তৌফিক ভাই বাস ঠেলতেসি।

আমি এইবার হ্যাপি। ঠেলতে ঠেলতে বাস খিলক্ষেত আসার আগেই ইনশাল্লাহ মুহাম্মদরে ঠেলে উঠানো যাবে। এই ভেবে আরেকবার বিছানায় শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর মোবাইলে আবার ফোন। দেখি শোয়েব ভাই (৯৪-০০)। আমাদের সাথেই নাকি খিলক্ষেত থেকে উঠবে। ভালো কথা। ওভারব্রীজের নিচে অনেক জায়গা। তিনজন আয়েশেই দাঁড়িয়ে থাকা যাবে। একটু পর আবার হাসনাইনের ফোন। ওও নাকি খিলক্ষেত থেকে উঠবে। আরো ভালো কথা। ওভারব্রীজের নিচে চারজন দাঁড়ানোও কোন সমস্যা না। আমি উঠে রেডি হতে হতেই হাসনাইনের আবার ফোন। ও চলে আসছে রিজেন্সীর সামনে। – চলে আসছিস? ওকে আসতেসি। মুহাম্মদ এক চোখ খুলে জিজ্ঞেস করে কে চলে আসছে। হাসনাইনের নাম বলতে বলতেও মুখ সামলে নেই। বলি – বাস চলে আসছে! মুহাম্মদ, ডাবল আপ! এইবার কাম হয়। আমি ওর দশ মিনিট আগে উঠলেও দুই মিনিট পর দেখা গেল ও আমার আগে রেডি হয়ে গেসে। বাসা থেকে বের হয়ে আমি হাঁটা শুরু করলে মুহাম্মদ বলে- আরে পাগল হইসো নাকি। বাস তো চলে আসছে! চলো রিকশা নেই। দেরি হইলে কিন্তু ফেরানো যাবেনা! আমি বুঝদার ছেলে। ওর কথায় সায় দেই আর রিকশায় উঠে পড়ি। রিকশা অর্ধেক পথ চলে আসার পর আসল ঘটনা বলে দিলাম।
– মুহাম্মদ, আসলে বাস না, হাসনাইন চলে আসছে।

………………………………………

রিজেন্সীর সামনে গিয়ে দেখি হাসনাইন ছয় ফুট লম্বা হয়ে দাঁড়ায় আছে। কিন্তু যে শোয়েব ভাই লেট করার জন্য পর পর দুইবার আমারে ফোনে হুমকি দিলো তার দেখা নাই। আমি শোয়েব ভাই যেদিক দিয়ে আসার কথা সেদিক তাকায় খুঁজতে থাকলাম। কিন্তু শোয়েব ভাই আসলো তার উল্টা দিক থেকে। ব্যাপারটা ভুতুড়ে, কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু চেপে গেলাম। সিনিয়র মানুষ, তার যেইদিক থেকে ইচ্ছা এমনকি আকাশ পথ দিয়ে হলেও আসা যায়েজ আছে। তারপর আমরা চারজন অপেক্ষা করতে থাকলাম বাসের জন্যে। একটা করে ৩২ নাম্বার কিংবা বলাকা বাস চোখের সামনে দিয়া যায় আর আমরা হেলপারের জায়গায় রায়হান আবীর এর মত কারো মুখ খুঁজি। অনেকক্ষণ পরও না দেখতে পেয়ে শোয়েব ভাই ফোন লাগায়। জানা গেল তারা মহাখালি। এত খালি রাস্তা স্বত্ত্বেও এখনো তারা মহাখালি ক্যানো সেইটা আমাদের চারজনের কাছেই আশ্চর্য জনক মনে হয়। কোন কাম না পেয়ে আমরা ফারুকীর “মুড়ির টীন” নাটক নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম। শোয়েব ভাই বললো তারা ইন দ্য ইয়ার নাইনটিন সিক্সটি নাইনে ময়মন্সিং থাকতে মুড়ির টীনের হেলপার ধান ক্ষেতের আইলে লোক দেখলেও নাকি বাস থামায় দিয়ে ডাকাডাকি করতো। ভাবলাম একবার শোয়েব ভাইকে জিজ্ঞেস করে দেখি তাদের কারো চেহারা রায়হান আবীর এর মত ছিল কীনা। আজকে এত দেরী করার তো আর কোন কারণ দেখতেসিনা।

আমাদের টুকটাক কথা বার্তা চলতেই থাকে চলতেই থাকে। খালি পিকনিকের বাস আর আসেনা। তারও অনেক অনেকক্ষণ পরে রায়হান ফোন দিয়ে ওভারব্রীজের নিচে দাঁড়াতে বললো। ওরা এসে গেছে। বেদ্দপ আর কারে কয়। একঘন্টা ধরে তো দাঁড়ায়াই আছি। অবশেষে ওভারব্রীজের নিচে বাসের সন্ধান মিললো। আমাদের সব ধারণাকে খান খান করে দিয়ে দেখি এটা কোন ৩নাম্বার কিংবা লোকাল কোন বাস না, বরং বড়ই সৌন্দর্য টাইপের এক হ্যান্ডসাম বাস। নাম “মৌসুমী”। এই বাস রে দুয়েকবার ঠেলা দিতে পারা যে কোন ফার্স্ট ক্লাস যাত্রীর জন্যেও পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমরা আগের সব রাগ ভুলে গিয়ে মৌসুমীর চেহারা দেখতে দেখতে বাসে উঠে বসি। ঢুকেই দেখি বোমাবাজ সামিয়া। বাস এর সিকিউরিটি নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে একেবারে সামনের সীটে বসা। তার সামনে হেলপার এর সীটে রায়হানাবীর বসা। বলাই বাহুল্য।
বাসে ঢুকে সবগুলা পরিচিত মুখের একসাথে দাঁত বের করার অভূতপূর্ব দৃশ্যের সম্মুখীন হলাম। বোঝা গেল তারা আজ সবাই ভালোমত দাঁত ব্রাশ করে আসছে। সবার সাথে হাই হেলো করতে করতে পেছনের সীটের দিকে গেলাম। যেইখানে ৯৯ ব্যাচের পোলাপান সব একসাথে বসে আছে। ডিভি আহমেদরে দেখে প্রথমেই মনে হইলো এই বেটার এখনো দুইটা ব্লগ পেন্ডিং এ আছে। পিকনিক এ আসলো ক্যামনে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুট এর মৌসুমী এবার নাচতে নাচতে গাজীপুরের মুন হাউসের দিকে যাত্রা শুরু করলো।

এরপর কি ঘটলো?

ছবি ছাড়া জানতে চাইলে এখানে যান।
সচিত্র বর্ণনা পেতে এখানে যান। 😀

টাটা।

১,৫১৪ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “পিকনিক পূর্ববর্তী প্যাচাল এবং ক্যাচাল”

  1. আহমদ (৮৮-৯৪)

    বাসে ঢুকে সবগুলা পরিচিত মুখের একসাথে দাঁত বের করার অভূতপূর্ব দৃশ্যের সম্মুখীন হলাম। বোঝা গেল তারা আজ সবাই ভালোমত দাঁত ব্রাশ করে আসছে। :khekz:


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    ব্যাপক পোস্ট জিহাদ মিয়া।

    আমিও বাসে উঠে সামনের সিটে সামিয়াকে দেখে হালকা টাশকি খেয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতেছিলাম। পিকনিকে আসার আগে সামিয়ার পোস্টে সামিয়াকে হালকা টিজ করে এসেছিলাম, ভাবলাম এই বুঝি আমাকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়! সামিয়া আসলে ভালো মেয়ে, কিছুই বলে নাই। 😀 আমিও আস্তে করে কাইয়ূম ভাইয়ের পাশে একটা খালি সিটে বইসা পড়লাম। 🙂

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    দিব্য দৃষ্টিতে দেখলুম পিকনিকের বাসের শেষ জানলা দিয়ে ঘাড়টা কোনমতে বের করে গানের পাখি কামতাজ অসম্ভব বিষণ্ন সুরে গাইছেন – আমায় ডেকোনা , ফেরানো যাবেনা।

    =)) =)) পিরা গিলাম, পুরাই পিরা গিলাম :))


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।